রাস্তায় শুধু নিরাপত্তা বাহিনী, সাঁযোয়া গাড়ি, দশগজ দূরে দূরে নিরাপত্তা কর্মী দাঁড়িয়ে। সামান্য জমায়েত দেখলেই পুলিশের গাড়ি সেখানে চলে আসছে।
পেহেলগামের অবস্থা দেখলে প্রথমে একটা কথাই মনে পড়বে, পুরো শহর স্তব্ধ। কোথাও কেউ নেই। হোটেল বন্ধ। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে শুধু ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। কোনো মানুষ নেই।
হোটেল মালিক মহম্মদ আলী বেগ জানালেন, ‘পেহেলগামের সব হোটেল আগামী তিনমাসের জন্য বুকড ছিল। সব বুকিং ক্যানসেল হয়ে গেছে। জানি না, কীভাবে আমাদের দিন চলবে। আমরা তো এই তিনমাসের আয়ে সারা বছর চালাতাম।’
একই চিন্তা রেস্তোরাঁ মালিক, ট্যাক্সিচালকদের। তারাও বলছেন, চিন্তা হচ্ছে, আয় বন্ধ হয়ে গেলে চালাব কী করে? ট্যাক্সিচালক ফারুখ বলছিলেন, ‘কিছু ভাবতে পারছি না। এটা আমাদের চিন্তার বাইরে ছিল। এই তিনমাসই তো আমাদের আয়। সবে সিজন শুরু হয়েছিল। আমাদেরও সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’
পেহেলগামের রেস্তোরাঁগুলো প্রচুর খাবার জিনিস, মশলার স্টক করে রেখেছিল। পুরো টাকাটাই জলে গেলো বলে তারা মনে করছেন। কীভাবে তারা ক্ষতিপূরণ করবেন, ঘুরে দাঁড়াবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
তারপরেও ট্যাক্সিচালকরা পর্যটকদের বলেছেন, ‘আপনারা মেহমান। এই সংকটের সময়ে আপনারা যেখানে বলবেন, ছেড়ে দেবো। একটা পয়সাও নেব না।’ পর্যটকদের জন্য তারা ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছেন। যেমন স্থানীয় মানুষরা পর্যটকদের জন্য লঙ্গর শুরু করেছিলেন।
আমরা একটা রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পর মালিক টাকা নিতে চাননি। বলেছেন, মেহমান আপনারা। টাকা লাগবে না। দুটো ছবি মেলাতে পারা যাচ্ছে না, যাবেও না। একদিকে বৈসরনে গত মঙ্গলবার অমানবিক, নৃশংস, বর্বরোচিত আক্রমণ, পর্যটকদের রক্তে ভেজা উপত্যকা অন্যদিকে স্থানীয় মানুষদের এত কষ্টের মধ্যেও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
শ্রীনগর থেকে পহেলগাম পর্যন্ত একজনও স্থানীয় মানুষ পাওয়া যায়নি, যারা এই ঘটনার নিন্দায় মুখর হননি, যিনি ক্ষুব্ধ নন। ডাল লেকের বোটচালক থেকে শুরু করে, সহিস, সাধারণ মানুষ সকলেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।
মহম্মদ আলি বেগ বলছিলেন, ‘কয়েকজন সন্ত্রাসবাদী শুধু পর্যটকদের আক্রমণ করেনি, আমাদের ওপরও হামলা করেছে, আমাদের পেটে লাথি মেরেছে, আমাদের রুটি-রুজি বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে।’
ফারুখ বলছিলেন, ‘আমরাও চাই, দোষীদের কড়া শাস্তি হোক। নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হোক। এটা শুধু পর্যটক নয়, কাশ্মীরিদের জন্যও জরুরি। বিশ্বাস করুন , আমরা চাই এরকম ঘটনা যেন আর না হয়। আবার পর্যটকে ভরে যাক পেহেলগাম। আমাদের ঠিকভাবে বেঁচে থাকার জন্যও এটা জরুরি।’
সাধারণ মানুষের এই ভাবনার কথা পেহেলগামে পা না রাখলে, তাদের সঙ্গে কথা না বললে বুঝতে পারতাম না, বোঝা সম্ভব ছিল না।