গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। হামাসের কাছে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের প্রতিনিধিরা। হামাস এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে এবং যত দ্রুত সম্ভব সাড়া দেবে বলে জানিয়েছেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মুখপাত্র সামি আবু জুহরি। তবে হামাসকে নিরস্ত্র করার অনুরোধ শুনতে রাজি নয় গোষ্ঠীটি।
গত সোমবার হামাস বলেছে, গাজায় আটক জিম্মিদের অর্ধেকের মুক্তির বিনিময়ে ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল।
হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গাজা যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণের দাবি তুলেছে ইসরায়েল। কিন্তু এটি শেষ সীমা লঙ্ঘন করেছে। প্রস্তাবিত চুক্তির আওতায় প্রথম সপ্তাহে অর্ধেক জিম্মি মুক্তি, অন্তত ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রস্তাবে যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের শর্ত হিসেবে হামাস ও গাজা উপত্যকার সব ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
হামাস নেতারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছেন জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘হামাস ও প্রতিরোধ বাহিনীর অস্ত্র হস্তান্তর এমন একটি সীমারেখা, যা নিয়ে আলোচনা তো দূরের কথা, শুনতেও রাজি নয় হামাস।’
হামাসের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামাসের আলোচকরা কাতারে যাচ্ছেন, যেখানে গোষ্ঠীটির দপ্তর রয়েছে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে প্রধান মধ্যস্থতাকারী আলোচনা হয়েছে। হামাসের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
তিনি আরো বলেন, ‘হামাস মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে যে তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ত্রাণ প্রবেশ অন্তর্ভুক্ত যেকোনো প্রস্তাবে সম্মত হতে ইচ্ছুক।’
দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর গত মার্চে পুনরায় গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। গত ২ মার্চ থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ আটকে দিয়েছে ইসরায়েল। এ সময়ের মধ্যে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। চিকিৎসা সরঞ্জাম, জ্বালানি, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফুরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলি অবরোধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামাস বলেছে, টানা সাত সপ্তাহ ধরে গাজায় খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।
গাজায় আরোপিত অন্যায্য অবরোধের ইতি টানায় সাহায্য করতে জাতিসংঘ, আরব ও মুসলিম দেশ এবং বিশ্বের প্রতি আহবান জানিয়েছে হামাস।
এদিকে গাজায় আরো ১৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে। আর যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ১৮ মার্চ থেকে এক হাজার ৬৩০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর মধ্যেই হামাসের এক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, গত রবিবার রাতে গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকায় মোহাম্মদ আল-আজলাহ নামের ওই হামাস কমান্ডারকে হত্যা করা হয়। গত সপ্তাহে নিহত হামাসের শুজাইয়া ব্যাটালিয়নের কমান্ডার হাইথাম রিজক আবদ আল-করিম শেখ খলিলের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন আল-আজলাহ।
অন্যদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের সময় বলেছেন, গাজার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ অবশ্যই শেষ হতে হবে এবং গাজায় শুধু যুদ্ধবিরতিই বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে পারে।
জবাবে নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সন্ত্রাসবাদের জন্য একটি বিশাল পুরস্কার হবে।
মালদ্বীপে ইসরায়েলিরা নিষিদ্ধ : ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে গতকাল মালদ্বীপের বিলাসবহুল দ্বীপপুঞ্জে ইসরায়েলিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। গতকাল পার্লামেন্টে আইনটি অনুমোদন পাওয়ার পরপর তা অনুমোদন করেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু।
তাঁর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের অব্যাহত নৃশংসতা এবং গণহত্যার প্রতি সরকারের দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন এই অনুমোদন। ফিলিস্তিনিদের প্রতি দৃঢ় সংহতি পুনর্ব্যক্ত করছে মালদ্বীপ।
মুইজ্জুর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
যুদ্ধের ইতি চান ৩৫০ ইসরায়েলি বিশিষ্টজন : গাজা যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দেশটির ৩৫০ জন লেখক, কবি ও সম্পাদক। এ জন্য তাঁরা একটি চিঠিতে গণস্বাক্ষর করেছেন।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ফায়দার জন্য সংঘাত বাড়ানোর অভিযোগ তুলে তাঁরা বলেছেন, যুদ্ধের সমাপ্তির অর্থ হবে তাঁর শাসনের অবসান। সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা