<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ও বিজ্ঞানী আবু নসর মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আল ফারাবি। যাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিকদের অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়। কারো কারো কাছে তিনি মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। আল-কিন্দির দার্শনিক ধারা বজায় রেখে তিনি মুসলিম দর্শনকে আরো সুষ্ঠু ও পূর্ণরূপ দান করেন। আল-কিন্দির দর্শনের দুর্বোধ্য বিষয়গুলোকে তিনি বোধগম্য করে প্রকাশ করেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি অ্যারিস্টটলের দর্শনের ব্যাখ্যা ও তাঁর যুক্তিবিদ্যাকে অতি সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করেন। প্লেটোর দর্শনকেও তিনি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে মুসলিম দর্শনকে সমৃদ্ধ করেন। পদার্থবিদ্যা, অধিবিদ্যা, রাষ্ট্র ও সমাজ দর্শনে তাঁর অবদান ও প্রগাঢ় জ্ঞান মুসলিম দর্শনকে নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শৈশব থেকে শিক্ষার প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল প্রবল। তিনি শৈশবেই ধর্মীয় ও ভাষাতত্ত্বে ব্যাপক শিক্ষালাভ করেন। কোরআন-হাদিস, ইসলামী আইনে ব্যাপক পাণ্ডিত্য লাভ করেন। এ ছাড়া আরবি, তুর্কি ও ফারসি ভাষাতেও পারদর্শিতা লাভ করেন। ইবনে মাল্লিকানের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি সত্তরটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। কেউ কেউ দাবি করেন যে তিনি গ্রিক ভাষাও আয়ত্ত করেন। কিন্তু কেউ কেউ আবার এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁর শিক্ষাজীবনকালে তিনি তাঁর অবস্থানস্থলে প্রাপ্ত যৌক্তিক জ্ঞান আহরণে কখনো দ্বিধা করেননি। গভীর জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ তাঁকে বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল-ফারাবি দর্শনচর্চায় সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করার পূর্বে বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন করেন। ইবনে খাল্লিকানের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি যথাক্রমে অ্যারিস্টটলের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডি এনিমা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থটি দুই শতবার এবং পদার্থবিষয়ক গ্রন্থটি চল্লিশবার অধ্যয়ন করেন। অধ্যয়নের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও প্রচেষ্টার আরো অনেক বিবরণ জানা যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁর সময় বিশ্বে শিক্ষার অনন্য কেন্দ্র ছিল বাগদাদ নগরী। তাই জ্ঞান অর্জনের টানে তিনি বাগদাদ গমন করেন এবং সেখানে দীর্ঘদিন জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত থাকেন। বাগদাদে গমন করার পর সেখানে অনেক দার্শনিক ও অনুবাদকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের মধ্যে ইবনে মাত্তা, কুয়াইরি এবং ইয়্যুহান্না বিন হাইলাস অত্যন্ত খ্যাতিমান যুক্তিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁদের অবস্থানের কারণেই খুব সম্ভবত বাগদাদ এ সময় যুক্তিবিদ্যার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরবর্তী সময়ে খুব সম্ভবত রাজনৈতিক গোলযোগের কারণেই তিনি বাগদাদ ত্যাগ করেন। জানা যায়, বাগদাদে অবস্থানকালে তিনি অঙ্কশাস্ত্রে শিক্ষালাভ করেন। তিনি মিউজিকের ওপরও দু-একটি পুস্তক রচনা করেন। বাগদাদ থেকে তিনি আলেন্নো গমন করেন। এ সময় আলেন্নো জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল। আল-ফারাবি হামাদাসি রাজকুমার সাইফ-আদ-দৌলার সঙ্গে পরিচিত হন। জানা যায়, রাজকুমার দৌলা আল-ফারাবিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। বিদ্যানুরাগী এই রাজকুমারের দরবারে এ সময় বহু কবি, ভাষাতত্ত্ববিদ, দার্শনিক এবং আরো অনেক পণ্ডিত সমবেত হতেন। এই দরবারে আল-ফারাবি একজন স্কলার এবং সত্য অনুসন্ধানী হিসেবে অবস্থান করতেন। রাজদরবারের জাকজমকপূর্ণ জীবন ও খ্যাতি তাঁর চরিত্রের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তিনি বরং এখানে একজন সুফির জীবন যাপন করতেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি এতটাই সাধাসিধে জীবনযাপন করতেন যে তাঁর ব্যাপারে জানা যায়, সরকারি কোষাগার থেকে তাঁকে যে ভাতা দেওয়া হতো তা থেকে তিনি প্রতিদিনের জন্য মাত্র চার দিরহাম গ্রহণ করতেন। তিনি প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ও শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মে বিমুগ্ধ থাকতেন। এ সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। আল-ফারাবি জীবনের এ পর্যায়ে কিছু ছোটখাটো ভ্রমণ ছাড়া তেমন ব্যাপকভাবে আর কোথাও ভ্রমণ করেননি। ইবনে আবি উসাইবিয়াহর মতে, আল-ফারাবি মিসর সফর করেন তাঁর জীবনের শেষদিকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ সময় মিসর ও সিরিয়ার মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। আল-ফারাবি এরপর ৩৩১ হিজরি মোতাবেক ৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ৮১ বছর বয়সে দামেস্কে ইন্তেকাল করেন। আমির সাইফ-উদ-দৌলার দরবারে তিনি এমন সম্মানিত ও খ্যাতিমান ব্যক্তি ছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর পর স্বয়ং আমির সাইফ তাঁর লোকজনসহ আল-ফারাবির দাফন-কাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে উমাইয়া কবরগাহে খলিফা মাবিয়ার পাশে সমাহিত করা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্যঋণ : বিজ্ঞানে মুসলমানের দান, পৃ: ১২৫, দর্শন-৫; মুসলিম দর্শন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ: ১৫৩</span></span></span></span></p> <p> </p>
