১৮১৫ সালে লন্ডনে জন্মেছিলেন অ্যাডা লাভলেস। তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত কবি লর্ড বাইরন। মা শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারক অ্যান ইসাবেলা মিলবাংক ওরফে লেডি বাইরন। শিশু বয়স থেকেই গণিতে প্রতিভার ছাপ রাখতে শুরু করেন অ্যাডা।
মায়ের চাওয়া ছিল, মেয়ে গণিতবিদ হবে। তাই উইলিয়াম ফ্রেন্ড, উইলিয়াম কিং ও ম্যারি সমারভিলের মতো স্বনামধন্য গণিতবিদ ও গবেষককে অ্যাডার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। গণিতবিদ অগাস্টাস ডে মরগান ক্যালকুলাস ও বার্নিউলির সংখ্যার মতো জটিল উপপাদ্য অ্যাডাকে শেখানো শুরু করেন। সেই সময় অগাস্টাস ডে মরগান অ্যাডা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘গণিতশাস্ত্রে অ্যাডা একদিন তাঁর ছাপ রেখে যাবেন।
’
চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে অ্যাডা লাভলেসের প্রথম পরিচয় হয় ১৮৩৩ সালে। ব্যাবেজের উদ্ভাবিত ডিফারেন্স ইঞ্জিন দেখে চমত্কৃত হয়েছিলেন তিনি। অ্যাডার উৎসাহ ও গণিতের জ্ঞান দেখে ব্যাবেজ তাঁকে ‘গণিতের জাদুকর’ উপাধি দেন। ১৮৪০ সালে চার্লস ব্যাবেজ তাঁর অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের ওপর ইতালির তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারে লেকচার দিয়েছিলেন।
সেই লেকচারের ট্রান্সক্রিপ্ট ইংরেজিতে অনুবাদের দায়িত্ব পান অ্যাডা। লেকচারের বিষয়বস্তু পড়ার সময় অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের বেশ কিছু সমস্যা সমাধানের উপায় বের করেন তিনি। এ বিষয়ে চার্লস ব্যাবেজকে চিঠি লেখেন। দুই গণিতবিদের মধ্যে বেশ কিছু চিঠি চালাচালির পর অ্যাডা তাঁর নিজস্ব নোটসহ ১৮৪৩ সালে লেকচারের অনুবাদ প্রকাশকের কাছে পাঠান। সেই পাণ্ডুলিপির মধ্যে ব্যাবেজের লেকচারের চেয়ে অ্যাডা লাভলেসের নিজস্ব গবেষণার নোট ছিল বেশি।
সেই নোটস তিনি বর্ণক্রমানুসারে ‘এ’ থেকে ‘জি’ পর্যন্ত বিন্যাস করেছিলেন। নোট ‘জি’-এর মধ্যে ছিল বার্নিউলির সংখ্যা গণনায় অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনের জন্য তৈরি বিশেষ অ্যালগরিদম। একেই বলা হয় বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম। সেই সূত্রে প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার খেতাবের দাবিদার অ্যাডা লাভলেস। এর প্রায় ১০০ বছর পর ১৯৪০-এর দশকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের প্রচলন শুরু হয়।
গণিত ছাড়াও তড়িৎবিদ্যা, ফ্রেনোলজি ও সাহিত্যেও অ্যাডা লাভলেসের উৎসাহ ছিল। ১৮৫২ সালের ২৭ নভেম্বর মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন এই গুণী।