হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে পবিত্র রমজান মাসের আগের মাস শাবান। রমজান মাসের প্রস্তুতিকাল হিসেবে শাবান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী (সা.) এই মাসে অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন। তাতে বরকত লাভের দোয়া করতেন।
হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে পবিত্র রমজান মাসের আগের মাস শাবান। রমজান মাসের প্রস্তুতিকাল হিসেবে শাবান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী (সা.) এই মাসে অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন। তাতে বরকত লাভের দোয়া করতেন।
শাবান মাসে ইবাদতের গুরুত্ব
আল্লাহর ইবাদত ও ক্ষমা লাভের জন্য শাবান গুরুত্বপূর্ণ মাস। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল ও নির্দেশনা দ্বারা তা প্রমাণিত। যেমন—
১. মধ্য শাবানের রাতে ক্ষমার ঘোষণা : শাবান মাসে আছে আল্লাহর ক্ষমা লাভের বিশেষ সুযোগ। কেননা হাদিসে এসেছে, অর্ধশাবানের রাতে আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করেন।
২. নবীজি (সা.)-এর তাগিদ : মহানবী (সা.) শাবান মাসে রোজা রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনকি তিনি এর প্রতিবিধানের নির্দেশ দিয়েছেন। ইমরান ইবনুল হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি শাবানের শেষ দিকে রোজা রেখেছ? সে বলল, না।
ফকিহ আলেমরা বলেন, এই হাদিস দ্বারা শাবান মাসের রোজার গুরুত্ব বোঝানো উদ্দেশ্য।
নবীজি (সা.)-এর আমল
শাবান মাসে মহানবী (সা.)-এর আমলগুলো হচ্ছে—
১. উম্মতকে সতর্ক করা : মহানবী (সা.) শাবান মাসে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। যেন তারা এ মাসের ব্যাপারে উদাসীন না থাকে এবং সময়গুলো যথাযথভাবে কাজে লাগায়। আর নিজেকে মহিমান্বিত রোজার জন্য প্রস্তুত করে।
২. বরকতের দোয়া করা : শাবান মাসের আগের মাস তথা রজব মাস থেকে আল্লাহর বরকত ও রমজান লাভের দোয়া করতেন। আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, রজব মাস প্রবেশ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদেরকে রজমান মাসে পৌঁছে দিন।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৩৬৯)
৩. হিসাব সংরক্ষণ করা : মহানবী (সা.) অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শাবান মাসের হিসাব সংরক্ষণ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের হিসাব যতটা গুরুত্বসহ রাখতেন অন্য কোনো মাসের হিসাব ততটা গুরুত্ব দিয়ে রাখতেন না। অতঃপর তিনি রমজানের চাঁদ দেখেই রোজা রাখতেন। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তিনি শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করতেন। এরপর রোজা রাখতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)
৪. বেশি পরিমাণ রোজা রাখা : মহানবী (সা.) রমজান মাসের পর শাবান মাসেই সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতে দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতেন না এবং তিনি পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৯)
৫. ইবাদতের প্রিয় মাস : রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে ইবাদত করতে অধিক পছন্দ করতেন, বিশেষ করে এই মাসে রোজা রাখা ছিল তাঁর প্রিয় আমল। আবদুল্লাহ ইবনে আবু কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে মাসগুলোর মধ্যে শাবান মাসের রোজা পালন করা সর্বাধিক পছন্দনীয় ছিল, বরং তিনি শাবান মাসকে (রোজা পালনসহ) রমজানের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেন।’ (নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫০)
ব্যাখ্যাকারীরা বলেন, রমজানের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেন দ্বারা উদ্দেশ্য দোয়া, ইবাদত ও জিকিরের মাধ্যমে মিলিয়ে নেওয়া। অর্থাৎ উভয় মাসে অধিক ইবাদত করা।
শাবান মাসের প্রতি যত্নশীল হওয়ার কারণ
শাবান মাসের প্রতি মহানবী (সা.) অধিক পরিমাণ যত্নশীল ছিলেন। তাত্ত্বিক আলেমরা এর কয়েকটি কারণ বর্ণনা করেন। তাহলো—
