চৈত্রের শেষ প্রহরে খনার মেলার উদ্বোধন কেন্দুয়ায়

আসাদুল করিম মামুন, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)
আসাদুল করিম মামুন, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)
শেয়ার
চৈত্রের শেষ প্রহরে খনার মেলার উদ্বোধন কেন্দুয়ায়

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রত্যন্ত গ্রামে খনার মেলা শুরু হয়েছে। রবিবার (১৩ এপ্রিল) ভোরে উপজেলা গড়াডোবা ইউনিয়নে আঙ্গারোয়া গ্রামে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এ মেলার উদ্বোধন করেন। ১৩ এপ্রিল সূর্যোদয় থেকে পরদিন ১৪ এপ্রিল সূর্যোদয় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাব্যাপী দিন-রাত চলবে এই আয়োজন। 

মঙ্গল ঘর নামের একটি সংগঠনসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মিডিয়া কমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান কুল এক্সপোজার এ মেলার আয়োজন করেছে।

 

বাংলা ১৪৩১-কে বিদায় জানাতে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা কবি সাহিত্যিকের উর্বর ভূমি ও ময়মনসিংহে গীতিকার ঐতিহ্যবাহী উপজেলা কেন্দুয়ার গড়াডোবা ইউনিয়নের আঙ্গারোয়া গ্রামে এই আয়োজন করা হয়েছে। 

খনার ওপর বিশেষ আলোচনাপর্বে 'জল ভালা ভাসা, মানুষ ভালা চাষা'  প্রতিপাদ্যের আলোকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লেখক গবেষক পাবেল পার্থ, প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনের সংগঠক দেলোয়ার জাহান, কবি আহমেদ নকিব, লেখক সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠক বাকী বিল্লাহ, শিল্পী ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠক বিথী ঘোষ, কবি আসমা বিথী, সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠক আবুল কালাম আজাদ, লোক সাহিত্য গবেষক বাবু রাখাল বিশ্বাস, চর্চা সাহিত্য আড্ডার সমন্বয়ক রহমান জীবন, মঙ্গলঘর পরিসরের প্রধান সংগঠক বদনূর চৌধুরী লিপন প্রমুখ। 

মেলায় উপস্থিত থেকে প্রখ্যাত বাউলশিল্পী সুনীল কর্মকার, প্রবীণ কৃষক বাউল মিয়া হোসেন, বাউল শিল্পী শেফালী গায়েন, শিল্পী কফিল আহমেদসহ অনেকে গান পরিবেশন করবেন। 

এ ছাড়াও কৃষ্ণকলি ও তার দল, সংগঠন সমগীত, ব্যান্ড সহজিয়া, মুসা কলি মুকুল, নূপুর সুলতানা, মঙ্গলঘরের শিল্পী কৃষক দুদু কাঞ্চনসহ আরো অনেকেই গান পরিবেশন করবেন।

 

আয়োজনে বয়াতি পালা গান, জারি গান, কেচ্ছা গান, লাঙ্গল, কোপিবাতি, বিন্দা, মাটির পাত্র, বাঁশের তৈরী বিভিন্ন তৈজসপত্রসহ গ্রামের ঐতিহ্যের সকল কিছু এখানে তুলে ধরা হয়। তবে মেলা বলতে সাধারণত নানা পণ্যের পসরা বোঝালেও এই মেলা সেই মধ্যে মেলা নয়। এখানে কথা-গানের ভরপুর আয়োজন চলে। আর সেই কথায় বা গানে গানে গ্রামীণ চিরায়ত চিত্র ফুটে উঠেছে।

বয়াতিরা নিজেদের ভাষায় পালা গানের মাধ্যমে তুলে ধরেন এই গ্রামীণ সংস্কৃতি। খনার মেলার মূল প্রতিপাদ্যই ছিল  'জল ভালা ভাসা, মানুষ ভালা চাষা'। অর্থাৎ কৃষি উপজীব্যকে সামনে তুলে আনতেই এমন আয়োজন।

আর এই আয়োজনে গ্রামে বেড়াতে আসা বিভিন্ন বয়সের শ্রেণি-পেশার মানুষও উপস্থিত থেকে ঈদ এবং বৈশাখের ছুটির আনন্দ উপভোগ করেছে। শুধু গ্রামের মানুষই নয় জেলা ছাড়াও ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন অনেকেই।

বিভিন্ন শিল্পীরাও পরিবেশন করেছেন স্থানীয় বাউল সাধকদের গান। এ ছাড়াও স্থানীয় বয়াতিরা পালা গান, জারি গান, কেচ্ছা গান পরিবেশন করে। সবাই মিলে গ্রামীণ খাবার খেয়েছেন মাটির পাত্রে। পুরনো আসবাবপত্র তুলে ধরা হয় নতুন প্রজন্মকে চিনিয়ে দিতে।

