বিখ্যাত ব্যক্তিদের অজানা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বিখ্যাত ব্যক্তিদের অজানা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা
সংগৃহীত ছবি

ভ্রমণের সঙ্গে মজার অভিজ্ঞতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কখনো রাস্তায়, কখনো বা ভ্রমণস্থলে ঘটে যায় এমন কিছু ঘটনা, যা মনে থাকলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মুখে হাসি চলে আসে। শুধু সাধারণ মানুষই নন, বিখ্যাতরাও এই ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে বাদ যান না। চলুন, জেনে নিই এমনই কিছু বিখ্যাত ব্যক্তির ভ্রমণকালীন মজার ঘটনা।

 ‘শহর’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চীন সফরের সময় চীনা কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পছন্দ মাথায় রেখে বাংলাদেশ থেকে আম আনান। কিন্তু সেই সময় এত উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ছিল না। ফলে আমগুলো চীনে পৌঁছানোর আগেই শুকিয়ে গিয়েছিল। চীনারা আম কীভাবে দেখতে হয় তা না জানায়, তারা শুকনো সেই আম কবিগুরুকে খেতে দিয়ে বেশ খুশি হয়।

কবিগুরু মুখে কিছু না বলেই খেয়ে ফেলেন। পরে তাঁর সফরসঙ্গী জানতে চাইলে তিনি মজা করে বলেন, ‘আম খেতে খেতে মনে হচ্ছিল এক রবীন্দ্রনাথ আরেক রবীন্দ্রনাথের দাঁড়িতে তেতুল-গুঁড় মেখে খাচ্ছে।’

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন
যুক্তরাষ্ট্র সফরে জাহাজ থেকে নামার পর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হন আইনস্টাইন। একজন মজা করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘মেয়েরা আপনাকে এত পছন্দ করে কেন?’
আইনস্টাইন হেসে জবাব দেন, ‘মেয়েরা সব সময় লেটেস্ট ফ্যাশন পছন্দ করে।

আর এই বছরের ফ্যাশন হচ্ছে থিওরি অফ রিলেটিভিটি। তাই আমাকে ওটার অংশ হতে হয়েছে।’

জওহরলাল নেহেরু ও ক্রুশেভ
ভারত সফরে এসে এক ভারতীয়কে রাস্তার পাশে প্রস্রাব করতে দেখে ক্রুশেভ মন্তব্য করেন, ইন্ডিয়ানরা একেবারে অসভ্য। নেহেরু লজ্জিত হলেও সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দেননি। এর কিছুদিন পর নেহেরু যান মস্কো সফরে।

এবার এক রাশিয়ান নাগরিককে রাস্তার পাশে একইভাবে দেখে নেহেরু চুপচাপ মুচকি হাসতে থাকেন। বিরক্ত হয়ে ক্রুশেভ ঐ ব্যক্তিকে ডাকেন, ‘তুমি কে?’ লোকটি উত্তর দেয়, ‘স্যার, আমি ভারতীয় দূতাবাসের কর্মচারী।’

মোহাম্মদ আলি
নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে আলির সঙ্গে দেখা হয় বিখ্যাত ভায়োলিনবাদক আইজ্যাক স্টানের। স্টান বলেন, ‘আমরা দুজনই হাত দিয়ে জীবিকা চালাই।’ আলি হেসে জবাব দেন, আপনিই ভালো আছেন, আপনার শরীরে আঘাতের চিহ্ন তো নেই।

একবার বিমানে ওঠার সময় বিমানবালা আলিকে সিটবেল্ট বাঁধতে বলেন। আলি মজা করে বলেন, ‘সুপারম্যানের সিটবেল্ট লাগে না।’ বিমানবালা জবাবে বলে, তবে সুপারম্যানদের তো বিমানে উঠারও দরকার হয় না।

