সামনে আসছে ঈদ। কলকাতার মিনি বাংলা খ্যাত নিউমার্কেট চত্বর প্রতি বছর এই সময় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম থাকে। তবে সেই চিরচেনা দৃশ্য অনুপস্থিত,এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
রমজানে বাংলাদেশি পর্যটক না থাকায় কলকাতার এই এলাকার ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
এমনকি অনেক ব্যবসায়ী দোকানের ভাড়া জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছেন। কিছু দোকান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রাহকের অভাবে আবাসিক হোটেলগুলোও সংকটে পড়েছে। প্রভাব পড়েছে মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, মেডিক্যাল সেক্টর ও পরিবহন পরিষেবায়।
আরো পড়ুন
পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করল ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি আরো কয়েক বছর চললে এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে।
মধ্য কলকাতার প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১০০টির বেশি হোটেল ও প্রায় ৩,০০০ দোকান রয়েছে, যা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল।
আরো পড়ুন
আজ সারা দেশে মানববন্ধন করবে ছাত্রদল
কলকাতার নিউমার্কেট, ট্রেজার আইল্যান্ড, সিমপার্ক মল ও আশপাশের বাজারের দোকানমালিকরা জানিয়েছেন, তাদের মোট ব্যবসার প্রায় ৫০-৫৫ শতাংশই বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রমজানে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা আরো বেড়ে যায়, কারণ তারা ঈদের কেনাকাটা রোজার শুরুতেই শুরু করেন।
রোজার প্রথম সপ্তাহেই কেনাকাটার চাপ বেড়ে যায় এবং ঈদের কয়েক দিন আগ পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকে। কিন্তু এবার বাংলাদেশি পর্যটকেরা প্রায় আসেননি, যা আমাদের ব্যবসার জন্য বড় ধাক্কা।’
বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর এই অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণ নিউমার্কেট এলাকায় পার্কিং সংকট ও দখলদারিত্বের সমস্যা। এ কারণে কলকাতার স্থানীয় ক্রেতারা এখানে কেনাকাটায় অনাগ্রহী। তবে বাংলাদেশি পর্যটকেরা আশপাশের হোটেলে অবস্থান করেন বলে তাদের এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
শ্রীরাম আর্কেডের পোশাক ব্যবসায়ী মাকসুদ আহমেদ বলেন, ‘যেসব পর্যটক এখন কলকাতায় আসছেন, তাদের বেশির ভাগই মূলত চিকিৎসার জন্য আসছেন।’
বাংলাদেশি পর্যটকদের অনুপস্থিতির প্রভাব শুধু পর্যটন খাতেই নয়, বরং খুচরা বিক্রেতারাও বিপাকে পড়েছেন। সিমপার্ক মলেও একই অবস্থা।
সেখানকার দোকানমালিক আফরোজ খান বলেন, ‘দুর্গাপূজা ও রমজান আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো মৌসুম। বাংলাদেশি পর্যটকরাই ঈদের কেনাকাটার প্রধান ক্রেতা। এ বছর ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম, ফলে লোকসান কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ট্রেজার আইল্যান্ডের খুচরা বিক্রেতা ললিত আগরওয়াল বলেন, ‘২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মহামারির কারণে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকেরা আসেননি। গত দুই বছর ব্যবসা ভালোই হয়েছিল, কারণ পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছিল। কিন্তু এবার আবার সেই মন্দা পরিস্থিতি ফিরে এসেছে।’