আমার মেয়ে নিরাপদ হবে কীভাবে?

মাহবুব কবির মিলন
মাহবুব কবির মিলন
শেয়ার
আমার মেয়ে নিরাপদ হবে কীভাবে?
অঙ্কন: বুশরা লাবিবা

একটি মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করা প্রতিটি বাবা-মায়ের জন্য স্বাভাবিক। বিশেষ করে আজকের এই সময়ে, যখন চারপাশে অসংখ্য অনিশ্চয়তা আর ঝুঁকি ঘিরে আছে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে ছোট ছোট সতর্কতা অবলম্বন করলেই অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে আমরা আমাদের মেয়েদের নিরাপদ রাখব? কীভাবে তাদের জন্য একটি সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করব? আসুন, কিছু প্রায়োগিক ও মানবিক দিক থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

বাড়ির ভেতরে ও বাইরে সতর্কতা

আপনি যদি ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন, বিশেষ করে অনেক উপরের তলায়, তাহলে আপনার মেয়ে একা সিঁড়ি বেয়ে বা লিফটে করে উঠানামা করলে তার নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হোন। নিচের ফ্ল্যাটে অনেক মানুষ থাকলেও তাদের সবাইকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। মেয়েকে শেখান, অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলার সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে হবে। বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং মেয়েকে একা চলাফেরা করতে দেওয়ার আগে ভালোভাবে বুঝে নিন।

কোচিং সেন্টার ও স্কুলে নিরাপত্তা

মেয়ে যদি কোচিং সেন্টারে যায়, তাহলে সেখানে একা থাকার পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করুন। কোচিং সেন্টার ফাঁকা থাকলে, বিশেষ করে যখন শুধু টিচার উপস্থিত থাকেন, তখন মেয়েকে একা পাঠানো থেকে বিরত থাকুন। স্কুলেও একই সতর্কতা মেনে চলুন। মেয়েকে এমন সময়ে স্কুলে পাঠাবেন না, যখন সে ক্লাসে বা স্কুলের কোনো জায়গায় একা হয়ে যেতে পারে।

স্কুল ও কোচিং সেন্টারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন এবং প্রয়োজনে শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসায় সতর্কতা

মেয়েকে কোনো বান্ধবীর বাসায় থাকার জন্য পাঠানোর আগে ভালোভাবে জেনে নিন সেই পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে। বিশেষ করে যদি সেই বাসায় কোনো পুরুষ সদস্য থাকেন, তাহলে আরও বেশি সতর্ক হোন। বিবাহিত ভাই-বোনের বাসায়ও মেয়েকে পাঠানোর আগে ভাবুন। সেখানে অন্য পুরুষ সদস্য থাকলে মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করুন।

পরিবারের বাইরে কাউকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাবে না—এই মন্ত্রটি মনে রাখুন।

একা চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা

মেয়েকে একা অরক্ষিত জায়গায় পাঠানো থেকে বিরত থাকুন। লম্বা ফসলের ক্ষেত, যেমন পাট বা ইক্ষু ক্ষেতের পাশ দিয়ে একা হেঁটে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। এমন জায়গায় মেয়েকে একা যেতে দেবেন না। একইভাবে, অন্ধকার বা নির্জন রাস্তায় একা চলাফেরা করা থেকে মেয়েকে বিরত রাখুন। প্রতিটি পদক্ষেপে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

সারাক্ষণ ট্র্যাকিং ও যোগাযোগ

মেয়ের গতিবিধি সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকুন। তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং তার অবস্থান সম্পর্কে আপডেটেড থাকুন। প্রযুক্তির সাহায্য নিন। মোবাইল ফোন বা ট্র্যাকিং অ্যাপের মাধ্যমে মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। তবে শুধু প্রযুক্তির উপর নির্ভর না করে, মানবিক স্পর্শ বজায় রেখে মেয়ের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। তাকে শেখান, কীভাবে বিপদ এড়াতে হয় এবং বিপদে পড়লে কী করতে হয়।

শেষ কথা

মেয়ের নিরাপত্তা শুধু একটি দায়িত্ব নয়, এটি একটি অঙ্গীকার। প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্কতা অবলম্বন করলেই আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি। মনে রাখবেন, মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু তার জন্য নয়, এটি আপনার নিজের শান্তি ও সুখের জন্যও। তাই আজই শুরু করুন, ছোট ছোট সতর্কতা মেনে চলুন এবং আপনার মেয়েকে একটি সুরক্ষিত ও সুন্দর জীবন উপহার দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দিন।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