বঙ্কিমচন্দ্র ও দীনবন্ধু মিত্র
দীনবন্ধু মিত্র একবার আসাম থেকে বঙ্কিমচন্দ্রকে উপহার হিসেবে জোড়া জুতা পাঠান। সাথে চিরকুটে লেখেন, ‘জুতো কেমন হয়েছে জানিও।’
বঙ্কিমচন্দ্র চিরকুটটি পড়ে মজার উত্তর পাঠান, ‘ঠিক তোমার মুখের মতো।’

কাজী নজরুল ইসলাম
সিরাজগঞ্জে এক বন্ধুর বাড়িতে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন নজরুল। খাওয়ার পরে দই খাওয়ানো হয়, কিন্তু সেটি ছিল পুরনো ও তেঁতো। নজরুল রসিকতা করে বলেন, ‘তুমি কি এই দই তেঁতুলগাছ থেকে পেড়ে এনেছো?’

বিখ্যাত মানুষদের জীবনের গম্ভীরতা যতটা, তাঁদের রসবোধও ততটাই প্রখর। এসব ছোট ছোট ঘটনা আমাদের প্রিয় মানুষদের আরও কাছের করে তোলে।

সূত্র : ভ্রমণ গাইড

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঘুরে আসতে পারেন ২৫০ বছরের পুরনো ফেনীর প্রতাপপুর জমিদারবাড়ি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঘুরে আসতে পারেন ২৫০ বছরের পুরনো ফেনীর প্রতাপপুর জমিদারবাড়ি
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামে অবস্থিত প্রতাপপুর জমিদারবাড়ি। যা স্থানীয়ভাবে বড় বাড়ি বা রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। এটি একটি প্রায় ২৫০ বছর পুরনো ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ি।

প্রায় ১৭৬০ সালে জমিদার তিন কড়ি সাহার দুই ছেলে রামসুন্দর সাহা ও রামচন্দ্র সাহা এই রাজবাড়ি নির্মাণ করেন বলে জানা যায়।

আরেকটি মতে, ১৮৫০-৬০ সালের দিকে জমিদার রাজকৃষ্ণ সাহা ৮০০ শতক জমির ওপর এই দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি নির্মাণ করেন। পুরো জমিদারবাড়িটি প্রায় ১৩ একর জমির ওপর বিস্তৃত। এতে রয়েছে ১০টি ভবন ও ১৩টি পুকুর। যার মধ্যে পাঁচটি ছিল বাড়ির বউদের জন্য শানবাঁধানো ঘাটসহ।
একসময় এই রাজবাড়ি আশপাশের অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র ছিল। জমিদারের বংশধররা ২০০২ সাল পর্যন্ত এখানে বসবাস করতেন।

বর্তমানে বাড়িটি প্রায় ধ্বংসপ্রায়। ভবনের গায়ে লতাপাতা জড়িয়ে আছে এবং অনেক জায়গা ভেঙে পড়েছে।

তবে প্রতিবছর বৈশাখ মাসে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখানে তিন দিনব্যাপী উৎসব পালন করেন। বাড়ির পাশে রয়েছে জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয়।

কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সায়েদাবাদ থেকে ফেনীগামী বাসে উঠে মহিপাল পর্যন্ত আসুন। সেখান থেকে নোয়াখালীগামী বাসে সেবারহাট বাজার। তারপর সিএনজিতে প্রতাপপুর বাজার।

এ ছাড়া ট্রেনে কমলাপুর স্টেশন থেকে ফেনী রেলস্টেশন আসবেন। সেখান থেকে ইজিবাইক বা সিএনজিতে মহিপাল হয়ে প্রতাপপুর।

কোথায় খাবেন ও থাকবেন?
খেতে পারেন ফেনীর জনপ্রিয় ঘি ও মিষ্টি। থাকার জন্য ফেনী শহরের হোটেল ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি রেস্ট হাউসে অনুমতি নিয়ে থাকা যায়।

এই জমিদারবাড়ি শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ভবনের মাঝে দাঁড়িয়ে সময়কে ফিরে দেখার সুযোগ মিলবে প্রতিটি ভ্রমণপিপাসুর।

