<p>বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচিকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। তাঁরা মনে করেন, এ কর্মসূচিতে দেশের মানুষের সাড়া মিলবে না। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকার হতাশা থেকে এমন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা কালের কণ্ঠকে এমন অভিমত জানিয়েছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার মতে, এ দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতি ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। ফলে বিএনপি ও তাদের বিদেশি মিত্ররা এ দেশে অগণতান্ত্রিক বা অসাংবিধানিক কোনো সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে না। ফলে তারা ক্ষোভ ও হতাশা থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের কর্মসূচি দিয়েছে। এমন কর্মসূচি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ ভারত এ দেশের পরীক্ষিত বন্ধু এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা ভারতীয় পণ্য এ দেশের মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।</p> <p>রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। গত বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর জনসমক্ষে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।  </p> <p>এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য কে চাদর পোড়াল তা নিয়ে জনগণের আগ্রহ থাকার কথা নয়। আমরা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ ধরনের সস্তা রাজনীতির পথকে বর্জনীয় মনে করি। এখন তারা চাদর পোড়াচ্ছে, অথচ যখন ভারত থেকে পেঁয়াজ, চাল, ডাল নিয়ে আসি তখন তো কেউ কিছু বলে না। যারা রাজনৈতিক কারণে এখন এসব করছে সেই রিজভী সাহেবরাই তো তাদের চিকিত্সার প্রয়োজন হলে সবার আগে দৌড়ে ভারত যান।’</p> <p>কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমাদের তিনদিকে ভারত, একদিকে সমুদ্র। পৃথিবীতে কোনো দেশ তার প্রতিবেশী ইচ্ছামতো নিতে পারে না। ভারত একটি বড় দেশ। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত যে ভূমিকা রেখেছে তা আমরা ভুলতে পারি না। এ বিষয়টিকে তো মনে রাখতে হবে।’</p> <p>আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ভারতবিরোধী রাজনীতি বিএনপির নতুন নয়। তবে কয়েক বছর ধরে তারা কিছুটা রাখডাক রেখে ভারত বিরোধিতা করে আসছিল। কিন্তু বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে তারা খুবই হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে কৌশলী অবস্থান থেকে সরে প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতায় নেমেছেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপির নেতারা।</p> <p>আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মকাণ্ড আগেও এমন ছিল। বরাবরই তারা একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। এটা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। ভারত বিরোধিতার নামে তারা এখন যে সস্তা রাজনৈতিক ইস্যু সৃষ্টির চেষ্টা করছে তা মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’</p> <p>আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এ দেশে ভারতবিরোধী একটি চক্র ক্ষমতা দখল করে। সেনা শাসক জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতবিরোধী আন্তর্জাতিক মহলের পৃষ্ঠপোষকতায়। ফলে জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপি ভারতবিরোধী আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সময়ের সুসম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ভারত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে এ দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মহলের একটি অংশ প্রশ্ন তুললেও ভারত এটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতারা ভারতকে চাপে ফেলতে চাইছে। উদ্দেশ্য হলো ভারত যেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত থাকে।</p> <p>সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ভারত পাশে ছিল বলেই নির্বাচনে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র অশুভ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতবিরোধী মনোভাব কেন জাগ্রত করার চেষ্টা করা হচ্ছে? যারা নির্বাচনে আসেনি এটি তাদের অপপ্রচারের একটি ঢাল। তারা আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ভারতবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত হয়।</p> <p>বিএনপি নেতাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব কর্মসূচি পুরোপুরি হঠকারিতা। এটা রাজনৈতিক স্টান্টবাজি। বিএনপি বরাবরই এটা করে এসেছে। এসব সস্তা রাজনীতি করতে গিয়েই বিএনপি বারবার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা তাদের বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে গিয়ে জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মানুষের স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এখনো তারা সেই পথেই আছে।</p> <p>‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা নিয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কয়েকটি প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘হঠাত্ করে বিএনপির এমন কর্মসূচির উদ্দেশ্য কী? এই বিশ্বায়নের যুগে তারা কিভাবে আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রকে বর্জন করবে? তারা কি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়?’</p> <p>আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই কর্মসূচি একান্তই বিএনপির নিজের। এর সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নেই। এটি মাঠ গরম করার জন্য একটি ইস্যুর অবতারণা মাত্র। আজকের বিশ্ব বাস্তবতায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখলে উভয় রাষ্ট্র ও জনগণ লাভবান হয়। বৈরিতা উভয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দেশপ্রেমহীন ক্ষমতালিপ্সু বিএনপি জনগণের কল্যাণে আন্দোলন করে না, ক্ষমতা লাভের জন্য আন্দোলন করে। তাদের এই আন্দোলনে দেশের জনগণ লাভবান হবে না, বরং অন্য রাষ্ট্রের পণ্য বর্জনের প্রচেষ্টা দ্রব্যমূল্যের ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে। তবে তা বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবেলা করা হবে।’</p> <p> </p>