খার্তুমের বিস্তৃত এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির দাবি সেনাবাহিনীর

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
খার্তুমের বিস্তৃত এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির দাবি সেনাবাহিনীর
২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট সুদানের গেদারেফ শহরে সেনা দিবসে আয়োজিত একটি সামরিক কুচকাওয়াজে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে। ছবি : এএফপি

সুদানের সামরিক বাহিনী শনিবার জানিয়েছে, তারা প্রায় পুরো খার্তুম নর্থ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে। রাজধানীকে সম্পূর্ণ দখলে নিতে তারা আধাসামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করেছে।

সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, তারা খার্তুম নর্থের গুরুত্বপূর্ণ জেলা কাফুরি পুনর্দখল করেছে এবং আরএসএফ সদস্যদের বাহরির (খার্তুম নর্থ) শহরতলিতে সরিয়ে দিয়েছে। খার্তুমের অন্যতম সমৃদ্ধ এই জেলা দীর্ঘদিন ধরে আরএসএফের ঘাঁটি ছিল।

এখানে বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে আরএসএফ কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান দাগলোর ভাই ও উপপ্রধান আবদেল রহিম দাগলোর সম্পদও অন্তর্ভুক্ত।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাবিল আবদুল্লাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, শুক্রবার সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্ররা ‘দাগলো সন্ত্রাসী মিলিশিয়ার অবশিষ্ট অংশ’কে কাফুরি থেকে বিতাড়িত করেছে। এ ছাড়া পূর্ব দিকে ১৫ কিলোমিটার দূরের শারক এল নিলের অন্যান্য এলাকার দখলও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে সামরিক সূত্র বৃহস্পতিবার জানিয়েছিল, সেনাবাহিনী খার্তুমের কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিল, সেখানে সংঘর্ষ চলছে এবং রাজধানীর দক্ষিণে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আরএসএফের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাজধানী ও তার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো পুনর্দখল করেছে। এই অগ্রগতি সেনাবাহিনীর অন্যতম বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ যুদ্ধ শুরুর পর আরএসএফ খার্তুমসহ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা দখল করেছিল।

প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা
যদিও সেনাবাহিনী রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তবে সেনাবাহিনীর দখলে আসা নতুন এলাকায় প্রতিশোধমূলক হামলা হতে পারে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শুক্রবার সতর্ক করেছে।

মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, সেখানে অ্যাক্টিভিস্ট, মানবাধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও ত্রাণকর্মীদের ‘আরএসএফের সহযোগী’ বলে অভিযুক্ত করে টার্গেট করার একটি তালিকা প্রচারিত হচ্ছে। খার্তুমের সাউথ বেল্ট এলাকায় শনিবার আরএসএফ সদস্যরা একটি স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী দলের দুই সদস্যকে বন্দুকের মুখে বসাইর হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এটি ছিল ওই অঞ্চলের আংশিকভাবে সচল শেষ হাসপাতাল। এর আগে আরএসএফ বৃহস্পতিবার একই হাসপাতালে ব্যবস্থাপক, একটি স্যুপ কিচেনের প্রধান এবং এক স্বেচ্ছাসেবককে আটক করেছিল বলে স্থানীয় উদ্ধারকারীরা জানিয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, জানুয়ারির শেষ দিকে বাহরি এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর অন্তত ১৮ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। গত মাসে আলজাজিরা রাজ্যের রাজধানী ওয়াদ মাদানি দখলের পর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে। সন্দেহভাজন আরএসএফ সমর্থিত জনগোষ্ঠীগুলোকে বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

অন্যদিকে আরএসএফের বিরুদ্ধে জাতিগত সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে, যা গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতেও জাতিগত কারণে বেসামরিকদের টার্গেট করার অভিযোগ উঠছে।

দারফুরে বিমান হামলা
এ ছাড়া সেনাবাহিনী সুদানের বিশাল পশ্চিমাঞ্চল দারফুরে আরএসএফের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে। আরএসএফ নিয়ন্ত্রিত মধ্য দারফুর রাজ্যের রাজধানী জালিঙ্গেইতে একটি আবাসিক এলাকায় সামরিক বিমান হামলায় তিন ভাই-বোন নিহত এবং একই পরিবারের আরো তিনজন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থীদের একটি সংগঠন জানিয়েছে।

