নতুন করে সংবিধান ও জাতীয় সংগীত রচনার দাবি আয়নাঘরফেরত আযমীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নতুন করে সংবিধান ও জাতীয় সংগীত রচনার দাবি আয়নাঘরফেরত আযমীর

নতুন করে সংবিধান প্রণয়ন ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন সদ্য 'আয়নাঘর' থেকে মুক্তি পাওয়া সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মরহুম গোলাম আযমের মেজো ছেলে।

আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আয়নাঘর’ প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ দাবি জানান। 

সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, ‘আমাদের যে জাতীয় সংগীত আছে, তা আমাদের অস্তিত্বের পরিপন্থী।

দুই বাংলা এক করার জন্য এই সংগীত রচনা করা হয়েছিল। এটা কিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হতে পারে? ১৯৭১ সালে ভারত এটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। তখন আমাদের অস্থায়ী সরকার তা মেনে নিয়েছিল। আমাদের অনেক সুন্দর সুন্দর গান আছে।
ধন-ধান্য পুষ্পে ভরা, খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি- আমার দেশের মাটি বা প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশসহ অনেক সুন্দর সুন্দর গান আছে। বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য নতুন করে জাতীয় সংগীত নির্ধারণ করা উচিত। নতুন জাতীয় সংগীত নির্বাচনে প্রয়োজনে সরকার নতুন কমিটি গঠন করুক।’

সংবিধানে অনেক অসংগতি আছে উল্লেখ করে তা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন সময় সশস্ত্র বাহিনীর শত শত মানুষকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার নাই। যত ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন আছে, এগুলো বাতিল করে নতুন করে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধানে মানবাধিকার পূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় সংসদে কোনো আইন যেন আল্লাহর বিধান পরিপন্থী না হয় সে আইন করতে হবে।এ জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা প্রয়োজন।

গুম প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমার পৈতৃক পরিচয় এবং তাদের বড় ভয় ছিল, আমি ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আমি এখনো বলছি, আমরা সৎ প্রতিবেশী বন্ধু চাই। যে দেশ আমাদের ক্ষতি করে, সে বন্ধু হতে পারে না। ভারত যদি শত্রুর মতো আচরণ করে, তবে আমি তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হব। এসব ভয়ের কারণ থেকেই আমাকে গুম করা হয়েছিল। আমাকে ও আমার স্ত্রীর সঙ্গে খুবই বাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

গুমের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এটা (গুম) করেনি। সরকারের কোনো একটা বাহিনী দিয়ে এটা (আয়নাঘর) করিয়েছে। কোন বাহিনী করেছে, এটা একটা প্রশ্ন। সেনাপ্রধান বলেছেন, ডিজিএফআই করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, ডিজিএফআইয়ের ওপর সেনাবাহিনীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তিন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত ডিজিএফআইয়ের নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। সেনাপ্রধান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। তারা সুষ্ঠু তদন্ত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

গরম ও বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নতুন বার্তা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
গরম ও বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নতুন বার্তা
ফাইল ছবি/কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশের তিনটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া ও বিদ্যুৎ চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

অন্যদিকে রাজশাহী, খুলনা বিভাগসহ মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর এবং নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়।

সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

মন্তব্য

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর আজ

    অনেক শ্রমিক পাননি কিছুই
অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর আজ
সংগৃহীত ছবি

দেশের পোশাক শিল্পে এক শোকাবহ দিন আজ ২৪ এপ্রিল। এই দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১৩৬ জন শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়। আহত হন আরো কয়েক হাজার শ্রমিক। দিনটি ঘিরে নানান শ্রমিক সংগঠন আয়োজন করেছে নানা কর্মসূচি।

তৎকালীন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত রানা প্লাজায় থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো ওই দিন সকাল ৮টায় হাজির হন নিজ নিজ কর্মস্থলে। উৎপাদনও শুরু করেন নির্ধারিত সময়ে। হঠাৎ সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দ হয়। আশপাশে উড়তে থাকে ধুলাবালি।

ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। শুরু হয় আহত শ্রমিকদের আহাজারি। উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
চলে বিরতিহীন উদ্ধার অভিযান।

রানা প্লাজার প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান, দ্বিতীয় তলায়ও ছিল দোকান আর ব্যাংক, তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড ও ফ্যানটম ট্যাক লিমিটেড, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথারটে লিমিটেড নামের গার্মেন্টস ছিল।

আরো পড়ুন

আমাদের সিনেমা বাঁচাতে হলে সিনেমার নায়ক-নায়িকা নিয়ে ভাবুন!

আমাদের সিনেমা বাঁচাতে হলে সিনেমার নায়ক-নায়িকা নিয়ে ভাবুন!

