<p>ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন হারুন-অর-রশীদ (৩৫)। হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছিনতাইকারীদের কব‌লে পড়েন তিনি। কিন্তু ভ‌্যানের মায়া ছাড়তে না পারায় ক্ষুব্ধ ছিনতাইকারীরা হারুনকে নির্মমভাবে খুন করে। এ ঘটনায় জ‌ড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ।</p> <p>এর আগে বুধবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা থেকে মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার ক‌রে পুলিশ। তারা হলেন ওই উপজেলার মিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার লিটন মণ্ডল ওরফে রুবেল (২৩), রুমান (১৯) ও সাহিদুল (২০)।</p> <p>বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে স‌ম্মেলনক‌ক্ষে আ‌য়োজিত প্রেস‌ ব্রিফিংয়ে হারুন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।</p> <p>নিহত হারুন-অর-রশীদ জেলার নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দুলারডাঙ্গী গ্রামে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে তিনি স্ত্রী রহিমন বেগম ও আট বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে বসবাস করতেন। ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি।</p> <p>প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন হারুন। ওই দিন রাত ৮টার সময় কোতোয়ালি থানার গজারিয়া বাজার স্ট্যান্ড থেকে সাইনবোর্ড নামক এলাকায় যাওয়ার জন্য দেড় শ টাকায় হারুনের ভ‌্যান ভাড়া করেন রুবেল ও রুমান। এরপর কলাইহাট এলাকা থেকে সাহিদুলকে ভ্যানে তুলে নেন। যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন রুবেল। এরপর সাইনবোর্ড এলাকার পদ্মা নদীসংলগ্ন একটি মেহগ‌নিবাগানে নিয়ে যাওয়া হয় হারুন‌কে। সেখানে তাকে ধারালো চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে ভ্যান রেখে চ‌লে যেতে বলেন আসামিরা। কিন্তু হারুন ভ্যানের জন্য অনুনয়-বিনয় করলে আসামিরা বলেন, বেঁচে থাকলে ভ্যান কিনতে পারবেন, এখান থেকে চলে যান। হারুন এর পরও না আসায় এক পর্যায়ে আসামি রুবেল চাকু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর আসামিরা তার মাথায় একাধিক আঘাত করতে থাকে। হারুন নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামিরা ভ্যান নিয়ে চলে যান। পরদিন ওই এলাকা থেকে অজ্ঞাপরিচয় হিসেবে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে লাশ‌টি শনাক্ত করেন তার স্ত্রী র‌হিমন বেগম।</p> <p>তিনি ব‌লেন, এ ঘটনায় ১৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ছিনতাইসহ হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী রহিমন বেগম। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উপপ‌রিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান।</p> <p>দুই মাসের মধ্যে এ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার।</p> <p>পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের আদাল‌তে হাজির ক‌রে রিমান্ড চাওয়া হবে। ভ্যানটি উদ্ধারে অভিযান অব‌্যাহত র‌য়েছে।</p>