<article> <p style="text-align: justify;">জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তাসহ এসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সুযোগ তৈরি হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে নেওয়া যাবে পদক্ষেপ" height="360" src="https://www.kalerkantho.com/_next/image?url=https%3A%2F%2Fcdn.kalerkantho.com%2Fpublic%2Fnews_images%2F2024%2F03%2F29%2F1711654967-1e85639e7832a711527f5daebbd40d48.jpg&w=1920&q=100" width="600" /></p> <p style="text-align: justify;">বিশ্লেষকরা বলছেন, এই তালিকা নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কাজে লাগবে। কয়েক বছর আগে মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট আরো জটিল হয়ে উঠেছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">রোহিঙ্গারা তাদের ক্যাম্প ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার এবং পাসপোর্ট সংগ্রহের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এমন নানা সমস্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা (প্রগ্রেস ডাটা) ব্যবহারের সুযোগ চেয়ে আসছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।</p> <p style="text-align: justify;">পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগসহ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা সব প্রতিষ্ঠান তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় রোহিঙ্গাদের সব ধরনের তথ্য ও প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করতে পারবে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">প্রগ্রেস ডাটায় প্রবেশধাধিকারের অনুমতি পাওয়ায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু সনদ ও এনআইডি নিতে পারবে না। নিজেদের মধ্যে মারামারি, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ ও মাদক ব্যবসায় জড়িত হলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।</p> <p style="text-align: justify;">চলতি মাসের ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুক্ত আলোচনায় রোহিঙ্গাদের প্রগ্রেস ডাটা ব্যবহারের অনুমতি চান কক্সবাজার জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ শাহীন ইমরান। এর পরই এই ডাটা ব্যবহারের অনুমতি পেল সরকারের অন্যান্য সংস্থা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (মিয়ানমার অনুবিভাগ) মো. মাইনুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা সব প্রতিষ্ঠান তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ব্যবহারের সুযোগ পাবে। যাদের সংশ্লিষ্টতা বেশি, শুরুতে তারা ব্যবহার করবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি এক বৈঠকে অনুমতি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। কারা কিভাবে কতটুকু তথ্য ব্যবহার করবে, সে বিষয়ে পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। এ বিষয়ে এর আগেও কয়েকবার বৈঠক হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় আগে শুধু এই তালিকা পড়তে পারত। এখন তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহারও করবে। একইভাবে পাসপোর্ট, এনআইডি, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ প্রাসঙ্গিক সব প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ব্যবহার করতে পারবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে</strong></p> <p style="text-align: justify;">নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ব্যবহারের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে। শান্তি-শৃঙ্খলাসহ অন্যান্য বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>সব ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া যাবে</strong></p> <p style="text-align: justify;">কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরগুলোতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহ কম। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯৫টি শিশু জন্ম নিচ্ছে। এদিকে খাদ্য বণ্টনেও রয়েছে অব্যবস্থাপনা। কারণ, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা জানা না থাকায় সবাইকে সমানভাবে খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে। আর স্থানীয়রা নানা সংকটে ভুগছে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও স্যানিটেশনসহ অন্য কোনো ক্ষেত্রেই সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া যাচ্ছিল না।</p> <p style="text-align: justify;">রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হলে সব ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া যাবে। কোন ক্যাম্পে কতজন আছে, তাদের চাহিদা কী, কোন জায়গায় কী ধরনের উন্নয়ন দরকার, কোন ক্যাম্পে খাদ্য সহায়তা কী রকম লাগবে, কোথায় নারী বেশি—এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে।</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকায় ঢুকে আমরা শুধু পড়তে ও দেখতে পারি। সেখান থেকে কোনো  আউটকাম নিতে পারি না। ডাটা প্রসেস অ্যানালিসিস করার মতো ক্যাপাসিটি নেই। সঠিক পরিকল্পনার জন্য প্রগ্রেস ডাটায় আমাদের অ্যাকসেস থাকতে হবে, যেন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে রোহিঙ্গাদের ভাগ করতে পারি। তাদের তথ্য যেন আলাদা করতে পারি। যেমন ১৬ বছর বয়সের বাচ্চা কত জন, নারী কত জন, কোন ক্যাম্পে কে আছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করার সুযোগ থাকতে হবে। তখন সঠিকভাবে কাজ করা যাবে।’</p> <p style="text-align: justify;">জানা যায়, ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের প্রগ্রেস ডাটা নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। এরপর জয়েন্ট ভেরিফিকেশনের মাধমে এই প্রগ্রেস ডাটা তৈরি করা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নিবন্ধনভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ইউএনএইচসিআর এই ডাটা বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়নি।</p> <p style="text-align: justify;">ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গাদের যে অনুপ্রবেশ এবং দীর্ঘ সময় অবস্থানের ফলে যে প্রভাব পড়ছে বা পড়বে, এর মধ্যে অন্যতম নিরাপত্তা ঝুঁকি। স্থানীয়ভাবে তো বটেই, জাতীয়ভাবেও ঝুঁকি রয়েছে। ফলে এ ধরনের তথ্যে নিরাপত্তা সংস্থা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ থাকা প্রয়োজন।</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, এ ধরনের তথ্য যে ধরনের প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা পাচ্ছে বা পাবে, তাদের সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। কারণ, সবাই অপরাধী না। তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও গোপনীয় তথ্য গোপন রাখা সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে সুরক্ষিত রাখার কথা মনে রাখতে হবে। এটির যাতে অপব্যবহার না হয়, এটিও নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরিতে সহযোগিতা করছে। আটটি বুথের মাধ্যমে তাদের নিবন্ধন চলছে। ১২ বছরের বেশি বয়সীদের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ নিয়ে নিবন্ধন করা হচ্ছে। এরপর তাদের প্রত্যেককে একটি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ১২ বছরের নিচের শিশুদের খাতায় নিবন্ধন করা হচ্ছে।</p> </article>