প্রশ্ন-উত্তর

সাহু সিজদার আদায় পদ্ধতি কী?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
সাহু সিজদার আদায় পদ্ধতি কী?
প্রতীকী ছবি

প্রশ্ন : আমি হানাফি মাজহাবের আলোকে সাহু সিজদা আদায় পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই। দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

-আবুল হোসেন, কুমিল্লা

উত্তর : নামাজের মধ্যে ভুলবশত কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে বা নামাজের ফরজ ও ওয়াজিবের পরস্পর ধারাবাহিকতায় আগে-পরে হলে বা ফরজ ও ওয়াজিব দ্বিগুণ আদায় করলে অথবা ফরজ ও ওয়াজিব আদায়ে বিলম্ব হলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তা আদায়ের পদ্ধতি হলো, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর ডান দিকে এক সালাম ফেরাবে, অতঃপর নামাজের মতো দুটি সিজদা দেবে এবং পুনরায় তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে নামাজ শেষ করবে।

(আদ্দুররুল মুখতার : ১/১০১)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জীবজন্তু সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

সাব্বির আহমদ
সাব্বির আহমদ
শেয়ার
জীবজন্তু সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে শুধু মানুষের মধ্যে ইনসাফ ও দয়াকে উৎসাহিত করা হয়নি, বরং পশুপাখিসহ সব সৃষ্টির প্রতি সদয় আচরণ করতেও সমানভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের কল্যাণের জন্য অনেক জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে সেসব জীবজন্তু কোনো তুচ্ছ বা অবহেলিত প্রাণী নয়, বরং তাদের প্রতিও ইসলাম ঘোষণা করেছে করুণা, দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহির শিক্ষা।

জীবজন্তুর মর্যাদায় কোরআন

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে যত জীবজন্তু আছে, তাদের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর।

’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬)

তিনি আরো বলেন, ‘আর তিনি গবাদিপশু সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে তোমাদের জন্য উষ্ণতা ও নানাবিধ উপকার।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫)

হাদিসে জীবজন্তুর প্রতি দয়ার আহ্বান

১. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ...জনৈক লোক দেখতে পেল যে তৃষ্ণায় কাতর একটি কুকুর জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে আর মাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে বলল, কুকুরটিকে আমার মতো তীব্র তৃষ্ণায় পেয়েছে।

তখন সে কুয়ায় নামল এবং তার চামড়ার মোজায় পানি ভরল। তারপর সে সেটার মুখ বন্ধ করে ওপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পান করাল। মহান আল্লাহ তার এ আমলের কদর করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে কি আমাদের জন্য এসব প্রাণীর ব্যাপারে সদাচরণেও সওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন, যেকোনো জীবের প্রতি দয়া করা তা হোক পশু বা পাখি, তাতে সওয়াব আছে।
(মুসলিম, হাদিস : ২২৪৪)

২. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা জমিনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া করো, আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৪)

নবীজীবনে জীবজন্তুর প্রতি দয়ার দৃষ্টান্ত

১. উটের কান্নায় প্রতিক্রিয়া : আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...রাসুল (সা.) এক আনসারির খেজুরবাগানে প্রবেশ করলে হঠাৎ একটি উট তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। উটটি নবী (সা.)-কে দেখে কাঁদতে লাগল এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তিনি উটটির কাছে গিয়ে এর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। এতে উটটি কান্না থামাল।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ উটের মালিক কে? এক আনসারি যুবক এসে বলল, উটটি আমার। তিনি বললেন, আল্লাহ যে তোমাকে এই নিরীহ প্রাণীটির মালিক বানালেন, এর অধিকারের ব্যাপারে তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না? উটটি আমার কাছে অভিযোগ করেছে, তুমি একে ক্ষুধার্ত রাখো এবং কষ্ট দাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৯)

২. একজন ব্যভিচারী নারী ও কুকুর : ‘....এক ব্যভিচারী নারী একটি কুকুরকে পিপাসার্ত দেখে তার জন্য জুতা দিয়ে পানি তুলে দিল। এ কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১)

জীবজন্তুকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি

অহেতুক কোনো জীবজন্তুকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ। কেননা অকারণে অবলা প্রাণীকে কষ্ট দিলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন নারী একটি বিড়ালকে না খাইয়ে এবং বন্দি করে রাখার কারণে জাহান্নামে গিয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৫)