খনার মেলায় ময়মনসিংহ থেকে আসা রুবিনা আক্তার বলেন, এই যে গ্রামে এই সময়ে আনন্দ করছে মানুষ, এটাই তো হারিয়ে গিয়েছিল। এটি আবারো  জাগ্রত হলে আবার গ্রামে ফিরবে মানুষ।

এই খনার মেলায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিল্পকলা ও নাট্যকলা শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, শুনেছি গত বছরও এ আয়োজন হয়েছিল। খনাকে নিয়ে আয়োজন এটা দ্বিতীয়বারের মতো। আমরা চাই প্রতিবছর আয়োজনটি বড় পরিসরে হোক এবং গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখুক। 

মেলা উদযাপন কমিটির উদ্দোক্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর থেকে আঙ্গারোয়া গ্রামে তারা এ মেলা শুরু করেছে। মেলার আয়োজন করতে পেরে তাদের এক দরনের নতুন অনুভূতি ও আত্মতৃপ্তির সৃষ্টি হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কবি ও সংস্কৃতিকর্মী ছাড়াও নানা শ্রেণির মানুষজন আসে।  

প্রধান আয়োজক গড়াডোবা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বদনূর চৌধুরী লিপন জানান, মঙ্গল ঘর নামে তাদের একটি মাত্র কক্ষ রয়েছে যেখানে প্রতিদিন আড্ডা হয়। এ সকল আড্ডায় ভালো ভালো চিন্তা বেরিয়ে আসে। আর সেখান থেকেই এই খনার মেলার আয়োজন। এ বছর দ্বিতীয়বারে মতো এমন আয়োজনে স্থানীয় গ্রামের মানুষ আনন্দ নিচ্ছে এটাই অনেক বড়। বিশেষ করে খনার বচন এখন আর শোনাই যায় না। এগুলো নতুন প্রজন্ম শুনবে এবং ধারণ করবে। খনার বচনের সাথে প্রকৃতির সকল কিছু মিশে আছে।
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ধ্বংসস্তূপে রূপ নেওয়া সাটুরিয়ার ৩৬ বছর আজ

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
শেয়ার
ধ্বংসস্তূপে রূপ নেওয়া সাটুরিয়ার ৩৬ বছর আজ
সংগৃহীত ছবি

আজ ২৬ এপ্রিল। ১৯৮৯ সালের এই দিনে প্রলয়ংকরী টর্নেডোর আঘাতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছিল এবং উড়ে গিয়েছিল। এতে তিল্লী, সাটুরিয়া ও হরগজ ইউনিয়নসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছিল।

৩৬ বছর আগে আণবিক বিস্ফোরণ তুল্য ঝড়টি মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী ছিল। এতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল ও আহত হয়েছিল প্রায় ১২ হাজার জন। আর ১ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছিল।

জানা যায়, ওই দিন বৃষ্টির জন্য মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইসতিসকার নামাজ ও বৃষ্টির জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছিল।

এর পরেই বিস্ফোরণ তুল্য ঝড়টি প্রায় পুরো উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যায়। 

আরো পড়ুন
অপকর্ম ও দুর্নীতি ফাঁস হওয়ায় ইউএনও বলেন, ‘মজা নেন’

অপকর্ম ও দুর্নীতি ফাঁস হওয়ায় ইউএনও বলেন, ‘মজা নেন’

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন রোজা ছিল। ইফতারের একটু আগে হঠাৎ দেখতে পান আকাশ কালো হয়ে গেছে এবং হাওরের পানি ও আকাশের মধ্যে হাতির শুঁড়ের মতো কিছু একটা ঘূর্ণি খাচ্ছে। ঘূর্ণন দুর্বল হওয়ার পরপরই শুরু হয় ঝড় ও বৃষ্টি।

এরপরই সব ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয়। অবশিষ্ট তেমন কিছুই ছিল না। আজও আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলে এখানকার মানুষ ভয়ে গুটিয়ে যান। 

আরো পড়ুন
দেশে দ্বিতীয় কার্গো বিমানবন্দর চালু হচ্ছে কাল

দেশে দ্বিতীয় কার্গো বিমানবন্দর চালু হচ্ছে কাল

 

বিশ্বকোষগুলোর অন্যতম এনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিকার তথ্য অনুযায়ী, ‘স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টর্নেডোটি আঘাত হানে। এটি দৌলতপুর উপজেলা থেকে পূর্ব দিকে সাটুরিয়া এবং মানিকগঞ্জ সদর অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়।

