<article> <p style="text-align: justify;">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারির দেয়ালে টানানো বহুমাত্রিক ছবিগুলোর দিকে তাকালে আপনি হয়তো মনের অজান্তেই চলে যাবেন লড়াইয়ের, গৌরবের ১৯৭১ সালে। আলোকচিত্রগুলোতে উঠে এসেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতার মুখে ভারতের পথে শরণার্থী হওয়া লাখো মানুষের দুর্দশা, শিকড় ছিন্ন হওয়া মানুষের বোবা আর্তনাদ, অপরিসীম ভীতি, নদীতে ভেসে থাকা লাশসহ একাত্তরের কিছু টুকরা ছবি। খ্যাতিমান ভারতীয় আলোকচিত্রী শিল্পী রঘু রাইয়ের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তোলা ছবি দিয়ে চারুকলা অনুষদে শুরু হয়েছে ‘রাইজ অব এ নেশন’ (একটি জাতির উত্থান) শীর্ষক এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে রয়েছে উত্তাল সেই যুদ্ধদিনে রঘু রাইয়ের তোলা ৫৩টি আলোকচিত্র।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">ছবিগুলোতে ফুটে উঠেছে একাত্তরের মর্মস্পর্শী রূপ। চারুকলা অনুষদের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (ডিবিএফ) যৌথ ব্যবস্থাপনায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ডিবিএফ রঘু রাইয়ের একাত্তরে তোলা দেড় শটির মতো ছবি নিয়ে ‘রাইজ অব এ নেশন’ নামে একটি বই প্রকাশ করবে। সেই বইয়ের মধ্যে থাকা ৫৩টি ছবি নিয়েই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">৫৩ সংখ্যাটি নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজনের বিষয়ে ডিবিএফের প্রতিষ্ঠাতা দুর্জয় রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তির সঙ্গে মিল রেখেই ৫৩টি ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে।’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">জয়নুল গ্যালারির দুটি কক্ষে রঘু রাইয়ের ছবিগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের শরণার্থীশিবিরের ছবি, শরণার্থী হিসেবে মানুষের সীমান্তের পথে দীর্ঘ কষ্টকর যাত্রা, নদীতে ভাসমান মৃতদেহ, বিপন্ন, অসহায় নারী-পুরুষের ছবি, মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ছবিসহ একাত্তরের সময়কার বিভিন্ন দৃশ্য।</p> <p style="text-align: justify;">সকাল ১১টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রদর্শনীটি ১৯ মে পর্যন্ত সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।</p> <p style="text-align: justify;">উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পাকিস্তানিরা যেভাবে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি লোক মাতৃভূমি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে চলে গিয়েছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের জনগণ যেভাবে আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল, নিরাপত্তা দিয়েছিল, থাকার ব্যবস্থা করেছিল, সেই চিত্র যাঁরা স্বচক্ষে দেখেননি তাঁদের বোঝানো খুব কঠিন। বরেণ্য আলোকচিত্রশিল্পী রঘু রাই ‘রাইজ অব এ নেশন’ অ্যালবামের মাধ্যমে মানুষের নিদারুণ কষ্ট, জীবন বাঁচানোর যে আকুতি, সেটি ফুটিয়ে তুলেছেন।’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">প্রদর্শনীর কিউরেটর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিহান করীম বলেন, ‘প্রখ্যাত ভারতীয় আলোকচিত্রশিল্পী রঘু রাই তাঁর ক্যামেরায় অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মর্মস্পর্শী করুণ কাব্যিক রূপ ধারণ করেছেন। হানাদারের বর্বরতার পাশাপাশি সেখানে উদ্বাস্তু মানুষ এবং উদ্বাস্তুশিবিরের গভীর মানবিক গল্পগুলো ধরা পড়েছে; চিরন্তন হয়ে উঠেছে ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো।’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কিউরেটর আরো বলেন, সীমিত সংস্থান নিয়ে অস্থায়ী শিবিরে আটকে থাকা উদ্বাস্তুদের দুর্দশা রাইয়ের ছবিতে ভিন্ন ব্যঞ্জনা পেয়েছে। করুণ, নির্মম একটি অন্ধকার অনুচ্ছেদের ওপর মানবিক আলো ফেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রঘু রাইয়ের ধারণকৃত ছবিগুলো একটি অমূল্য সংকলন।</p> <p style="text-align: justify;">আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন এবং ঘুরে দেখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া নাট্যব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবিরের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য ড. রুবানা হক, দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দুর্জয় রহমান, স্কয়ার গ্রুপের ডিরেক্টর অঞ্জন চৌধুরী প্রমুখ।</p> </article>