<article> <p style="text-align: justify;">পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যাংকের, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে। এসব আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ছাড়াও প্রতিটি দেশের নিজস্ব ব্যাংক কম্পানি আইন, আর্থিক খাত সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা রয়েছে, সেগুলো ব্যাংক খাতের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবীক্ষণ করে।</p> <p style="text-align: justify;">আজকের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাসেল নিয়ে আলোচনা করব। ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্ট নামে একটি সংস্থা আছে, যার সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের বাসেল নগরীতে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সেখান থেকেই এসেছে বাসেল শব্দটি। সে অনুসারে এই মানগুলো বাসেল-১, বাসেল-২ ও বাসেল-৩ নামে পরিচিত হয়েছে। প্রথমত এই যে ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্ট (বিআইএস), পৃথিবীর বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এই বিআইএসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই বিআইএস অ্যাকাউন্ট স্ট্যান্ডার্ড এবং অডিটিং স্ট্যান্ডার্ড—বিভিন্ন মানদণ্ড দিয়ে থাকে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">১৯৮৮ সালে বাসেল কমিটি ফর ব্যাংকিং সুপারভিশন (বিসিবিএস) বাসেল-১-এর প্রবর্তন করে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এটাকে তখন স্বীকৃতি দেয়। বাসেল-১ মূলত হলো ক্যাপিটাল এডিকুয়েসি মানে ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন কত থাকবে, সে রকম একটা রেশিও।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="বাসেল মানদণ্ডে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত" height="473" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/03.March/09-03-2024/0.jpg" width="500" />বাসেল-১-এ বলা হয়েছে সর্বনিম্ন ক্যাপিটাল এডিকুয়েসি রেশিওর কথা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন আমরা বলি ব্যাংক খুলতে ইকুইটি ক্যাপিটাল ৫০০ কোটি টাকা লাগে। ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে উদ্যোক্তারা ব্যাংক খুলতে পারবেন। সে রকম বাসেল থেকে মিনিমাম ক্যাপিটাল এডিকুয়েসি রেশিও বলে দিয়েছে। সেটা সাধারণত ঋণের পরিমাণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণের সঙ্গে সম্পর্কিত। সাধারণ হিসেবে ব্যাংকের যে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগুলো আছে, কমপক্ষে তার ৮ শতাংশ ব্যাংকের মূলধন থাকতে হবে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এটা এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মানে কোনো ব্যাংকের যদি ১২ হাজার কোটি টাকা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ থাকে, সেটার কমপক্ষে ১০ শতাংশ হলে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা থাকতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">এরপর বাসেল-২ এলো। এটার পরিধি আরো বড়। বাসেল-২-এ বলা আছে, অপারেশন রিস্ক—ক্রেডিট রিস্ক সম্পর্কে। বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি, ঋণের ঝুঁকির কী হবে, সেটা কিভাবে কন্ট্রোল করবে; এবং ঝুঁকির সঙ্গে মূলধনের সম্পর্ক কী—এসব বলা আছে। তারপর আছে সুপারভাইজার রিভিউ প্রসেস। দেখবে এবং তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এটাকে বিশ্লেষণ করবে। বাসেল-২ বাংলাদেশে ২০০৭ থেকে ২০০৯-এর মধ্যে আমি সম্পূর্ণ করেছি। তারপর বাসেল-৩ এসেছে। বাসেল-৩-এর মূল ব্যাপারটা হলো ইকুইটি ক্যাপিটাল। মানে শেয়ারহোল্ডারের মূলধন কত থাকবে, ব্যাংকে মিনিমাম লিকুইডিটি কত থাকবে। ব্যাংকের তারল্য কী রকম থাকবে, মিনিমাম রেশিও কত হবে। মানে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ এবং আমানতের পরিমাণ কেমন থাকবে।