<p>নাগরিকদের তথ্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার নজির বিশ্বের কোনো দেশে নেই। এতে নাগরিকদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। নাগরিকদের তথ্য কোনোভাবে প্রকাশিত হয়ে গেলে জমির নামজারি, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ আর্থিক খাতে জাল-জালিয়াতি বাড়বে। এতে আর্থিক খাতে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। এজন্য নাগরিকদের তথ্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখা প্রয়োজন বলে মনে করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।</p> <p>শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত হোটেল ইনে এস সংবাদ সম্মেলনে এসব আশংকার কথা বলা হয়।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত বছর থেকে আমরা লক্ষ্য করছি সরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান নাগরিকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে পাঁচ কোটি নাগরিকের তথ্য ভেসে বেড়ানো দেখছি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেরাই যখন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না, সেই সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার গড়তে দেওয়া সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন। সেই সাথে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।’<br />  <br /> তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ১৯ কোটি ২৬ লাখ সক্রিয় সিমের তথ্য এমএন ও অপারেটর, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কেবলমাত্র তথ্য যাচাইয়ের জন্য ৫ টাকা চার্জ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি এই তথ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে ১০ টাকা দিতে হবে। দিনশেষে এই অতিরিক্ত অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে। আর এর মাধ্যমে গ্রাহকদের আরেক দফা খরচ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনিরাপত্তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’<br />  <br /> একই অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও বেসরকারি ভাবে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ করা মতো উদাহরণ কোথাও পাইনি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় এটা পাইনি। ইউরোপে তো প্রশ্নই ওঠে না। সেক্ষেত্রে কেনো তারা এটা করতে দিয়েছেন, সেটার উত্তর বিটিআরসি দিতে পারবেন। নাগরিকের কোনো তথ্য আইনগত ভাবে কোনো বেসরকারি সংস্থা তাদের ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করতে পারা যুক্তি নেই। বিশেষ করে ডাটা সুরক্ষা আইন যেটা রাষ্ট্র পক্ষ থেকে উপস্থাপিত হয়েছে যা খসড়া পর্যায়ে আছে। এটা করা হলে গুগল-অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠান এদেশে ব্যবসা করতে পারবে না। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই ডাটাগুলো রাখবে?’<br />  <br /> সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে নাগরিকদের ঝুঁকির বিষয়ে বলেন, ‘দেশে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশি অপরাধ দেখি। জমির নামজারি ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য যদি সব জায়গায় এভেইলেভল হয়ে যায়, তখন আমার নামজারি যেকেউ এডিট করতে পারবে। আমার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ কোথায় কতটুকু আছে সেটা সবাই জেনে যেতে পারবে। জানার পর সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে পারবে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘নামজারির ক্ষেত্রে অবৈধ পন্থার আশ্রয় নিতে তথ্য ব্যবহূত হতে পারে। তার মানে ডিজিটালি আমার জমি নিয়ে অন্য কেউ জালিয়াতি করতে পারবে। তখন জাল-জালিয়াতির সংখ্যাটা অতিরিক্ত মাত্রায় হবে। আমাদের পাহাড়ে কুকি-চীন ও স্থানীয় জঙ্গিরা যে লেনদেন করতো তা সব ভুয়া এনআইডি দিয়ে। অনলাইন জুয়া খেলায় ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করা হয়। সুতরাং যেকোনো সন্ত্রাস সমূলে উৎপাটন করতে এনআইডি ও মুটোফোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই ডাটাগুলো নিয়ে এখনই আমাদের স্পর্শকাতর ভাবে চিন্তা করতে হবে।’</p> <p>ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আছে। দেশে ইতোমধ্যে অনেক বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। যারা দেশের বাইরে গিয়ে আবার দেশে এসেছে তাদের ডেবিট-ক্রেডিট কাডের্র হ্যাকাররা পেয়েছে। এ সংশ্লিত অনেক জিডি, মামলা হয়েছে। সুতরাং দেশের বাইরে ও আমাদের দেশে আর্থিক খাতেও বড় রকমের বিপর্যয় ঘটতে পারে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং যারা করছেন, তাদের অনেকেরই টাকা লোপাট হয়েছে। কারণ তার ওটিপি শুধু ফোনে আসে না, মেইলেও আসে। সেই মেইলে ব্রিজ থাকার কারণে হ্যাকাররা টাকা সরাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস। যেসব ব্যাংক এই সেবা দিচ্ছে তাদের অবশ্যই নজরদারির মধ্যে আনা দরকার। এসব নাম্বারের দিয়ে ভবিষ্যতে হ্যাকাররা দেশের বাইরে টাকা পাচার করবে বলে আশংকা করছি।</p> <p>প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি মোবাইল অপারেটরগুলোকে তথ্যভান্ডার তৈরির জন্য চিঠি দেয়। এজন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) থেকে তথ্য নিতে বলা হয়। বিসিসির ওই সেবা পরিচালনা করে ডিজিকন টেকনোলজিস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অপারেটররা এখনো তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেনি। কিন্তু বিটিআরসি থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। তথ্য ভাণ্ডারে ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, মা-বাবার নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, লিঙ্গপরিচয়, পেশা, ছবিসহ ১৬ ধরণের তথ্য যুক্ত করতে বলা হয়েছে।</p>