ইসলাম দয়ার ধর্ম। এই দয়া শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রাণিজগৎ পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি পশুর কষ্টকেও রাসুল (সা.) গুরুত্ব দিয়েছেন এবং আমাদের দয়ালু হতে শিখিয়েছেন। তবে এর মানে এই নয় যে নাপাক প্রাণীর প্রতি দয়া করতে গিয়ে সেগুলোকে নিজের ঘরের ভেতর রেখে পালন করতে হবে।

আল্লাহ আমাদের সব সৃষ্টির সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য
হাদিসের কথা

পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানের যা করণীয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানের যা করণীয়

জীবদ্দশায় পিতা-মাতার সঙ্গে যেমন সদ্ব্যবহার করা কর্তব্য, তেমনি মৃত্যুর পরও তাদের জন্য সন্তানদের সদাচারণ অব্যাহত রাখা জরুরি। এক হাদিসে রাসুল (সা.) পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানদের চারটি আমল অব্যাহত রাখতে বলেছেন।

عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ يُحَدِّثُ الْقَوْمَ قَالَ‏:‏ كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَجُلٌ‏:‏ يَا رَسُولَ اللهِ، هَلْ بَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ بَعْدَ مَوْتِهِمَا أَبَرُّهُمَا‏؟‏ قَالَ‏:‏ نَعَمْ، خِصَالٌ أَرْبَعٌ‏:‏ الدُّعَاءُ لَهُمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا، وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لاَ رَحِمَ لَكَ إِلاَّ مِنْ قِبَلِهِمَا‏.‏

অর্থ : আবু উসাইদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমরা নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার কোনো অবকাশ আছে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।

চারটি উপায় আছে। এক. তাদের জন্য দোয়া করা। দুই. তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। তিন. তাদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা।
এবং চার. তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, যারা তাদের মাধ্যমে তোমার আত্মীয় (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৬৪)।
 

মন্তব্য

রংধনু পাহাড় নিয়ে কোরআনে যা বলা হয়েছে

আসআদ শাহীন
আসআদ শাহীন
শেয়ার
রংধনু পাহাড় নিয়ে কোরআনে যা বলা হয়েছে
ফাইল ছবি

বিশ্বজগতে বিস্তৃত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নানা নিদর্শনের মধ্যে এমন কিছু স্থান আছে, যা কেবল চোখে দেখার জন্য নয়, বরং অন্তরে উপলব্ধির জন্য। তেমনই এক আশ্চর্য সৃষ্টি চীনের Zhangye Danxia Landform Geological Park-এ অবস্থিত রংধনু পাহাড় বা Rainbow Mountains, যা নানা রঙের স্তরে স্তরে গঠিত এক অসামান্য সৌন্দর্য।

এই পাহাড় দেখে মনে হয় যেন মহান কোনো শিল্পী রংতুলি দিয়ে সযত্নে এঁকেছেন। তবে এই রঙিন শিলার ঢেউ শুধু সৌন্দর্য নয়, ঈমানদারদের কাছে এটি এক পরম সত্যের নিদর্শন, যাকে আমরা কোরআনের আলোকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

রেইনবো মাউন্টেনের ভূতাত্ত্বিক পরিচয়

চীনের গানসু প্রদেশে অবস্থিত এই পাহাড়ি অঞ্চলটি মূলত ‘Danxia Landform’ নামে পরিচিত। ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ২৪ মিলিয়ন বছর ধরে গঠিত এই স্তরবিন্যাস মূলত লাল বালুকা পাথর এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের জারণ বিক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে। তবে রঙিন রেখার সুষম বিন্যাস ও বৈচিত্র্য দেখে মনে হয় যেন এটি একটি কল্পনার জগৎ। লাল, কমলা, হলুদ, নীল, সবুজ—সব রঙের নিখুঁত ভারসাম্য যেন পাহাড়ের প্রতিটি বাঁকে এক নতুন কবিতা রচনা করে।

যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই রং। এই পাহাড় আসমানি, কমলা, লাল, হলুদ, সবুজ—সব রঙে রাঙা। প্রকৃতি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সুবিশাল ক্যানভাসে তুলির টানে সৃষ্টি করেছে এই রংমহল।

