<p style="text-align: justify;">গাজীপুরের শ্রীপুরে পাঁচতলা ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মুলাইদ (বেগুনবাড়ী) এলাকায় মো. ফারুক খানের ওই বাড়ি থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।</p> <p style="text-align: justify;">দম্পতির স্বজনরা জানিয়েছে, ঘরের ভেতর ফাঁসিতে ঝুলছিল স্বামী। একই ঘরের বিছানায় পড়ে ছিল স্ত্রীর মরদেহ। ওই ঘরের টেবিলের উপর একটি ‘সুইসাইড নোট’ পড়ে ছিল। তাদের দাবি, তারা দুজনই আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে তারা আত্মহত্যা করেছেন, তা কেউ জানে না।</p> <p style="text-align: justify;">ওই দম্পতির নাম মো. ইস্রারাফিল হোসেন (১৭) ও রোকেয়া খাতুন (১৫)। নিহত ইস্রাফিল শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হলদি গ্রামের মফিজুল হকের ছেলে। রোকেয়া ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পস্তারি গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে। ইস্রাফিল ও রোকেয়ার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ এলাকায় আলাদা  বাসায় ভাড়া থাকতেন।</p> <p style="text-align: justify;">স্বজনরা জানায়, প্রায় সাত থেকে আট মাস আগে ইস্রাফিল ও রোকেয়া ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা দুজনই আলাদা বাসা নিয়ে বসবাস করেন। পরে উভয় পরিবার তাদের বিয়ে মেনে নিলে স্ত্রীকে নিয়ে ইস্রাফিল তার বাসা ছেড়ে বাবার ভাড়া বাসায় উঠেন।</p> <p style="text-align: justify;">স্বজনরা জানায়, ইস্রাফিল পাশের একটি ওয়ার্কশপে ও রোকেয়া একটি কারখানায় চাকরি করতেন।</p> <p style="text-align: justify;">রোকেয়ার বড় ভাই বোরহান উদ্দিন জানান, গত কয়েকদিন আগে ইস্রাফিল তার মা-বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। গত চারদিন তাদের (ইস্রাফিল ও রোকেয়া) সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফোন দিলেও তারা সাড়া দিতেন না। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের বুঝিয়ে বাসায় আনা হয়েছিল। আজ সকালে একই ঘরে তাদের দুজনের মরদেহ পড়ে থাকার খবর পান।</p> <p style="text-align: justify;">ইস্রাফিলের বাবা মফিজুল হক জানান, ফ্ল্যাটে পাশাপাশি কক্ষে থাকতেন তারা। তার বড় মেয়েও একই বাসায় থেকে একটি কারখানায় চাকরি করেন। কর্মস্থল যাওয়ার আগে তার মেয়ে ইস্রাফিলের ঘরের দরজা খোলা দেখেন। পরে ঘরের ভেতর উঁকি দিলে ইস্রাফিলকে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় ও রোকেয়াকে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। মেয়ের চিৎকারে টের পেয়ে তার মা ছুটে গিয়ে গলার ফাঁস খুলে ছেলেকে নামান। </p> <p style="text-align: justify;">খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠান।</p> <p style="text-align: justify;">শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, ওই ঘরের টেবিলের উপর থেকে ইস্রাফিলের লেখা একটি সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘মা-বাবা, আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমাদের কাছে থাকতে পারলাম না। আমার জান আমার জন্য ফাঁসিতে ঝুলেছে। তাই আমি থাকতে পারলাম না। আমি কাউকে দোষারোপ করি না। কারও কোনো দোষ নাই। আমার জান আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই ভালো থাকবা, আমিন। মা, আমার পাশে রোকেয়ার কবর দিও। মা আমি জানি না আমার জান কেন ফাঁসি দিল। তার জন্য সম্পূর্ণ আমি দায়ী। এতে কারও দোষ নাই।’</p> <p style="text-align: justify;">থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, প্রথমে রোকেয়া আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি সইতে না পেরে তাঁর স্বামী ইস্রাফিলও আত্মহত্যা করেন। এরপরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’</p>