আফ্রিকার জাতীয় উদ্যানে বহু জলহস্তীর মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আফ্রিকার জাতীয় উদ্যানে বহু জলহস্তীর মৃত্যু
ছবিসূত্র : ভিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যান/ রয়টার্স

আফ্রিকার প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যানে অ্যানথ্রাক্সের বিষক্রিয়ায় বহু জলহস্তী মারা গেছে। ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক হলো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর পূর্ব অংশে আলবার্টিন রিফ্ট ভ্যালির একটি জাতীয় উদ্যান। এটি ১৯২৫ সালে তৈরি করা হয়েছিল।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যানে কমপক্ষে ৫০টি প্রাণী মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

মৃতদেহগুলো স্থানীয় ইশাশা নদী এবং এর তীরে আটকে পড়েছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ।

ভিরুঙ্গা জাতীয় উদ্যানের পরিচালক ইমানুয়েল ডি মেরোড মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গণবিষক্রিয়ার কারণ কী তা স্পষ্ট নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘পানি থেকে প্রাণীগুলোর দেহগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য কর্মীরা কাজ করছেন। প্রবেশপথ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবের কারণে কাজ কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘কস্টিক সোডা দিয়ে মৃতদেহগুলো পুঁতে ফেলার মাধ্যমে রোগের বিস্তার সীমিত করতে হবে।’

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি রোগ। এই ব্যাকটেরিয়া মাটি থেকেও সংক্রমিত হতে পারে এবং সাধারণত বন্য প্রাণীর শরীরে এটা প্রবেশ করে। সংস্থাটি আরো উল্লেখ করেছে, ‘গবাদি পশু এবং বন্য প্রাণী দূষিত মাটির সংস্পর্শে এলে, সেখানে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করলে বা পানি পান করলে সংক্রমিত হতে পারে।

রয়টার্স জানিয়েছে, অ্যানথ্রাক্সের কারণে জৈবিকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ এই পার্কে মহিষসহ অন্যান্য প্রাণীও মারা গেছে।

দেশটির জাতীয় উদ্যানের ওয়েবসাইট অনুসারে, চোরাশিকার এবং আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে জলহস্তীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৭০-এর দশকে এই পার্কে প্রায় ৩০ হাজার প্রাণী ছিল, কিন্তু এর পর থেকে ৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, আনুমানিক এক হাজার ২০০টি জলহস্তী এখন অবশিষ্ট রয়েছে।

সূত্র : ইউএস টুডে


 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোকেন সরবরাহের দায়ে অস্ট্রেলীয় রাজনীতিকের সাজা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
কোকেন সরবরাহের দায়ে অস্ট্রেলীয় রাজনীতিকের সাজা
স্পিয়ার্সের আইনজীবীর মতে, কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি মাদক সেবন করতেন। ছবি : এবিসি নিউজ

অস্ট্রেলিয়ার এক রাজনীতিককে মাদক সরবরাহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। যদিও শুরুতে তিনি একটি ভিডিওকে ‘ডিপফেইক’ বলে দাবি করেছিলেন, যেখানে তাকে সাদা রঙের গুঁড়া জাতীয় পদার্থ নাক দিয়ে টানতে দেখা যায়।

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার লিবারেল পার্টির সাবেক নেতা ডেভিড স্পিয়ার্সকে বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেইডের একটি আদালত ৯ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার (প্রায় পাঁচ হাজার ৭২০ মার্কিন ডলার) জরিমানা ও সাড়ে ৩৭ ঘণ্টা কমিউনিটি সার্ভিস করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউজ কর্প একটি ভিডিও প্রকাশ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, যেখানে দেখা যায়, তিনি একটি প্লেট থেকে কিছু টানছেন।

শুরুতে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন এটি একটি ‘ডিপফেইক’। পাশাপাশি তিনি কখনো কোকেন ব্যবহার করেননি বলেও দাবি করেন।

