তুরস্কে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সরকারের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। তুরস্কে বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর চার দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
দেশটির রাজনীতিতে সেক্যুলার দল হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান পিপলস পার্টির-সিএইচপি নেতা একরেম ইমামোগলু।
২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করার কথা ছিল এ সপ্তাহের শেষের দিকে।
এর মধ্যেই গত বুধবার দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তার অভিযোগে আরো ১০৫ জনের সঙ্গে ইমামোগুলোকেও আটক করা হয়।
এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে আরো অনেককে আটক করে সরকার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ-সমাবেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তার ভাষায়, নাটক করছে বিরোধীরা।
এরদোয়ান বলেন, ‘তারা এতটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে যে, পুলিশকে আক্রমণ এবং বিচারক ও আইনজীবীদের হুমকি দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে।’
এদিকে, সিএইচপি পার্টির নেতা ওজগুর ওজেল অভিযোগ করেছেন, ১০৫ জনকে আটক করে বিরোধীদের দমনের কৌশল নিয়েছে সরকার।
ইস্তাম্বুলের সিটি হলের বাইরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের সেই চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার জনগণের রয়েছে।
’
বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া ঘোষণা করেছেন অনলাইনে ২৬১ জন ‘সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্ট ম্যানেজারকে’ শনাক্ত করেছে পুলিশ।
তাদের বিরুদ্ধে ‘মানুষকে ঘৃণা ও শত্রুতার দিকে ঠেলে দেওয়া’ এবং ‘অপরাধে প্ররোচনা দেওয়ার’ অভিযোগ রয়েছে।
ইয়েরলিকায়া বলেন, ‘৩৭ সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে এবং অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।’
বৃহস্পতিবার ইমামোগলুর এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বার্তায়, ‘এই অন্যায় রুখে দাঁড়াতে’ তুরস্কের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পরিস্থিতির জন্য এরদোয়ানের দলকে দায়ী করে বিচার বিভাগকেও সোচ্চার হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয় ওই পোস্টে।
এতে বলা হয়, ‘পরিস্থিতি শুধু রাজনৈতিক দল ও আদর্শের প্রশ্নে আটকে নেই আর। এখন সাধারণ মানুষ ও তাদের পরিবার পরিজনের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। এখনই সময় আওয়াজ তোলার।’
শহরের বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে লাউডস্পিকারে ইমামোগলুর একটি বক্তৃতার রেকর্ড বাজছে। যাত্রীরা যখন ট্রেনে উঠতে উঠতে শুনছেন, ‘আপনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি অঙ্গীকার করছি, এই লড়াইয়ে জিতব।’
রাস্তায় মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তুরস্কের বিরোধীদের স্লোগান হিসেবে পরিচিত সেই কথাগুলোতে বলা হচ্ছে, ‘আমরা ভীত নই, চুপ করিয়ে রাখা যাবে না আমাদের, আমরা মানব না।’
তবে, এক কোটি ৬০ লাখের বেশি জনসংখ্যার এই শহরে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা এখনও তুলনামূলকভাবে কম। আপাতত, ইমামোগলুকে মুক্তি দিতে এরদোগানের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর সম্ভাবনাও কম তাদের।
গত কয়েক মাসে দেশব্যাপী বড় ধরণের অভিযান চালিয়েছে তুরস্ক সরকার। বিরোধী রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং বিনোদন জগতের ব্যক্তিত্বরা ছিল সেইসব অভিযানের লক্ষ্যবস্তু। তারই ধারাবাহিকতায় ইমামোগলু এবং অন্যদের গ্রেপ্তার করা হলো।
আগামীতে এমন অভিযানের অংশ হিসেবে আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হবে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। ভয় দেখাতেই তাদের আটক করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অবশ্য গ্রেপ্তারের জন্য এরদোয়ানকে দায়ী করার সমালোচনা করেছে বিচার মন্ত্রণালয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে তারা।
গত বছর দ্বিতীয় মেয়াদে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন একরেম ইমামোগলু। সেই স্থানীয় নির্বাচনে ইস্তাম্বুল এবং আঙ্কারায় জয়ী হয় তার দল সিএইচপি।
এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর ওই নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো তার দল সারা দেশে ব্যালট বাক্সের হিসাব-নিকাশে পরাজিত হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে এরদোয়ানের জন্যও ধাক্কা ছিল এটি। তার রাজনৈতিক বেড়ে ওঠা বিশেষ করে ক্ষমতায় আসার পথে একসময় ইস্তাম্বুলের মেয়রও ছিলেন তিনি।
২২ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতার শীর্ষে আছেন এরদোয়ান। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি উভয় পদেই দায়িত্ব পালন করেছেন এরদোয়ান।
মেয়াদের বাধ্যবাধকতার কারণে, সংবিধান পরিবর্তন না করলে তিনি ২০২৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। অন্যদিকে, আগামী রবিবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করবেন সিএইচপির ১৫ লাখ সদস্য। যেখানে, ইমামোগলুই একমাত্র প্রার্থী।
এ ছাড়াও দলটি একটি প্রতীকী নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। তুরস্কের বিভিন্ন জেলায় ব্যালট বাক্স রাখার পরিকল্পনা করেছে তারা। আটক মেয়রের প্রতি সমর্থন জানাতে ওই ব্যালট বাক্সগুলোতে নাগরিকদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
সূত্র : বিবিসি