আলেমদের জীবন ও কর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই!

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
শেয়ার
আলেমদের জীবন ও কর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই!

ইসলাম ও মুসলমান এ দেশে একটি সাহসী উচ্চারণ। সাহাবি, পীর-দরবেশের দাওয়াতি মেহনতে এ অঞ্চলের মানুষ উন্নত গুণমানের মুসলমান। ইতিহাসের ক্রমধারায় আমাদের আলেমসমাজের অবস্থান অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। অথচ আমাদের দেশে আলেম-উলামার ভাগ্যে জোটেনি জাতীয় পদক ও পুরস্কার! স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার বা অন্যান্য জাতীয় পুরস্কার বা পদক থেকে চিরবঞ্চিত আমাদের আলেমসমাজ।

এখানে কয়েকজন দেশবরেণ্য আলেমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো

 

মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)

বঙ্গবন্ধুর আধ্যাত্মিক দাদা ছিলেন মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)। সময় পেলেই বঙ্গবন্ধু ফরিদপুরী (রহ.) হুজুরকে দেখতে লালবাগে যেতেন। হুজুরের সমসাময়িক অনেক আলেমকে তিনি দাদাজি বলে সম্বোধন করতেন। তাঁদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর।

মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) একজন ইসলামী চিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। তিনি ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় নেতা।

মাওলানা ফরিদপুরী (রহ.)-এর পূর্বপুরুষরা ৩০০ বছর আগে আরব থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য বাংলাদেশে আগমন করেন। তিনি ১৩০২ বঙ্গাব্দের ২ ফাল্গুন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়নের ঘোপেরডাঙ্গা (গওহরডাঙ্গা) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

মাওলানা ফরিদপুরী (রহ.) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আলিয়া মাদরাসার অ্যাংলো পার্সিয়ান (ইংলিশ মিডিয়াম) বিভাগ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।

পরবর্তী সময়ে তিনি হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সান্নিধ্যে আসেন। দেশে ফিরেই মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) হাদিস শিক্ষার বিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি ১৯৩০ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়ায় হাদিসের পাঠ দান করেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৫০ সালে  ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটরায় এবং ১৯৫১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লালবাগ জামিয়া কোরআনিয়ায় প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) একজন উচ্চমাপের লেখক। বিখ্যাত ‘বেহেশতি জেওর’সহ অসংখ্য ধর্মীয় পুস্তক তিনি অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন।

 

মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগী (রহ.)

মহান স্বাধীনতার পক্ষে লড়াকু সৈনিক মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগী (রহ.)। তিনি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মাইজবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ ডিগ্রি জামাত-ই-উলা পরীক্ষায় মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগী (রহ.) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অংশগ্রহণ করে ৯৮ শতাংশ নম্বরসহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতের বিভিন্ন বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দর্শন, বিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭১ সালে শামসুল হুদা পাঁচবাগী (রহ.) সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেন।

 

মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ্ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)

হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ। তাঁর সুফিবাদী রাজনীতির মূল দর্শন ও স্লোগান তওবার রাজনীতি। অর্থাৎ সব ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং সংশোধিত হয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ফিরে আসা।

মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ১৮৯৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার লুধুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হিফজুল কোরআনে পারদর্শিতা ও খিদমতের কারণে তিনি ‘হাফেজ্জী হুজুর’ নামে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ ঘরানার অন্যতম যুগশ্রেষ্ঠ আলেম।

ভারতে উচ্চশিক্ষা লাভের পর তিনি মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ও আব্দুল ওয়াহাব পীরজি হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে মিলিতভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদরাসা স্থাপনের তৎপরতায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। কথিত আছে, হাজার হাজার হাফেজি ও কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় হাফেজ্জী হুজুরের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল।

 

 

শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.)

শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। হাদিসশাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁকে ‘শায়খুল হাদিস’ উপাধি দেওয়া হয়।

আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) ১৯৪৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে যান। সেখানে শিক্ষালাভের পর তিনি তাঁর প্রিয় শিক্ষক মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরীর পরামর্শে দেশে ফিরে আসেন এবং অধ্যাপনায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর কর্মজীবন (১৯৪৬-১৯৫২) শুরু হয় বড় কাটরা মাদরাসায়। ১৯৫২ সালে তিনি লালবাগ মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ইসলামী আইন, হাদিস, তাফসিরসহ বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক পাঠ দান করেন।

আশির দশকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে বুখারি শরিফের পাঠ দান করেন। ১৯৮৮ সালে আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদের কাছে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া গড়ে তোলেন। আমৃত্যু তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও শায়খুল হাদিস হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) ১৯৫২ সাল থেকে দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রচেষ্টায় সর্বপ্রথম ব্যাখ্যাসহ বুখারি শরিফের পূর্ণাঙ্গ বঙ্গানুবাদ সুসম্পন্ন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে আছে : মুসলিম শরিফ ও অন্যান্য হাদিসের ছয় কিতাব (বিষয়ভিত্তিক হাদিস গ্রন্থ), জালাল উদ্দীন রুমির ‘মসনবি’র বঙ্গানুবাদ, পুঁজিবাদ সমাজবাদ ও ইসলাম, মাসনুন দোয়ার সংকলন ‘মুনাজাতে মকবুল’, ‘সত্যের পথে সংগ্রাম’ ইত্যাদি।

হাদিসশাস্ত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১২ সালের ৮ আগস্ট ঢাকার আজিমপুরের নিজ বাসভবনে ৯৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

 

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ও মাসিক ‘মদিনা’ পরস্পরযুক্ত অভিধা। ২০১৬ সালের ২৫ জুন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন মাসিক ‘মদিনা’র সম্পাদক। তিনি ১৯৩৫ সালের ১১ এপ্রিল বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার ছয়চির গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আনসারনগর।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পাঁচবাগ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসায়। সেখান থেকেই তিনি ১৯৫১ সালে আলেম এবং ১৯৫৩ সালে শিক্ষাবৃত্তিসহ ফাজিল পাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা থেকে ১৯৫৫ সালে হাদিসশাস্ত্রে এবং ১৯৫৬ সালে ফিকহশাস্ত্রে কামিল পাস করেন।

কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চায় ঝুঁকে পড়েন। তিনি ১৯৬০ সালে মাসিক ‘দিশারী’, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ‘নয়া জামানা’ সম্পাদনা করেন। একসময় তাঁর সম্পাদিত ‘আজ’ সাহিত্যিকমহলে দারুণ সাড়া জাগিয়েছিল। ১৯৬১ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি মাসিক ‘মদিনা’ সম্পাদনা করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা শেখ লুৎফর রহমানের প্রিয় পত্রিকা মাসিক ‘মদিনা’, তিনি মাসিক ‘মদিনা’র নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন। মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে লেখা শেখ লুৎফর রহমানের চিঠি এখনো মাসিক ‘মদিনা’ অফিসে সংরক্ষিত আছে।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ১৯৮৮ সালে সৌদি আরবভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা রাবেতায়ে আলম আল ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ বিশ্বের সর্বত্র বাংলাভাষী পাঠক হৃদয়ে নন্দিত লেখকের সম্মান অর্জন করেন।

অনন্য প্রতিভার অধিকারী মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্য ও সম্পাদনার পথিকৃৎ। তিনি অন্তত ১০৫টি গ্রন্থ অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন। মাতৃভাষায় কোরআন শিক্ষাকে তিনি সহজতর করেছেন এবং বাঙালি মননে কোরআনপ্রীতি ও নবীপ্রেম জাগিয়ে তুলেছিলেন।

মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে কোরআন, হাদিস, সিরাত, ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ নানা বিষয়ক অন্তত ৬০০ মানসম্মত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)-এর তাফসিরে মা’রিফুল কোরআন (৮ খণ্ড) অনুবাদ করেন। এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হয়।

 

পরিশেষে

আমি এই লেখা দীর্ঘায়িত না করে আরো কয়েকজন বরেণ্য আলেমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাঁরা হলেন : শামসুল ওলামা অধ্যক্ষ আবু নসর ওয়াহিদ, মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব পীরজি হুজুর, মাওলানা আব্দুর রহমান কাশগড়ি, মাওলানা সৈয়দ আমিমুল ইহসান, মুফতি দ্বীন মুহাম্মদ খাঁ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কোরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী মাওলানা উবায়দুল্লাহ্ বিন সাইদ জালালাবাদী, মাওলানা আব্দুুল্লাহ্ বিন সাইদ জালালাবাদী, কারি মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক ওবায়দী, অধ্যাপক আব্দুল গফুর প্রমুখ। এই বরেণ্য ব্যক্তিদের জাতীয় পদক ও পুরস্কারে ভূষিত করলে জাতির গর্ব ও সম্মান বাড়বে।