</p> <p style="text-align: justify;">বাসেল-১ ও ২-এ যে নীতিমালা আছে, সেসব নিয়েই বাসেল-৩ এসেছে। আমরা দেখলাম, বাসেল-১, ২ ও ৩ থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফিন্যানশিয়াল ক্রাইসিস হলো। ব্যাংকে বিভিন্ন রকম দুর্নীতি হয়েছে, অনেক ব্যাংক বসে গেছে। আমানতকারীর টাকা খোয়া গেছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালে, যেটা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ক্রাইসিস; বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা, যেটা যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু হয়ে পৃথিবীর অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে—সেখানে অনেক ব্যাংক, অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বিনিয়োগ ব্যাংক—মেরিন লিঞ্চ, সলোমন ব্রাদার্স, পৃথিবীর বিখ্যাত অনেক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক তথা বিনিয়োগ ব্যাংক কিন্তু বিলীন হয়েছে। সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এই ক্রাইসিসের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে উত্পাদনশীল খাতে। জিডিপি হ্রাস পায়, বেকারত্ব বেড়ে যায়।</p> <p style="text-align: justify;">আমাদের দেশেও এই ক্রাইসিসের প্রভাব এসেছে, কিন্তু প্রভাবটা বেশি ছিল না। যথাসময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। ফলে সেটার যে নেতিবাচক দিক, সেটা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের বিভিন্ন মহলে এখন আবার নতুন করে চিন্তা-ভাবনা চলছে। মানে এটা এড়ানো গেল না কেন? এত নীতিমালা ও গাইডলাইন থাকতে কেন এমন হলো? এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এখন বাসেল-৪ আসবে। বাসেল-৪ আসার কথা ছিল আরো দুই বছর আগে। কিন্তু প্রথমত কভিড-১৯ এলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধল, ফলে বিশ্বে যে আর্থিক মন্দা শুরু হলো, নানা রকম অস্থিরতা দেখা দিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে বাসেল-৪ ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">এখন প্রশ্নটা হলো, এই নিয়ম-কানুনের মধ্যেও কেন আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টর এতটা সমস্যার ভেতরে আছে। কেন এত ক্রাইসিস? এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৭টি কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে, সেগুলোর কী অবস্থা হবে? সেগুলো বাসেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এগুলো পর্যালোচনা করার সময় আসছে। আমাদের জন্য যে ব্যাংকিং আইনের সংস্কার, ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউট আইনের সংস্কার, এমনকি ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের যে নিয়ম-কানুন তার কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে? সেগুলোর সংস্কার সম্পর্কে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।</p> <p style="text-align: justify;">এখন আলোচনার একটা বড় বিষয় হলো দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানও একীভূত করার কথাবার্তা আছে। এখন ৬১টি ব্যাংক আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এখন বাসেলের নিয়মগুলো কী, কিভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং বাসেল কতটা এখানে কার্যকর, ভবিষ্যতে আমাদের নিজস্ব যে নীতিমালা আসবে, সেসবের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">প্রথমত, একটা মানদণ্ড আছে।  ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পরিমার্জন-পরিবর্ধন হচ্ছে। কিন্তু তার পরও পরিস্থিতি দিন দিন খুব জটিল হয়ে যাচ্ছে। এখানে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দ্বিপক্ষীয়-বহুপক্ষীয় আর্থিক সংস্থাগুলো, সেটার অংশগ্রহণে জিনিসটা দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এটা কিন্তু জটিল। মানদণ্ডগুলো একটু সহজ করে বাসেল আর্কিটেকচার অর্থাত্ বাসেলের কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা তিনটি বাসেল মানদণ্ড বাস্তবায়ন করেছি। আরো কাজ বাকি আছে, তবু আমি মনে করি, একটু সাধারণভাবে বেসিক জিনিসগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">প্রথম মূল বিষয়টি হলো, বাসেল-১, ২ ও ৩ ব্যাংকিং খাতে গুড গভর্ন্যান্স মানে সুশাসন নিশ্চিত করতে এখনো সক্ষম হয়নি। এখানে সুশাসন সম্পর্কে খুব ডিটেইল কিছু নেই। কারণ এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি পরিচালক, চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনার যে দায়িত্ব, সেগুলো কিন্তু বাসেলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। কিছুটা থাকলেও বিস্তারিত নয়।