<p>খুলনায় নির্যাতনের পর পরিকল্পিতভাবে মাহমুদা আক্তার মিলি (৩২) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার এক মাস পর মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাতে মামলা দায়ের হয়। সেদিনই পুলিশ নিহতের স্বামী ও আবাসন ব্যবসায়ী নিউ বিশ্বাস প্রপার্টিজের মালিক তারেক বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে এবং আরো তিন অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে।</p> <p>পরে পুলিশ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) জানিয়েছে, গৃহবধূ হত্যায় গ্রেপ্তার তারেক বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন এবং নিহতের দেহ কবর থেকে উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ঘটনার প্রায় এক মাস পর গত ২৬ মার্চ রাতে হরিণটানা থানায় আদালতের নির্দেশে গৃহবধূ মিলি হত্যা মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। মামলার বাদী নিহতের মা সেলিনা বেগম।</p> <p>কালের কণ্ঠ’র হাতে আসা গৃহবধূকে নির্যাতনে একাধিক ভিডিও, মামলার এজাহার ও স্বজনদের থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে রায়েরমহল এলাকার হারেজ বিশ্বাসের ছেলে মো. তারেক বিশ্বাসের (৪০) সঙ্গে নগরীর খালিশপুরের মোশারফ হোসেনের মেয়ে মাহমুদা আক্তার মিলির বিয়ে হয়। এটি তারেকের দ্বিতীয় বিয়ে। তারেক খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। বিয়ের পর জমির ব্যবসা করার জন্য তারেক মিলির পরিবারের কাছে যৌতুক দাবি করেন। এক পর্যায়ে মিলির পরিবার তারেককে ২৫ লাখ টাকা দিলে নিউ বিশ্বাস প্রপার্টিজ নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আবাসন ব্যবসা শুরু করেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, গোপনে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শুরু হয় মাহমুদা আক্তার মিলির ওপর নির্যাতন। সব শেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মিলিকে মারধর ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এদিন নির্যাতনের এক পর্যায়ে মিলি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে খুলনা হেলথ কেয়ার হাসপাতাল নামের বেসরকারি একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে মিলির মা সেলিনা বেগম দেখতে গেলে মেয়ের কাছে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে পারেন। তাঁকে (মিলি) বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ওই দিন দিবাগত রাত ১১টার দিকে হাসপাতালেই মিলির মৃত্যু হয়। তারেক ও মিলি দম্পতির তালহা বিশ্বাস নামে দুই বছরের একটি ছেলে রয়েছে।  </p> <p>মিলির মা সেলিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ওরা আমার মেয়েকে দেখতে দেয়নি। তারেক তড়িঘড়ি ওকে নিয়ে গেছে। মিলির সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তারেক আগের বউ ও কর্মচারীরা মিলে পরিকল্পিতভাবে সুজিতে বিষ মিশিয়ে ওকে হত্যা করেছে। দুই বছরের টাকার জোরে পার পেয়ে যাচ্ছে। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘মিলির শরীরের কোথাও নির্যাতন করতে বাদ দেওয়া হয়। দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়েছে। দা দিয়ে কোপানো হয়েছে। চোখ-মুখ-নাক, হাতের কনুইয়ে বেধড়কভাবে মারা হয়েছে। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ তো ছিলই।’</p> <p>মিলিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপে স্ত্রী মিলিকে তারেকের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নির্যাতন, মিলির আর্তচিৎকার ও মারধর করতে দেখা গেছে। অন্য একটি ভিডিওতে পরিবারের সদস্যদের কাছে নিজ মুখে মিলির নির্যাতনের বর্ণনা শোনা গেছে।</p> <p>হরিণটানা থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার জানায়, মাহমুদা আক্তার মিলির মৃত্যুর প্রায় এক মাস পর তাঁর মা সেলিনা বেগম খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-২-এর বিচারক জামিউল হায়দারের আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। এতে মো. তারেক বিশ্বাস ছাড়াও তাঁর প্রথম স্ত্রী মোসা. নাসিমা (৩৫), প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. বিল্লাল ও বঙ্কিম অধিকারীকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার থানায় মামলা নথিভুক্ত করে প্রধান আসামি মো. তারেক বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। </p> <p>মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হরিণটানা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তারেক বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। এ ছাড়া নিহত মিমির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলতে হবে। আমরা এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’</p>