<p>বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী শহর মায়াবতী। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিটির (কেএনইউ) নেতৃত্বাধীন একটি যোদ্ধা বাহিনী শহরটি দখল করে নিয়েছে। গতকাল বুধবার থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহরের প্রধান সামরিক ঘাঁটি দখল করে তারা। ঘাঁটিটি দখলের সময় সেখানে ২০০ জন সেনা সদস্য ও কর্মকর্তা ছিল। কিন্তু সবাই পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। </p> <p>মায়াবতী শহরে হামলায় নেতৃত্বদানকারী জান্তাবিরোধী গোষ্ঠী কেএনইউর মুখপাত্র সাও টাও নি বলেন, ‘প্রায় ২০০ পলাতক মিয়ানমার সেনা থাইল্যান্ডের একটি সীমান্ত ক্রসিংয়ে জড়ো হয়েছিল।’ নিউজ আউটলেট খিত থিট জানিয়েছে, সেনাদের আশ্রয় দেবে কি না সে সিদ্ধান্ত নিতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে থাই কর্তৃপক্ষ।</p> <p>এ ঘটনার এক দিন পরেই মিয়ানমার থেকে পালানোর জন্য সীমান্ত ক্রসিংয়ে মায়াবতী শহরের বাসিন্দারা ভিড় জমিয়েছে। বিমান হামলার আশঙ্কায় শুক্রবার ভোর থেকে সেখানে স্থানীয়রা জড়ো হতে শুরু করে। এই শহরের দখল হারানোর অর্থ মিয়ানমার জান্তার চরম ক্ষতি। মায়াবতী জান্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর, যা জান্তা সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। </p> <p>মায়াবতী শহরের বাসিন্দা মো মো থেট সান জানান, ‘আমি বিমান হামলার ভয় পাচ্ছি।’ তিনি তাঁর ৫ বছরের ছেলের সঙ্গে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন। ৩৯ বছর বয়সী অন্য এক নারী জানায়, ‘হামলার আওয়াজ খুব জোরে শোনা যাচ্ছিল। আমার ঘর কাঁপছিল। তাই ভয়ে সীমান্ত ক্রসিংয়ে জড়ো হয়েছি।’ আরো একজন বাসিন্দা বলেন, বোমার বিকট শব্দে ভয়ে বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আরো বলেন, ‘আমি এখানে পালিয়ে এসেছি। তারা থাইল্যান্ডে বোমা ফেলতে পারবে না।’</p> <p>মিয়ানমারের বিপর্যস্ত জান্তা সর্বশেষ লড়াইয়ে আরো বেশি অঞ্চল হারিয়েছে। এর পরেই থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্নপ্রি বাহিদ্ধা-নুকারা মায়াবতী থেকে মোই নদীর ঠিক ওপারে মায়া সোট পরিদর্শন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মিয়ানমার জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদের কিছু সেনা আত্মসমর্পণ করেছে। কারণ তাদের সঙ্গে পরিবার ছিল। সেই সেনাদের ফিরিয়ে আনতে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। </p> <p>মিয়ানমারে ২০২১ সাল থেকে অশান্তির শুরু হয়, যখন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ক্ষমতা দখলের পর গঠিত সামরিক সরকারের প্রধানও হন তিনি। অভ্যুত্থানের সময়েই বন্দি করা হয়েছিল অং সান সুচি, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ প্রথম দিকে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছিলেন, কিন্তু প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে সেসব বিক্ষোভ দমন করেছে সামরিক সরকার।</p> <p>এদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ময়াবতী দখল করে নিলেও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনো শহরটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। বিমান হামলা করে পাল্টা আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করতে পারে বলে ব্যাংককের থামমাসাট ইউনিভার্সিটির সাউথইস্ট এশিয়ান স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ডুল্যাপাক প্রিচারুশ বলেছেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘তাই আগামী দিনে যুদ্ধের সম্ভাব্য তীব্রতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’</p> <p>বৃহস্পতিবার থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন বলেছেন, ‘মিয়ানমারের যুদ্ধ যেন তার দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ না করে।’ থাইল্যান্ড বলেছে, তারা মিয়ানমারের সংঘাতে বাস্তুচ্যুত এক লাখ মানুষকে আশ্রয় দেবে। </p> <p>সূত্র : রয়টার্স<br />  </p>