১. আল্লাহর কাছে আমলনামা যাওয়া : শাবান মাসে আল্লাহর কাছে বান্দার আমলনামা পেশ করা হয়। তাই মহানবী (সা.) নিজে আমল করার মাধ্যমে উম্মতকে এই মাসের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমনটি হাদিসে এসেছে, ‘এ মাসে আমলনামাগুলো আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে আমার আমলনামা আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তোলন করা হবে আমার রোজা পালনরত অবস্থায়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)
২. উদাসীনতার সময় : শাবানের পূর্ব মাস রজব, যা হারাম মাসের অন্তর্ভুক্ত। আর পরের মাস রমজান, যা রোজা ও ইবাদতের মাস। তাই মধ্যবর্তীয় শাবান মাসের প্রতি মানুষের উদাসীনতা কাজ করে। ইসলামের ঘোষণা হলো, ‘ব্যাপক গণহত্যার সময়ে (যখন ইবাদতের প্রতি মানুষের মনোযোগ থাকে না) ইবাদত করা আমার কাছে হিজরতের সমতুল্য।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২০১)
৩. রমজানের প্রস্তুতি : হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) গুরুত্বের সঙ্গে শাবান মাসের হিসাব রাখতেন আর রমজানের চাঁদ দেখা গেলে রোজা শুরু করতেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, শাবান মাসে অধিক ইবাদতের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিজেকে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুত করা।
মহান আল্লাহ সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি এবং মহিমান্বিত রমজান লাভের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত খবর
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
﴾يقول الله تعالى: ﴿أَيَّامًا مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
অর্থ : ‘... রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য (রাখা ফরজ)। (তবে) তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে তা রাখবে ...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)
।عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ رَبَّكُمْ يَقُولُ كُلُّ حَسَنَةٍ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَالصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ الصَّوْمُ جُنَّةٌ مِنَ النَّارِ وَلَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ وَإِنْ جَهِلَ عَلَى أَحَدِكُمْ جَاهِلٌ وَهُوَ صَائِمٌ فَلْيَقُلْ إِنِّي صَائِمٌ " .
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, আদম সন্তানের সব ভালো কাজের প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত হয়। তবে রোজা ছাড়া, তা আমার জন্যই এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢালস্বরূপ। আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ মেশকের চেয়েও বেশি সুগন্ধময়।
সুরা ফাতিহা
গোটা কোরআনের অর্থ ও বক্তব্য সংক্ষিপ্তভাবে এই সুরায় উল্লিখিত হয়েছে। ইসলামের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। আকিদা, ইবাদত, শরিয়ত, পরকালে বিশ্বাস এবং আল্লাহর গুণবাচক নাম বিবৃত হয়েছে। শুধু আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, তাঁর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে এবং তিনিই হিদায়াতের মালিক—এসব বিষয় আলোচিত হয়েছে।
এই সুরার মূল বিষয় তিনটি। এক. মহান আল্লাহর প্রশংসা। দুই. ইবাদত শুধু আল্লাহর জন্য এবং প্রার্থনা শুধু আল্লাহর কাছেই। তিন. সরল-সঠিক পথের দিশা লাভ এবং পথভ্রষ্টদের পথ পরিত্যাগ করা।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. পূর্ণাঙ্গ প্রশংসার যোগ্য মহান আল্লাহ। (আয়াত : ১)
২. যেকোনো প্রাপ্তিতে আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে। (আয়াত : ২)
৩. শুধু আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। (আয়াত : ৪)
৪. আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে।
(আয়াত : ৪)
৫. হিদায়াতের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ। (আয়াত : ৫)
৬. যারা হিদায়াত লাভ করে আল্লাহর নিয়ামত পেয়েছে, তাদের পথ অনুসরণ করতে হবে। (আয়াত : ৬)
৭. অভিশপ্ত ও পথভ্রান্ত লোকদের অনুসরণ করা যাবে না। (আয়াত : ৭)
সুরা বাকারাহ