সূত্র : কুহুডাক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ঘুরে আসতে পারেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরিপুর জমিদার বাড়ি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঘুরে আসতে পারেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরিপুর জমিদার বাড়ি
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক হরিপুর জমিদার বাড়ি। স্থানীয়ভাবে পরিচিত হরিপুর বড়বাড়ি নামে। তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে প্রায় ১৭৫ বছর আগে ১৮ শতাব্দীতে জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী ও হরিপ্রসাদ রায় চৌধুরী এই প্রাসাদসম বাড়িটি নির্মাণ করেন। জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায়ের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে হরিপদ রায় চৌধুরী, শান্তি রায় চৌধুরী, উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী এই জমিদারি ও বাড়ির মালিকানা পান।

ধারণা করা হয়, হরিপুরের জমিদাররা ত্রিপুরার প্রভাবশালী জমিদার পরিবারের উত্তরসুরি ছিলেন।

স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্য
প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বাড়িটি দুইটি গম্বুজ ও তিনতলা বিশিষ্ট। পুরো বাড়িতে রয়েছে ৬০টিরও বেশি কক্ষ। যার মধ্যে নাট্যশালা, দরবার হল, গোশালা, রন্ধনশালা, খেলার মাঠ, মঠ, মন্দির ও পুকুর রয়েছে।

দ্বিতীয় তলায় উঠতে ৬টি ও তৃতীয় তলায় উঠতে রয়েছে ২টি সিঁড়ি। উত্তর-পশ্চিমে ৬টি শয়নকক্ষ, পূর্বে ৪টি ও পুকুরের পাশ ঘেঁষে আরও ৪টি কক্ষ অবস্থিত। বাড়ির পশ্চিম পাশে একটি সান বাঁধানো ঘাট রয়েছে, যা নদীতে গিয়ে মিশেছে। এই ঘাটের উভয় পাশে দুটি মঠ রয়েছে, একটি কৃষ্ণপ্রসাদ রায়ের নামে ও অন্যটি গৌরীপ্রসাদ রায়ের নামে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব
১৯৪৭ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর জমিদার উপেন্দ্র ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী কলকাতায় চলে যান। তবে তারা বাড়িতে পুরোহিত রেখে যান। বাড়িটির বিশেষ সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এটি এখন বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত। এখানে একসময় ঐতিহাসিক নৌকা বাইচের সূচনা হয়েছিল। এর অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বহু নাটক ও চলচ্চিত্রের শুটিং এখানে হয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছাড়াও ‘মধু মালতি’, ‘নাইওরী’, ‘দ্য লাস্ট ঠাকুর’ সিনেমার দৃশ্য এখানে ধারণ করা হয়েছে।

কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সিলেটগামী বাসে উঠুন। মাধবপুর বাজারে নেমে সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় হরিপুর বড়বাড়িতে যেতে পারবেন।
এ ছাড়া কমলাপুর থেকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে নয়াপাড়া স্টেশনে নামুন। নয়াপাড়া থেকে রিজার্ভ অটোরিকশা অথবা মাধবপুর হয়ে হরিপুরে যান।
ভ্রমণের সময় আশপাশে ছোট দোকানে হালকা খাবার পাওয়া যাবে। নিরাপদ পানি সঙ্গে রাখাই ভালো। খেতে হলে নাসিরনগরে কিছু খাবারের হোটেল আছে। থাকার প্রয়োজন হলে মাধবপুর বাজারে জেলা পরিষদ রেস্ট হাউস, লাকি হোটেল, হাইওয়ে রেস্ট হাউস অথবা ভিশন হোটেলে থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায় (পূর্বানুমতি সাপেক্ষে)।

সূত্র : কুহুডাক

মন্তব্য

এক দিনের ভ্রমণে যেতে পারেন শেরপুরের রাজার পাহাড়

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
এক দিনের ভ্রমণে যেতে পারেন শেরপুরের রাজার পাহাড়
সংগৃহীত ছবি