 

রানা প্লাজা থেকে মোট ১১৩৬ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২৪৩৮ শ্রমিককে। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

অনেকে আবার মানসিক রোগী হয়ে পড়ে আছেন।
 
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালের ২৪মে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা  রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের সামনে নির্মাণ করেন এক শহীদ বেদি। অস্থায়ী শহীদ বেদিটির নামকরণ করা হয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। এ বেদিটিকে কেন্দ্র করে এখনো বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন চালিয়ে আসছে নানা আন্দোলন কর্মসূচি।

অধিকাংশ ধ্বংসস্তূপই সরিয়ে ফেলা হয়েছে বংশাই নদীর পাড়ে। এখনও কংক্রিট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রানা প্লাজার ১৮ শতাংশ জমির ওপর। চারপাশটা কাঁটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে রেখেছিল জেলা প্রশাসক। সেটিও আর নেই। সামনেই বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছে শহীদ বেদি। বছর পূর্তিতে রানা প্লাজায় আহত, নিহত আর স্বজনদের আনাগোনা চোখে পড়ে। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নানান দাবিতে এখানে আন্দোলন করে।

আরো পড়ুন

আদালত চত্বরে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান, চলছে শুনানি

আদালত চত্বরে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান, চলছে শুনানি

 

সোহেল রানার মালিকানাধীন রানা প্লাজার ভূমি, রানা টাওয়ারের ভূমি ও ধামরাইয়ের রানা ব্রিকসের ভূমি সরকারের দখলে রয়েছে। আদালতের নির্দেশে তার মালিকানাধীন সব ভূমি বাজেয়াপ্ত করে ঢাকার জেলা প্রশাসক দখল বুঝে নিয়েছেন।

বেদনার সাক্ষী হয়ে আছে সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ। ঘটনার দিন থেকে টানা ১৭ দিন ওই বিদ্যালয়ের মাঠে নিহতদের লাশ নিয়ে রাখা হতো। আর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হতো সেই মাঠ থেকে। প্রিয় মানুষটির সন্ধান পেতে স্বজনরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেছিলেন। রানা প্লাজা থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ দেড় কিলোমিটারজুড়ে সে সময় অ্যাম্বুলেন্সের মুহুর্মুহু শব্দ সবাইকে জাগিয়ে তুলত। আর অপেক্ষারত স্বজনরা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন-এই বুঝি এল তার স্বজন।

রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর প্রায় প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনই নড়েচড়ে বসে। শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ নিরাপদ রাখতে আন্দোলন শুরু করেন। নিহত ও আহতদের লস অব আর্নিংয়ের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও করেন তারা। ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করার জোর দাবি জানান তারা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, 'প্রতি বছর এই দিনে আমরা নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। প্রতি বছরই আমরা একই দাবি তুলে ধরি, রানা প্লাজার অনেক শ্রমিক রয়েছেন যারা এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। দ্রুত ওই সব শ্রমিকদের লস অব আর্নিংয়ের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।' 

তিনি আরো বলেন, 'এ ছাড়া সরকার সোহেল রানার যে সব সম্পত্তি জব্দ করেছে সেসব নিহত ও আহত পরিবারের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির কোনোটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের দাবিগুলো পূরণ করবে। ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।'

এ ঘটনার জন্য সে সময় স্থানীয় প্রশাসনের গাফেলতিকেই দায়ী করছিল স্থানীয় সুশীল সমাজ ও আহত শ্রমিকরা। তাদের দাবি ছিল, ভবনটি ধসের ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল ৪ ও ৫ তলার কয়েকটি পিলারে। যা দেখে শ্রমিকরা কর্মস্থল থেকে নেমে আসেন মহাসড়কে। এমন সংবাদের পর সেখানে ছুটে যান স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। তবে সংবাদকর্মীদের ওই স্থানে প্রবেশ করতে দেয়নি মালিক কর্তৃপক্ষ। এ সময় সংবাদকর্মীরা যোগাযোগ করেন স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সংবাদ প্রচার হয় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিল মিডিয়ায়। 

পরে ওই দিন বিকালেই ভবনের ফাটল দেখতে আসেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সরদার। তিনি এসে ভবনটির কয়েক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘এ ফাটলে তেমন কোনো সমস্যা নেই, বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। সামান্য প্লাস্টার উঠে গেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।’ এ বলে তিনি চলে যান।

আরো পড়ুন

ইউএনওর বিদ্বেষপূর্ণ রায়, সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলনে

ইউএনওর বিদ্বেষপূর্ণ রায়, সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলনে

 

