<p>চট্টগ্রামের পটিয়ার কলেজছাত্রী রিমার চাঞ্চল্যকর আত্মহত্যার মূল প্ররোচনাকারী ও মামলার প্রধান আসামি প্রেমিক মিজানুর রহমান মোরশেদকে (৩০) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে পটিয়া থানা পুলিশ আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নিহত রিমার প্রেমিক ও হবু স্বামী মোরশেদকে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক বেগম তাররাহুম আহমেদ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। </p> <p>এর আগে মঙ্গলবার রাতে মোরশেদকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে পটিয়া থানা পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকেই টানা ৬ দিন পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপনে থাকার পর আটক হন পুলিশের হাতে। বুধবার বিকেলে তাকে পটিয়া থানায় সিলেট থেকে নিয়ে আসা হয়। প্রেমিক মোরশেদকে ধরতে গত ২৭ জুন বৃহস্পতিবার থেকেই পটিয়া থানা পুলিশের এ চৌকস টিমটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। </p> <p>পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর থেকেই আসামি মোরশেদ নিজেকে আত্মগোপন করে ফেলে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। গত ১ লা জুলাই পটিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আশিকুল ইসলাম ও ওবায়েদ উল্লাহ'র নেতৃত্বে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সুচতুর আসামি মোরশেদ গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য নিজের অবস্থান ঘনঘন পরিবর্তন করায় তাকে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানা এলাকা হতে গ্রেপ্তারকরা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২ জুলাই মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন কদমতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হোটেল সাউথ সিটি থেকে গ্রেপ্তারকরা হয়।</p> <p>জানা যায়, চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর উপজেলা হাইদগাঁও ইউনিয়নের ৮ নং ওয়াডের মনির আহমদের কনিষ্ঠ কন্যা কলেজ পড়ুয়া রিমা আকতারের সাথে একই এলাকার মফিজুর রহমানের ব্যাংকার ছেলে মিজানুর রহমান মোরশেদের সাথে পারিবারিকও সামাজিক ভাবে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। ২৮ জুন শুক্রবার দুপুরে মেয়ে রিমার বাড়িতে। কিন্তু বিয়ের গায়ে হলুদের দিন গত ২৭ জুন প্রেমিক মোরশেদের যৌতুকের চাপ সহ্য করতে না পেরে কলেজ পড়ুয়া তরুণী আত্মহত্যার ঘটনায় পটিয়া থানায় সেই হবু স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। রিমার বাবা মনির আহমদ বাদী হয়ে বর মোরশেদকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত তরুণী রিমা আকতার মেহেদী অনুষ্ঠানের কয়েক ঘন্টা আগেই আত্মহত্যা করেন নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে রশিতে ঝুলে। মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন একটি চিরকুট।</p> <p>সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন রিমা- ‘প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে। অনেক ভালোবেসেছি এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছ। আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না, ভালো থেকো, আজকের দিনেও তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে সেগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না, আমি বাঁচতে পারতাম যদি আমি বেশি মান-সম্মান ওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমার পোস্ট মর্টেম করে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিও।’</p> <p>চিরকুটের শেষে রিমা আরো লিখে গেছেন, ‘আর আমার পরিবারকে বলছি মোরশেদকে তোমরা ছাড়বেনা। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দিবা।’</p> <p>রিমার বাবা মনির আহমদ ঘটনার জন্য হবু স্বামী মোরশেদকে দায়ী করে তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চেয়ে বলেন, তার লোভের বলি হয়েছে আমার আদরের মেয়ে। তারা বরযাত্রীর পরিবর্তে টাকা চেয়েছে, তাতেও আমরা রাজি হয়ে নগদ ২ লাখ টাকা দিয়েছি। বিয়ের কয়েকদিন আগ থেকে একের পর এক যৌতুক দাবি করে আসছিল। আমি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য। এবার সরকারের কাছে তার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন তিনি</p> <p>নিহত রিমার ভাই আজগর হোসেন বলেন, বিয়েতে বরযাত্রী খাওয়া দাওয়া বাবদ মোরশেদের পরিবারকে নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমার বোনের কাছে যৌতুক হিসেবে ফার্ণিচার, টিভি, ফ্রিজ এবং বিয়ের খরচ হিসেবে আরো নগদ টাকা দাবি করে। উভয়ের প্রেমের সম্পর্ক থাকা সত্বেও যৌতুক দাবি করার অপমান সইতে না পেরে আমার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। নিজের প্রাণ দিয়ে আমার বোন তাদের মুখোশ উম্মোচন করে দিয়ে গেছেন সমাজ তথা রাষ্ট্রের কাছে। মৃত্যুর আগে সে সুই সাইড নোটে নানা কথা লিখে রেখে গেছেন। আমি গ্রেফতারকৃত মামলার প্রধান আসামী মোরশেদের ফাঁসি চাই। যেন যৌতুকের জন্য আমার মতো আর কাউকে বোন হারা হতে না হয়।</p> <p>এদিকে গ্রেপ্তারের পর মোরশেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, তার হবু বউ তথা প্রেমিকা রিমা আক্তার আত্মহত্যার পূর্বে তাকে ফোন দিয়েছিল। ফোনে রিমা আক্তারকে যৌতুকের অবশিষ্ট টাকা ও ফার্নিচার না দিলে সে বিয়ে করবে না মর্মে হুমকী দিয়েছিল। মোবাইল ফোনে রিমা আক্তার জানিয়েছিল যে, বিয়ে না হলে তার পরিবার সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। আসামি মিজানুর রহমান মোর্শেদ যৌতুকের দাবিতে অনড় থাকায় রিমা আক্তার আসামির সাথে কান্নাকাটি করেছে। আসামি মিজানুর রহমান মোর্শেদ মোবাইল ফোনে যৌতুকের জন্য রিমা আক্তারকে বারংবার চাপ দিতে থাকে এবং বলে যে, যৌতুক দিতে না পারলে তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব হবে না। উক্ত কথা মোবাইল ফোনে শুনার পর রিমা আক্তার বলে যে, তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আমার মরা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। তখন আসামি মোর্শেদ বলে তুমি মরে গেলেও কিছু যায় আসে না। তখন রিমা আক্তার মোবাইল ফোন কেটে দেয়। পরবর্তীতে আসামির যৌতুকের দাবির চাপ সহ্য করতে না পেরে রিমা আক্তার আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আসামি মিজানুর রহমান মোর্শেদএর কারণেই রিমা আক্তার আত্মহত্যা করেছে মর্মে আসামি স্বীকার করে।</p> <p>পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকেই আসামি মোরশেদ পালিয়ে যায়। সে গত ৬ দিনে সে পালানোর জন্য দেশের বিভিন্ন স্হানে আত্মগোপন করে বাঁচার জন্য। আমাদের বিশেষ টিম দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত মঙ্গলবার রাতে সিলেট থেকে মামলার প্রধান আসামি মোরশেদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।</p>