<p>মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমিরুল ইসলাম (আনারস) ও মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ (কাপ পিরিচ) দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।</p> <p>বুধবার (৮ মে) দুপুরে গজারিয়া উপজেলার ইসমানিচর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। </p> <p>এ সময় হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম (আনারস) প্রতীকের  সমর্থকরা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারের সিল মারার চেষ্টা করে। পুলিশ ধাওয়া দিলে বুথের সিল ও কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। পরে কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। </p> <p>এদিকে পুলিশের ওপর হামলার চিত্র তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয় হোসেন্দি ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় অন্তত সাতজন সাংবাদিককে। </p> <p>বুধবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিক গুলজার হোসেন মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি। এ ঘটনায় সাংবাদিক গুলজার তিনজনের নাম উল্লেখ করে গজারিয়া থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সোয়া ৯টার দিকে ভোটকেন্দ্রের বাইরে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলামের সমর্থক মনিরুল হক মিঠু তার লোকজন নিয়ে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার শঙ্কায় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য মো. সোহেল সবাইকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর চাড়াও হয় মিঠু ও তার লোকজন। তারা পুলিশ সদস্যকে মারধর শুরু করে। ঘটনাটির পাশ থেকে ছবি এবং ভিডিও করছিলেন এক সাংবাদিক। পরে ওই পুলিশ সদস্যকে রেখে সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয় তারা। সাংবাদিকের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে মারধর করতে থাকে মিঠু ও তার লোকজন। পরে অন্য সাংবাদিকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আশ্রয় নিলে পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের মারাধরের জন্য তেড়ে আসতে থাকে মিঠু এবং তার লোকজন। মারধরের ঘটনার পর কেন্দ্রের ভেতরে মনিরুল হক মিঠু ও তার লোকজন প্রবেশ করেন। সাংবাদিকদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিতে থাকেন। দু-চারজন সাংবাদিক মেরে ফেললে কী হবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। সে ঘটনা ভিডিও করতে গেল মাইটিভি ও প্রথম আলোর সাংবাদিকের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।</p> <p>পুলিশ সদস্য মো. সোহেল রানা বলেন, ‘কেন্দ্রের পাশে একটি দোকান ছিল। সেখানে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা জড়ো হচ্ছিল। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমি তাদেরকে সরে যেতে বলি। সে সময় আনারসের সমর্থকরা আমার ওপর হামলা চালায়। সাংবাদিক ছবি তোলায় তাকেও মারধর করে।’</p> <p>এ ঘটনায় আরেক ভুক্তভোগী সাংবাদিক শেখ মোহাম্মাদ রতন বলেন, ‘সাংবাদিক গোলজারকে মারধরের পর ৩০ মিনিটের মতো কেন্দ্রের ভেতর আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আমরা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলাম; কিন্তু তারা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এতে আমারা হতভম্ব হয়েছি।’</p> <p>কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক রতন বৈরাগীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার পর কেনো ব্যবস্থা নিলেন না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে কিছুই হয়নি। সব ঠিক আছে। এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারব না।</p> <p>হামলায় আহত ভুক্তভোগী সাংবাদিক দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি গুলজার হোসেন জানান, ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের পাশেই কয়েকটি দোকান খোলা ছিল। দোকানগুলোর সামনে কয়েকজন আনারস প্রতীকের সমর্থক দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত দুজন পুলিশ আনারস প্রতীকের ওই সমর্থকদের দোকানের সামনে থেকে সরে যেতে বললে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে তাদের মারধর শুরু করেন। সেই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে তারা আমার ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে তারা আমার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পরে ছবি এবং ভিডিও ডিলিট করে পুলিশের মাধ্যমে মোবাইলটি ফিরিয়ে দেয়।</p> <p>মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। মনিরুল হক মিঠু, তানভীর হক তুরীন ও ইকবাল হোসেন স্বপনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে ওই অভিযোগে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p> <p>এদিকে দুপুর ১টার দিকে জেলার গজারিয়া উপজেলার ইসমানিচর এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। </p> <p>প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে কেন্দ্রটির পশ্চিম পাশের মাঠে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম ও মনসুর আহম্মেদ খান জিন্নাহর সমর্থকরা অবস্থান নেয়। উভয় পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় ভোটকেন্দ্রের ১৫০ গজের মধ্যে পরপর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পুলিশ শটগানের ছয় রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।</p> <p>গজারিয়া থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজিব খান বলেন, হোসেন্দি কেন্দ্রে এক পক্ষের সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা চালায়, তবে পুলিশের উপস্থিতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে হামলাকারীরা ব্যালট পেপারের সিল নিয়ে যাওয়ায় ভোটকেন্দ্রটি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।</p>