<p>চুপ করে বসে না থেকে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মত ও পথের মানুষ, শ্রমিকসহ দেশের সব মানুষের কাছে আহ্বান জানাতে চাই- এখন আর চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। এক হয়ে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। আমাদের এক হয়ে ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।</p> <p>মে দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২ মে) অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। আজ বিকেল ৪টায় সমাবেশ শুরুর আগে জাসাস শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। লাল কাপড়ের বিশাল ব্যানারে সমাবেশ মঞ্চের একপাশে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবির পাশাপাশি লেখা ছিল ‘মে দিবসের অঙ্গীকার রুখতে হবে স্বৈরাচার’।</p> <p>মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমন এক সময় মে দিবস পালন করছি যখন দেশের মেহনতি মানুষ তাদের ন্যুনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত, মনে হয় যেন দেশটা দৈত্য-দানবের কবলে পড়ে সব কিছু তছনছ হয়ে গেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গুম-খুন, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করা। বেগম খালেদা জিয়া এখনো কারাবন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করা হয়েছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে- হাজার হাজার মানুষ কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, সাজা দেওয়া হচ্ছে।’</p> <p>শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশে সবচেয়ে নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেণি। তারা ভালো-মন্দ খেতে ও সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়াতে পারেন না। তারা ন্যূনতম মজুরি পায় না। এই অবস্থায় এ সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেই চলেছে। আবারও জ্বালানির মূল্য বাড়ানো হয়েছে। দেশে  লুটপাটের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে। এখন গ্রামের বিরোধী মত-পথের মানুষদের ব্যবসা-বাণিজ্য গ্রাস করে ফেলা হয়েছে।’</p> <p>ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের লেবাসে ভিন্ন কৌশলে দেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আগের মতো পার্লামেন্টে বিল পাস করে তারা এবার বাকশাল করতে চায় না। গণতন্ত্রের লেবাসে ছদ্মবেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গণতন্ত্রকামীদের দমন করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’</p> <p>এ সময় সরকারের দমনপীড়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আরো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি। অতীতে পরাজিত হইনি, পরাজিত হব না। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার জেগে উঠে পাখা ছড়িয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা কথা, গণতন্ত্রের কথা সোচ্চার কণ্ঠে বলে। অনেকে বলেন- এটা বিএনপির সংগ্রাম। এটা বিএনপির সংগ্রাম নয়; এটা এ দেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ, গণতান্ত্রিক সংগঠনের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম।’</p> <p>সমাবেশ শুরুর আগ থেকে ঢাকার আশপাশের শিল্পাঞ্চল থেকে মাথায় লাল ফিতা এবং হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেন। রাজধানীর নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে শ্রমিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফকিরাপুলে অতিক্রম করে আরামবাগের গিয়ে তা শেষ হয়। এতে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।</p> <p>শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় আরো বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরাফত আলী সপু, আমিনুল হক, হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মামুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, যুব দলের মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।</p>