তার এ বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ভবনটিতে ঘটলো দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা। নিভে গেলো হাজারের বেশি জীবন প্রদীপ। সে সময় পদক্ষেপ নিলে এমন ঘটনা নাও হতে পারত। অবশ্য এ ঘটনায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সরদারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

মন্তব্য

ইউএনওর বিদ্বেষপূর্ণ রায়, সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ইউএনওর বিদ্বেষপূর্ণ রায়, সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলনে
ইনসেটে সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপু ও ইউএনও শেখ মো. রাসেল

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপুর কারাদণ্ডের প্রতিবাদে সাংবাদিক সংগঠনগুলো ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। টিপুকে নিঃশর্ত মুক্তি এবং তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেলের অপসারণ দাবি করে ঢাকা, সাতক্ষীরা ও তালায় মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, দুর্নীতির খবর প্রকাশের প্রতিশোধ নিতেই টিপুকে আদালতের নামে একতরফা শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আজ সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে টিপুর মুক্তির দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

টিপুর মুক্তির দাবিতে আলটিমেটাম

কালের কণ্ঠের তালা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুর মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিকরা। এ ছাড়া তাঁরা সাংবাদিক টিপুকে শাস্তিদানকারী ইউএনও শেখ মো. রাসেলের অপসারণ দাবি করেছেন। গতকাল ঢাকা, সাতক্ষীরা, তালাসহ বিভিন্ন স্থানে এই দাবি জানানো হয়।

দাবি আদায় না হলে আজ সাতক্ষীরায় সাংবাদিকরা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশন কার্যালয়ে‌ স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। তালা উপজেলা মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম আয়োজন করে মানববন্ধনের। সাতক্ষীরায়ও মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা।

তথ্য কমিশনে স্মারকলিপি : গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশন কার্যালয়ে‌ স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। ওই সময় কালের কণ্ঠের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মফস্বল সম্পাদক রিদওয়ান আক্রাম। এ সময় সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক টিপুকে নিঃশর্ত কারামুক্তি দেওয়া না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন। আজ বৃহস্পতিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেবেন। তথ্য কমিশনের পরিচালক এ কে এম আজিজুল স্মারকলিপি গ্রহণ করে নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

ওই সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম মিরপুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুল হাকিম রানা, সহসম্পাদক নুরুল হুদা বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, আনিসুর রহমান লিমন, মারিয়া আক্তার, সুমন খান প্রমুখ। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তালার এ ঘটনায় সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের মাধ্যমে প্রশাসনের এক শ্রেণির দালাল কারাদণ্ড দিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মকে উসকে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে সাজানো নাটকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন রাখা হয়েছে—প্রশাসনের উচিত ছিল ঘটনার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তা করা হয়নি।

তালায় মানববন্ধন : কালের কণ্ঠের তালা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুর কারাদণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুরে তালা উপজেলা মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

তাতে সভাপতিত্ব করেন তালা উপজেলা মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এম এ ফয়সাল। সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান রেন্টুর পরিচালনায় তাতে বক্তব‍্য দেন তালা প্রেস ক্লাবের সদস‍্য সেলিম হায়দার, দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, সদস‍্য কে এম শাহিনুর রহমান, আজিজুল ইসলাম প্রমুখ। উপজেলায় যত উন্নয়নমূলক কাজ হয় তার সব হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে। এসব কাজে কারো কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। কিছুদিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তালা অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণকে কেন্দ্র করে ইউএনওর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় হিংসার বলি হয়েছেন টিপু। বক্তারা বলেন, ইউএনও একজন আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। তাঁর আপন ভাবি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম‍্যন। দুর্নীতিবাজ ফ‍্যাসিস্ট সরকারের আমলা দিয়ে উপজেলার কি উন্নয়ন হবে?

সাতক্ষীরায় মানববন্ধন : গতকাল সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি। মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বুধবারের মধ্যে সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপুকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ, সময় টিভির মমতাজ আহমেদ বাপি, আরটিভির রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, দেশ টিভি ও বিডি নিউজের শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, বিএসএসের আসাদুজ্জামান, ইনডিপেনডেন্ট টিভি ও বাংলাদেশ বেতারের সাংবাদিক আবুল কাশেম, এখন টিভির আহসানুর রহমান রাজীব, দীপ্ত টিভির রঘুনাথ খাঁ, ডিবিসির এম বেলাল হোসাইন, মানবজমিনের এস এম বিপ্লব হোসেন, মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত প্রমুখ। বক্তারা বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছিলেন না বা তাঁর সামনে কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর পরও তিনি আইন ভঙ্গ করে সাংবাদিক টিপুকে সাজা দিয়েছেন। বক্তারা টিপুর নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার, ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপসহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