শহরটি আরএসএফ ছাড়াও বিদ্রোহী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যেখান থেকে তারা বিভিন্ন হামলা পরিচালনা করে থাকে। স্থানীয় নাগরিক সমাজ সংগঠন ‘দারফুর জেনারেল কো-অর্ডিনেশন অব ক্যাম্পস ফর দ্য ডিসপ্লেসড অ্যান্ড রিফিউজিস’ শনিবার জানিয়েছে, ওই হামলায় বেশ কিছু বাড়িও ধ্বংস হয়েছে।

আরো দক্ষিণে দারফুর রাজ্যের রাজধানী নাইয়ালায়, যেখানে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেখানে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় গত সপ্তাহে দুই দিনে ৫৭ জন নিহত হয়েছে বলে হাসপাতালের চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে। যদিও আরএসএফ দারফুরের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে, সেনাবাহিনী দেশের উত্তর, পূর্ব ও কেন্দ্রীয় অংশের কিছু এলাকাতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে।

এই সংঘাত সুদানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটি এটিকে ‘এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পাকিস্তানি-আফগান সীমান্তে তীব্র বন্দুকযুদ্ধ, ১৬ সন্ত্রাসী নিহত

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পাকিস্তানি-আফগান সীমান্তে তীব্র বন্দুকযুদ্ধ, ১৬ সন্ত্রাসী নিহত
পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানের আঙ্গুর আড্ডায় আফগান পাকতিকা প্রদেশের সীমান্তের সঙ্গে বেড়ার পাশে একজন পাকিস্তানি সেনা পাহারা দিচ্ছেন। ফাইল ছবি : এএফপি

পাকিস্তানি-আফগান সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার পর পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ১৬ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এদিন জানায়, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার গুলাম খান কল্লায় এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী আফগান সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করা একটি সন্ত্রাসী দলকে শনাক্ত করে। এরপর বাহিনী কার্যকরভাবে তাদের প্রতিহত করে।

তীব্র বন্দুকযুদ্ধের পর ১৬ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়।

আইএসপিআর বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্বর্তীকালীন আফগান সরকারকে তাদের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যকরের অনুরোধ জানিয়ে আসছে। আফগান সরকারের দায়িত্ব হলো তাদের ভূমি সন্ত্রাসীদের হাতে ব্যবহার হতে না দেওয়া, যাতে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে এবং দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের শিকড় নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

 

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অনুপ্রবেশযোগ্য সীমান্ত ভাগ করে, যেখানে বেশ কয়েকটি পারাপারের পথ রয়েছে, যা উভয় দেশের জনগণের জন্য আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানের জন্য অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামাবাদ বারবার আফগান সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তাদের ভূমি পাকিস্তানে হামলা চালানোর জন্য তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করতে না পারে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) কাছে উপস্থাপিত বিশ্লেষণ ও নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ দলের একটি প্রতিবেদনে ইসলামাবাদের এই উদ্বেগের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিটিপিকে অস্ত্র, রসদ সরবরাহ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কাবুলের ভূমিকা রয়েছে।  

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী বেলুচিস্তানের ঝোব জেলায় পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা ছয় সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছিল।

এদিকে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় বলে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (পিআইসিএসএস) নামের একটি গবেষণা সংস্থার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারিতে দেশটিতে অন্তত ৭৪টি সন্ত্রাসী হামলা রেকর্ড করা হয়, যাতে ৯১ জন নিহত। এদের মধ্যে ৩৫ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ২০ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৩৬ জন সন্ত্রাসী।

এ ছাড়া হামলাগুলোতে ১১৭ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৩ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ৫৪ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১০ জন সন্ত্রাসী।  

খাইবারপাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশ সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়, এরপর বেলুচিস্তান। কেপির সাধারণ জেলাগুলোতে ২৭টি হামলা হয়, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ জন সদস্য, ছয়জন বেসামরিক নাগরিক, দুজন সন্ত্রাসীসহ মোট ১৯ জন নিহত হয়। এ ছাড়া কেপির উপজাতীয় জেলা (সাবেক ফাটা) ১৯টি হামলার শিকার হয়।

সূত্র : দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল

মন্তব্য

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল
২৩ মার্চ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত স্বজনদের জানাজায় ফিলিস্তিনিদের শোক। ছবি : এএফপি

হামাসশাসিত গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অন্তত ৫০ হাজার ২১ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ২৭৪ জন।

মন্ত্রণালয় রবিবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়। পাশাপাশি গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থাও তাদের নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।

