<p style="text-align: justify;">রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। ভর্তি পরীক্ষার মধ্যেই এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হল গেটে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতাকর্মীদের হাতে রড ও লাঠিসোটা দেখা গেছে। তবে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার দাবি, বিষয়টি দুই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঝামেলা। তারা সেটি সমাধান করেছেন।  </p> <p style="text-align: justify;">এদিকে এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হলে অবস্থানরত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এ সময় অনেক অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীকে দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতেও দেখা গেছে। </p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে শাকিল আহমেদ নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমার এ ইউনিটের পরীক্ষা। তাই রাতে থাকার জন্য আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় মাদার বখশ হলে এক বড় ভাইয়ের কাছে আসি। কিন্তু রিকশা থেকে নামার পর দেখি হলের গেটে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। তা দেখে আমি আতঙ্কিত হয়ে পরি এবং ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরে যাই। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে আমার সেই বড় ভাই আমাকে তার কক্ষে নিয়ে যান।’</p> <p style="text-align: justify;">এ ঘটনায় জড়িতরা হলেন, ছাত্রলীগ নেতা আল ফারাবী। তিনি ফাইন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির পক্ষ থেকে মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। এ ছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী তানভীর আহমেদসহ অনেকে।</p> <p style="text-align: justify;">অপরদিকে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা হলেন, ফলিত রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ। তিনি জিয়াউর রহমান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। অপর ছাত্রলীগ নেতা মিশকাত হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। </p> <p style="text-align: justify;">প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদের এক ছোটভাই তার বান্ধবীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের পুকুর পাড়ে বসেছিলেন। তার অপর পাশেই বসে ধুমপান করছিলেন মাদার বখ্শ হল ছাত্রলীগের কর্মী তানভীর আহমেদ ও তার এক বড়ভাই। ধুমপানের ধোঁয়ায় অস্বস্তি অনুভব করলে তাদের ধুমপান করতে নিষেধ করেন সাজিদের সেই ছোট ভাই। এর প্রতিক্রিয়ায় তাদের সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেন তানভীর। পরে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।</p> <p style="text-align: justify;">পরবর্তীতে বান্ধবী নিয়ে বসা ওই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে জিয়া হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদকে ফোন দেন। এরপর সাজিদ তার অনুসারীদের নিয়ে মাদার বখ্শ হলের দিকে আসেন। অপরদিকে তানভীর মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবীকে ডেকে নেন। উভয় পক্ষের নেতাকর্মীরা হল গেটে আসলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে ফারাবী ও তার অনুসারীরা হল থেকে রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হল গেটে এসে সাজিদ ও তার অনুসারীদের মারতে উদ্যত হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের আরেক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী মিশকাত হাসানসহ অন্যান্যরা তাদের প্রতিহত করেন।</p> <p style="text-align: justify;">পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। এ সময় তিনি সবাইকে দুই মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পরে জড়িতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে আসেন তিনি। সেখানে শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সমাধান না করেই টুকিটাকি চত্বর ত্যাগ করেন সাধারণ সম্পাদক ও তার অনুসারীরা।</p> <p style="text-align: justify;">ঘটনার বিষয়ে মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আল ফারাবী বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে সেটি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে সমাধান করে দিয়েছেন।’</p> <p style="text-align: justify;">দেশীয় অস্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো লাঠিসোটা নিয়ে আসিনি। তবে এমন হতে পারে অন্যরা কিছু নিয়ে এসেছিল, আর ঘটনাচক্রে হয়তো সেটা আমার হাতে দেখা গেছে।’</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়া হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাজিদ বলেন, জিয়া হল ও মাদার বখ্শ হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। সেখানে দুই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মিলে সমাধান করে দিয়েছি।</p> <p style="text-align: justify;">জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। এটা নিয়ে সেখানে হট্টগোল লেগেছিল। দুই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সেটা ছাড়িয়ে দিয়েছিল। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে এক মিনিটের মধ্যে সবাইকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলি। পরে সেটি মিমাংসা করে দিয়েছি।’ তবে ঘটনাস্থলে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘দুই হলের ‘নন-পলিটিক্যাল’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট্ট একটি ঝামেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে মিমাংসা করে দিয়েছি।’ দেশীয় অস্ত্রের বিষয়ে তিনিও অবগত নন বলে জানান।</p> <p style="text-align: justify;">মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাগবিণ্ডাা হয়েছিল। পরে তারা নিজেরাই বসে মিমাংসা করে নিয়েছে।’</p>