</p> <p style="text-align: justify;">দ্বিতীয় হলো, এখনো কিন্তু বিভিন্ন দেশে খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যাপারে বাসেলে নানা রকম স্ট্যান্ডার্ড আছে, কিন্তু সেগুলো পরিপালন হয় না। আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় প্রবলেম হলো দ্বিতীয়টা, নীতিগুলো পরিপালন করা হয় না।</p> <p style="text-align: justify;">তৃতীয়ত, আরেকটা জিনিস আমরা দেখি, বিজনেস মডেল কিন্তু অনেক পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বিজনেস কিভাবে হয়, আগের মতো প্রাইভেট কম্পানি ছাড়া, এখন জয়েন্ট উদ্যোগ বাড়ছে, লিমিটেড কম্পানি আছে, এখন আবার ব্যাংকের ক্যাপিটাল আসছে, নানা রকম শেয়ার কম্পানি হচ্ছে, আবার মডেলও পরিবর্তন হয়েছে, ই-কমার্স আসছে, আবার ডিজিটাল ব্যাংকিং হবে—এই যে বিজনেস মডেল এবং ফিন্যানশিয়াল স্ট্রাকচারগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে, এটা আসলে বাসেলে সামঞ্জস্যপূর্ণ কতটুকু? এখন সময় আসছে বাসেল মানদণ্ডে ভবিষ্যতে সেটার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। না হলে কিন্তু বাসেলের যে আন্তর্জাতিক মানগুলো আছে বা ভবিষ্যতে আসবে, সেটা কিন্তু খুব সফল হবে না। </p> <p style="text-align: justify;">আরেকটা জিনিস হলো, সাইবার সিকিউরিটি এবং সাইবার সম্পর্কিত কৌশল। এখন বাসেল-১, ২, ৩-এ কিন্তু এই সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছু নেই। এখন যেহেতু ব্যাংক নিয়ে কাজ করা; ব্যাংকের বাইরে যেহেতু আরো অনেক অর্গানাইজেশন আছে—এখানে কিন্তু প্রযুক্তির সিকিউরিটিটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, ব্যাংকে নানা রকম ছলচাতুরী হচ্ছে। তহবিল চলে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। সাইবার সিকিউরিটি, সাইবার স্ট্র্যাটেজি মানে নিরাপত্তা কৌশল সম্পর্কে; আমার মনে হয় আরো জোর দিতে হবে। আইটি সিকিউরিটি সবচেয়ে বেশি দরকার হবে।</p> <p style="text-align: justify;">আরেকটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, ব্যাংকের তারল্য ম্যানেজমেন্ট। আমাদের দেশে এখন তো ব্যাংকের তারল্যে সমস্যা আছে। এই যে তারল্য সংকট, বাসেলের যে সর্বনিম্ন তারল্য রেশিও, তারল্য রিজার্ভ; অনেক কথাবার্তা বলা হচ্ছে, সেটা কিন্তু এখন আমাদের দেশে কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রোল আছে ব্যাংকের তারল্য সংকট সমাধান করা।</p> <p style="text-align: justify;">সব শেষে যেটা, সেটা হলো ব্যাংক একীভূত করা। সেখানে অনেকগুলো বিষয় চলে আসে—একটা দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে ব্যালান্স শিট করবে। ব্যালান্স শিটে দুর্বল ব্যাংকের দায়টা সবল ব্যাংক নেবে। সবচেয়ে বড় হলো আমানতকারী। দুর্বল ব্যাংক মার্জ করলে আমানতকারীর আমানতটা নিরাপদ রাখতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশে ব্যাংকের ইতিহাসে আমরা দেখেছি, অনেক ব্যাংকে রিফর্ম করা হয়েছে। এখনকার চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। এখানে কতগুলো প্রাইভেট ব্যাংক এবং কতগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক আছে, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। খেলাপি ঋণগুলো কিভাবে কার কাছে দেওয়া হবে, এখানে আছে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি। কিভাবে কারা করবে এসব চিন্তা করতে হবে। সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলো যোগ হলে পরিচালক কারা হবেন। নিঃসন্দেহে দুর্বল ব্যাংক যেটা মার্জ করে যাবে সেই ব্যাংকের পরিচালকরা একটি একীভূত ব্যাংকের পরিচালক হওয়া মোটেই কাম্য নয়। তা ছাড়া আছে যে ক্যাপিটাল ইনজেকশন কী হবে, নতুন শেয়ার ছাড়া হবে কি না, শেয়ার কারা হোল্ড করবেন এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা নীতিমালা করছে মার্জারের বিষয়ে। এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং অ্যাক্টটা আরেকটু পর্যালোচনা করা দরকার। হয়তো বা ব্যাংকিং অ্যাক্টে কিছু জিনিস পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতে হবে। বিশেষ করে পরিচালনা এবং সুশাসন। এগুলো করলেই আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে আমাদের যে গাইডলাইন, সেটা কার্যকর হবে এবং ব্যাংকিং সেক্টরকে সবল করে তুলতে পারবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক </strong>: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়</p> </article>