দৃষ্টিপাত

শৃঙ্খলা নাকি আতঙ্ক? সরকারি চাকরিতে অব্যাহতির নতুন বিধান নিয়ে প্রশ্ন

আনিসুর বুলবুল

আনিসুর বুলবুল

আনিসুর বুলবুল

আনিসুর বুলবুল

শেয়ার
শৃঙ্খলা নাকি আতঙ্ক? সরকারি চাকরিতে অব্যাহতির নতুন বিধান নিয়ে প্রশ্ন
ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, দাপ্তরিক কাজে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী কর্মচারীকে তদন্ত ছাড়াই মাত্র আট দিনের নোটিশে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ সংশোধনের কাজ শুরু করেছে। তবে এই বিধানটি শৃঙ্খলা আনবে, নাকি কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে—সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

গত জুলাই-আগস্টে ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে পেশাগত দ্বন্দ্ব, কর্মস্থলে অনিয়মিত উপস্থিতি, এমনকি সচিবালয়ে হাতাহাতি ও আন্দোলনের মতো ঘটনাগুলো এই সংশোধনীর পেছনে মূল প্রেরণা বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার চাইছে, দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে কর্মপরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তদন্তের সুযোগ না রাখাকে অনেকে মনে করছেন একপেশে ও অগণতান্ত্রিক।

প্রস্তাবিত খসড়ায় তিন ধরনের শাস্তির উল্লেখ আছে: চাকরি থেকে বরখাস্ত, অব্যাহতি কিংবা পদাবনতি ও বেতন কমানো।

চারটি ক্ষেত্রে এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে: কর্মস্থলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অবৈধ অনুপস্থিতি, সহকর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া বা প্ররোচনা দেওয়া। অভিযুক্ত কর্মচারীকে ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে, এবং শাস্তি নির্ধারণের পর আরও ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ পাবেন। তবে এই সময়সীমাগুলো কি যথেষ্ট? নাকি তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে?

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান থাকলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে দীর্ঘ তদন্ত প্রক্রিয়া পালন করতে হয়। নতুন এই বিধান সেই প্রক্রিয়াকে সংক্ষিপ্ত করে দেবে।

সরকারের যুক্তি, এটি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে এই সংশোধনী নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, এটি কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতাকে বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই কাউকে চাকরিচ্যুত করা সম্ভব হবে।

অন্যদিকে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি কর্মচারীদের কিছু আন্দোলন ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনিক কাজকে ব্যাহত করেছে। সেক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপের যৌক্তিকতাও অস্বীকার করা যায় না।

তবে প্রশ্ন হলো, এই কঠোরতা কি ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারবে? নাকি এটি শুধুই কর্তৃপক্ষের হাতে একটি অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দেবে?

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে সামরিক আমলের অধ্যাদেশের সঙ্গে তুলনা করছেন। ৪৫ বছর পর এমন বিধান কার্যকর করা কি যুক্তিসঙ্গত? নাকি সময়ের প্রয়োজনে এটি একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ? এই সংশোধনী কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে কিনা, তা নির্ভর করবে এর প্রয়োগের ওপর। যদি ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা যায়, তাহলে এটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যথায়, এটি শুধুই একটি ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে প্রশাসনিক কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

সরকারি চাকরির শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথটি যেন ন্যায় ও নীতির ভিত্তিতে হয়—সেই নিশ্চয়তা দেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য

সিনেমা বাঁচাতে হলে নায়ক-নায়িকা নিয়ে ভাবুন!

    জামান আখতার
শেয়ার
সিনেমা বাঁচাতে হলে নায়ক-নায়িকা নিয়ে ভাবুন!