রাজার পাহাড়, বাংলাদেশের গারো পাহাড় অঞ্চলের এক অপার সৌন্দর্যেঘেরা পর্যটনকেন্দ্র। এটি ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় ঢেউফা নদীর তীরে অবস্থিত। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক দারুণ গন্তব্য। যেখানে পাহাড়, নদী, বন্য প্রাণী ও আদিবাসী সংস্কৃতি মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অনন্য পরিবেশ।

কী আছে রাজার পাহাড়ে?
গারো পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু চূড়া রাজার পাহাড়। শতাধিক হেক্টর সমতলভূমি রয়েছে চূড়ায়। যেখান থেকে দেখা মেলে আকাশ ছুঁই ছুঁই প্রকৃতি ও দূরের ভারতের সীমান্তবর্তী সৌন্দর্য। পাহাড়ের আশপাশে রয়েছে : বিডিআর ক্যাম্প, ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিট অফিস, রাবার বাগান।

এখানে স্থানীয় গারো ও অন্যান্য আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন ও সংস্কৃতি অনুভব করা যায়। এ ছাড়া এখানে রয়েছে বাবেলাকোনা কালচারাল একাডেমি, জাদুঘর, গির্জা, মন্দির ও লাইব্রেরি। অর্থাৎ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলবে সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিও। ধারণা করা হয়, কোনো এক রাজবংশের রাজা একসময় এখানে অবস্থান করতেন, সেই থেকেই নাম হয়েছে রাজার পাহাড়।

কিভাবে যাবেন? 
ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ড্রিমল্যান্ড, আনন্দ, তুরাগসহ বিভিন্ন বাস যায় শেরপুর পর্যন্ত। এসি ও নন-এসি উভয় বাসেই যাওয়া যায়। ভাড়া প্রকারভেদে ১০০–৬০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এরপর শেরপুর শহর থেকে স্থানীয় যানবাহনে প্রায় ৩৪ কিমি দূরে কর্ণঝোরা বাজার পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকেই শুরু হয় রাজার পাহাড়ের পথে অভিযান।

কোথায় খাবেন?
পাহাড়ে গেলে নিজের সঙ্গে পানি ও হালকা খাবার রাখুন। আশপাশে ছোট খাবারের দোকান রয়েছে, তবে ভালো মানের খাবার খেতে চাইলে ফিরে যেতে হবে শেরপুর শহরে।

রাজার পাহাড় শুধু একটি পাহাড় নয়—এটি প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর ইতিহাসের এক মায়াময় মেলবন্ধন। এক দিনের ভ্রমণে আপনি হারিয়ে যাবেন এর সৌন্দর্যে। 

সূত্র : কুহুডাক

মন্তব্য

দুই চাকায় ক্রস কান্ট্রি রাইড, তামাবিল টু ভোমরা স্থলবন্দর

মো: আল-আমিন আকিক
মো: আল-আমিন আকিক
শেয়ার
দুই চাকায় ক্রস কান্ট্রি রাইড, তামাবিল টু ভোমরা স্থলবন্দর
মো: আল-আমিন আকিক

ভ্রমণের মাঝে আমি আমার জীবনের প্রকৃত অর্থ খুজে পাই, তাই আমার জীবনের লক্ষ্য করে নিয়েছি ভ্রমণকে! একজন ট্রায়াথলেট হওয়ায় আমার বেশিরভাগ সময় কাটে, দৌড়, সাতার ও সাইকেলিং করে। সাইকেলে ৬৪ জেলা ঘোরার পাশাপাশি আমি তিনবার ক্রস কান্ট্রি রাইড দিয়েছি। রাইড গুলো হলো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, আখাউড়া টু মুজিবনগর, হালুয়াঘাট টু কুয়াকাটা ক্রস কান্ট্রি রাইড। সদ্য সমাপ্ত তামাবিল টু ভোমরা স্থলবন্দর ক্রস কান্ট্রি রাইড ছিলো সবচেয়ে রোমাঞ্চকর।

আমার এই রাইডের মূল স্লোগান ছিলো ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের সাইক্লিং হোক ঘরে ঘরে।’

