<p style="text-align:justify">সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার সুহান খান বলেছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে ‘খেলাপি ঋণ গ্রহীতা’-এর কঠোর সংজ্ঞা ও তার প্রয়োগ এই মৌলিক নীতির সঙ্গে বেশ সাংঘর্ষিক। কারণ, কোম্পানির সাধারণ শেয়ারহোল্ডিং বা পরিচালনার মাধ্যমে যে কোনোভাবে যুক্ত অন্য সব কোম্পানির ঋণ গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনার ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার সুহান খান। </p> <p style="text-align:justify">তিনি আরও বলেছেন, যে কোম্পানি আইনের মৌলিক নীতি, যা সালোমন বনাম সালোমন অ্যান্ড কো. লিমিটেড (১৮৯৭) মামলায় প্রতিষ্ঠিত হয়, তা হলো একটি কোম্পানি তার সদস্যদের বা শেয়ারহোল্ডারদের থেকে পৃথক একটি আইনগত সত্তা। এই মৌলিক তত্ত্ব, যা ‘করপোরেট ভেইল’ বা ‘অন্তর্ভুক্তির পর্দা’ নামে পরিচিত, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে স্বীকৃত।</p> <p style="text-align:justify">সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বলেন, যদিও আদালত এই নীতিকে সমর্থন ও প্রয়োগ করে, তারা কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ‘কের্পোরেট ভেইল’ ছেদ করার ক্ষমতা রাখে। এই পদক্ষেপটি মূলত কোম্পানির কাঠামোর অপব্যবহার রোধ করতে এবং কোম্পানির প্রকৃত স্বরূপ এবং এর পেছনের ব্যক্তিদের উন্মোচন করতে নেওয়া হয়। তবে, বাংলাদেশের ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ ও আরও নির্দিষ্টভাবে উহার ধারা ৫(গগ)-এ উল্লিখিত ‘খেলাপি ঋণ গ্রহীতা’-এর কঠোর সংজ্ঞা ও তাহার প্রয়োগ এই মৌলিক নীতির সঙ্গে বেশ সাংঘর্ষিক। এই আইন এবং ইহার অনমনীয় প্রয়োগের ফলে যদি কোনো গ্রুপের কেবল একটি কোম্পানি তাহার ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে সমস্ত পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার এবং সংশ্লিষ্ট সকল কোম্পানির ক্রেডিট তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্ট নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। এর ফলে প্রতিটি কোম্পানির পৃথক আইনগত ব্যক্তিত্বকে কার্যকরভাবে অগ্রাহ্য করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">ব্যারিস্টার সুহান খান বলেন, এই প্রথাটি একটি প্রতিকূল ও ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে, যেখানে এক সত্তার ব্যর্থতা ওই কোম্পানির সাধারণ শেয়ারহোল্ডিং বা পরিচালনার মাধ্যমে যে কোনোভাবে যুক্ত অন্য সব কোম্পানির ঋণগ্রহণ ও নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনার ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এর বিস্তৃত ক্ষতিকর পরিণতি রয়েছে, যা ব্যবসা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য ক্ষতিকর এবং যেটি শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আদালতের জন্য এই কঠোর আইনি বিধানটি পুনঃবিবেচনা করা এবং প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি আইনের ‘করপোরেট ভেইল’ নীতির সঙ্গে সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরি। এটি ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। তারপরও উল্লেখ্য, যদি কোনো ক্ষেত্রবিশেষে এটি প্রমাণিত হয় যে কোনো ব্যবসায়ী পৃথক পৃথক কোম্পানিগুলো মূলত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার জন্য ও ঋণের টাকা আত্মসাৎ করার নিমিত্তে ব্যবহার করেছে, যা আমরা আইনের দৃষ্টিতে ‘প্রতারণামূলক এবং জালিয়াতি লেনদেন’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করি, কেবল সেইসব ক্ষেত্রেই আদালত ‘করপোরেট ভেইল’ বা অন্তর্ভুক্তির পর্দা ছেদ করতে পারবে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>সূত্র</strong>: বাংলাদেশ প্রতিদিন</p>