<p>কিছুদিন আগে টি-টোয়েন্টি খেলতে সিলেটেই আসতে হয়েছিল তাঁকে। এখন আবার টেস্ট খেলতে আসা ধনঞ্জয়া ডি সিলভার চোখে একটিই পরিবর্তন ধরা পড়ছে, ‘বলের রংটাই শুধু বদলাচ্ছে।' সাদা বল থেকে লাল বলের ক্রিকেটে ঢোকার আগে অবশ্য শ্রীলঙ্কা দলের এই বাংলাদেশ সফরজুড়ে চলে আসা একটি ব্যাপার বদলাবে বলে মনে হচ্ছে না। সেটি প্রতিপক্ষের খোঁচায় আক্রান্ত হওয়ার এবং তা ফিরিয়ে দেওয়ার ঢং।</p> <p>টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতার পর ‘টাইমড আউট’ উদযাপনে স্বাগতিকদের মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করতে চেয়েছে লঙ্কানরা। ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর মুশফিকুর রহিম তা আবার সুদে-আসলে শোধও করেছেন। আক্রান্ত হওয়া আর ফিরিয়ে দেওয়ার এই সমতার মধ্যেই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টের নিস্তরঙ্গ আবহে কিছুটা হলেও উত্তাপ যোগ করে রাখছে দুই দলের এমন বৈরিতা। যেটি ভুলে থাকার চেষ্টা দুই দলেরই কারো না কারো আছে।</p> <p>ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি নিয়ে সদলবলে উদযাপনের আগমুহূর্তে যেমন মুশফিককে হাত জোড় করে অনুরোধ করতে দেখা গেছে হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেকে। যেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার দিল্লিতে বিশ্বকাপ ম্যাচে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের হেলমেটের ছিঁড়ে যাওয়া স্ট্র্যাপ দেখানোর ভঙ্গি না করেন। গতকাল শ্রীলঙ্কা দলের ম্যানেজার মাহিন্দা হালাঙ্গোদাও বাংলাদেশের এক সাংবাদিককে বলছিলেন, ‘বাদ দিন তো! আমরা এসব থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।’ কিন্তু দলের মুরব্বি গোছের লোকেরা চাইলেও খেলোয়াড়রা কতটা শুনবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে যথেষ্টই।</p> <p>এর একটু আগেই সংবাদ সম্মেলনে ম্যানেজারের পাশে বসা লঙ্কান টেস্ট অধিনায়ক ধনঞ্জয়ার বক্তব্য সে সন্দেহ আরো উসকেই দিয়েছে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই টেস্ট জিতলে ‘টাইমড আউট’ উদযাপন করবেন কি না। ‘না’-ও করেননি তিনি। হাসতে হাসতেই বলছিলেন, ‘আগে তো জিতি, এরপর দেখা যাবে।’ প্রতিপক্ষকে দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বাড়তি তাড়না যোগ করে থাকলে জমাট লড়াই দেখা যেতে পারে।</p> <p>না হলে এই ম্যাচ নিয়ে গণমানুষের আগ্রহ দৃশ্যমান নয়। টি-টোয়েন্টি সিরিজের সময়ই যেখানে টিকিট কাউন্টার ফাঁকা ছিল, গতকাল সেখানে আরো খাঁ খাঁ করা শূন্যতা। যদিও আজ প্রথম দিনেই বৃষ্টির বাধায় পড়ার আশঙ্কা আছে এই টেস্টের। অবশ্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিষয়গুলো বাদ দিলে বাংলাদেশ সিলেটে ঠিক সেখান থেকেই শুরু করতে চায়, যেখানে তারা গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে শেষ করেছিল।</p> <p>নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানে জেতা সেই ম্যাচের উইকেটের সঙ্গে অবশ্য এবার একটি মৌলিক পার্থক্য দেখছেন হাতুরাসিংহে, ‘আগের টেস্টে (কিউইদের বিপক্ষে) ঘাস তেমন ছিল না। এবার কিছুটা ঘাস আছে। তা ছাড়া আবহাওয়াও এই ম্যাচে বড় ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে।’ এর মধ্যেও আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে যথাসম্ভব এগিয়ে থাকার লক্ষ্যও আছে তাঁর, ‘দেশের মাটিতে বেশির ভাগ ম্যাচ জেতা গেলে চ্যাম্পিয়নশিপের পরের পর্যায়ে আমাদের সুযোগ তৈরি হবে।’ আবার শ্রীলঙ্কা এই উপমহাদেশেরই দল হওয়ায় কিউইদের তুলনায় বাড়তি চ্যালেঞ্জও দেখছেন এই লঙ্কান কোচ, ‘প্রতিপক্ষের সীমাবদ্ধতা এবং আমাদের শক্তি বিবেচনায় এই সিরিজটি নিউজিল্যান্ডের চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।’</p> <p>এই চ্যালেঞ্জে চোটের জন্য মুশফিক ছিটকে যাওয়ায় তরুণদের দলটি আরো ভারী হয়েছে। নাহিদ রানার বলে বাঁ হাতের তর্জনীতে চোট পাওয়া জাকির হাসানের খেলা নিয়ে সংশয় অবশ্য গত রাত পর্যন্ত খুব জোরালো হয়নি। আবার দুরন্ত গতিতে বোলিং করতে জানা নাহিদের সঙ্গে আরেক পেসার মুশফিক হাসানের খেলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি হাতুরাসিংহে, ‘দুজন না হলেও ওদের অন্তত একজনকে এই ম্যাচে দেখার জন্য মুখিয়ে আছি আমি।’ তাঁদের মধ্যে উদযাপনের উত্তাপ সঞ্চারে নিশ্চয়ই বসে নেই সতীর্থরাও!</p>