পঞ্চাশের দশকে আমাদের সিনেমার সূচনাকালে নায়ক রহমান, খান আতা ও আনোয়ার হোসেন অবদান রেখেছেন। সঙ্গে ছিলেন নায়িকা রওশন আরা, সুমিতা, শবনম, সুলতানা জামান, রোজি। তখন এ দেশে উর্দু, হিন্দি, কলকাতার বাংলা সিনেমার আগ্রাসনে আমাদের বাংলা সিনেমা নির্মাণ ও‌ বিপণন ব্যাপকভাবে শুরু হতে পারেনি। 

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর ভারতে সিনেমার বাজার আমাদের দেশে বন্ধ হয়ে গেলেও তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু সিনেমার বাজার বিস্তৃত।

ষাটের দশকে আমাদের বাংলা সিনেমা নির্মাণ বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন নতুন নায়ক-নায়িকা সিনেমায় যোগ হলেন। আমরা পেলাম রাজ্জাক, নাদিম, আজিম, উজ্জ্বল ও আরো কয়েকজনকে। পেলাম শাবানা, সুজাতা, কবরী, কবিতা, সুচন্দা, ববিতার মতো নায়িকা। সিনেমার প্রডাকশন বাড়ল, হল‌ বাড়তে শুরু করল।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সত্তরের দশক থেকে মধ্য আশির দশক পর্যন্ত নায়করাজ রাজ্জাক, উজ্জ্বলের পাশে এসে দাঁড়ালেন ওয়াসিম, আলমগীর, সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, মাহমুদ কলিসহ আরো কয়েকজন। নায়িকা হিসেবে পেলাম রোজিনা, সুচরিতা, অঞ্জনা, নূতন, চম্পা, অঞ্জু, দিতিসহ আরো অনেককে। প্রডাকশন বাড়ল; সিনেমা বানাতে অনেক দর্শকনন্দিত নায়ক-নায়িকা পাওয়া গেল। সিনেমার ব্যবসা বাড়তে শুরু করল।

সিনেমা হল ১২০০-তে এসে দাঁড়াল।

মধ্য আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত যোগ হলেন মান্না, সালমান শাহ, রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, ওমর সানি, ফেরদৌস, আমিন খান, নাঈম, কাজী মারুফ; নায়িকা শাবনূর, মৌসুমী, পূর্ণিমা, পপি, নিপুন, শাবনাজ, শিল্পীসহ অনেকে। সিনেমা নির্মাণ ও ব্যবসা আরো বেড়ে গেল। ১৯৯৭ সালে‌ উপরোক্ত নায়কদের সঙ্গে যুক্ত হলেন শাকিব খান। ২০০৩ সাল‌ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অশ্লীল সিনেমার জোয়ারে ভেসে গেল সিনেমার সৃজন স্বপ্ন।

থেমে গেল সুস্থ সিনেমার লগ্নিকারীরা। অশ্লীলতাকে যখন ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিল র‍্যাব, ঠিক তখন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের জুটি এবং ডিপজল নিজ প্রডাকশন‌ থেকে কিছু সিনেমা বানিয়ে জাগিয়ে তুললেন এই ইন্ডাস্ট্রিকে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন বাপ্পী ও সাইমন সাদিক। অনন্ত জলিল ও বর্ষার জুটি।

শাকিব যখন সুপারস্টার হয়ে তার পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিলেন, অনেক প্রডাকশন হাউস থেমে গেল। সিনেমা তত দিনে ৩৫ মিলিমিটার ছেড়ে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। নবাগতরাও গল্প টানতে ব্যর্থ হলেন পর্দায়। শাকিব একাই টেনে যাচ্ছিলেন সিনেমাশিল্পকে। এমন সময় করোনায় থেমে গেল সব কাজ; সিনেমার চিন্তা। শুরু হলো শিল্পী সমিতির চেয়ার নিয়ে লড়াই। 

সম্প্রতি ২০২২ সালে তিনটি সিনেমা আশার আলো দেখলেও শাকিব খান, দুই নবাগত নায়ক সিয়াম ও জয় চৌধুরী এবং নায়িকা পরীমনি, মাহী, বুবলি, পূজা চেরী ছাড়া আর নায়ক-নায়িকা কোথায়, যাদের নিয়ে সিনেমা বানাতে কোটি কোটি টাকা লগ্নি করবেন লগ্নিকারকরা। অনেক সিনেমা হবে এই মুহূর্তে? 