ভূবিজ্ঞানীরা বলেন, টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে শুষ্ক পর্বতগাত্রে এমন রংধনুর সাত রং ফুটে উঠেছে।

টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল শিলাস্তর। শিলাস্তরে ছিল প্রচুর খনিজ পদার্থ, রঙিন সিলিকাসহ নানা উপাদান। বহু বছর ধরে ঋতু পরিবর্তন, ঝড়-বৃষ্টি, তুষারপাত এবং নানা রকম রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রূপ পরিবর্তন করতে করতে তৈরি হয়েছে বর্তমানের রেইনবো মাউন্টেন। কিন্তু এই নিখুঁত শৈল্পিক বিন্যাস কি কেবল প্রকৃতির সপ্তম আশ্চর্যের খেলা?

আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে প্রকৃতি

পবিত্র কোরআন বারবার আমাদের চোখ ফেরাতে বলেন প্রকৃতির দিকে, কারণ The beauty of nature আল্লাহর নিদর্শন। কোরআনে বলা হয়েছে : ‘তুমি কি দেখো না যে আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফলমূল উৎপন্ন করেন? আর পাহাড়গুলোতেও আছে সাদা, লাল এবং নানা রঙের রেখাযুক্ত অংশ ও নিকষ কালো।

’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৭)

প্রখ্যাত মুফাসসির শায়খ আবদুর রহমান আস-সাদি (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলা যেভাবে পৃথিবীকে স্থিতিশীল রাখার জন্য পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন, সেভাবেই তিনি সেই পর্বতগুলোকেও রূপ দিয়েছেন বৈচিত্র্যময় রঙের, সৌন্দর্য ও মাধুর্যের এক বিস্ময়কর আবরণে।

আয়াতে ব্যবহৃত ‘জুদাদ’ শব্দটির অর্থ পর্বতের বুকে আঁকা রেখা বা শিরা। তিনি বলেন, একটি পর্বতের মধ্যেই দেখা যায় সাদা শিরা, লালচে বা পিঙ্গল রেখা এবং গভীর কালো রেখা—যাকে বলা হয়েছে ‘গারাবিবু সুদ’, যার অর্থ অত্যন্ত গাঢ় কালো, যেন কাকের পালকের মতো নিখাদ কালো। (তাফসিরে সাদি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৮৮)

এই আয়াতটি চীনের রংধনু পাহাড়কে স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে বলা হয়েছে—‘নানা রঙের রেখাযুক্ত পাহাড়’, যা সুনির্দিষ্টভাবে Danxia-এর বর্ণনা মনে করায়। প্রকৃতির এই রঙিন বিন্যাস কেবল চাক্ষুষ আনন্দের বিষয় নয়, এটি আল্লাহর কুদরতের প্রতীক।

রংধনু পাহাড় ও ‘তাফসিরুল আয়াত’

কোরআনে একটি শব্দ বারবার ব্যবহৃত হয়েছে—তাফসিরুল আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনের বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা ও পুনরাবৃত্তি। এটি প্রকৃতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যখন আমরা রংধনু পাহাড়ের মতো সৌন্দর্য দেখি, তখন তা আমাদের চিন্তা-ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীতে নানা রঙের বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এতে আছে নিদর্শন চিন্তাশীল জাতির জন্য।’ (সুরা : আন-নাহল, আয়াত : ১৩)

চীনের রংধনু পাহাড় যেন এই আয়াতের জীবন্ত ব্যাখ্যা। এখানে রঙের যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তা মানুষের দৃষ্টি ও হৃদয়—উভয়কে আকৃষ্ট করে এবং বিশ্বাসী হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে স্রষ্টার প্রশংসা।

চিত্রশৈলী ও কোরআনের অলংকার

কোরআনের ভাষা অলংকারপূর্ণ, চিত্রাত্মক ও ভাবনাবোধক। যখন আমরা পাহাড়ের রঙিন রূপ দেখি, তখন মনে পড়ে কোরআনের সেই উপমা যেখানে মেঘ, পাহাড়, আলো-আঁধারির সমন্বয়ে সৃষ্টিশীলতা ফুটে ওঠে; কোরআনে বলা হয়েছে : ‘আল্লাহর সৃষ্টিকে দেখো! কিভাবে তিনি বিভিন্ন রঙের সৃষ্টি করেছেন!’ (সুরা : আন-নাহল, আয়াত : ১৬)

