<article> <p style="text-align: justify;">রাজধানী ঢাকার যানজট কমাতে জাদুর ঝাঁপি মেট্রো রেল, যা ঢাকাবাসীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে টাকার কুমির নেমেছে মেট্রো রেল-৫ সাউদার্ন রুট প্রকল্পে। মেট্রো রেলের অন্য প্রকল্পগুলোর চেয়ে এই প্রকল্পে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি ব্যয় করা হচ্ছে। সেই ব্যয় এর মধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ব্যয়বহুল প্রকল্পটিতে খরচ ধরা হয়েছে ৫৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ঋণই রয়েছে ৩৯ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। বাকি ১৫ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা সরকারের ঋণ। মাত্র ১৭.৩ কিলোমিটারের এই প্রকল্পটি অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।</p> </article> <p style="text-align: justify;">পরিকল্পনা কমিশনে গতকাল মঙ্গলবার প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেট্রো রেল লাইন-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এরই মধ্যে চালু হয়েছে, যার সুবিধা ভোগ করছে রাজধানীবাসী। তবে প্রকল্পটির কমলাপুর পর্যন্ত অংশের কাজ চলমান রয়েছে।এদিকে মেট্রো রেল-১ ও মেট্রো রেল-৫ নর্দান রুটের কাজ চলমান রয়েছে।</p> <article> <p style="text-align: justify;">প্রকল্প দুটি ২০১৯ সালে অনুমোদন পায়। এর মধ্যে মেট্রো রেল-৬ শুধু উড়াল আর বাকি সবই পাতাল ও উড়াল মিলিয়ে। প্রকল্প তিনটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলমান তিন প্রকল্পের চেয়ে প্রস্তাবিত মেট্রো রেল-৫ সাউদার্ন রুটে প্রায় দ্বিগণের বেশি ব্যয় করা হচ্ছে। মেট্রো রেল লাইন-৬ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। মেট্রো রেল লাইন-১ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে  এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মেট্রো রেল লাইন-৫ (নর্দান) প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে দুই হাজার ৬১ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। আর মেট্রো রেল লাইন-৫ (সাউদার্ন) প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে তিন হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">ঢাকার প্রথম মেট্রো নির্মাণে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে প্রথম মেট্রো তৈরি হয় ভারতের দিল্লিতে। ঢাকা এমআরটি-৬-এর অর্ধেকেরও কম খরচে লাহোরে প্রথম মেট্রো তৈরি করেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে প্রথম মেট্রো তৈরি করেছে চীন।</p> <p style="text-align: justify;">ডলার রেট বাড়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বললেও পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলেই দেশে মেট্রো রেলে অন্যান্য দেশের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি ব্যয় করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকৌশলীদের মেট্রো রেল সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এবং বিদেশ থেকে বেশির ভাগ পণ্য আমদানি করায় বেশি খরচ লাগছে।</p> <p style="text-align: justify;">পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, এ প্রকল্পটিতে বেশ কিছু খাতে ব্যয় খুব বেশি ধরা হয়েছে। এতে আপত্তি তুলেছে কমিশন। বিশেষ করে পরামর্শক ব্যয়, ঋণ ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয়সহ বিভিন্ন ব্যয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এর আগে এ প্রকল্পটির এইড মেমোয়ারে বিদেশি ঋণ ও সরকারি ঋণসহ মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) দুই হাজার ৩৭২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্যয় প্রাক্কলনের ব্যাপক পার্থক্যের কারণ কী তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।</p> <p style="text-align: justify;">প্রকল্পটি চলাকালেই শুধু এডিবির ঋণের কমিটমেন্ট চার্জ বাবদই ২০৩ কোটি টাকা, যেটি ডলারের অঙ্কে প্রায় ১৯ কোটি ডলার। এ ছাড়া নির্মাণের সময়ই প্রকল্পটির ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা, ডলারের হিসাবে যা প্রায় ৫৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রকল্প চলাকালেই শুধু সুদ ও কমিটমেন্ট চার্জেই ব্যয় হবে ছয় হাজার ৫০ কোটি টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">প্রকল্পের পরামর্শক খাতেই ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাত থেকে ধরা হয়েছে ৪৫৯ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে ধরা হয়েছে এক হাজার ৩১০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে, এডিবির অর্থায়নকৃত প্রজেক্ট র‌্যাডিনেস ফাইন্যান্সিং (পিআরএফ) প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির জন্য বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়ন করা সত্ত্বেও এ প্রকল্পের আওতায় এত বিপুল পরিমাণ পরামর্শক সেবার সংস্থান রাখা অযৌক্তিক।</p> <p style="text-align: justify;">এত বেশি পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাবের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে পরামর্শক ব্যয়ে তাঁরা যুক্তি দিয়েছে টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয়ের কারণে এ খাতে তাদের ব্যয় বেশি রাখা হয়েছে। আমরা তাদের প্রশ্ন করেছি।’</p> <p style="text-align: justify;">মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্মাণসামগ্রীর দামের তীব্র বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ। আগের প্রকল্পগুলো অনুমোদনের সময় ডলার রেট কম ছিল, যার কারণে সেগুলোর খরচ কম পড়েছিল। বর্তমান ডলার রেট ধরেই প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর রড, সিমেন্ট ও পাথরের দাম অনেক বেড়েছে। যার কারণেও আগের প্রকল্পগুলোর চেয়ে ব্যয় বেশি লাগছে।</p> <p style="text-align: justify;">অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় বেশি ব্যয়ের বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশে মেট্রো রেলে প্রায় আড়াই গুণ বেশি ব্যয় হয়। এর একটা কারণ হচ্ছে, এর পরামর্শক ও প্রকৌশলী বিদেশ থেকে আনতে হয় আবার বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও বাইরে থেকে আনতে হয়। যার কারণে ব্যয় বেশি খরচ হয়। </p> <p style="text-align: justify;">প্রকল্পে ৩৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এ পরিমাণ ভূমি কোথায়, কোন কাজে ব্যবহার করবে, তা স্পষ্ট করেনি তারা। প্রকল্পের উদ্দেশ্যের সঙ্গে জমি অধিগ্রহণের সম্পর্ক কী, তাও স্পষ্ট করা নেই ডিপিপিতে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ বাবদ চার হাজার ৭১৬ কোটি টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে প্রকল্পে। এই ক্ষতিপূরণ কারা পাবেন, এর ভিত্তি কী, তাও স্পষ্ট করেনি ডিএমটিসিএল।</p> <p style="text-align: justify;">প্রকল্প সূত্র বলছে, এটি ঢাকা মহানগরীর দ্বিতীয় পূর্ব-পশ্চিম সংযোগকারী মেট্রো রেল। যার মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ দৈনিক প্রায় ৯ লাখ ২৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। প্রতিটি একমুখী মেট্রো রেল ৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড পর পর যাত্রা শুরু করে ১৫টি স্টেশনে থেমে ২৮.০২ মিনিটে গাবতলী থেকে ধানমণ্ডির রাসেল স্কয়ার, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত যাতায়াত করবে। প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা দুই হাজার ৩১২ জন।</p> </article>