তবে পরে স্পিয়ার্স স্বীকার করেন, তিনি মিথ্যা বলেছেন এবং এসংক্রান্ত কেলেঙ্কারি ও অভিযোগের কারণে তাকে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করতে হয়। এ ছাড়া আগস্ট মাসে দুই ব্যক্তিকে কোকেন সরবরাহ করার অভিযোগে স্পিয়ার্স গত মাসে দোষী সাব্যস্ত হন।

স্পিয়ার্সের আইনজীবীর মতে, কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি মাদক ব্যবহার করতেন, তবে অপরাধগুলো কোনো অফিশিয়াল কার্যক্রমের সময় ঘটেনি।

এই মামলাটি গণমাধ্যমে ব্যাপক নজর কাড়ে। প্রসিকিউটররা বলেন, স্পিয়ার্সের উচ্চ পদমর্যাদা বিবেচনায় এটি জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ। তার আইনজীবী আদালতে অনুরোধ করেছিলেন, যেন দণ্ডের রেকর্ড না রাখা হয়, যাতে তার মক্কেল বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন।

তবে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অপরাধটি ‘অত্যন্ত গুরুতর’।

ম্যাজিস্ট্রেট ব্রায়ান নিটস্কি বলেন, ‘এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে নিন্দা ও সাধারণভাবে নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে দণ্ড রেকর্ড না করে উপেক্ষা করা যায় না।’

২০২২ সালে স্পিয়ার্স দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার লিবারেল নেতার দায়িত্ব নেন এবং ১০ বছর ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রায় ঘোষণার পর তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

সূত্র : বিবিসি

মন্তব্য

দ. কোরিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
দ. কোরিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন। ফাইল ছবি : এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রসিকিউটররা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, একটি এয়ারলাইনে জামাতার চাকরি লাভের ঘটনায় দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

চেওনজু জেলা প্রসিকিউটর অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এয়ারলাইনে জামাতার চাকরি নিশ্চিত করতে সহায়তার বিনিময়ে ২১৭ মিলিয়ন ওন (প্রায় দেড় লাখ মার্কিন ডলার) গ্রহণের ঘটনায় মুনকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’

এ মামলাটি দক্ষিণ কোরিয়ায় চলমান রাজনৈতিক নাটকের মাত্রা আরো বাড়াল, যেখানে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল মার্শাল ল জারি করায় পদচ্যুত হওয়ার পর ৩ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকা মুন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন।

তার সময়েই কিম জং উন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রসিকিউটরদের মতে, মুনের জামাতাকে কোনো রকম অভিজ্ঞতা বা প্রাসঙ্গিক যোগ্যতা ছাড়াই থাই ইস্টার জেট নামের একটি স্বল্পমূল্যের বিমান সংস্থায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রসিকিউটরদের ভাষ্য মতে, এই বিমান সংস্থাটি কার্যত মুনের দলীয় এক সাবেক এমপির নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্টের আনুকূল্য লাভের আশায় জামাতাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জামাতাকে প্রদান করা বেতন ও অন্য আর্থিক সুবিধাগুলো প্রসিকিউটরদের মতে ‘প্রকৃত বেতন নয়, বরং প্রেসিডেন্টকে প্রদত্ত ঘুষ হিসেবেই বিবেচিত’।

পরে মুনের মেয়ে ও জামাতার মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।

মুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দুজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এখন একই সঙ্গে আইনের মুখোমুখি হলেন। অন্যদিকে অপমানজনকভাবে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইউন বর্তমানে ৩ ডিসেম্বরের ছয় ঘণ্টার মার্শাল ল ঘোষণার ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিচারের মুখোমুখি। দোষী সাব্যস্ত হলে ইউনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা সর্বোচ্চ শাস্তি—মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।

তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯৯৭ সাল থেকে কার্যত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করায় এই দণ্ড কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