গল্পের যে বাঁধন ও চিত্রনাট্যের যে গতিশীল শক্তি, তা অভিনয়ের শক্তি দিয়ে শাকিব তার অভিনীত ‘প্রিয়তমা’, ‘তুফান’ ও সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বরবাদ’ সিনেমা যেভাবে বক্স অফিস সাফল্যে নিয়ে গেছে, অন্য কোনো নায়ক-নায়িকা তা পারবে বলে মনে হয় না। হ্যাঁ, যারা আছেন তারাও পারবেন, তবে তাদের সময় লাগবে। তাদের নিয়ে বড় বাজেট ও ভালো গল্প দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে হবে ভালো নির্মাতাদের। ৩০-৩৫ লাখ টাকার নাটক বানালে লগ্নিকারকরা সিনেমায় লগ্নি করতে আসবেন না। সিনেমার পরিবেশ নষ্ট হবে। আগের মতো অনেক নায়ক-নায়িকা তৈরি করুন। তারপর ভালো সিনেমা কনটেন্ট তৈরি করুন। দেখবেন একদিন আমাদের দেশে বিভিন্ন জেলায় সিনেপ্লেক্স, মাল্টিপ্লেক্স গড়ে উঠবে। আমাদের সিনেমার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বিশ্ব বই দিবসের তাৎপর্য ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা

এম এ মতিন
এম এ মতিন
শেয়ার
বিশ্ব বই দিবসের তাৎপর্য ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা
সংগৃহীত ছবি

বিশ্ব  বই দিবস আজ ২৩ এপ্রিল ২০২৫। ইউনেস্কো প্রবর্তিত এই দিবসটি আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে  ভাবগাম্ভির্যের সাথে পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে – ‘রিড এন্ড এডভেঞ্চার’ অর্থাৎ ‘পড়ুন এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করুন’। ১৯৯৫ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে ইউনেস্কোর উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়।

 

‘বিশ্ব বই দিবস’র মূল উদ্দেশ্য হলো—বই পড়া, বই প্রকাশ, বইয়ের ব্যবহার বৃদ্ধি, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা, ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। ‘বিশ্ব বই দিবস ২০২৫' উপলক্ষে ইউনেস্কোর মহাপরিচালিক ড. উড্রে আজুল্যে বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে বাণী প্রদান করেছেন।

১৯৯৫ সালে প্রথমবার ‘বিশ্ব বই দিবস’ পালিত হলেও ২০০১ সালে, বই বিক্রেতা, প্রকাশক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগার সমিতির অনুরোধে ‘বই দিবস’ -এর সঙ্গে ‘গ্রস্থস্বত্ব’ শব্দটি জুড়ে দেয় ইউনেস্কো। সেইসঙ্গে ঠিক হয় প্রতিবছর ‘বই রাজধানী’ হিসাবে বেছে নেওয়া হবে বিশ্বের একটি করে শহরকে।

২০২৫ সালের জন্যে ‘গ্রন্থ রাজধানী” হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ব্রাজিলের রাজধানী রিও-ডি জেনেরিওকে। ২০২৪ সালে ‘বই রাজধানী’ ছিল আফ্রিকা মহাদেশের দেশ ঘানার রাজধানী ‘আক্রা’।

১৯৯৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্ব বই দিবস’-এর যাত্রা শুরু হলেও মূল ধারণাটি আসে প্রায় ৪০০ আগে ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল। ঐ দিন মারা যান স্পেনের বিখ্যাত কবি ও লেখক মিগেল দে সার্ভান্তেস।

ভিন্সেন্ট ক্লাভেল আন্দ্রেস ছিলেন তার ভাবশিষ্য। আধুনিক স্প্যানিশ সাহিত্যের হাতেখড়ি হয় তার সার্ভান্তেসের হাত ধরেই। 

কিংবদন্তি এই কবির মৃত্যু দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে, আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল দিনটিকে ‘গ্রন্থ দিবস’ হিসাবে উদযাপন করেন তাঁরই ভাবশিষ্য জনপ্রিয় স্প্যানিশ কথাসাহিত্যিক ভিসেন্ট ক্লাভেল আন্দ্রেস। শুধু সার্ভান্তেজ নয়, ২৩ এপ্রিল কিংবদন্তি ইংরেজ নাট্যকার ও কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারেরও মৃত্যুদিন। 

পাশাপাশি এপ্রিলের ২৩ তারিখেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলম্বিয়ান লেখক ম্যানুয়েল মেইয়া এবং স্প্যানিশ পেরুভিয়ান লেখক ইনকা গার্সিলাসু ডেলা ভেগাসহ একাধিক খ্যাতনামা সাহিত্যিক।

ঘটনাচক্রে আজকের তারিখেই প্রয়াত হয়েছিলেন ভারতের সুখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ও। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো স্পেনের এক প্রস্তাব অনুযায়ী ২৩ এপ্রিলকে’ বিশ্ব বই দিবস’ হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