Zhangye Danxia যেন এই আয়াতের চিত্ররূপ। যেমনভাবে কোরআন একটি চিত্রকল্প সৃষ্টি করে, তেমনি এই পাহাড় তার রং ও রেখায় আমাদের সামনে একটি জীবন্ত আলোকচিত্র তুলে ধরে।

রংধনু পাহাড় ও মানুষের হৃদয়ের সংলাপ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক দর্শনের বিষয় নয়, এটি মানুষের হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করে। কোরআনে বলা হয়েছে : ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য নিদর্শন আছে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)

যিনি রংধনু পাহাড়ের মতো নিখুঁত নকশা সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি নিঃসন্দেহে একজন সুবিশাল পরিকল্পনাকারী। এখানে কেবল শৈল্পিকতা নয়, বরং রয়েছে গণিত, রসায়ন ও সময়ের নিখুঁত সমন্বয়। এটি কেবল সৌন্দর্য নয়, এটি একটি মহাজাগতিক সিম্ফনি।

প্রকৃতির রং ও আত্মার জাগরণ

রং মানুষের মনোজগতে বিশেষ প্রভাব ফেলে। রংধনু পাহাড়ের প্রতিটি শিলা যেন একটি বার্তা বহন করে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ রং দিয়েছেন, যেমন রং তিনিই দিতে পারেন।’ (সুরা : আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৩৮)

এই আয়াতে সিবগাতুল্লাহ বা ‘আল্লাহর রং’ কথাটি এসেছে। চীনের এই পাহাড় সেই রঙেরই এক নিদর্শন, যা শুধু চাক্ষুষ রূপ নয়, আধ্যাত্মিক উপলব্ধির একটি উৎস।

রঙিন পাহাড়, রঙিন জীবন ও ঈমানের প্রতিচ্ছবি

চীনের রংধনু পাহাড় প্রকৃতির এক বিস্ময়, কিন্তু একজন মুমিনের জন্য এটি তার ঈমানের শক্তি পুনর্জাগরণের উপলক্ষ। এটি প্রমাণ করে যে পৃথিবীতে এমন কোনো কিছুর সৃষ্টি হয়নি, যা উদ্দেশ্যহীন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তা ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।’ (সুরা : আদ-দুখান, আয়াত : ৩৮)

এখানে এই পাহাড় যেন চিৎকার করে বলে—‘আমার পেছনে এক মহান পরিকল্পক আছেন।’ এবং সেই পরিকল্পকের প্রতি আমাদের ঈমান আরো গভীর হয়, যখন আমরা কোরআনের আয়াত এবং পাহাড়ের রংকে মিলিয়ে দেখি।

আল্লাহর নিপুণ শিল্পকর্মের বহিঃপ্রকাশ  

রেইনবো মাউন্টেন—এ এক চিত্রকরের তুলির ছোঁয়া নয়, বরং আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় গঠিত প্রাকৃতিক শিল্পকর্ম। যুগে যুগে এই বৈচিত্র্য নজরে এসেছে ভূবিজ্ঞানীদের, পর্যটকদের, এমনকি সাধারণ পথিকেরও। কিন্তু আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এই বৈশিষ্ট্যের ইঙ্গিত দিয়েছেন হাজার বছর আগেই, যখন মানুষের জ্ঞান এই প্রাকৃতিক রহস্যের কেবল প্রান্ত স্পর্শ করত।

উপরোক্ত আয়াত আমাদের দৃষ্টি দেয় প্রকৃতির গভীরে এবং নির্দেশ করে এক মহান শিল্পীর দিকে, যিনি তাঁর সৃষ্টিকে শুধু প্রয়োজনের জন্যই গড়েননি, বরং দিয়েছেন সৌন্দর্য, শৈল্পিকতা ও ভাবগম্ভীরতা। প্রতিটি পাহাড় যেন এক একটি মৌন কবিতা—সাদা রেখা তার পবিত্রতা, লাল তার আবেগ, আর গাঢ় কালো তার গভীরতা ও গাম্ভীর্য প্রকাশ করে।