এটি কোরআনের সর্ববৃহৎ সুরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে।
তারা আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করেছে, ফেরাউনের কবল থেকে আল্লাহর করুণায় রক্ষা পেয়েছে, গো-বৎস পূজা করেছে, আল্লাহকে দেখতে চেয়েছে, নবীদের হত্যা করেছে—এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আহলে কিতাবের পর আহলে কোরআন তথা মুসলমানদের বিশেষ উপদেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে মুসা (আ.) এবং মুহাম্মদ (সা.) অভিন্ন উৎস থেকে—ইবরাহিম (আ.)-এর বংশ থেকে এসেছেন। এরপর কিবলা পরিবর্তনের বিষয় আলোচিত হয়েছে। কিছু নেক কাজের নমুনা দেখানো হয়েছে। ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান যেমন—নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জিহাদ, চান্দ্রমাস, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। মাতা-পিতা ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পারিবারিক জীবনের চলার সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিয়ে, তালাক, দুগ্ধপানসহ পারিবারিক নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কসম, জাদু, অন্যায় হত্যা, কিসাস, এতিমের সম্পদ গ্রাস করা ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। মদ, জুয়া, সুদ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করতে নিষেধ করা হয়েছে। বংশবিস্তারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এই সুরায় রয়েছে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত—আয়াতুল কুরসি। আছে কোরআনের সর্বশেষ আয়াত। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার অল্প কিছুদিন পরই রাসুলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল করেন। সেটি হলো এই সুরার ২৮১ নম্বর আয়াত। এই সুরায় রয়েছে কোরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত, যেখানে ঋণ দেওয়ার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। যেসব বিষয়ে ঈমান আনা জরুরি, শেষের দিকে সে বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সুরাটি সমাপ্ত হয়েছে তাওবা ও দোয়ার মাধ্যমে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. কোরআন এতই সুস্পষ্ট, যৌক্তিপূর্ণ ও অখণ্ডনীয় যে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। (আয়াত : ২)
২. কোরআন দ্বারা মুত্তাকিরাই বেশি উপকৃত হয়। কেননা কোরআন হলো আলো এবং আল্লাহভীরুরা চক্ষুষ্মান। (আয়াত : ২)
৩. সত্য লাভের পরও যারা সত্য গ্রহণে হঠকারিতা করে, তারা সত্য লাভের যোগ্যতা হারায়। (আয়াত : ৩)
৪. ইসলাম ও মুসলমানকে নিয়ে উপহাস করা নিফাকি এবং তা অপরাধ। (আয়াত : ১৪)
৫. অঙ্গীকার পূর্ণ করা আবশ্যক।
(আয়াত : ৪০)
৬. মুমিন কেবল আল্লাহকেই ভয় করে। (আয়াত : ৪১)
৬. পুরুষের জন্য জামাতে নামাজ আদায় করা আবশ্যক। (আয়াত : ৪৩)
৭. নিজে আমল না করে অন্যকে ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়া নিন্দনীয়।
(আয়াত : ৪৪)
৮. মানুষের আত্মিক ও মানসিক পরিবর্তনে ৪০ দিন গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা। সুফিদের ভাষায় যাকে ‘চিল্লা’ বলে। (আয়াত : ৫১)
৯. অসম্ভব ও প্রকৃতি বিরোধী জিনিসের দোয়া নিষিদ্ধ। এতে ফল বিপরীত হতে পারে। যেমন পৃথিবীতে আল্লাহকে দেখতে চাওয়া। (আয়াত : ৫৫)
১০. আহার্য হালাল ও পবিত্র হওয়া আবশ্যক। (আয়াত : ৫৭)
১১. পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয় ও এতিম-মিসকিনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং মানুষকে উত্তম কথা বলা আবশ্যক। (আয়াত : ৮৩)
১২. (হজ ও ওমরাহর সময়) মাকামে ইবরাহিমে সালাত আদায় করা উত্তম। (আয়াত : ১২৫)
১৩. বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা। (আয়াত : ১৪৯)
১৪. আল্লাহকে স্মরণ করা এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মুমিনের দায়িত্ব। (আয়াত : ১৫২)
১৫. ধৈর্য ও নামাজ আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য লাভের মাধ্যম। (আয়াত : ১৫৩)
১৬. পৃথিবীতে বিপদ, সম্পদ ও জীবনহানি ঘটলে মুমিন ধৈর্য ধারণ করবে। কেননা এতে তার পাপমোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধি ঘটে।