অঞ্চলটি তখন তীব্র খরায় ভুগছিল। ঝড়টি প্রায় ১০ মাইল (১৬ কিমি) দীর্ঘ এবং প্রায় ১ মাইল (১.৬ কিমি) প্রশস্ত হয়ে আঘাত করেছিল। যদিও এটি তুলনামূলকভাবে ছোট ভৌগোলিক অঞ্চলে (অন্যান্য বেশিরভাগ টর্নেডোর মতো) সীমাবদ্ধ ছিল এবং স্থায়িত্বে স্বল্প ছিল। এটি প্রায় ২.৫ বর্গমাইল (৬ বর্গকিমি) এলাকার সমস্ত ভবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিল।সাটুরিয়া-মানিকগঞ্জ সদরে হওয়া টর্নেডোটি সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাংলাদেশে আঘাত হানা অসংখ্য বিধ্বংসী ঝড়ের মধ্যে একটি। এর আগে, ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল মানিকগঞ্জ অঞ্চলে আরেকটি টর্নেডো আঘাত হেনেছিল। ওই সময় কমপক্ষে ৬৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।’

আরো পড়ুন
শ্যালকের চেক জালিয়াতি, দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

শ্যালকের চেক জালিয়াতি, দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

 

এদিকে ২৬ এপ্রিলের টর্নেডোর পর বিধ্বস্ত এলাকা হরগজ গ্রামে ত্রাণ দিতে আসে বেসরকারি একটি সংস্থা। তারা এসে দেখতে পায় টর্নেডো শুধু ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় এ এক মানবিক বিপর্যয়। ছিন্নভিন্ন মানব দেহের বিকৃত টুকরো, ঘরবাড়ি সহায়-সম্বল হারানো মানুষের হাহাকার। সে সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীন। তিনি স্বচক্ষে তা প্রত্যক্ষ করেন ওই ত্রাণকর্মীদের সঙ্গে। এরপর ১৯৯২ সালে ওই ঘূর্ণিঝড়ের পটভূমি নিয়ে নাটক লিখেন ‘হরগজ’। যা পরবর্তীতে সুইডিস ভাষায় অনুদিত হয় এবং ভারতের নাট্যদল রঙ্গকর্মী কর্তৃক হিন্দী ভাষায় একাধিকবার মঞ্চস্থ হয়। 

দেশেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে একাধিকবার নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। হরগজ তথা সাটুরিয়ার সে সময়ের জীবনযাত্রা, সীমাহীন দুর্ভোগ, মানবিকতাসহ নানা কথা নাটকে তুলে ধরা হয়। 


 

মন্তব্য

দিনাজপুরে সাবেক এমপির বাড়ি থেকে ৪ নারীসহ গ্রেপ্তার ১০

দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
দিনাজপুরে সাবেক এমপির বাড়ি থেকে ৪ নারীসহ গ্রেপ্তার ১০
সংগৃহীত ছবি

অবৈধ কার্যকলাপের সময় দিনাজপুরে সাবেক এমপির বাড়ি থেকে ৪ নারী ও ৬ পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১১টার সময় শহরের লিলির মোড় (পাহাড়পুর) এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য মোখলেসুর রহমানের বাড়ি থেকে ‘মেডিসিন মার্ট’ এর স্বত্বাধিকারী আহম্মেদ তানভির হুদা সুষমসহ ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন নারীকে অবৈধ কার্যকলাপে থাকা অবস্থায় আটক করা হয়।

আটকরা হলেন—তানভির হুদা সুষম (৫৪), গোলাম মোহাম্মাদ মমতাজুর রহমান রাজ (৩২), মো. পারভেজ আলম রাজু (২১), বিষ্ণু রায় (২৬), শামিম হোসেন (৪৫), রুবেল ইসলাম (৩৫), জবা চৌধুরী সারা (১৮), রিমি বেগম (২৩), এমনি আক্তার (১৮) ও নিলিমা ইসলাম (১৯)।

দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিউর রহমান এ তথ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছেন।

ওসি জানান, কোতয়ালী থানা পুলিশের একটি দল তাদের আটক করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও দুইটি মোটরসাইকেল, ৬টা স্মার্ট ফোন এবং দুইটা বাটন ফোনসহ মাদক বিক্রির নগদ ১ লাখ ১২ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হওয়ার পর শনিবার দুপুরে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।

মন্তব্য

অপকর্ম ও দুর্নীতি ফাঁস হওয়ায় ইউএনও বলেন, ‘মজা নেন’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
শেয়ার
অপকর্ম ও দুর্নীতি ফাঁস হওয়ায় ইউএনও বলেন, ‘মজা নেন’
সংগৃহীত ছবি

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সাবেক ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পালকে গত দুইদিন আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযোগ করে তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসন তলব করে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রচার হয়। এ ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারাও মজা নেন।’ 

ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল বর্তমানে টাঙ্গাইলের সরিষাবাড়ি উপজেলায় কর্মরত আছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় অরুণ কৃষ্ণ পাল বিভিন্ন কারণে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত আব্দুস সালাম এমপি হওয়ার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন।

আরো পড়ুন
রাঙামাটিতে পিকআপ-সিএনজি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬

রাঙামাটিতে পিকআপ-সিএনজি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬

 

পরে সালাম পরিকল্পনামন্ত্রী হলে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিলের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে শুরু করেন ব্যাপক দুর্নীতি। কেউ প্রতিবাদ করলে চলতো স্টিম রোলার।

অযথা সাধারণ লোকজনকে বেকায়দায় ফেলে চালাতেন নির্যাতন। 

এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ জনগণের পক্ষে মন্ত্রণালয় ছাড়াও নানান জায়গায় বিস্তর অভিযোগ করেন জনৈক আহসান কাদের মাহমুদ ভুইয়া ও মো. রফিকুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি। তাদের এই অভিযোগ তিনি (ইউএনও) নান্দাইলে থাকা অবস্থায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বদলি হওয়ার পর বিভিন্ন দপ্তর বেশ কয়েকবার তদন্তে নামে।

 

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্থানীয় সরকার লুৎফুন নাহারের কার্যালয়ে এক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে অভিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগকারী নান্দাইলের নাগরিক মো. আহসান কাদের ও রফিকুল ইসলামেরও জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল ও অভিযোগকারী মো. আহসান কাদের উপস্থিত হয়ে নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করেন।

তবে আরেক অভিযোগকারী রফিকুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় তিনি তার বক্তব্য লিখিত আকারে প্রেরণ করেছেন। 

এদিকে খুব শিগগিরই নান্দাইল উপজেলায় সরেজমিনে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পেশ করা হবে বলে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্থানীয় সরকার লুৎফুন নাহারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল ২০২৩ সালের ৩১ শে আগস্ট যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে নান্দাইলের আশ্রয়ণ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, সরকারি বাসায় থেকে বেতন থেকে বাসা ভাড়ার টাকা কর্তন না করা, বাসার বিদ্যুৎ বিল উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রদান করানো, ২৬ শে মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে বিভিন্ন খাত ও ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, হাট বাজার ইজারা ডাকে চরম অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। 

এ ছাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নিয়ে টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও হতদরিদ্রের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের সাড়ে ৬ কোটি টাকার শতকরা ৪০ ভাগ অফিস খরচ দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ, সড়ক ও জনপদের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য, বিভিন্ন হাট-বাজারের ইজারা নিয়ে অনিয়ম এবং খাস কালেকশন করে পুরো টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে রাজস্বখাতের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের ব্যাপক অভিযোগ আছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়ে আসছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জেলা প্রশাসনে তলবের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এখন আপনারা মজা নেন।’

মন্তব্য

ভুয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তৈরি চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
ভুয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তৈরি চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার
সংগৃহীত ছবি

ভুয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তৈরি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। শনিবার (২৬ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এ এন এম সাজেদুর রহমান। তাদের কাছ থাকা ছয়টি মোবাইল ফোন, একটি হার্ডডিস্ক ও পাঁচটি পাসপোর্টসহ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ জব্দ করা হয়। 

গ্রেপ্তাররা হলেন সেলিম আহমেদ, খালেদুর রহমান, রুকনুর আলম ও সুমন মিয়া।

তারা রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

আরো পড়ুন
শ্যালকের চেক জালিয়াতি, দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

শ্যালকের চেক জালিয়াতি, দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একটি চক্র ঢাকার বনানীতে ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদের অফিসে ভুয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট তৈরি করে। বিদেশগমণকারীরা তাদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে আসছিলেন।

সম্প্রতি হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এবং বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) স্বাক্ষর জাল করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স তৈরি করলে ঘটনাটি সামনে আসে 

পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার চারজন হোয়াইট কালার অপরাধী বিধায় তাদের পুরো পরিচয় এবং ছবি দেওয়া যাচ্ছেন। চক্রের বাকী সদস্যদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে এই গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন
ধূমপান ছাড়ার পর যেভাবে ফুসফুস পরিষ্কার করবেন

ধূমপান ছাড়ার পর যেভাবে ফুসফুস পরিষ্কার করবেন

তিনি আরো বলেন, এটি গুরুতর অপরাধ। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে, এখানে জাল ডকুমেন্টস তৈরি হয়।

সাধারণ লোকজনও ব্যাপক হয়রানির শিকার হবে। তাই পুলিশ বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