দেশের খাদ্য মজুদ এখন সীমিত। এ কারণে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে এ জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড এই গম সরবরাহ করতে সুপারিশ করেছে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।
প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়বে ৩০১.৩৮ মার্কিন ডলার। হিসাব অনুযায়ী ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানিতে ১৮০ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির পরবর্তী সভায় এমন একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সাত লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দেশে গমের মজুদ বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে খাদ্য অধিদপ্তর গত ৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করে। এতে ৯টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও মাত্র তিন প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। অন্য দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুবাইভিত্তিক মেসার্স এমসি ফুড ডিএমসিসি প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ৩০৩.২০ মার্কিন ডলার হিসাবে দ্বিতীয় এবং মেসার্স সিরিয়াল ক্রপস ট্রেডিং এলএলসি প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ৩০৬.৭৫ মার্কিন ডলার দর প্রস্তাবে তৃতীয় হয়।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে গত তিন বছরের গম সংগ্রহের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন এবং বিদেশ থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করে সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছর বিদেশ থেকে সাত লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করে সরকার এবং বেসরকারি খাতে ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার টন গম আমদানি হয়। গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ গম আমদানি করা হয়।
অন্যদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে গমের মোট চাহিদা আট লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চলতি অর্থবছর সাত লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো গম আমদানি করা হয়নি।
চলতি অর্থবছরে প্যাকেজ-১-এর আওতায় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩০১.৩৮ মার্কিন ডলার (প্রতি কেজি ৩৬.১৬৫৬ টাকা) হিসাবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ ৬৯ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ডলারের বিনিময় হার প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে ১৮০ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা (সিডি, ভ্যাট ছাড়া) প্রয়োজন হবে। সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম সরবরাহ করবে।
দেশের গমের চাহিদার বড় অংশ মিটছে আমদানিতে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই প্রতিবছর গড়ে ৫০ লাখ টন গম আমদানি হয়। বর্তমানে দেশে সরকারি পর্যায়ে গমের মজুদ রয়েছে সাড়ে চার লাখ টন। এই মজুদ আরো বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য চলতি অর্থবছরে গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।