অস্ট্রেলিয়া কৌশলগত রিজার্ভে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মজুদ করবে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
অস্ট্রেলিয়া কৌশলগত রিজার্ভে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মজুদ করবে
প্রতীকী ছবি : এএফপি

অস্ট্রেলিয়া নতুন কৌশলগত রিজার্ভ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ মজুদ করবে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন। চীনের বাইরে দেশগুলো বিরল মৃত্তিকা ও লোভনীয় ধাতু সংগ্রহের জন্য লড়াই করছে। তাই ক্যানবেরা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

খনিজ পদার্থের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক পরিমাণে লিথিয়াম, নিকেল ও কোবাল্ট রয়েছে। এসব ধাতু স্মার্টফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যানবাহন পর্যন্ত সব কিছুতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু এই আশীর্বাদের বেশির ভাগই চীনের প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোর কাছে কাঁচা আকরিক হিসেবে বিক্রি করা হয়, যা প্রক্রিয়াজাতকৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বিশ্বব্যাপী সরবরাহের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

অ্যালবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়া এসব পণ্য মজুদ করা শুরু করবে এবং অন্য প্রধান অংশীদারদের কাছে বিক্রি করার জন্য চুক্তি করবে।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত সময়ে অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের কৌশলগত মূল্য সর্বাধিক করে তোলা নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির প্রয়োজন।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অস্ট্রেলিয়া যেগুলো সরবরাহ করতে পারে তা নিয়ে আমাদের আরো কিছু করতে হবে।’

রিজার্ভ চালু করার জন্য অস্ট্রেলিয়া প্রাথমিকভাবে ১.২ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার (৭৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ করবে।

অ্যালবানিজের সরকার ইতিপূর্বে জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া তার গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় দর-কষাকষির একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া লিথিয়াম থাকার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ও নিওডিয়ামিয়ামের মতো স্বল্প পরিচিত বিরল মাটির ধাতুর একটি শীর্ষস্থানীয় উৎস। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও জাপানের মতো প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলো চীন ছাড়া অন্য উৎস থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলো পেতে আগ্রহী। জাপানের নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মজুদ রয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ধাতু শোধনাগার ও অন্যান্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে।

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য
বিবিসির বিশ্লেষণ

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা বাড়ছে

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা বাড়ছে
২৪ এপ্রিল কাশ্মীরের শ্রীনগরের ডাল লেকের তীরে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর একজন সদস্য পাহারা দিচ্ছেন। ছবি : এএফপি

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবারের রক্তপাতের ঘটনাকে ২০১৯ সালের পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক জঙ্গি হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বন্দুকধারীদের ওই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা সেনা বা সেনা কর্মকর্তা নন। ভারতের অন্যতম মনোরম উপত্যকায় ছুটি কাটাতে আসা বেসামরিক নাগরিক ছিলেন তারা।

আর শুধু এই বিষয়টাই গোটা ঘটনাকে আরো নৃশংস ও প্রতীকী করে তুলেছে।

মঙ্গলবারের হামলা শুধু মানুষের জীবনের ওপরই নয়, বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলে কঠোর পরিশ্রম করে ফেরানো স্বাভাবিক অবস্থার ওপরও একটা পরিকল্পিত আক্রমণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করলেও তা তারা আংশিকভাবেই শাসন করে। কাশ্মীরের ভঙ্গুর ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে, সাম্প্রতিক আবহে ভারতের আসন্ন প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে ‘বল প্রয়োগের’ একটা সম্পর্ক থাকবে।

অন্তত বিশেষজ্ঞরা তাই মনে করেন।

পেহেলগামের ঘটনার জবাব দিতে নয়াদিল্লি দ্রুত বেশ কয়েকটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এই তালিকায় প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া, একটা গুরুত্বপূর্ণ জল বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্তও রয়েছে।