5
মো: আল-আমিন আকিক

দুই চাকায় তামাবিল টু ভোমরা ক্রস কান্ট্রির প্রথম দিন শুরু হয় সিলেট তামাবিল স্থলবন্দর থেকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সকাল ৮টায় সাইকেলিং শুরু করি, উদ্দেশ্য হবিগঞ্জ। তামাবিল স্থলবন্দর জাফলং জিরো পয়েন্ট হয়ে যাত্রা চলতে থাকে।

ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে গড়ে উঠা ডাউকি শহরটা অসাধারণ লাগে আমার কাছে। টুপ টুপ বৃষ্টিতে সকালের নাস্তা সেরে সাইকেলিং চলতে থাকে সিলেট শহরের দিকে। রাস্তায় চোখে পারার মতো অনেক কিছু ছিলো। চা বাগান, পাথর ভাঙ্গার শব্দ, লালা খাল ও সারি নদী থেকে বালু উত্তলনসহ অনেক কিছু।
শহর ঘুরাঘুরি করে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে হবিগঞ্জের উদ্দেশ্য যাত্রা করি বিকেলে। শেরপুর হয়ে, আউশকান্দি মোড় থেকে নবাগঞ্জ রাস্তা ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো গ্রাম বানিয়াচং হয়ে হবিগঞ্জে পৌছাই। এখানে স্থানীয় এক বাসায় রাত্রী যাপনের আয়োজন চলে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের যাত্রা।

আরো পড়ুন
আমার র‍্যাপ গানে গালিগালাজ কিংবা যৌনতা নেই

আমার র‍্যাপ গানে গালিগালাজ কিংবা যৌনতা নেই

 

পরদিন সকালে হবিগঞ্জের সেই বাসা থেকে যাত্রা শুরু।

নাছিরনগর হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কুট্রাপাড়া দিয়ে ঢাকা রোডে উঠতে হবে। সেই প্লানিং করেই সাইকেলিং শুরু করলাম। কিন্তু নাছিরনগর ক্রস করার পরেই রোদের পরিমাণ যেনো বেড়ে গেলো। রোদের তাপে হাসফাস লাগলেও চারদিকে বোর ধানক্ষেত দেখতে অসাধারণ লাগাছিলো। চোখের শান্তি যাকে বলে। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু ইট ভাটা এই দৃশ্যটাকে যেন মলিন করে তুলছিলো। যাইহোক ধান ক্ষেতে পানি সেঁচ দেওয়া দেখে গোসল করার লোভটা সামলাতে পারলাম না, নেমে পড়লাম গোসল করতে। গোসল শেষে আবার রাইড শুরু।এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কুট্টাপাড়ার মোড়ে এসে দুপুরের খাওয়াদাওয়া করি। এখান থেকে একদম এক রাস্তায় ঢাকা যাওয়া যাবে। আবারও সাইকেলিং শুরু। নরসিংদী পৌছাতে পৌছাতে চারদিকে অন্ধকার নেমে গেছে কিন্তু আরো ৪৫ কিলোমিটার মতো বাকি। তবে কোন সমস্যা নাই কারণ এপথ আমার অনেক পরিচিত। সাইকেলিং'র লাইট সেটাপ করে এক কাপ কফি খেয়ে আবারও চলতে শুরু করলাম। ১৪৭ কিলোমিটার সাইক্লিং করে এইভাবে নিজ এলাকায় চলে আসলাম। আজকের মতো শেষ হলো ক্রস কান্ট্রি রাইডের ২য় দিন।

আরো পড়ুন
পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের যে বার্তা দিলেন রুদ্রনীল

পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের যে বার্তা দিলেন রুদ্রনীল

 

