শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠজনদের বাদ দিয়ে নব্য আওয়ামী লীগ বা তথাকথিত পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগ গঠনের পরিকল্পনা চলছে। তবে আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব এই প্রচেষ্টাকে ‘প্রতারণা’ ও ‘দলকে ধ্বংস করার চক্রান্ত’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। অন্যদিকে হাসিনাকে বাদ দিয়ে নতুন আওয়ামী লীগ গঠিত হলে দিল্লির পক্ষে তা সুখকর হবে না বলে মনে করছে দেশটির কূটনীতিকরা। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।
ভারতের কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনাকে বাদ দিয়ে নব্য আওয়ামী লীগ গঠিত হলে দিল্লির পক্ষে তা সুখকর হবে না। কারণ এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশের যে সব আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীর নাম উঠে আসছে, তাঁদের ভাবমূর্তি সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন নয়। উপরন্তু তাদের কয়েকজন পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ভারতের এক সাবেক কূটনীতিকের মতে, ‘আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক ভাবে ভারতের বন্ধু ও আস্থাভাজন রাজনৈতিক শক্তি।
তার নেতৃত্বও পাকিস্তান-বান্ধবদের হাতে চলে গেলে ভারতের পক্ষে তা বিপর্যয়ের চেয়ে কম কিছু হবে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লার এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একান্ত বৈঠকে তাদের বলেছিলেন— সাবেক স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী, ঢাকার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস, সাবেক সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির’ নেতাদের নেতৃত্বে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁদের মেনে নিতে হবে। হাসনাত লেখেন, ‘আমাদের বলা হয়— রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তাঁরা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবেন, হাসিনাকে অস্বীকার করবেন এবং তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবেন এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবেন।’
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘হাসনাতের পোস্টের আগেই আমরা এই চক্রান্তের বিষয়টি জানতে পারি।
নামগুলিও নতুন নয়। এই ভাবে তারা দেখাতে চায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেও অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে। তবে সেটা হবে প্রতারণা। মানুষকে এ ভাবে ভুল বোঝানো যায় না।’
তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে সেনাঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের পরে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু নেতাকে নিয়ে একটা আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা হয়েছিল।
তবে তা ব্যর্থ হয়। এবারও তাই হবে।’
কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা আরেক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আপাতত এই ‘রিফাইন্ড’ চক্রান্তই তাঁদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বললে তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এলাকায় ফিরে নির্বাচনে অংশ নিতেও দেওয়া হবে। নতুবা তাদের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার। কয়েকজন বিএনপি নেতা এবং সেনাবাহিনীর অনুগত ব্যবসায়ী ফোন করে এই প্রস্তাব দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তবে জেলায় জেলায় ভার্চুয়াল মিটিং করে আওয়ামী লীগ এই চক্রান্ত মোকাবিলার চেষ্টা করছে বলে জানান ওই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এসব মিটিংয়ে শেখ হাসিনা নিজে যুক্ত হচ্ছেন। কর্মীদের কথা শুনছেন। তাদের আশ্বস্ত করছেন। তিনি আরো জানান, শেখ হাসিনা বলছেন, এদের দিন ফুরিয়ে আসছে। আমি যখন বেঁচে আছি, শিগগিরই ফিরব। কর্মীদের ওপর হওয়া হামলা-নির্যাতনের বিচার করব।
৬৪টি জেলার মধ্যে ২৩টি জেলার কর্মীদের সঙ্গে এই বৈঠক শেষ হয়েছে উল্লেখ করে এই নেতা আরো বলেন, হাসিনা নেতাকর্মীদের বলছেন, ‘আমি দেশ ছাড়তে চাইনি। পদত্যাগপত্রও দেইনি। আমাকে জোর করে বিমানে তুলে দেশছাড়া করা হয়েছে। চক্রান্ত করে আমার সরকার ফেলা হয়েছে। এর শেষ দেখে ছাড়ব।’