পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর নাব্য সংকটের কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পিরোজপুর পৌরসভার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না। দিনে দুই বেলা দুই ঘণ্টা করে পানি দেওয়ার কথা, তবে এক ঘণ্টাও মিলছে না পানি। মাঝে মাঝে একদিন পর পানি পাওয়া যায়।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পিরোজপুর পৌরসভার বসবাসরত দুই লক্ষাধিক মানুষ।
পিরোজপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার দেওয়া নির্দিষ্ট পানির কলগুলোতে ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যেটুকু পাওয়া যায় তা আবার যাদের বাড়িতে পানির মোটর আছে তারা তুলে নেয়। ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও এসব কলে যারা পানি নিতে আসছেন, তারা পানি না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যান।
চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষের।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে পিরোজপুর জেলার মর্যাদা পায়। আর পৌরসভাটি দেড় শ বছরের পুরনো। অনেক বছর আগে পিরোজপুরের জনগণকে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন এলাকায় নির্ধারিত পুকুর ও নলকূপ ব্যবহার করতে হতো।
জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য পিরোজপুর জনস্বাস্থ্য বিভাগ ১৯৮৩ সালে সুপেয় পানির জন্য চালু করে পানি শোধনাগার। সেখান থেকে শুরু করা হয় পানি সরবরাহ।
শুরুতে প্রতি ঘণ্টায় উৎপাদন হতো প্রায় ৫০ হাজার লিটার। সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ লিটারে দাঁড়ালেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই সামান্য। ফলে চাহিদাকৃত পানি পরিশোধনে অক্ষম কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে এ পৌরসভায় সাত হাজার পরিবারের পানির চাহিদা থাকলেও পানি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৩ হাজার পরিবারের। পিরোজপুর পৌরসভার দুই লক্ষাধিক বাসিন্দার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১০ লাখ লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। আর উৎপাদন হচ্ছে মাত্র আড়াই থেকে তিন লাখ লিটার।
আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এসেছেন পানি নিতে, কিন্তু পানি না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে হোসনেয়ারা বেগমকে। তিনি পিরোজপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
তিনি বলেন, ‘পানি না পেয়ে খুব সমস্যায় আছি। বিশেষ করে খাবার পানির সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবার পানি কিনে খেতে হচ্ছে। শুধু আমরা না, পিরোজপুর পৌরসভার অধিকাংশ পরিবারের সমস্যা একই। গত কয়েক মাস ধরে পানির সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, গত দুই বছর ধরে পানির সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ উদাসীন হওয়ার কারণে তারা ঠিকমতো পানি পান না। প্রতিদিন সকাল-বিকেল মিলিয়ে এক ঘণ্টা করে মোট দুই ঘণ্টা পানি দেওয়ার কথা থাকলেও সব মিলিয়ে এক ঘণ্টাও পানি পান না। খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা দরকার।
সোমা মন্ডল নামের এক নারী বলেন, ‘পানির জন্য অচল হয়ে গেছি আমরা। পানির অভাবে আমরা ঠিকমতো গোসল করতে পারি না, রান্নাবান্না করতে পারি না। খাবারের পানি কিনে খেতে হয়। পানির অভাবে এলাকা ছেড়ে দিচ্ছে মানুষ। আমরা এর সমাধান চাই।’
পিরোজপুর পৌরসভার পানি ও পয়োনিষ্কাশন সহকারী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘বলেশ্বর নদীর নাব্য সংকটের কারণে পানি সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি, নদী পুনরায় খননের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হবে।’
পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বনি আমিন বলেন, ‘দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, পানির চাহিদাও বাড়ছে। তবে সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় কম। ফ্রান্স সরকারের সহায়তায় একটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আশা করি, এ সমস্যার সমাধান হবে।’