 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

prof.ershad92@gmail.com

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৫৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত করে, যা তাদেরকে উপকার করতে পারে না এবং তাদের অপকারও করতে পারে না, কাফির তো স্বীয় প্রতিপালকের বিরোধী। আমি তোমাকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি। বলো, আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো প্রতিদান চাই না, তবে যে ইচ্ছা করে সে তার প্রতিপালকের দিকের পথ অবলম্বন করুক। তুমি নির্ভর করো তাঁর ওপর, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি মরবেন না এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো...।

’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৫৫-৫৮)

আয়াতগুলোতে দ্বিনি কাজের প্রতিদান ও তাওয়াক্কুলের আলোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১.  আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মুমিনের জন্য উপকার লাভের মতো ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষা করা আবশ্যক।

২.  মানুষের সুপথপ্রাপ্তিতে দ্বিনের পথে আহ্বানকারী এত খুশি হয়, যেন এটাই তার আত্মত্যাগের প্রতিদান।

৩.  তাওয়াক্কুল হলো দ্বিধাহীন আস্থার সঙ্গে নিজের সব বিষয় আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করা।

৪.  তাওয়াক্কুলের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামদ ও তাসবিহ পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়ছে। এতে ইঙ্গিত মেলে জিকির আল্লাহর প্রতি বান্দার আস্থা দৃঢ় করে।

৫.  আস্থা ও ভরসার প্রকৃত স্থল কেবল আল্লাহ তাআলা, কেননা তিনি ছাড়া অন্য সব কিছু ধ্বংসশীল ও দুর্বল এবং তাঁর করুণার মুখাপেক্ষী।

  (আত-তাহরির ওয়াত-তানভির : ১৯/৫৬)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

যে দোয়ায় অগণিত গুনাহ মাফ হয়

শেয়ার
যে দোয়ায় অগণিত গুনাহ মাফ হয়

উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ সুমহান, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ মুক্তির কোনো পথ নেই, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ইবাদতের কোনো শক্তি নেই।

সূত্র : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যে ব্যক্তি বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ তার অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির মতো (বেশি পরিমাণ) হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬০)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মনীষীর কথা

শেয়ার
মনীষীর কথা

এমন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কোরো, যে ক্ষুব্ধ হলেও তোমার দুর্নাম বলে না।

সুফিয়ান সাওরি (রহ.)

 

 

মন্তব্য

যে কারণে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ

সাআদ তাশফিন
সাআদ তাশফিন
শেয়ার
যে কারণে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ

সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধএটি উম্মতের দায়িত্ব। এই দায়িত্বের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে।

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

সাধ্যমতো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যেকোনো অন্যায়কারীকে দমনে সে যেন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে, যদি তা করতে না পারে তবে সে যেন মুখ দিয়ে প্রতিহত করে। যদি সে মুখ দিয়েও না পারে তাহলে যেন অন্তর দিয়ে ঘৃণা পোষণ করে; আর এটাই দুর্বল ঈমানের পরিচয়। (বুখারি)

সময়মতো যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে এর ফল গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়।

তাই সমাজে কোনো অন্যায়-অনাচার দেখা দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করা আবশ্যক।

কিন্তু আমাদের সমাজে এখন আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে অনেকে আগ্রহ দেখায় না। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হাজারো অন্যায়কে ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে চলে। অন্যায়ের প্রতিবাদকে তারা অযথা ঝামেলায় জড়ানোই মনে করে।

এতে মানুষ নিজেদের অজান্তেই গোটা জাতির ওপর আরো বড় বিপদ ডেকে আনে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষ যখন কোনো অত্যাচারীকে দেখেও অন্যায় থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শিগগিরই আল্লাহ তাদের সবার ওপর ব্যাপক আজাব নাজিল করবেন। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, যখন অপরাধী বারবার অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারে তোমরা অটল থেকো, আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীরূপে যদিও নিজেদের প্রতিকূলে যায় অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের, সে ধনী বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের জন্য উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে নিজ নিজ খেয়ালখুশির (পক্ষপাতিত্বের) বশীভূত হয়ো না। (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১৩৫)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আত্মীয়তা, ধন-সম্পদ কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এগুলোও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে প্রলুব্ধ করে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