নিরপরাধ মানুষ হত্যার কঠিন শাস্তি

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
শেয়ার
নিরপরাধ মানুষ হত্যার কঠিন শাস্তি

যেসব অপরাধ আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে মানুষকে তার রবের কাছে অভিশপ্ত করে তোলে, তার মধ্যে একটি পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। কখনো কখনো ক্ষণিকের জন্য এই কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের সফল ও প্রভাবশালী মনে হলেও এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কাজের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে অভিসম্পাত এবং আছে মন্দ আবাস।

(সুরা : রাদ, আয়াত : ২৫)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কিছু নিকৃষ্ট কাজের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করা। যেসব কাজকে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তার মধ্যেও অন্যতম হলো পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করা।

সাধারণত পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয় সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে; ইসলামের দৃষ্টিতে যা জঘন্য অপরাধ। আর যদি তা মানুষ হত্যার পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে তো আরো ভয়ংকর বিষয়।

পবিত্র কোরআনে নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা গোটা মানবতাকে হত্যার শামিল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘এ কারণেই আমি বনি ইসরাঈলের ওপর এই আদেশ দিলাম, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রাসুলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে।
তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩২)

হাদিসের ভাষায় কোনো নিরপরাধ মুসলিমকে হত্যা করাকে কুফরির পর্যায়ের পাপ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলিমকে গাল দেওয়া ফাসেকি কাজ (জঘন্য পাপ) আর কোনো মুসলিমকে হত্যা করা কুফরি। (বুখারি, হাদিস : ৭০৭৬)

এ জন্যই যারা ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ ও মানুষ হত্যার মতো জঘন্য কাজ করে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, মহান আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর জমিনে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো এই যে তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে, অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে।

এ হলো তাদের জন্য দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৩)

এ জন্যই আমাদের নবীজি (সা.) মানুষের প্রতি দয়া ও রহমতের অনন্য উদাহরণ হওয়া সত্ত্বেও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কিছু খুনি-ডাকাতকে কঠিন শাস্তি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নজির স্থাপন করেছেন। আনাস (রা.) বলেন, একবার ‘উকল’ বা ‘উরাইনাহ’ গোত্রের কিছু লোক (ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশে) মদিনায় এলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ল। বিশ্বনবী (সা.) তাদের (সদকার) উটের কাছে গিয়ে উটের পেশাব ও দুধ পান করার নির্দেশ দিলেন। তারা সেখানে চলে গেল। অতঃপর তারা সুস্থ হয়ে বিশ্বনবী (সা.)-এর রাখালকে হত্যা করল এবং উটগুলো তাড়িয়ে নিয়ে গেল। এ সংবাদ দিনের প্রথম ভাগেই (তাঁর কাছে) এসে পৌঁছল। তিনি তাদের পশ্চাদ্ধাবন করার জন্য লোক পাঠালেন। বেলা বাড়লে তাদেরকে পাকড়াও করে আনা হলো। অতঃপর তাঁর আদেশে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হলো। উত্তপ্ত শলাকা দিয়ে তাদের চোখ ফুটিয়ে দেওয়া হলো এবং গরম পাথুরে ভূমিতে তাদের নিক্ষেপ করা হলো। তারা পানি চাইছিল, কিন্তু তাদেরকে পানি দেওয়া হয়নি।

আবু কিলাবাহ (রহ.) বলেন, এরা চুরি করেছিল, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, ঈমান আনার পর কুফরি করেছিল এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ২৩৩)

তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, এমন কাজ থেকে নিজেকে বহুদূরে রাখা। আর মুসলিম শাসকের দায়িত্ব কেউ যদি এ ধরনের জঘন্য নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর শাস্তি দিয়ে কোরআনের আইন বাস্তবায়ন করা।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিবাহে সমতাবিধি অনুসরণ না করার ক্ষতি

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
শেয়ার
বিবাহে সমতাবিধি অনুসরণ না করার ক্ষতি
সংগৃহীত ছবি

সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য পরিবার গঠনের উদ্দেশ্যে বিবাহবন্ধন হলো অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রথা। বিবাহের মাধ্যমে যে পবিত্র বন্ধন তৈরি হয়, তা শুধু পরিবার গঠনে সহায়ক হয় না; বরং নৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষা দেয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে। অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।

তোমার রব সর্বশক্তিমান।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৫৪)

ইমাম বুখারি (রহ.) বুখারি শরিফে এই আয়াতকে ‘কুফু’ অধ্যায়ের সূচনায় উল্লেখ করেছেন। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) তার কারণ উল্লেখ করে লিখেছেন, এই আয়াতকে এখানে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা জানিয়ে দেওয়া যে বংশ ও শ্বশুর-জামাতার সম্পর্ক এমন জিনিস, যার সঙ্গে কুফুর ব্যাপারটি সম্পর্কিত। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে যাতে ভবিষ্যৎ বংশ রক্ষার ব্যবস্থা হয়, সেই দৃষ্টিতে কুফু রক্ষা করা একটা জরুরি বিষয়।

