বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ১৮ কোটিরও বেশি মানুষের একটি দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির পথে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ ২৫ অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হতে পারে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে তরুণ জনসংখ্যা, দ্রুত নগরায়ণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিস্তার।
স্বনামধন্য অস্ট্রিয়ান বিশেষজ্ঞ পিটার ড্রকারের মতে, জনমিতিই নিয়তি নির্ধারণ করে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার গঠন এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এই প্রবৃদ্ধির একটি শক্তিশালী খাত হলো স্বাস্থ্যসেবা।
১৯৫৪ সালে শুরু হওয়া অ্যাকমি ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো ও সফল ওষুধ কোম্পানি। একসময় দেশের বেশির ভাগ ওষুধ আমদানিনির্ভর থাকলেও এখন বাংলাদেশ নিজের চাহিদার ৯৮% দেশেই উৎপাদন করে ও ১৫০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। বিশ্বে বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদনে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, কারণ দেশের জনগণের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্তে উন্নীত হচ্ছে ও উন্নত চিকিৎসা চাচ্ছে।
২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের বেশি, যা দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি। এই চাহিদা মেটাতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য অবকাঠামো এখনো যথেষ্ট নয়। প্রতি হাজারজনে মাত্র একটি হাসপাতালের শয্যা ও দক্ষ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি রয়েছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এখন বিনিয়োগের জন্য এক সুবর্ণ সময়। মানসম্পন্ন সেবার চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় সেবার জোগান সীমিত।
এই ঘাটতি পূরণে বিনিয়োগকারীরা একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে এগিয়ে আসতে পারেন। সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কর ছাড়সহ নানা সুবিধা দিচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ওষুধ উৎপাদন, এপিআই (কাঁচামাল), বায়োটেক এবং স্বাস্থ্য বীমা খাতেও রয়েছে বিশাল সুযোগ। বর্তমানে মাত্র ১% মানুষের স্বাস্থ্য বীমা আছে— এই পরিসংখ্যান এক বিশাল অনাবিষ্কৃত বাজারের ইঙ্গিত দেয়। গত দুই দশকে দেশে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। রোগীরা এখন শুধু সেবা নয়, গুণগত মানও চায়। অথচ অনেক মৃত্যু ঘটছে চিকিৎসার গুণমানের অভাবে, শুধু দারিদ্র্যের কারণে নয়। তাই ক্লিনিক, ল্যাব, হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিনিয়োগ করা জরুরি। এটি শুধু জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন নয়, ব্যাবসায়িক দিক থেকেও লাভজনক।
স্বাস্থ্য খাতের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা। দক্ষ জনবল ছাড়া মানসম্পন্ন চিকিৎসা সম্ভব নয়। এ ছাড়া ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা খাতও দ্রুত এগোচ্ছে। এই বাজার এখন বছরে ১০% হারে বাড়ছে ও অচিরেই ৪০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে ধারণা। টেলিমেডিসিন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, ডাটা ব্যবস্থাপনা—সব কিছুতেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ২০২৪ সালে ৫০% পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৮%।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত এখন এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ ক্ষেত্র। চাহিদা বাড়ছে, মানুষ সেবার মান নিয়ে সচেতন হচ্ছে, সরকার বিনিয়োগে সহায়ক—এই মুহূর্তে যারা উদ্যোগ নেবেন, তারাই ভবিষ্যতের এই খাতের পথপ্রদর্শক হতে পারবেন।
সূত্র : ফোর্বস