<p>মহান আল্লাহ বান্দাদের তাঁর প্রতি শোকর বা কৃতজ্ঞতা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ করো এবং আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং তোমরা কৃতঘ্ন হইয়ো না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫২)</p> <p>শোকর হলো প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আনুগত্যের চেষ্টা করা এবং অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা। ব্যাপক অর্থে শোকর হলো অনুগ্রহকারীর ভালোবাসার স্থান দান; অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে তাঁর আদেশ মান্য করা এবং মুখ দিয়ে তা প্রকাশ করা ও তাঁর প্রশংসা করা। এ থেকে আমরা জানতে পারছি যে শোকরের সঙ্গে তিনটি জিনিস জড়িয়ে আছে। অন্তর, জিহ্বা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।</p> <p>শোকর আদায়ের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, বান্দা অন্তর তথা অভ্যন্তরীণ বিনয় ও বিনম্রতার মাধ্যমে, জবান তথা প্রশংসা ও স্বীকারোক্তির মাধ্যমে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তথা আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। (মাদারিজুস সালিকিন : ২/২৪৬)</p> <p><strong>১. অন্তরের কৃতজ্ঞতা : </strong>বান্দা তার হৃদয় ও মন দিয়ে মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। মুমিন হৃদয়ের বিশ্বাস যেন নিম্নোক্ত আয়াতে ব্যক্ত করা হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যেসব নিয়ামত আছে তা আল্লাহর কাছ থেকে, আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদের স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৩)</p> <p><strong>২. মৌখিক স্বীকৃতি : </strong>বান্দা অন্তরে যেমন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে, তেমন মুখে আল্লাহর অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সে বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে খাবার খায় এবং এ জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা যে পান করে এবং সে জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৩৪)</p> <p>৩<strong>. কাজকর্মে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ :</strong> মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বলেছিলাম, হে দাউদ পরিবার, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তোমরা কাজ করতে থাকো। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১৩)</p> <p><strong>শোকর যখন পূর্ণতা পায়</strong></p> <p>পাঁচটি জিনিস নিশ্চিত না করা পর্যন্ত বান্দা আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত নিয়ামতের শোকর পুরোপুরি আদায় করতে পারে না।</p> <p>১. আল্লাহর কাছে পুরোপুরি নত হওয়া। কৃতজ্ঞ বান্দা তার উপকারকারী বিশ্বপ্রতিপালকের প্রতি নত হয়ে থাকবে। আল্লামা বায়জাভি (রহ.) বলেন, ‘নিয়ামতের শুকরিয়ার উত্তম পদ্ধতি হলো যে জন্য নিয়ামতকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে সেই কাজে লাগানো এবং নিয়ামতদাতার প্রতি অনুগত থাকা।’ (তাফসিরুল বায়জাভি, পৃষ্ঠা-১৬৪)</p> <p>২. আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসা। আল্লাহ যেহেতু দাতা, তাই বান্দা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আল্লাহকে ভালোবাসবে।</p> <p>৩. আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত স্বীকার ও প্রকাশ করা।</p> <p>৪. নিয়ামত প্রদানের জন্য আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করা।</p> <p>৫. তিনি যাতে নাখোশ হন তেমন ক্ষেত্রে নিয়ামতকে ব্যবহার না করে বরং তিনি যাতে খুশি হন তেমন ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা। মুহাম্মাদ ইবনু কাব বলেন, ‘শোকর হলো আল্লাহকে ভয় করা এবং তাঁর আনুগত্যমূলে আমল করা।’ (তাফসিরে তাবারি ১০/৩৫৪)</p> <p><strong>অক্ষমতা প্রকাশের মাধ্যমে শোকর</strong></p> <p>আল্লাহর প্রতি বান্দার শোকর আদায় নিয়ামতের প্রতিদান হিসেবে নয়; কেননা নিয়ামতের প্রতিদান দেওয়া অসম্ভব। আর মহান আল্লাহর বান্দাদের পক্ষ থেকে কোনো কিছু পৌঁছায় না। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘ওগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৭)</p> <p>বর্ণিত আছে যে দাউদ (আ.) একবার বলেছিলেন, ‘হে আমার রব! আমি কিভাবে আপনার শোকর আদায় করব! আমি যে আপনার শোকর আদায় করছি সে-ও তো আপনার নিয়ামত! তখন আল্লাহ বলেন, দাউদ, এবারই তুমি আমার শোকর আদায় করলে। অর্থাৎ নিয়ামতদাতার শোকর আদায়ে তুমি যে অক্ষমতা স্বীকার করছ এটাই তোমার শোকরের স্বীকৃতি।’ (তাফসির ইবন কাসির, ৭১১)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর শোকর আদায়কারী বান্দা হিসেবে কবুল করুন।</p>