বিবাহবিচ্ছেদ ও দাম্পত্য কলহের যেসব কারণ গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে, এর সব কয়টি ইসলামের কুফু বিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, বর ও কনের মধ্যে সমতা রক্ষা না করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয় কিংবা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ৫৩ বর্ষ, ১ম সংখ্যা)

ইমাম খাত্তাবি (রহ.) লিখেছেন, বহুসংখ্যক মনীষীর মতে, চারটি বিষয়ে কুফু বিচার্য—দ্বিনদারি, আজাদি, বংশ ও জীবিকা। তাঁদের অনেকে আবার দোষ-ত্রুটিমুক্ত ও আর্থিক সচ্ছলতার দিক দিয়েও কুফুর বিচার করেছেন।

(পরিবার ও পারিবারিক জীবন, পৃষ্ঠা-১০০)

ইমাম মালিক (রহ.) ধর্মকে কুফু নির্ধারণের জন্য গুরুত্ব প্রদান করেছেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ধন-সম্পত্তির দৃষ্টিতে কুফুর গুরুত্ব স্বীকার করেছেন।

হানাফি মাজহাবে কুফুর বিচারে বংশমর্যাদা ও আর্থিক অবস্থাও বিশেষভাবে গণ্য। এর কারণ এই যে বংশমর্যাদার দিক দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পার্থক্য হলে যদিও একজন অন্যকে ন্যায়সংগতভাবে ঘৃণা করতে পারে না, কিন্তু একজন অন্যজনকে অন্তর দিয়ে গ্রহণ করতে অসমর্থ হতে পারে, তা অস্বীকার করা যায় না। অনুরূপভাবে একজন যদি হয় ধনীর দুলাল আরেকজন গরিবের সন্তান, তাহলে যদিও সেখানে ঘৃণার কোনো কারণ থাকে না, কিন্তু একজন অন্যজনের কাছে যথেষ্ট আদরণীয় না-ও হতে পারে।

এসব বাস্তবতা সামনে রেখে দ্বিনদারি ও নৈতিক চরিত্রের পাশাপাশি বংশমর্যাদা, জীবিকার উপায় ও আর্থিক অবস্থার বিচার হওয়াও অন্যায় কিছু নয়।
বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে, মেয়েদের বিবাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে কুফু দেখার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ পাত্রীর সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থানের তুলনায় নিম্নমানের ছেলের কাছে বিবাহ দেওয়া উচিত নয়।

আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে উত্তম নারী গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ রাখো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯৬৮)

বর্তমানে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি ঘটছে বলে জানা যায়। আর এই বিবাহবিচ্ছেদের কিছু কারণ হলো—

১. ইসলাম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য যেসব বিধান দিয়েছে, তা যথার্থভাবে পালন করা হচ্ছে না। বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে পাত্র-পাত্রী দেখা, পাত্র-পাত্রী নির্বাচন, পাত্রীর সম্মতি, অভিভাবকের মতামতকে গুরুত্ব দান, কুফু রক্ষা করা, মোহরানা আদায় ইত্যাদি। এ ছাড়া পর্দার বিধান উপেক্ষা করে গায়ের মাহরাম পুরুষ-নারীর সঙ্গে মেলামেশা করা এবং বৈবাহিক জীবনে পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য পালন না করা। (ড. মোহাম্মদ জাকির হুসাইন, আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানে আল-হাদিসের অবদান : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, গবেষণা বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগস্ট ২০০৪, পৃষ্ঠা-৫৪৬)

২. স্বামীর বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব, স্বামীর সীমিত আয়ে পারিবারিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক টানাপড়েন ও অপব্যয়, স্ত্রীর অধিক স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসবহুল জীবনযাপনের মোহ, স্বামীর স্ত্রীর পক্ষ থেকে অর্থলাভের মোহ এবং স্ত্রীর আয় ও অর্থ উপার্জনের ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব খাটানোর প্রবণতা, স্ত্রীনির্ভরতা ইত্যাদি কারণেও অনেক বিবাহবন্ধন ছিন্ন হচ্ছে।

৩. বর-কনের মানসিক অপরিপক্বতা, সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা ইত্যাদিকে বিবেচনায় না এনে ছেলে-মেয়েরা আবেগের বশবর্তী হয়ে বা মা-বাবা অর্থের মাপকাঠিতে পাত্র নির্বাচন করে বিবাহ দিলে তাতেও স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতার অভাব দেখা দেয়। এ ছাড়া ব্যক্তিত্বের বৈপরীত্য এবং কোনো না কোনো পক্ষের আনুগত্যের অভাব দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি করে। এই কলহ বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার দিকে নিয়ে যায়।