এদিকে আরো তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অপরাধীদের বিরুদ্ধেই নয়, ভারতের মাটিতে ‘ঘৃণ্য কাজের’ নেপথ্যে থাকা ‘মাস্টারমাইন্ডদের’ বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে প্রশ্ন এটা নয় যে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে কিনা। প্রশ্ন হলো সেটা কখন হবে, তার মাত্রা কী হবে এবং তার ফলে কী মূল্য দিতে হতে পারে।

সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা সম্ভবত একটা দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব, যা ঘরোয়া দর্শক ও পাকিস্তানে থাকা অভিনেতা—দুই পক্ষকেই একটা বার্তা দেবে। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর থেকে এই জাতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা হলো আন্তঃসীমান্ত হামলা বা বিমান হামলা।

‘কাজেই সরকারের পক্ষে এখন সেই মাত্রার নিচে কোনো কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অনুমান করা যায়, পাকিস্তানও আগের মতোই জবাব দেবে। এক্ষেত্রে বরাবরের মতোই যে ঝুঁকিটা থেকে যায় সেটা হলো, হিসাবে ভুল, যা উভয় পক্ষেরই হতে পারে।’

এই প্রসঙ্গে রাঘবন ২০১৬ ও ২০১৯ সালে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি বড় প্রতিক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করছেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উরি (জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় অবস্থিত) হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর কার্যত লাইন-অফ-কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছিল ভারত। সেই সময় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের লক্ষ্যবস্তু হলো পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি।

২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে অবস্থিত কথিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর সেবারই প্রথম পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এই জাতীয় হামলা চালায় ভারত। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানও বিমান হামলা চালিয়েছিল।

বিবাদ বাড়তে থাকে। এই সময় ভারতীয় একজন পাইলটকে কিছুদিনের জন্য আটক করা হয় পাকিস্তানে। তবে দুই পক্ষই নিজেদের শক্তি দেখালেও তারা পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়িয়ে গেছে।

দুই বছর পর ২০২১ সালে তারা নিয়ন্ত্রণ রেখায় ‘সিজ ফায়ার’ বা পরস্পরের সীমান্তে গুলি বন্ধ করতে সম্মত হয়। ভারতশাসিত কাশ্মীরে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা সত্ত্বেও কিন্তু এই শর্ত মূলত বহাল রয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সর্বশেষ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করার মতো ঘটনা এবং এতগুলো মানুষের মৃত্যু ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়ার জোরালো সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। নয়াদিল্লি যদিও পাকিস্তানের জড়িত থাকার মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে বা নিছকই ধরে নেয় যে তারা (পাকিস্তান) জড়িত—দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু এই সম্ভাবনা থাকে।’

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারতের জন্য এই জাতীয় প্রতিক্রিয়ার প্রধান সুবিধা হবে রাজনৈতিক দিক থেকে। কারণ জোরালো জবাব দেওয়ার জন্য তাদের ওপর ভারতীয় জনসাধারণের প্রবল চাপ থাকবে। আরেকটা সুবিধা হলো, যদি প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সফলভাবে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুকে নির্মূল করা সম্ভব হয়, তাহলে তা প্রতিরোধব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ভারতবিরোধী হুমকিকে হ্রাস—দুই-ই করতে পারে।’

‘আর অসুবিধা হলো, এটা একটা গুরুতর সংকট সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি সংঘাতের ঝুঁকিও।’

ভারতের কাছে বিকল্প কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানির ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি মনে করেন, কোনো গোপন অভিযান চালানো হলে, দায় অস্বীকার করার সুযোগ থেকে যায়। কিন্তু সেই পদক্ষেপ মানুষকে দেখানোর যে একটা রাজনৈতিক প্রয়োজন রয়েছে, সেটাকে মেটাতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে দুটো সম্ভাব্য পথ খোলা থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

প্রথমত, ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যে ‘সিজ ফায়ার’-এর জন্য দুই পক্ষ সম্মত হয়েছিল, তা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সীমান্তে আবার গুলি চালানোর জন্য সবুজ সংকেত দিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালের মতো বিমান হামলা বা এমনকি প্রচলিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও সম্ভাব্য পথ হিসেবে ভারতের সামনে খোলা আছে।