(আয়াত : ১৫৫)
১৭. মুমিন বিপদগ্রস্ত হলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করে।
(আয়াত : ১৫৬)
১৮. সাম্যের অনন্য দৃষ্টান্ত কিসাসের বিধান ফরজ করা হয়েছে। (আয়াত : ১৭৮)
১৯. রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। (আয়াত : ১৮৩)
২০. অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ না করা। (আয়াত : ১৮৮)
২১. আল্লাহর রাস্তায় দান সদকা করা এবং মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করা। (আয়াত : ১৯৫)
২২. সামর্থ্যবানের ওপর হজ করা ফরজ, ওমরাহ করা উত্তম। (আয়াত : ১৯৬)
২৩. পরিপূর্ণরূপে ইসলাম মান্য করা আবশ্যক। (আয়াত : ২০৮)
২৪. মানুষের মুক্তির জন্য মানবীয় মেধা, প্রজ্ঞা, যুক্তি যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন নববী ও ঐশী শিক্ষার। (আয়াত : ২০৮)
২৫. ঋতু অবস্থায় স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ। (আয়াত : ২২২)
২৬. আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ রাখা, স্মরণ করা আবশ্যক। (আয়াত : ২৩১)
২৭. মুমিন নামাজের প্রতি যত্নশীল হবে, বিশেষ করে আসরের নামাজে।
(আয়াত : ২৩৮)
২৮. নামাজে বিনম্র হয়ে দাঁড়াবে।
(আয়াত : ২৩৮)
২৯. মুমিন সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে। (আয়াত : ২৫৪)
৩০. ইসলামে সুদ নিষিদ্ধ। (আয়াত : ২৭৮)
সুলতান আহমেদ মসজিদ তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিসাহিক স্থাপনাগুলোর একটি, যা ব্লু মসজিদ নামেও পরিচিত। ইস্তাম্বুলে অবস্থিত এই মসজিদ এবার নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। দেশ ও বিদেশের ৩৫ জন বিশিষ্ট হাফেজের ইমামতিতে এবার সেখানে অনুষ্ঠিত হবে খতম তারাবি। তুর্কি রীতি অনুসারে পবিত্র রমজানের আগেই সুলতান আহমেদ মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
এ বছর সুলতান আহমেদ মসজিদে তারাবি পড়াবেন রিকাই আল বায়রাক। তিনি আগে এই মসজিদেই কাজ করতেন। এরপর দীর্ঘ ২৫ বছর মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, এশার ফরজ নামাজ আদায়ের পর ২০ রাকাত তারাবি পড়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় থেকে দীর্ঘ তিলাওয়াতের সঙ্গে তা আদায়ের রীতি প্রচলিত আছে।
তিনি আরো বলেন, ‘ইস্তাম্বুল ও তুরস্কের অনেক মসজিদে খতম তারাবি হয়। আমি আগে এখানে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল যদি ঐতিহাসিক রাজকীয় এই মসজিদে খতম তারাবি চালু করা যেত। আয়া সোফিয়ায় তারাবির নামাজ শুরু হওয়ার পর আমাদের মনে হয়েছে, সুলতান আহমেদ মসজিদে খতম তারাবি শুরু করার এটাই উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া সুলতান আহমেদ মসজিদটি আয়া সোফিয়ার প্রতিরূপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।’
আল বায়রাক বলেন, সুলতান আহমেদ মসজিদে খতম তারাবির নেতৃত্ব দেবেন ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত হাফেজরা। এতে অংশ নেবেন তুরস্ক ও তুরস্কের বাইরের ৩৫ জন হাফেজ।
তাঁদের অনেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। প্রতিদিন পাঁচজন হাফেজ তারাবি নামাজের ইমামতি করবেন। প্রত্যেকে চার রাকাত নামাজ পড়াবেন এবং প্রত্যেক রাকাতে এক পৃষ্ঠা তিলাওয়াত করবেন। যেহেতু রমজান ২৯ দিনেরও হতে পারে; তাই শেষ দিন দুই পাড়া তিলাওয়াত করা হবে। ইমাম আল বায়রাক সুলতান আহমেদ মসজিদে তারাবির নামাজে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেক মানুষ গণমাধ্যমে বিশিষ্ট হাফেজ ও আলেমদের আলোচনা শোনেন। তাঁরা এখানে ৩৫ জন বিশিষ্ট হাফেজের তিলাওয়াত শোনার সুযোগ পাবেন। তাই এই সুযোগটি গ্রহণ করা উচিত।
উল্লেখ্য, ব্লু মসজিদ বা সুলতান আহমেদ মসজিদ তুরস্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা তুর্কি স্থাপত্যরীতির অন্যতম নিদর্শনও বটে। সুলতান প্রথম আহমেদের শাসনামলে ১৬০৯ থেকে ১৬১৭-এর ভেতর তা নির্মিত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে মসজিদের সংস্কার কাজ হয়েছে। ইউনেসকো ব্লু মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করেছে।
সূত্র : ডেইলি সাবাহ