স্বাধীনভাবে এই সংখ্যা যাচাই করা যায়নি, তবে যুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে জাতিসংঘ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

গত জানুয়ারির ১৯ তারিখ থেকে কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল গাজার ওপর ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে, ফলে এই সপ্তাহে নিহতের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছে। এতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭৩-এ পৌঁছেছে।

 

ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে জানুয়ারির শুরুতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাবের চেয়ে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি হতে পারে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে ২৩৩ জন নিখোঁজ ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাদের মৃত্যু ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে।

ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে এক হাজার ২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

কারাগারে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলু

ডয়চে ভেলে
ডয়চে ভেলে
শেয়ার
কারাগারে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলু
২২ মার্চ লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ইস্তাম্বুলের গ্রেপ্তারকৃত মেয়রের সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড ও পতাকা বহন করছেন। ছবি : এএফপি

তুরস্কের একটি আদালত রবিবার ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের একজন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

একরেম ইমামোগলু তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি সিএইচপির নেতা এবং ইস্তাম্বুলের বর্তমান মেয়র। গত ১৯ মার্চ তাকে আটক করা হয়।

স্থানীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, একই সময়ে ইমামোগলুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বা যোগাযোগ আছে—এমন আরো প্রায় ১০০ জনকে আটক করা হয়।

ইমামোগলুর বিরুদ্ধে পৌর চুক্তি সংক্রান্ত দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ ও অর্থ পাচার ছাড়াও সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। সব অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ইমামোগলু ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন।

প্রতিবাদে বিক্ষোভ
এদিকে ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তার সমর্থকরা তুরস্কজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।

দেশটির ৮১টি প্রদেশের অন্তত ৫৫টিতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। শুধু ইস্তাম্বুলেই তিন লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল। সরকার ২৬ মার্চ পর্যন্ত জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
বিরোধীরা ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে, যাতে তাকে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা যায়। ইমামোগলু তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তার দল সিএইচপি তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। নাগরিকদের ইমামোগলুর প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্য তুরস্কজুড়ে প্রতীকী ‘সংহতি বাক্স’ রাখা হয়েছে। ব্যালটের মতো সেখানে জনগণ তাদের এই নেতার প্রতি সমর্থন জানাতে পারবেন।

ইমামোগলুর প্রতিক্রিয়া
গ্রেপ্তার হওয়া সত্ত্বেও ইমামোগলু অনড় রয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একটি বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা কঠিন নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছি। কিন্তু আমি হার মানব না। আমি নিজেকে আমার জাতির কাছে সমর্পণ করছি।’

ইমামোগলু ২০১৯ সালে প্রথমবার ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন, যা এরদোয়ানের দল একে পার্টির জন্য একটি বড় পরাজয় ছিল। ইস্তাম্বুল তুরস্কের বৃহত্তম শহর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এই শহর দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একে পার্টি ও তার পূর্বসূরি ইসলামপন্থী দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ইমামোগলুর এই বিজয়কে এরদোয়ানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হয়। ২০২৪ সালে তিনি বড় ব্যবধানে আবার মেয়র নির্বাচিত হন।

মন্তব্য

ইউরোপের কিছু শহরে বিনা মূল্যে মুরগি বিতরণের কারণ

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
ইউরোপের কিছু শহরে বিনা মূল্যে মুরগি বিতরণের কারণ
প্রতীকী ছবি : এএফপি

ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের শহরগুলো বছরের পর বছর ধরে মুরগি বিতরণ করে চলেছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, শহরের বাসিন্দাদের যে খাদ্য বর্জ্য তৈরি হয়, সেই বর্জ্যের সুহারা করা। এরপর আশ্চর্যজনক ফলাফল পাওয়া গেছে।

ফ্রান্সের কোলমারে এই উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল ২০১৫ সালে, ইস্টারের সময় থেকে।

শহরের খাদ্য বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য সেখানকার বর্জ্য সংগ্রহকারী বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছিল এই উদ্যোগ। তার পর থেকেই সেখানে এই প্রকল্প চলে আসছে। কোলমার অ্যাগ্লোমেরেশনের (মেয়রের অনুরূপ ভূমিকা) প্রেসিডেন্ট গিলবার্ট মেয়ার ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন যে স্লোগানের হাত ধরে সেটা ছিল, ‘একটা পরিবার, একটা মুরগি।’