দেশের সকল স্তরের মানুষকে বিশেষ করে ছাত্র, শিক্ষক ও গবেষকদের অধিকতর গ্রন্থাগারমুখী করে তোলা, জাতিগঠনে গ্রন্থাগারের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা, দেশে বিদ্যমান গ্রন্থাগারগুলোতে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উপর সর্বশেষ প্রকাশিত বই ও সাময়িকীর তথ্যাদি সংগ্রহ, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির কলাকৌশল সম্পর্কে আলোচনা ও মতবিনিময়, মননশীল সমাজ গঠনে স্থানীয় পর্যায়ে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা, পাঠসামগ্রী সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং পাঠক তৈরির মাধ্যমে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং গ্রন্থাগারকর্মী ও পেশাজীবী, লেখক, প্রকাশক, পাঠক বিশেষ করে বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষনা করা হয়েছিল। 

আমরা মনে করি, একই উদ্দেশ্য (ইউনেস্কো কতৃক নিরূপিত) সামনে রেখে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকার ‘বিশ্ব বই দিবস’ পালনের উদ্যোগ নিতে পারেন। আমরা আরো মনে করি, ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ এবং ‘বিশ্ব বই দিবস’ যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে জাতিকে বইমুখী করার বিকল্প নেই। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যাহারের পাশাপাশি মুদ্রিত বই পাঠেও ছাত্র শিক্ষক গবেষকসহ সকল শ্রেণির নাগরিককে উদ্বুদ্ধ করেত হবে। ‘বিশ্ব বই দিবস’ পালনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এখানেই।

সংশ্লিষ্ট সবাই বিশ্বাস করেন যে, ‘বিশ্ব বই দিবস’ পালনের মাধ্যমে সকল স্তরের জনগণ, ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক সবাই বই পড়ার গুরুত্ব অনুধাবন এবং নিজেদের পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে উন্নততর ফলাফল অর্জন করবেন এবং সার্বিকভাবে জীবন মানের উন্নতি ঘটাবেন। বলা দরকার যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বাস্তবায়নের এজেন্ডা মাথায় রেখে আমরা যদি অগ্রসর হতে চাই তাহলে গ্রন্থাগার স্থাপন এবং পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির আর কোনো বিকল্প নেই।

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজ ‘একত্রিংশতিতম ‘বিশ্ব বই দিবসে’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের গ্রন্থাগার ও শিক্ষার মান পর্যালোচনার সময় এসেছে। আমরা জানি, যে জাতির গ্রন্থাগার যত সম্মৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত। আমরা এও জানি যে, বর্তমান যুগে কোনো জাতির উন্নয়নের ব্যারোমিটার বা পরিমাপক যন্ত্র হচ্ছে গ্রন্থাগার ও তথ্য ব্যবহারের পরিমান অর্থাৎ যে জাতি যত বেশি পরিমানে গ্রন্থাগার ও তথ্য ব্যবহার করে সে জাতি তত বেশি উন্নত।

প্রযুক্তির কারণেই হোক অথবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক আমাদের সমাজে বই পড়ার অভ্যাসটা কমেছে দারুণভাবে। এখন সবার চোখ বই-এর স্থলে থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে।  গবেষণায় দেখা গিয়েছে, তরুণরা গড়ে দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা সময় এ সকল ডিজিটাল ডিভাইসে ব্যয় করে। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির কারণে সাইবার নিপীড়ন, হতাশা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। ‘হ্যাভ স্মার্টফোনস ডেস্ট্রয়েড আ জেনারেশন’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে ‘আইজেন’ প্রজন্মের খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যার অধ্যাপক জিন টুয়েঙ্গে।

স্ক্রিন আসক্তির বাস্তব যে কুফল তা আমাদের ‘আইজেন’দের লেখাপড়ার বর্তমান অবস্থা ও পরীক্ষার ফলাফল দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়। চলতি বছরসহ গত কয়েক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছেলেমেয়েদের মধ্যে শতকরা ৯০% অকৃতকার্য হচ্ছে। এই ফলাফল পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, আমাদের ছেলেমেয়েদের বই এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং এই অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। আর এর একমাত্র পথ হচ্ছে – তরূন-তরূণীদের সামনে মোবাইল স্ক্রিনের বিকল্প মুদ্রিত পাঠসামগ্রী উপস্থাপন।
 
