সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছেন তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। ২০২২ সালে টপ গিয়ারের শুটিং চলাকালীন এক মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন এই সাবেক অলরাউন্ডার। প্রায় তিন বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনায় ফ্লিনটফের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং তার পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়।
সে সময়ের কথা মনে করে ফ্লিনটফ বলেছেন, প্রায় তিন বছর আগের প্রাণঘাতী গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি যদি ‘মারা যেতেন’ তাহলে তার জন্য এটি ‘অনেক সহজ’ হতো।
৪৭ বছর বয়সী এই সাবেক অলরাউন্ডার সম্প্রতি ডিজনি ডকুমেন্টারি ‘ফ্লিনটফ’-এ প্রথমবারের মতো ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন। ডকুমেন্টারি ফ্লিনটফ বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর মনে হয়েছিল আমার মুখটাই নেই। মনে হয়েছিল, আমি বেঁচে থাকার মতো অবস্থায় নেই। মনে হচ্ছিল, আমি যদি মারা যেতাম, তাহলে হয়তো এত কষ্ট হতো না।
’
ঘটনার সময় ফ্লিন্টফ চালাচ্ছিলেন একটি ওপেন-টপড মর্গান সুপার ৩ তিন-চাকার স্পোর্টস কার। এই খোলা ছাদের গাড়িটি ঘন্টায় ১৩০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে। দুর্ঘটনার সময় তিনি হেলমেট পরা অবস্থায় ছিলেন না। চলন্ত অবস্থায় গাড়িটি উল্টে গেলে তার মুখে ও শরীরে গুরুতর আঘাত লাগে এবং একাধিক পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়।
ফ্লিন্টফ বলেন, ‘আমার মাথায় আঘাত লাগে। আমার মুখ রানওয়ের উপর দিয়ে প্রায় ৫০ মিটার ধরে ঘষটে যায়। তখন আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, আমি ভাবছিলাম আমার মুখটাই নেই।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর মনে হয়েছিল আমার পক্ষে এই অবস্থা থেকে উঠে আসা সম্ভব না। এটা শুনতে খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু সত্যি বলতে, তখন আমার মনে হয়েছিল, আমি যদি মরে যেতাম, তাহলে অনেক সহজ হতো।
আমি আত্মহত্যা করতে চাইনি, কিন্তু মনে হচ্ছিল মৃত্যুই হয়তো সহজ পথ।’
দুর্ঘটনার পর মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি যে দিনের পর দিন নিজের ঘর থেকে বের হতে পারতেন না। ২০২৩ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দিন তিনি এতটাই নার্ভাস ছিলেন যে ১০ বার চেষ্টার পর হোটেল রুম থেকে বের হতে পেরেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘কার্ডিফে সেই দিন সকালে আমার ঘর থেকে বের হতে ১০ বার লেগেছে। আমি খুব উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত ছিলাম।’
তিনি টপ গিয়ার ও ক্রিকেট খেলার সময় পাওয়া আঘাতগুলোর মধ্যে মিল টেনে বলেন, ‘খেলাধুলা ও টিভি শো—দুটোই একই রকম। এখানে আপনি শুধু একটি ‘পণ্য’... আমার সঙ্গে মাংসের টুকরোর মতো আচরণ করা হয়েছে বারবার! খেলার সময় যেমন ইনজেকশন দিয়ে মাঠে নামানো হতো, টিভিতেও তেমনই ব্যবহার করা হয়।’
দুর্ঘটনার পর বিবিসি টপ গিয়ার অনুষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় এবং ফ্লিনটফের সঙ্গে একটি আর্থিক সমঝোতায় পৌঁছায়।
তবে সব কষ্ট পেরিয়ে এখন ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে ফিরছেন ফ্লিন্টফ। বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ড লায়ন্স এবং নর্দার্ন সুপারচার্জার্স দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আগের মতো হবো না হয়তো, তবে অন্য রকম হবো। আমি ধীরে ধীরে ঠিক হচ্ছি।’
‘এখন আমি ভাবি, আগামীকাল সূর্য উঠবে, আমার সন্তানরা আমাকে জড়িয়ে ধরবে। আমি হয়তো এখন একটু ভালো জায়গায় আছি।’
১৯৯৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডের হয়ে ৭৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন ফ্লিনটফ। ২০১০ সালে ৩১ বছর বয়সে খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নেন।