স্লোগানের লক্ষ্য ছিল, স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা করে মুরগি দত্তক নিতে উৎসাহিত করা।

পরের বছর ওই প্রকল্প বাস্তবায়নও করা হয়। এই উদ্যোগে অংশীদার করা হয় নিকটবর্তী মুরগির খামারগুলোকে। জনসাধারণকে ভাবতে উৎসাহিত করা হয়েছিল, মুরগি পালন করতে তাদের যে পরিশ্রম করতে হবে, তার ফলও তারা সত্ত্বর পেতে চলেছেন। কারণ বিনা মূল্যে ডিম পাবেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রাথমিকভাবে সেখানকার চারটি পৌরসভার অন্তর্গত দুই শতাধিক বাড়ি এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়। তাদের প্রত্যেককে দুটি করে মুরগি দেওয়া হয়েছিল, হয় রেড চিকেন (পুলে রুজ প্রজাতি) বা সেখানকার স্থানীয় প্রজাতি আলসাসি। অংশগ্রহণকারী প্রতিটা পরিবার মুরগি পালনের অঙ্গীকার জানিয়ে স্বাক্ষরও করে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা যেকোনো সময় বাড়িতে উপস্থিত হয়ে খতিয়ে দেখতে পারেন মুরগিগুলোকে কি অবস্থায় রাখা হচ্ছে, যেটা ভালোভাবেই জানতেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তবে মুরগিগুলোর জন্য কোনো ‘হেনহাউস’ সরবরাহ করা হয়নি।

বরং বাসিন্দাদের ওপরই এই সিদ্ধান্তটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল যে তারা নিজেরাই মুরগিদের জন্য থাকার জায়গা তৈরি করবেন নাকি বাজার থেকে ‘হেনহাউস’ কিনে আনবেন।

প্রকল্প পরিচালনাকারী বিভাগ নিশ্চিত করেছিল, প্রতিটা বাড়িতে মুরগির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের মানদণ্ড ছিল আনুমানিক আট থেকে ১০ বর্গমিটার জায়গা, যা মুরগি পালনের জন্য যথেষ্ট।

কোলমারে এই প্রকল্প বেশ সাফল্য পেয়েছে এবং এখনো তা চলছে। কোলমার অ্যাগ্লোমেরেশনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরিক স্ট্রুমান বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরে অন্যান্য পৌরসভাও এই প্রকল্পে যোগ দিয়েছে। ২০২২ সাল থেকে অ্যাগ্লোমেরেশনের ২০টি পৌরসভাই এই প্রকল্পের অংশ।’

এখনো পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের পাঁচ হাজার ২৮২টি মুরগি বিতরণ করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসেও মুরগি বিতরণ করা হবে এবং তার জন্য আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের হাত ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা যে শুধু পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম পেয়েছেন এমনটাই নয়, খাদ্য বর্জ্য মোকাবেলাও করতে সক্ষম হয়েছেন।

পালন করা মুরগিগুলোকে খাওয়ানোর জন্য তারা ‘কিচেন ওয়েস্ট’ ব্যবহার করেছেন। এই বর্জ্য তাদের কোথাও না কোথাও ফেলতে হতো, তার পরিবর্তে সেগুলো মুরগিদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

স্ট্রুমান ব্যাখ্যা করেছেন, ‘যেহেতু একটি মুরগির গড় আয়ু চার বছর এবং প্রতিদিন তারা ১৫০ গ্রাম জৈব বর্জ্য গ্রহণ করে, তাই হিসাব করে দেখা গিয়েছে (২০১৫ সাল থেকে) ২৭৩.৩৫ টন জৈব-বর্জ্য আমরা এড়াতে পেরেছি।’

প্রসঙ্গত, অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের চাইতে খাদ্য বর্জ্য বায়ুমণ্ডলে আরো বেশি পরিমাণে মিথেন নির্গমন করে। যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে বলতে গেলে বর্জ্য পদার্থ থেকে বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ মিথেন নির্গত হয় তার প্রায় ৫৮ শতাংশই আসে খাদ্য বর্জ্য থেকে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে মিথেন বায়ুমণ্ডলে স্বল্পস্থায়ী হলেও বিশ্বের উষ্ণায়নে এর প্রভাব কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে বেশি। বিশ্ব উষ্ণায়নের দিক থেকে ২০ বছরের সময়সীমায় মিথেনের প্রভাব কার্বন ডাই-অক্সাইডের চাইতে ৮০ গুণ বেশি।

বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অপচয় বা নষ্ট হয়, যার মোট পরিমাণ প্রতিবছর ১৩০ কোটি টন। খাদ্য অপচয় ও খাদ্য বর্জ্যের কারণে বিশ্বজুড়ে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার ৮ থেকে ১০ শতাংশ। এই অঙ্কটা বিমান পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ইন্ডাস্ট্রির কারণে গ্রিনহাউস নির্গমনের প্রায় পাঁচ গুণ।

এদিকে সংক্রমক রোগের উদ্বেগের কারণে যুক্তরাজ্যে মুরগিকে কিচেন স্ক্র্যাপ খাওয়ানোর বিষয়টা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্বের অন্যত্র এটা একেবারে আইনসম্মত। এতে খাদ্য বর্জ্যের পরিমাণ যেমন হ্রাস করা যায় তেমনি এমন একটা চক্রের সূচনা করা যায়, যা সব পক্ষের জন্যই উপকারী।

কোলমার একমাত্র শহর নয়, যেখানে বিনা মূল্যে মুরগি বিতরণের এই উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি কোলমারেই যে এই প্রকল্প প্রথম শুরু হয়েছিল, এমনটাও নয়। ২০১২ সালে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আরেকটা ছোট্ট ফরাসি শহর পানসিতে জৈব বর্জ্য কমানোর জন্য এই জাতীয় একটা উদ্যোগ শুরু হয়। সেখানকার প্রতিটা পরিবারকে দুটি করে মুরগি দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় পানসির মেয়র লিডি পাস্টিউ সেখানকার স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘শুরুতে এটা মজার বিষয় ছিল, কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পারি যে এই ভাবনাটা বেশ ভালো।’

মোট ৩১টা পরিবারকে মুরগি ও এক ব্যাগ ফিড (মুরগির খাবার) দেওয়া হয়েছিল। এই উদ্যোগের সাফল্য ‘বিস্ময়কর’ ছিল বলেই জানিয়েছিলেন মেয়র লিডি পাস্টিউ।

এ ছাড়া বেলজিয়ামের মুস্ক্রন, অ্যান্টওয়ার্প শহর ও লিম্বাগ প্রদেশে মুরগি বিতরণ করা হয়েছিল। সেখানকার বাসিন্দাদের অবশ্য কমপক্ষে দুই বছর মুরগি না খাওয়ার জন্য একটা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল। শুধু লিম্বাগ প্রদেশে এক বছরে আড়াই হাজারেরও বেশি পরিবারকে পালনের জন্য মুরগি দেওয়া হয়েছিল।

তত্ত্বগত দিক থেকে এই উদ্যোগ বেশ ভালো বলে মনে করা হচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্বের এমন কিছু অংশে, যেখানে ডিমের ঘাটতি রয়েছে বা ডিম ব্যয়বহুল। উদাহরণস্বরূপ ক্যালিফোর্নিয়া বা নিউইয়র্কে এক ডজন ডিমের দাম প্রায় ৯ ডলার। কিছু কিছু প্রজাতির মুরগি প্রতিবছর ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। তাই হিসাব কষলে দেখা যাবে একটা মুরগি প্রতি বছর ২২৫ ডলার পর্যন্ত দামের ডিম দিতে পারে।

তবে এই উদ্যোগের এমন একটা উপকার কোলমারে লক্ষ করা গিয়েছিল যা কেউ প্রত্যাশাও করেনি। না, মুরগি পালনের পরিবর্তে ডিমের জোগান বা খাদ্য বর্জ্য মোকাবেলার সঙ্গেও এর কোনো রকম সম্পর্ক ছিল না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে বিষয়টা লক্ষ করা গিয়েছিল তা হলো, মুরগি পালনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একাত্মতা। স্থানীয়রা মুরগি পালনের বিষয়ে একে অপরকে সাহায্য করত। কোনো পরিবার ছুটি কাটাতে অন্যত্র গেলে, তাদের পালিত মুরগির যত্ন নেয় প্রতিবেশীরা।

স্ট্রুমানের কথায়, ‘এই উদ্যোগ শুরু হওয়ার সময় থেকেই এখানকার বাসিন্দারা একে স্বাগত জানিয়েছেন। ঠিক সেই কারণেই কোলমারের সব পৌরসভা এখনো এই উদ্যোগে শামিল হয়।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