গবেষণা থেকে দেখা গেছে, বই পড়ার অভ্যাসের ফলে মস্তিষ্কের ওপর ইতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। মানসিকভাবে সবসময় উদ্দীপ্ত থাকার ফলে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। কারণ, মস্তিষ্ক সব সময় অ্যাকটিভ থাকার ফলে, তার কর্মক্ষমতা হারানোর সম্ভবনা কমে যায়। এ ছাড়া বই পড়া মানসিক চাপ কমায়, স্মৃতিশক্তি প্রখর করে, বৃদ্ধি পায় কল্পনাশক্তি, যৌক্তিক চিন্তায় দক্ষ হওয়া যায়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে, রাতে দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করে, কোন বিষয়ে অনুপ্রাণিত হওয়া যায়, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়, বৃদ্ধি পায় সৃজনশীলতা। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম বাণীই হচ্ছে, পড়’। 

বাংলাদেশকে ‘বিশ্ব জ্ঞান সূচকে ঈপ্সিত স্থানে নিয়ে যেতে হলে (২০২৪ সালে বিশ্ব জ্ঞান সূচকে বাংলাদেশ’র স্থান বিশ্বের ১৪১টি দেশের মধ্যে ১১২তম) শিক্ষার  সর্বস্তরে পড়াশুনার মান আমাদের বাড়াতেই হবে সেই সাথে প্রযুক্তির ব্যবহার। পড়াশুনার মান তখনই বৃদ্ধি পাবে যখন ছাত্রছাত্রীরা নির্দিষ্ট পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি গ্রন্থাগারে গিয়ে বিষয়সংশ্লিষ্ট পুস্তকের অতিরিক্ত রেফারেন্স বই পড়ে নিজেদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। সেই সাথে অনলাইনে শিক্ষক প্রদত্ত ওয়েবসাইট (একাধিক হতে পারে) ঘাটাঘাটি করে নিজের জ্ঞানস্তরকে সমৃদ্ধ করবে। 

অপ্রিয় হলেও আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উচ্চ জিপিএ অর্জন করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায় একই পাঠক্রমের উপর করা প্রশ্নপত্রের উত্তরে খারাপ ফলাফল করছেন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে – আমাদের ছাত্রছাত্রীরা গ্রন্থাগারে পড়াশুনা, রেফেরেন্স বই পড়া, ওয়েবসাইট সার্চ করে পড়াশুনা তো দূরের কথা – নিজেদের পাঠ্যপুস্তকও সঠিকভাবে পড়ে আয়ত্ত করেন নাই। তারা গাইড বা নোট পড়ে পাশ করেছেন। 

এ অবস্থায় ‘বিশ্ব বই দিবসে’  আমাদের পরামর্শ  হচ্ছে – ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক ও গ্রন্থাগারভিত্তিক পড়াশুনায় মনোনিবেশ করানো – শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়াশুনার সম্পর্ক দৃঢ়তর করা এবং স্মার্টফোন কে অর্থবহ কাজে লাগানো। প্রতিটি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় যথানিয়মে গ্রন্থাগার পরিচালনা এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এ ছাড়া সরকার নির্দেশিত লক্ষ্যভিত্তিক শিক্ষা  (ওবিই) বাস্তবায়নের জন্যে ছাত্রছাত্রীদের  গ্রন্থাগারের প্রতি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

লেখকঃ উপদেষ্টা, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রক্টর, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা, প্রাক্তন পরিচালক, বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), সাভার।
amatin@aub.ac.bd 

মন্তব্য

চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান নীতিমালার পরিবর্তন জরুরি

জামান আখতার
জামান আখতার
শেয়ার
চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান নীতিমালার পরিবর্তন জরুরি

চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান যতো ক্যাটাগরিতেই দেওয়া হোক আপত্তি নেই। কিন্তু সরকার দেখেন বিষয়বস্তু। অর্থাৎ ভালো গল্প এবং স্ক্রিপ্ট। আর এই কাজটি মূলত একজন পেশাদার বা অপেশাদার লেখক সাহিত্যিক করে থাকেন।

