<p style="text-align: justify;">শাস্তি আরোপের কোনো নীতিমালা বা নির্দেশিকা ছাড়া ‘মৃত্যুদণ্ড’ আরোপ সংবিধানের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা বা নির্দেশিকা তৈরির নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">এ সংক্রান্ত এক রিটে প্রাথমিক শুনানির পর মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আরোপের বিধানের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান গত ৭ ডিসেম্বর রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ।</p> <p style="text-align: justify;">পরে আইনজীবী ইশরাত হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শাস্তি আরোপের নীতিমালা ছাড়াই বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি এমনকি মৃত্যুদণ্ড আরোপ করা হচ্ছে। বিচারক মনমত শাস্তি আরোপ করছেন। কিন্তু শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ড আরোপের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নাই। এভাবে শাস্তি আরোপ সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১, ৩২ ও ৩৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়েছিল। আদালত রুল দিয়েছেন।’</p> <p style="text-align: justify;">ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তের উপযুক্ত বা আনুপাতিক সাজা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতকে আলাদা শুনানি করতে নির্দেশ দিয়ে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। </p> <p style="text-align: justify;">রায়ে বলা হয়, ‘মামলায় যখন উভয় (বাদী-বিবাদী) পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তি-তর্ক শেষ হবে, তখন অভিযুক্তকে দণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে উন্মুক্ত আদালতে বিচারককে সে অভিমত জানাতে হবে। এরপর বিচারক অভিযুক্তের শাস্তি বা সাজার বিষয়ে শুনানির জন্য সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যে একটি তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন, যাতে উপযুক্ত বা আনুপাতিক সাজা আরোপ করা যায়।’</p> <p style="text-align: justify;">‘আতাউর মৃধা বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় আপিল বিভাগের রায় উদ্ধৃত করে হাইকোর্টের রায়ে আরও বলা হয়, ‘সাজা নির্ধারণের শুনানিতে পক্ষগুলোকে অভিযুক্তের আপরাধের সামাজিক প্রেক্ষাপট, অভিযুক্তের বয়স, চরিত্র, অর্থনৈতিক অবস্থা, ব্যক্তি বা সমাজের অভিঘাত, আপরাধের ধরন অর্থাৎ অভিযুক্ত অভ্যাসগত, পেশাদার অপরাধী কিনা, নাকি আকস্মিক অপরাধী ইত্যদি বিষয় তুলে ধরতে হবে।’</p> <p style="text-align: justify;">পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত বছরে ২৩ মে হাইকোর্টের এ রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া দেশে ‘অভিন্ন ও সামঞ্জস্যপূর্ণ’ একটি ‘সেনটেনসিং গাইডলাইন’ বা ‘সাজা প্রদান নীতিমালা’ করার নির্দেশনা চেয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সে রিটে প্রাথমিক শুনানির পর আদালত ওই বছর ১৯ সেপ্টেম্বর রুল দেন।</p> <p style="text-align: justify;">সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী দেশে ‘অভিন্ন ও সামঞ্জস্যপূর্ণ’ একটি ‘সেনটেনসিং গাইডলাইন’ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। রুলটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। </p>