ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সাবেক ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পালকে গত দুইদিন আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযোগ করে তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসন তলব করে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রচার হয়। এ ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারাও মজা নেন।’
ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল বর্তমানে টাঙ্গাইলের সরিষাবাড়ি উপজেলায় কর্মরত আছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় অরুণ কৃষ্ণ পাল বিভিন্ন কারণে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত আব্দুস সালাম এমপি হওয়ার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
আরো পড়ুন
রাঙামাটিতে পিকআপ-সিএনজি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬
পরে সালাম পরিকল্পনামন্ত্রী হলে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিলের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে শুরু করেন ব্যাপক দুর্নীতি। কেউ প্রতিবাদ করলে চলতো স্টিম রোলার।
অযথা সাধারণ লোকজনকে বেকায়দায় ফেলে চালাতেন নির্যাতন।
এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ জনগণের পক্ষে মন্ত্রণালয় ছাড়াও নানান জায়গায় বিস্তর অভিযোগ করেন জনৈক আহসান কাদের মাহমুদ ভুইয়া ও মো. রফিকুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি। তাদের এই অভিযোগ তিনি (ইউএনও) নান্দাইলে থাকা অবস্থায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বদলি হওয়ার পর বিভিন্ন দপ্তর বেশ কয়েকবার তদন্তে নামে।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্থানীয় সরকার লুৎফুন নাহারের কার্যালয়ে এক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে অভিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগকারী নান্দাইলের নাগরিক মো. আহসান কাদের ও রফিকুল ইসলামেরও জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল ও অভিযোগকারী মো. আহসান কাদের উপস্থিত হয়ে নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করেন।
তবে আরেক অভিযোগকারী রফিকুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় তিনি তার বক্তব্য লিখিত আকারে প্রেরণ করেছেন।
এদিকে খুব শিগগিরই নান্দাইল উপজেলায় সরেজমিনে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পেশ করা হবে বলে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্থানীয় সরকার লুৎফুন নাহারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল ২০২৩ সালের ৩১ শে আগস্ট যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে নান্দাইলের আশ্রয়ণ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, সরকারি বাসায় থেকে বেতন থেকে বাসা ভাড়ার টাকা কর্তন না করা, বাসার বিদ্যুৎ বিল উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রদান করানো, ২৬ শে মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে বিভিন্ন খাত ও ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, হাট বাজার ইজারা ডাকে চরম অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নিয়ে টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও হতদরিদ্রের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের সাড়ে ৬ কোটি টাকার শতকরা ৪০ ভাগ অফিস খরচ দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ, সড়ক ও জনপদের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য, বিভিন্ন হাট-বাজারের ইজারা নিয়ে অনিয়ম এবং খাস কালেকশন করে পুরো টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে রাজস্বখাতের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের ব্যাপক অভিযোগ আছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জেলা প্রশাসনে তলবের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এখন আপনারা মজা নেন।’