সিনেমা অপেশাদার নির্মাতাদের হাতে যখন জিম্মি হলো তখন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। এরপর ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে ক'জন মেধাবী নির্মাতার বাণিজ্যিক নির্মাণ শৈলী ও লেখকের গল্পে 'হাওয়া', 'পরাণ', 'গলুই'সহ হিমেল আশরাফের "প্রিয়তমা" রায়হান‌ রাফির "সুড়ঙ্গ" সিনেমার সাফল্যের সুনাম ছড়িয়ে সিনেমা ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, তা মূলত; ভালো গল্পের কারণে। নির্মাতা হিমেল আশরাফও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে একটি সিনেমার প্রধান কাজটি করে থাকেন সিনেমা লেখক তার গল্পের মাধ্যমে, সেই গল্পেই দর্শক মুগ্ধ হয়ে সিনেমার গভীরে ডুবে নিজের জীবনের গল্পকে খুঁজে পান। বিনোদন নেন, কাঁদেন।

তো তখন সরকারী চলচ্চিত্র অনুদানে ভালো গল্প ও স্ক্রিপ্ট আহ্বানে মনপূত গল্প/স্ক্রিপ্ট সরকার পেয়ে যান, তখন এই অনুদানটি মূলত একজন সিনেমা লেখকেরই প্রাপ্য। অনুদানটি পেলে লেখক কোন গুণী পরিচালক শিল্পী কুশলী দিয়ে তার সিনেমাটি নির্মাণ করবেন, সেটা পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়ার সময় কাগজে লিপিবদ্ধ থাকবে। এটা অনুদান প্রাপ্তির প্রথম নীতিমালা হওয়া উচিত। ক'জন মেধাবী লেখক পাবেন তা নীতিমালায় উল্লেখ থাকবে।

দ্বিতীয় নীতিমালায়- বিগত বছরে বা পূর্বে ভালো সিনেমা প্রযোজকদের কাছে অন্তত দু'টি তার প্রযোজিত সিনেমা জমা দিতে হবে, আহ্বান করতে হবে। সিনেমা দেখে গুনগত মান বিচার করে সেরা প্রযোজকদের অনুদান দেওয়া উচিত। প্রযোজক অনুদান পেলে কী সিনেমা বানাবেন তার একটি কাহিনী সারমর্ম দিতে হবে পরিচালক শিল্পী কলাকুশলিদের নাম লিখে এবং সিনেমা জমা দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট কাগজে লিপিবদ্ধ থাকবে। ক'জন প্রযোজক অনুদান পাবেন- নীতিমালায় তা স্পষ্ট করতে হবে।

তৃতীয় নীতিমালায়- গুণী মেধাবী পরিচালক আহ্বান করা উচিত।

বিগত বছরে বা পূর্বে মুক্তিপ্রাপ্ত কোন পরিচালক ক'টি সিনেমা পরিচালনা করেছেন, সেখান থেকে অন্তত দু'তিনটি সিনেমা জমা দেবেন। এই সিনেমা গুলোর নির্মাণ শৈলী দেখে সেরা পরিচালকদের অনুদান দেওয়া উচিত। অনুদান পেলে তিনি সিনেমার গল্প সারাংশ ও শিল্পী কুশলীদের নাম সিনেমা জমা দেওয়ার সময় ভিন্ন কাগজে লিপিবদ্ধ করে দেবেন। এটাই চলচ্চিত্র অনুদানের নীতিমালা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

যদি কেউ প্রশ্ন করেন, তাহলে  অভিনেতা/অভিনেত্রী অনুদান প্রাপ্তির নীতিমালায় কেন নেই? আমি বলবো একজন শিল্পী প্রযোজকের সিনেমা নির্মাণের শিল্পীমনা উদ্যোগ, সিনেমা লেখক ও পরিচালকের নির্মাণ শৈলীর কারণে অভিনেতা অভিনেত্রীরা ভালো শিল্পীর সহযোগিতা পেয়েই অভিনয় করে থাকেন। সিনেমার বিষয়বস্তু এবং পুরো সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত মেধা নন। তার ভালো অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারই যথেষ্ট।

এভাবে নীতিমালা তৈরি করে- কার্যকর হলে, বর্তমান মুখ চেনা জানা সরকারি চলচ্চিত্র অনুদানের যে অনৈতিক নীতিমালায় চলচ্চিত্রের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন কিছু অযোগ্যদের  কোটি কোটি টাকা সিনেমা উন্নয়নের নামে যে সরকারী চলচ্চিত্র অনুদান দেয়ার নিয়ম হয়েছিলো, তার অবসান হবে বলে মনে করি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