৪. দারিদ্র্য, অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ এবং দ্রুত মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নৈতিকতার অবনতি ইত্যাদি।

৫. শারীরিক সমস্যা : শারীরিক কারণের অন্যতম হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যাপক তারতম্য।

কুফুর প্রধান দিকগুলো হলো—ক. গোত্রগত বা বংশগত দিক, খ. দ্বিনদারি ও আদর্শগত দিক, গ. পেশাগত দিক ও ঘ. অর্থনৈতিক দিক।

ক. গোত্রগত দিক : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোত্রীয় মর্যাদা নিয়ে পরস্পর গর্ব-অহংকার সৃষ্টি হয়। উচ্চ বংশমর্যাদাসম্পন্ন নারী নীচ বংশের পুরুষের অধীনে থাকতে ঘৃণা বোধ করে। তাই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে গোত্র ও বংশের সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য। কিন্তু গোত্রীয় দিকটি সাধারণভাবে আরবের লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (উবায়দুল্লাহ ইবন মাসউদ, শরহুল বেকায়া, কিতাবুন নিকাহ, বাব আল অলি ওয়াল কুফু)

অনারবদের ক্ষেত্রে ধর্মগত দিকটিই লক্ষণীয়। কারণ আরবরা তাদের গোত্রীয় ধারাবাহিকতা সংরক্ষণ করে আসছে। আর অনারবদের বংশে অনেক মিশ্রণ ঘটেছে, যার ফলে তাদের বংশের মূল অস্তিত্ব আজ অক্ষত নেই।

আমাদের বাংলাদেশে বংশের দিকটির সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য নয়। যদিও আজ অনারবদের মাঝে অনেক বংশের নাম শোনা যায়, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে বংশের নাম নয়; বরং একসময়কার উপাধি বা পেশা, যা বংশে

রূপান্তরিত হয়েছে। যেমন—চৌধুরী, শেখ, কাজী, খন্দকার, তালুকদার, শিকদার, সৈয়দ ইত্যাদি পারিবারিক উপাধি দেখা যায়।

খ. দ্বিনদারি ও আদর্শগত দিক : বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রে তাকওয়া ও ইসলামই কুফু হওয়ার মাপকাঠি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বনকারী।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৩)

গ. অর্থনৈতিক দিক : অর্থনৈতিক দিক থেকে যদি কেউ শুধু স্ত্রীর দেনমোহর ও ভরণ-পোষণ দিতে সক্ষম হয়, সে ধনাঢ্য পরিবারের একজন মেয়ের জন্য কুফু হবে। (খন্দকার মুহাম্মদ ইউসুফ, ইসলাম জীবনের আলো, জামেয়া প্রকাশনী, ঢাকা, আগস্ট ১৯৯৩, পৃষ্ঠা-৭৬)

এ ক্ষেত্রে ধনের পরিমাণ কম-বেশি বিবেচ্য নয়। কারণ সম্পদ সব সময় এক হাতে থাকে না। এমন কত লোক আছে, যারা সকালে ছিল ধনী আর সন্ধ্যা হতে না হতে নির্ধন। আবার অনেক নির্ধনও আছে, যারা সকালে ছিল নির্ধন আর সন্ধ্যায় হয়ে গেল ধনী।

যে ব্যক্তি দেনমোহর ও ভরণ-পোষণ দিতে সক্ষম নয়, সে একজন নির্ধন নারীর জন্য কুফু নয়। (শরহুল বেকায়া)

ঘ. পেশাগত দিক : পেশার দিক দিয়েও কুফু বা বর-কনের মধ্যে সমতা বিবেচনাযোগ্য। ঝাড়ুদার, জুতা সেলাইকারী, নাপিত, ধোপা, তাঁতি, কুমার, কামার, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকারী ইত্যাদি পেশার লোকের সঙ্গে আতর বিক্রেতা, কাপড় বিক্রেতা, মুদ্রা ব্যবসায়ী ইত্যাদি শ্রেণির পেশাজীবীদের মেয়েদের কুফু হবে না। (শরহুল বেকায়া)

তবে এ দুই ধরনের পেশাধারীর মধ্যে নিজ নিজ শ্রেণির সঙ্গে কুফু হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
সংগৃহীত ছবি

আজ রবিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু— ১১টা ৫৭ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ৩২ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ২৯ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ৪৫ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ০৮ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ২৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ২৭ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জীবজন্তু সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

সাব্বির আহমদ
সাব্বির আহমদ
শেয়ার
জীবজন্তু সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে শুধু মানুষের মধ্যে ইনসাফ ও দয়াকে উৎসাহিত করা হয়নি, বরং পশুপাখিসহ সব সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণ করতেও সমানভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের কল্যাণের জন্য অনেক জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে সেসব জীবজন্তু কোনো তুচ্ছ বা অবহেলিত প্রাণী নয়, বরং তাদের প্রতিও ইসলাম ঘোষণা করেছে করুণা, দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহির শিক্ষা।