এই রঙিন পর্বতগুলো শুধু প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়, বরং তারা আল্লাহর কুদরত ও জ্ঞানের সাক্ষ্য বহন করে। তারা নীরবে ঘোষণা করে : ‘তোমাদের স্রষ্টা কেবল ক্ষমতাবানই নন, তিনি অপার সৌন্দর্যেরও অধিকারী।’

অতএব, উপরোক্ত আয়াত কেবল ভৌগোলিক সত্যের বর্ণনা নয়, এটি এক আত্মিক আহবান—মানুষ যেন প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব, জ্ঞান, শক্তি ও সৌন্দর্য অনুধাবন করে। সত্যিই সৃষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে আছে স্রষ্টার নিপুণতা। চোখের সামনে দৃশ্যমান প্রতিটি পাহাড়ের বুকে আঁকা রঙিন রেখাগুলো যেন তাঁর মহানত্বের মৌন সাক্ষী।

তথ্যঋণ

The Holy Qur’an, translated by Sahih International.

Geological studies on Zhangye Danxia Landform– Chinese Academy of Sciences.

NASA Earth Observatory reports on multicolored landforms.

Signs in the Universe–Dr. Zaghloul El-Naggar.

Tafsir al-Jalalayn, Tafsir ibn Kathir- interpretations on Surah Fatir and Surah Nahl.

Colours in the Qur’an : Szmbolism and Science – Islamic Research Institute.

মন্তব্য

প্রথমবার হজে গেলে যেসব বিষয়ে সতর্কতা জরুরি

আজিজ আল কাউসার
আজিজ আল কাউসার
শেয়ার
প্রথমবার হজে গেলে যেসব বিষয়ে সতর্কতা জরুরি
ফাইল ছবি

আর কয়েক দিন পরই শুরু হচ্ছে হজের ফ্লাইট। গোটা বিশ্ব থেকে কাবার মেহমানরা ছুটে চলবেন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে। হজ একটি আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। লম্বা এই সফরে ইবাদতের নিয়ম-কানুন জেনে নেওয়া প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য আবশ্যকীয়।

হজযাত্রীরা বাংলাদেশ ত্যাগ করার আগেই এই প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নেবেন। প্রথমবারের মতো যাঁরা হজে যাচ্ছেন তাঁদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং সফর হতে যাচ্ছে। তাই যার যার মুয়াল্লিমের মাধ্যমে বা ভালো কোনো আলেমের তত্ত্বাবধানে হজের প্রশিক্ষণ নেবেন। হজের সময় বিশেষ করে ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ এই পাঁচ দিন কোথায় কিভাবে কোন কাজ করতে হবে—তা ভালোভাবে জেনে নেবেন।

কোথায় কোন দোয়া পড়তে হবে তা মুখস্থ করা কিংবা ছোট কোনো দোয়ার বই সঙ্গে রাখবেন। সফরে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ল্যাগেজে করে অবশ্যই নিয়ে যাবেন। যেমন—পুরুষদের জন্য এহরামের কাপড় দুই সেট, দুই ফিতার জুতা বা স্যান্ডেল, সুগন্ধিমুক্ত সাবান, কেননা হজের সময় কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নেবেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার পাসপোর্ট, হজের নুসুক কার্ড, মুয়াল্লিম নাম্বার ও টাকা-পয়সা স্বযত্নে আপনার সঙ্গেই রাখবেন। তা অন্য কাউকে দিয়ে বহন করাবেন না। তা রাখার জন্য বেল্টের ব্যাগ বা গলায় ঝোলানো ব্যাগ ব্যবহার করবেন। সফরে প্রতিটি ব্যাগে হাজির নাম ও পাসপোর্ট, এজেন্সি ও ফোন নাম্বার দিয়ে ট্যাগ ব্যবহার করবেন। হজের মাসলা-মাসায়েলগুলো ঠিকমতো আদায়ের জন্য সঙ্গে একটি হজ গাইড বই রাখবেন অথবা আগে হজ করেছেন অভিজ্ঞ আলিমের সঙ্গেই থাকার চেষ্টা করবেন।

সর্বোপরি আল্লাহর কাছে সুষ্ঠুভাবে হজ আদায় এবং নিরাপদ সফরের জন্য দোয়া করা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