সেই হামলায় অন্যান্য নিরীহ পর্যটকদের সঙ্গেই প্রাণ হারিয়েছেন লেফটেন্যান্ট বিনয়।
নৌসেনা সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দুইবছর আগে বাহিনীতে যোগ দেন বিনয়। বর্তমানে তার পোস্টিং ছিল কোচিতে। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল তিনি বিয়ে করেন, আর ১৯ এপ্রিল ছিল তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যান কাশ্মীরে। কিন্তু মধুচন্দ্রিমার আনন্দ মুহূর্তেই রূপ নেয় এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে। জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় বিনয়ের দেহ। ভবিষ্যতের হাজারো স্বপ্ন, সুখের শুরু, সবকিছু এক নিমেষে থেমে যায়।
বিনয়ের মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। এলাকার মানুষজন বলছেন, বিনয় ছিলেন ভদ্র, মেধাবী এবং ভীষণ আশাবাদী একজন যুবক। তার মৃত্যু যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না কেউ। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘মাত্র ক’দিন আগেই বিয়ে হয়েছিল ওর। সবাই খুব খুশি ছিল। কে জানত এমন খবর শুনতে হবে। সত্যিই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

শুভম দ্বিবেদী ও তার স্ত্রী। তাদের বিয়ে হয়েছিল গত ১২ ফেব্রুয়ারি। পাশের ছবিতে নিহত শুভম মাটিতে পড়ে আছেন।
বিনয়ের মতো আরো এক যুবক শুভম দ্বিবেদী। তিনিও সদ্যবিবাহিত। স্ত্রীকে নিয়ে কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে হামলার শিকার হন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ তাদের বিয়ে হয়েছিল। মাত্র দুই মাস পরেই সেই আনন্দের ছুটি ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়ে গেছে।
শুভমের চাচাতো ভাই সৌরভ দ্বিবেদী এএনআই-কে জানান, ‘শুভম তার স্ত্রীকে নিয়ে পহেলগামে ছিলেন। আমার চাচা জানান শুভমের মাথায় গুলি লেগেছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, হামলাকারীরা নাম জেনে গুলি চালানো হয়েছিল... মৃতদেহ পেতে এখনও ২-৩ দিন লাগবে, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরই মরদেহ দেওয়া হবে।’
এই ভয়াবহ হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন তাদের বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। মোদি ছিলেন সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে।
এ ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি সংগঠন, যা নিষিদ্ধ ঘোষিত লস্কর-ই-তৈয়বার একটি উপধারা হিসেবে পরিচিত। এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা এ হামলার দায় নিচ্ছে।
স্থানীয়দের প্রতিবাদ, মোমবাতি মিছিল
পহেলগামের স্থানীয় ট্যাক্সি ড্রাইভাররা মোমবাতি মিছিল করে এ হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কাশ্মীরের বারামুলা, শ্রীনগর, পুঞ্চ, আখনুর ও কুপওয়ারাতেও স্থানীয়রা মিছিল করেছেন। জম্মুতে বজরং দল কর্মীরাও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।
পহেলগাম ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট গুলজার আহমদ ওয়ানি বলেন, ‘এই হামলা আমরা তীব্রভাবে নিন্দা করি। এরা কেবল পর্যটক নয়, আমাদের পরিবারের মতো। আমরা চাই সরকার এই ঘটনার আসল দোষীদের খুঁজে বার করুক। পহেলগাম সবসময় শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিল। এখানকার জীবনযাত্রা পর্যটনের ওপর নির্ভর করে।’
মহারাষ্ট্রের পাঁচ পর্যটক নিহত
মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের অফিস জানায়, এই হামলায় মহারাষ্ট্রের পাঁচজন পর্যটক নিহত হয়েছেন। শিন্ডে কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাম মোহন নাইডুকে একটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছেন যাতে আটকে পড়া মহারাষ্ট্রের পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা যায়। মন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, পর্যটকদের তালিকা পেলেই তৎপরতার সঙ্গে তাদের মুম্বাইয়ে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হবে।
এদিকে এক্স-এ দেওয়া পোস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘এই জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্য দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই ঘৃণ্য কাজ যারা করেছে তারা রেহাই পাবে না। আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী সংকল্প অটুট থাকবে।’
ঘটনার পরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শ্রীনগরে পৌঁছে একটি উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ‘এই কাপুরুষোচিত হামলায় যারা জড়িত, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।’ এই সন্ত্রাসী হামলার পর, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ অনন্তনাগ জেলার পহেলগামের বাইসরান এলাকায় যৌথ অভিযান শুরু করেছে। হামলাকারীদের খুঁজে বের করতেই এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
সূত্র : এনডিটিভি