জীবজন্তুর মর্যাদায় কোরআন

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে যত জীবজন্তু আছে, তাদের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর।

’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬)

তিনি আরো বলেন, ‘আর তিনি গবাদিপশু সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে তোমাদের জন্য উষ্ণতা ও নানাবিধ উপকার।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫)

হাদিসে জীবজন্তুর প্রতি দয়ার আহ্বান

১. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ...জনৈক লোক দেখতে পেল যে তৃষ্ণায় কাতর একটি কুকুর জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে আর মাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে বলল, কুকুরটিকে আমার মতো তীব্র তৃষ্ণায় পেয়েছে।

তখন সে কুয়ায় নামল এবং তার চামড়ার মোজায় পানি ভরল। তারপর সে সেটার মুখ বন্ধ করে ওপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পান করাল। মহান আল্লাহ তার এ আমলের কদর করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে কি আমাদের জন্য এসব প্রাণীর ব্যাপারে সদাচরণেও সওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন, যেকোনো জীবের প্রতি দয়া করা তা হোক পশু বা পাখি, তাতে সওয়াব আছে।
(মুসলিম, হাদিস : ২২৪৪)

২. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা জমিনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া করো, আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৪)

নবীজীবনে জীবজন্তুর প্রতি দয়ার দৃষ্টান্ত

১. উটের কান্নায় প্রতিক্রিয়া : আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...রাসুল (সা.) এক আনসারির খেজুরবাগানে প্রবেশ করলে হঠাৎ একটি উট তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। উটটি নবী (সা.)-কে দেখে কাঁদতে লাগল এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তিনি উটটির কাছে গিয়ে এর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। এতে উটটি কান্না থামাল।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ উটের মালিক কে? এক আনসারি যুবক এসে বলল, উটটি আমার। তিনি বললেন, আল্লাহ যে তোমাকে এই নিরীহ প্রাণীটির মালিক বানালেন, এর অধিকারের ব্যাপারে তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না? উটটি আমার কাছে অভিযোগ করেছে, তুমি একে ক্ষুধার্ত রাখো এবং কষ্ট দাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৯)

২. একজন ব্যভিচারী নারী ও কুকুর : ‘....এক ব্যভিচারী নারী একটি কুকুরকে পিপাসার্ত দেখে তার জন্য জুতা দিয়ে পানি তুলে দিল। এ কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১)

জীবজন্তুকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি

অহেতুক কোনো জীবজন্তুকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ। কেননা অকারণে অবলা প্রাণীকে কষ্ট দিলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন নারী একটি বিড়ালকে না খাইয়ে এবং বন্দি করে রাখার কারণে জাহান্নামে গিয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৫)

ইসলাম দয়ার ধর্ম। এই দয়া শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রাণিজগৎ পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি পশুর কষ্টকেও রাসুল (সা.) গুরুত্ব দিয়েছেন এবং আমাদের দয়ালু হতে শিখিয়েছেন। তবে এর মানে এই নয় যে নাপাক প্রাণীর প্রতি দয়া করতে গিয়ে সেগুলোকে নিজের ঘরের ভেতর রেখে পালন করতে হবে।

আল্লাহ আমাদের সব সৃষ্টির সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য
হাদিসের কথা

পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানের যা করণীয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানের যা করণীয়

জীবদ্দশায় পিতা-মাতার সঙ্গে যেমন সদ্ব্যবহার করা কর্তব্য, তেমনি মৃত্যুর পরও তাদের জন্য সন্তানদের সদাচারণ অব্যাহত রাখা জরুরি। এক হাদিসে রাসুল (সা.) পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানদের চারটি আমল অব্যাহত রাখতে বলেছেন।

عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ يُحَدِّثُ الْقَوْمَ قَالَ‏:‏ كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَجُلٌ‏:‏ يَا رَسُولَ اللهِ، هَلْ بَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ بَعْدَ مَوْتِهِمَا أَبَرُّهُمَا‏؟‏ قَالَ‏:‏ نَعَمْ، خِصَالٌ أَرْبَعٌ‏:‏ الدُّعَاءُ لَهُمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا، وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لاَ رَحِمَ لَكَ إِلاَّ مِنْ قِبَلِهِمَا‏.‏

অর্থ : আবু উসাইদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমরা নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার কোনো অবকাশ আছে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।

চারটি উপায় আছে। এক. তাদের জন্য দোয়া করা। দুই. তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। তিন. তাদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা।
এবং চার. তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, যারা তাদের মাধ্যমে তোমার আত্মীয় (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৬৪)।
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