গাজীপুরের চার প্রেস ক্লাবের বিবৃতি : টিপুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার  আলটিমেটাম দিয়েছে গাজীপুরের চারটি প্রেস ক্লাব। এর মধ্যে আছে গাজীপুর জেলা প্রেস ক্লাব, গাজীপুর সদর প্রেস ক্লাব, কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও শ্রীপুর প্রেস ক্লাব। গতকাল বিকেলে এসব সংগঠন যৌথভাবে এ বিষয়ে বিবৃতি দেয়।

গাজীপুর জেলা প্রেস ক্লাবে সভাপতি রিপন আনসারী, সাধারণত সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া, গাজীপুর সদর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান ও শ্রীপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম এম ফারুক যৌথভাবে এই বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া সংবিধান,  আইনের শাসন ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো আচরণ করায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ দণ্ডিত সাংবাদিকের দণ্ড বাতিল করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় গাজীপুর থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আক্রোশ থেকে কালের কণ্ঠ সাংবাদিককে সাজা দেন ইউএনও

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেলের দুর্নীতি-অনিয়ম এখন প্রকাশ্যেই লোকজনের মুখে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ঢাকতে এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের রক্ষা করতেই তিনি অতি উত্সাহী হয়ে গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠের তালা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুকে ১০ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া সাংবাদিকদের প্রতিবাদের দরুন তাঁর আমলে করা একটি নালার অবস্থান সরানোর চাপে পড়েন ইউএনও। সাংবাদিকদের প্রতি আগের সেই ঝাল তিনি মিটিয়েছেন টিপুকে জেলদণ্ড দিয়ে।

গতকাল সাতক্ষীরা ও তালায় সাংবাদিকরা দফায় দফায় কর্মসূচির মাধ্যমে সাংবাদিক টিপুকে শাস্তি দেওয়ার প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেছেন, এই রায় বিদ্বেষপ্রসূত। তাঁরা তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণের আলটিমেটাম দিয়েছেন। না হলে আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। গতকাল সকালে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি।

তালা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন তৈরির কাজ চলছে। এই কাজে নির্মাণসামগ্রী যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না—এমন সংবাদ পেয়ে তা দেখতে গত মঙ্গলবার নির্মীয়মাণ ভবন এলাকায় যান সাংবাদিক টিপু। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাংলোর সামনে নির্মাণকাজ সরেজমিনে দেখার এক পর্যায়ে টিপু উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলমের কাছে পানি, পাথর ও সিমেন্টের অনুপাত কেমন দেওয়া হচ্ছে তার তথ্য জানতে চান।

কিন্তু মামুন তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। সেখানে মামুন ও অন্য নির্মাণ শ্রমিকরাই উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে টিপুর সঙ্গে মামুনের তর্ক হাতাহাতিতে গড়ায়। মামুন ও তাঁর অনুগত শ্রমিকরা সাংবাদিক টিপুর ওপর হামলে পড়েন। তাঁরা টিপুকে সামনে থাকা ছাতা দিয়ে শরীরে আঘাত করতে থাকেন।

এ ছাড়া মামুন উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রাসেলকে উত্তেজিত হয়ে বিষয়টি মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। রাসেল সরেজমিনে উপস্থিত শ্রমিকসহ স্থানীয়দের সাক্ষ্য নিয়ে টিপুর বিরুদ্ধে রায় দেন। উপসহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলম গতকাল কালের কণ্ঠের কাছে দাবি করেন, টিপুই আগে মামুনের মুখে ঘুষি মারেন।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের কাজে মানসম্মত ও যথাযথ নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছিল না। এ কারণে তথ্য না দিয়ে বরং সাংবাদিককে তা থেকে বিরত রাখার জন্যই কৌশল নেন মামুন। জানা গেছে, এই প্রকল্পের কাজ আগে পর পর দুবার বাতিল করা হয়েছিল। তৃতীয়বারের মতো কাজ শুরু হলে ভবনের পাইলিংয়ের ক্ষেত্রে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। তার ওপর ভবন তোলা হলে ভবন ভেঙেও পড়তে পারে। তাই তা ঠেকানোর জন্য তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাংবাদিক টিপু।

বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম তালা উপজেলা শাখার সভাপতি এম এ ফয়সাল বলেছেন, ‘দুর্নীতির তথ্য ঢাকতেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বাধা দেওয়া হয়েছে। আর তালায় বিভিন্ন সরকারি কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সহযোগিতা করছেন  ইউএনও। এ কারণে আমরা তাঁর অপসারণ চেয়েছি।’ তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার-ইউএনও শেখ মো. রাসেল অবশ্য বলছেন, একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে আমার একজন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত শ্রমিকদের সাক্ষ্য শেষে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় টিপুকে ১৭৬ ধারায় ১০ দিনের সাজা ও ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর বলেন, ‘এখানে সাংবাদিককে সাজা দেওয়া হয়েছে একতরফাভাবে। এখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে অপরাধ সংঘটন হয়নি।’

তালার ইউএনও
ছাত্রলীগের কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি

নিয়মবহির্ভূতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কালের কণ্ঠের তালা প্রতিনিধিকে ১০ দিনের সাজা দেওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে সাতক্ষীরার তালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রাসেলকে নিয়ে। জানা গেছে, রাসেল নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন। রাসেল আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পান; যদিও তিনি ৩১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেছিলেন। প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের পর এমন কোনো আওয়ামী সুবিধা নেই, যা তিনি পাননি।

স্বল্প চাকরিজীবনে তিনি বিদেশে পোস্টিংও বাগিয়ে নিয়েছিলেন, যা হাতে গোনা দু-চারজন কর্মকর্তাই পান। দলীয় পরিচয় ছাড়া এসব পোস্টিং পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। শুধু তা-ই নয়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ভোল পাল্টে ঠিকই বাগিয়ে নিয়েছেন ইউএনও পদটিও।  সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ মো. রাসেল।

ছাত্রজীবনের শুরুতে তাঁর কোনো দলীয় পরিচয় না থাকলেও ধীরে ধীরে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর আগে ও পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সবাই তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন সে সময়ের জাহাঙ্গীরগনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁদের দহরম-মহরম ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁরা দুজনই এখন সরকারের উচ্চ পদে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন।

অনেকে দাবি করেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তিনি সাংবাদিককে সাজা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে হেনস্তা করেন। এ নিয়ে সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। এদিকে ইউএনও রাসেল নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন শেখ রাসেল। থাকতেন কামাল উদ্দিন হলে। ২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। তাতে সাফিনকে সভাপতি ও সাম্যকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়েছিল। সক্রিয় কর্মী ছিলেন শেখ রাসেল। সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম সাম্যর কাছের বন্ধু হওয়ার সুবাদে রাসেল কামাল উদ্দিন হলের সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিলেন। তবে হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আত্মগোপনে থাকা ওই কমিটির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতি করত রাসেল। তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ১১ সদস্যের ছিল। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে চেয়েছিল সাধারণ সম্পাদক সাম্য।’

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ছাড়াও ভূমি অফিসে ইউএনওর আছে একচ্ছত্র আধিপত্য। এখানে ঘুষের রেট নির্ধারণ করে রেখেছেন তিনি। নামজারি, নাম সংশোধনসহ ভূমিসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানে গরিবের পকেট কাটা হয় এখানে। এই পকেট কেটে নেওয়া অর্থের বড় অংশ রোট অনুযায়ী ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিরাজ হোসেন, বড়বাবু আব্দুল হাই ও নাজির তপন কুমারের হাত ঘুরে চলে যায় ইউএনওর পকেটে। জমির নামজারি করতে হলে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এরপর শুরু হয় ঘুষ বাণিজ্য। আবেদনের পর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিস থেকে প্রত্যয়ন নিতে হলে দিতে হয় ঘুষ, এরপর সার্ভেয়ারের প্রত্যয়নেও ঘুষ, এমনকি বাড়বাবু ও নাজিরের টেবিলে ঘুসের টাকা জমা না হলে এসি ল্যান্ডের টেবিলে ফাইল যায় না। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকেও আলাদাভাবে আসে ঘুষ। তা যায় শেখ মো. রাসেলের কাছে। নগরঘাটা গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নামজারি করতে আট হাজার টাকা দিয়েছি। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আগে এসি ল্যান্ড অফিসে দিতে হতো তিন-চার হাজার টাকা। তবে ইউএনও রাসেল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
 

মন্তব্য

বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল, ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল, ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বিল্লাল হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এ তথ্য জানান। 

আসিফ মাহমুদ বলেন, আমার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

তিনি বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে একজন সাংবাদিক কল দিয়ে আমার বাবার নামে ইস্যুকৃত ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলেন। বাবার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলাম তিনি জেলা পর্যায়ের (জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার এর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত) একটি লাইসেন্স করেছেন। 

আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করতে তাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন।

আমার বাবা তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোনো লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
 

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সেজন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। লাইসেন্স করা ও বাতিলের মধ্যবর্তী সময়ে সেটি ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি বলেও জানান উপদেষ্টা।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