মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন তা বিশ্বব্যাপী মন্দার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার ব্যাপারে তাঁর উদাসীনতা বৈশ্বিক অর্থবাজারের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করছে। আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, কারণ গত কয়েক দশকের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছে গেছে। এতে চলমান উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিরতার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে শঙ্কা আরো বেড়েছে।
সম্প্রতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও একই ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকট আরো বেড়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারের অস্থিরতা পর্যবেক্ষণ করে এসব কথা বলেছে আইএমএফ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জ এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর সূচকের পতন হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। মার্কিন সরকারি বন্ড বিক্রির হারও প্রথাবিরুদ্ধভাবে বেড়ে গেছে। বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক বসানোর পর বৈশ্বিক ইক্যুইটির বাজার নিম্নমুখী ছিল।
সাময়িকভাবে নীতিমালা শিথিল করলেও ভালো ফল আসেনি। এ বিষয়ে আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, বিস্তৃত পরিসরে শেয়ার ও বন্ডের বাজারে অনিশ্চয়তা ভর করায় ব্যাংক, হেজ ফান্ড, প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম ও পেনশন ফান্ড আরো বড় ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।
বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া চক্র তৈরি হয়েছে। এর কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে ভরসা পাচ্ছেন না। বিনিয়োগকৃত অর্থও তুলে নিচ্ছেন।
শেয়ারবাজার ও বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার ওপর প্রভাবের ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিতে আইএমএফ তাদের প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তৈরি হওয়া ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ করেছে। বিশেষভাবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সৃষ্ট যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধকে গুরুত্ব দিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথাও উল্লেখ করেছে তারা।
ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প তাঁর বাণিজ্যনীতির ব্যাপারে আরো আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন। গত এক শতাব্দীর মধ্যে শুল্ক বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বিশ্বে শীর্ষ দুই অর্থনীতি একে অন্যের ওপর শুল্ক আরোপ করায় আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। আইএমএফ আরো জানিয়েছে, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো বিস্তৃত, ধারাবাহিক ও স্থায়ী হলে বাজারে আরো দুরবস্থার সৃষ্টি হবে। বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থাও বড় ঝুঁকিতে পড়বে। এক বিবৃতিতে আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ২ এপ্রিল ট্রাম্পের ঘোষিত ‘স্বাধীনতা দিবস’ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে তাৎক্ষণিকভাবে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। আকস্মিকভাবে নীতি পরিবর্তন করার ফলে বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগে ভুগছেন। এটি প্রতিক্রিয়া চক্র তৈরি করতে ভূমিকা রাখতে পারে। সম্পদের মূল্য কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো কমে যাবে। এতে বাজারের ওপর নিম্নমুখী চাপ বাড়বে।
শুল্ক যত বেশি সময় ধরে বহাল থাকবে বাজারে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা তত বাড়বে। শুল্কের কারণে এখনই আর্থিক বিপর্যয় আসবে না। তবে বড় দেশগুলোর জন্য এটি মন্দার সূত্রপাত ঘটাবে।
সূত্র : দি টেলিগ্রাফ