তবে তিনি জানিয়েছেন, এই জাতীয় প্রতিটা প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ কিন্তু পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বহন করে, যেমনটা এর আগেও দেখা গেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির গবেষক ক্ল্যারি বিবিসিকে বলেছেন, ‘কোনো পথই ঝুঁকিমুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে এবং সংকট ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে তারা ইচ্ছুক বা সক্ষম নাও হতে পারে।’ 

ভারত-পাকিস্তান সংকটের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, দুই পক্ষই পরমাণু শক্তিধর। এই সত্যিটা দুই দেশের পক্ষ থেকে নেওয়া প্রতিটা সিদ্ধান্তের ওপর দীর্ঘ প্রভাব ফেলে। সেটা শুধু সামরিক কৌশল তৈরির সময় নয়, বরং রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

রাঘবন বলেছেন, ‘পারমাণবিক হাতিয়ার একইসঙ্গে বিপজ্জনক ও নিয়ন্ত্রক (কাউকে বাধা দেওয়া বা নিয়ন্ত্রণে রাখার দিক থেকে)। এটা দুই পক্ষের নীতিনির্ধারকদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করে। যেকোনো প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে হতে হবে। পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিতে পারে এবং তারপর সেখান থেকে সরে এসে আবার অন্য পথ অনুসরণ করতে পারে।’

এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি ইসরায়েল ও ইরানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তার কথায়, ‘ইসরায়েল-ইরানসহ একাধিক ক্ষেত্রে আমরা এই একই ধারা লক্ষ্য করেছি। প্রথমে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং পরে তা প্রশমনের চেষ্টা। কিন্তু একটা ঝুঁকি সবসময়ই থাকে, সব কিছু চিত্রনাট্য অনুযায়ী নাও এগোতে পারে।’

কুগেলম্যান বলছেন, পুলওয়ামার ঘটনা থেকে নেওয়া একটা ‘শিক্ষা’ হলো, ‘প্রতিটা দেশ সীমিত মাত্রায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে’।

তার কথায়, ‘ভারতের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়ার রাজনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধাগুলোকে চিন্তা করতে হবে গুরুতর সংকট বা সংঘাতের ঝুঁকির মাথায় রেখে।’

যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হক্কানি মনে করেন, ২০১৬ সালের মতো সীমিত পরিসরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর বিষয়ে যদি ভারত বিবেচনা করে তাহলে এবার উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আনোয়ার গারগাশ ডিপ্লোম্যাটিক একাডেমি ও হাডসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো হুসেন হক্কানি বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সুবিধা হলো এগুলোর পরিধি সীমিত। তাই পাকিস্তানকে এর জবাব দিতে হয় না। কিন্তু ভারতের জনসাধারণ দেখানো যায় যে তারা (ভারত) জবাব দিতে একটা পদক্ষেপ নিয়েছে।’

‘তবে এই ধরনের হামলার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। এক্ষেত্রে তারা যুক্তি দিতে পারে। কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই তাদের (পাকিস্তানকে) দোষারোপ করা হচ্ছে।’

এখন বিষয়টা হলো ভারত যে পথই বাছুক এবং পাকিস্তান তার যে জবাবই দিক না কেন, প্রত্যেকটা পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

সাম্প্রতিক আবহে উত্তেজনা বৃদ্ধির হুমকি ঘনিয়ে আসছে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের ‘ভঙ্গুর শান্তি’ নাগালের আরো বাইরে চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতকে অবশ্যই নিরাপত্তার ব্যর্থতার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে, যার কারণে এই হামলা হয়েছে।

রাঘবন বলেছেন, ‘পর্যটন মৌসুম যখন শীর্ষে তখন এই জাতীয় হামলা চালানো হয়েছে। এটা একটা গুরুতর ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষ করে এমন একটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