<p>বিভিন্ন ধরনের ফিতনা-ফ্যাসাদ কিয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অন্ধকার রাতের মতো ফিতনা আসার আগে তোমরা নেক আমলের দিকে ধাবিত হও। (কেননা এমন একসময় আসবে) যে সময় সকালে একজন মুমিন হলে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বিন বিক্রি করে দেবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৯৫)</p> <p>অন্য হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে অন্ধকার রাতের টুকরার মতো চরম ফিতনা আসতে থাকবে। ওই সময় সকালবেলা যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে এবং সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে সকালবেলা কাফির হয়ে যাবে। এ সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দণ্ডায়মান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে, দণ্ডায়মান ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে এবং চলমান ব্যক্তি দ্রুত ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। এ সময় তোমরা তোমাদের ধনুক ভেঙে ফেল, ধনুকের ছিলা কেটে ফেল এবং তোমাদের তরবারিগুলো পাথরের ওপর আঘাত করে ভেঙে ফেল। তোমাদের কারো ঘরে বিপর্যয় ঢুকে পড়লে সে যেন আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের মধ্যে উত্তম জনের (হাবিল) মতো হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৫১)</p> <p>একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) চাদর মুড়ি দিয়ে লোকদের সামনে বের হয়ে বললেন, ‘হে লোক সকল! অন্ধকার রাতের টুকরার মতো ফিতনা তোমাদের আচ্ছাদিত করবে। হে লোক সকল! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে অধিকহারে কাঁদতে ও অল্প হাসতে।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২৪৫৬৪)</p> <p>সেই সময়ে নীরবে-নিভৃতে থাকা ব্যক্তিই শুধু ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘অন্ধকার রাতের টুকরার মতো ফিতনা তোমাদের আচ্ছাদিত করবে। লোকদের মধ্যে উঁচু পাহাড়ে আরোহণকারীই শুধু সেই ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে। যে তার ছাগলের দুধ পান করে দিনাতিপাত করবে। অথবা এমন লোক রক্ষা পাবে যে তার ঘোড়ার লাগাম ধরে সর্বদা রাস্তায় প্রস্তুত থাকবে। তার তরবারি, যা উপার্জন করে দেবে তা থেকে সে খাবে।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ১০৩৫)</p> <p>সমাজ, রাষ্ট্র ও সর্বত্র বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়া কিয়ামতের অন্যতম আলামত। ফিতনা শুরু হবে সব দেশে। এমনকি মরুভূমিতেও ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। হুজায়ফা (রা.) বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের ওপর আকাশ থেকে অনিষ্টতা নাজিল করা হবে, যা নির্জন ভূমিতেও পৌঁছবে। তিনি বলেন, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আবু আব্দিল্লাহ! ফায়াফি কী? তিনি বলেন, মরুভূমি।’ (মুসনাদ ইবনু আবি শায়বা, হাদিস : ৩৮৫৫৪)</p> <p>অর্থাৎ মরুভূমিতে ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। অবশ্য এই ফিতনার সময় যারা ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য মহাপুরস্কার রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এরপরই সবরের সময়। আর সে সময় সবর করা এরূপ, যেন জ্বলন্ত আগুন হাতে রাখা। সে সময় যে ব্যক্তি নেক আমল করবে, সে ৫০ জনের সমান সওয়াব পাবে। তখন একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের ৫০ জনের নেকির অনুরূপ নেকি সে পাবে? তিনি বলেন, ‘তোমাদের মতো ৫০ জনের সওয়াবের অনুরূপ সওয়াব সে পাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৪১)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের যাবতীয় ফিতনা থেকে হেফাজত করুন।</p>