আমার তৃতীয় দিনের যাত্রা শুরু করি সকাল ১০টায়। ঢাকা মাওয়া হাইওয়ে দিয়ে সাইকেলিং করে চলে আসি পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে।এবার অপেক্ষা ট্রাক বা পিকাপে চড়ে সেতু পার হওয়ার। কিছুক্ষনের মধ্যে একটা খালি ট্রাক পেয়ে যাই। ট্রাকে করে স্বপ্নের পদ্মা ব্রিজ পার হয়ে সাইকেলিং শুরু করি ভাঙ্গা হয়ে গোপালগঞ্জের দিকে। গোপালগঞ্জ ঢুকতেই চারপাশে গাছপালায় পরিপূর্ণ রাস্তায় সাইক্লিং করতে অসাধারণ লাগছিলো। ফসলের মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি তালগাছ, কবি জসীমউদ্দীনের সেই বাংলার রূপকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। প্রকৃতির রুপ উপভোগ করতে করতে পৌছালাম জয় বাংলা মোড়ে, এখানেই দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম। এরপর কুমার নদীর পায়ার ধরে চলতে চলতে যখন হাইওয়েতে পৌছেছি তখন চারদিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন। তার সাথে মালবাহী ট্রাক ও পিকাপ এর চাপ। খুব সাবধানে সাইকেলিং করে নড়াইল শহরে ঢুকলাম। রাতটা কাটলো এখানেই স্থানীয় এক বাসায়। 

শেষ দিনের যাত্রা শুরু হয়, নড়াইল থেকে। যাত্রার শুরুতেই প্রচুর রোদের তাপ ও বাতাসে সাইক্লিং করতে কষ্ট হচ্ছিল, হাপিয়ে উঠছিলাম। নড়াইল থেকে যশোর যাওয়ার পথে রাস্তা উন্নয়নের নামে যে শতবর্ষী গাছগুলো কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। তবে যশোরে ঢুকার পরে গাছপালার সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে গরম কিছুটা কমতে শুরু করে। সেই সাথে চোখে পরে প্রকৃতির অবিরাম সৌন্দর্য। এর মধ্যে দিয়ে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে এগুতে থাকলাম। শহীদ জাবির মোড় দিয়ে বাগআচড়া হয়ে ঢুকে পরলাম সাতক্ষীরায়। এরপর কলায়োরা বাজারে এসে দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলাম। সাইকেল নিয়ে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করার কারণে এই রাস্তাগুলো আমার পরিচিত মনে হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর সাতক্ষীরা শহরের আগে লাবসা জিরো পয়েন্ট থেকে বাইপাস দিয়ে ভোমরা উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করলাম তখনও আমার মূল গন্তব্য ১৮ কিলোমিটার বাকি ঐ দিকে সন্ধ্যা নামার তাড়া। সাইক্লিং করছিলাম আর মাইলফলক দেখছিলাম, একইসাথে সূর্য মামাকে নজরে রাখছিলাম। সূর্য মামার সাথে অলিখিত প্রতিযোগীতায় চলতে থাকলো আমার যাত্রা। একটা সময় ভারতীয় ট্রাক দেখে বুঝে গেলাম আমি বর্ডারের কাছাকাছি, সামনে যেতেই বিজিবি সদস্যরা আমার পথ আটকালো। এর আগে যেতে পারবেন না কারণ মাত্র কয়েকশ মিটার সামনেই বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা রেখা। ওনাদের সাথে সখ্যতা করার চেষ্টা করলাম কারণ ভোমরা জিরো পয়েন্ট গিয়ে একটা ছবি তো তুলতে হবে। তারা এই এরিয়াতে তো ছবি বা ভিডিও করার অনুমতি নেই। পরে অবশ্য আমার ক্রস কান্ট্রি রাইডের কথা শুনে তারা অনুমতি দিলো। আর এই সাথে শেষ হলো আমার তামাবিল টু ডোমরা স্থলবন্দর ক্রসকান্ট্রি সাইকেল রাইডিং।

গত ৪ দিনে আমি ৫৫৮ কিলোমিটার সাইক্লিং করি। এই রাইড আয়োজন করে দুই চাকায় বাংলাদেশ সাইক্লিং গ্রুপ। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো Baztake.com, Triathlon Dreamers ও Space Makers। আমার এই রাইডের পিছনে আরও অনেকের সহযোগিতা ও ভালোবাসা ছিলো। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