ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

বুলগেরিয়ায় মুসলিম শাসনের স্মৃতি

রোজি আসলান
রোজি আসলান
শেয়ার
বুলগেরিয়ায় মুসলিম শাসনের স্মৃতি

কিসেলচোভ বুলগেরিয়ার রোডোপ অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এই গ্রামে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে মিনারহীন একটি ছোট্ট মসজিদ। ছোট্ট মসজিদটি মুসলিম শাসনের সাক্ষী। বর্তমানে বুলগেরিয়া বললে কোনোভাবেই ইসলাম, মুসলমান ও মসজিদের কথা মনে আসে না, অথচ দেশটি ৫০০ বছর মুসলমানের শাসনাধীন ছিল।

বর্তমানে বুলগেরিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান।

মূলত আমি বুলগেরিয়ায় গিয়েছিলাম গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। ইস্তাম্বুল থেকে গ্রিক সীমান্তবর্তী রোডোপ এলাকায় যাই। সেখানে আমি তিন সপ্তাহ অবস্থান করি।

দিনের বেলা লেখালেখি করতাম এবং প্রতিদিন বিকেলে পাহাড়ি পথ ধরে ঘুরে বেড়াতাম। আমি পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনাগুলো দেখে রোমাঞ্চিত হতাম। একসময় এখানে মানুষের কোলাহল ছিল, কিন্তু এখন সেগুলো পরিত্যক্ত। আগাছা গ্রামের পথ, বাগান ও ভবনগুলোর দখল নিয়েছে।
সূর্যাস্তের আগে নদীর তীরে বসে থাকতাম। সেখানে ধ্যান করতাম, দিনলিপি লিখতাম এবং রাতের আঁধারকে স্বাগত জানাতাম।

আমার অবস্থানের জায়গা থেকে কিসেলচোভ গ্রামটি বেশ দূরের। এবড়োখেবড়ো পথ ধরেই সেখানে যেতে হয়। একসময় পথটি পাকা ছিল।

এখন তা গর্ত ও আবর্জনায় পরিপূর্ণ। একসময় গ্রামে তিন শতাধিক বাসিন্দা ছিল। তারা ছিল পোমাক মুসলিম। এখন সেখানে মাত্র সাতজন ব্যক্তি সারা বছর বসবাস করে এবং তাদের সবাই বৃদ্ধ। গ্রামের অনেকেই আগে ইউরেনিয়াম খনিতে কাজ করত। এখন পেনশনের টাকায় তারা জীবিকা নির্বাহ করে। কমিউনিস্ট আমলে গ্রামের স্কুলসহ একাধিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্রামের বহু মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।

বুলগেরিয়ার জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি মুসলিম। রোডোপ মুসলিম অধ্যুষিত একটি অঞ্চল। শত শত বছর ধরে এখানে তুর্কি ও পোমাক মুসলিমরা বসবাস করে আসছে। ধারণা করা হয়, বুলগেরিয়ায় মুসলমানের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় অষ্টম ও নবম শতকে। তবে ইসলামের প্রসার ঘটে এই অঞ্চল উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনাধীন হওয়ার পর। পোমাক হলো বুলগেরীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম আদিবাসী। উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর পোমাকরা বলকান অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বুলগেরিয়ায় মাত্র দেড় থেকে দুই লাখ পোমাক বাস করে। তারা পোমাক ও বুলগেরিয়ান ভাষায় কথা বলে। পোমাক জনগোষ্ঠী বুলগেরিয়ান সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমি স্মোলিয়ান শহরের চারপাশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে ভ্রমণ করেছি। প্রতিটি গ্রামের মধ্যভাগে একটি মসজিদ আছে, যা ইসলামের সঙ্গে পোমাক সম্প্রদায়ের গভীর সংযোগকে প্রতিভাত করে।

তুর্কি শাসনামলে মুসলিম ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করত। তখন স্থানীয় জনগণ তুর্কি ইসলামী সংস্কৃতিকে আপন করে নেয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রিত বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট শাসকরা দেশটি থেকে ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতির শিকড় তুলে ফেলতে চেয়েছিল। তারা বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এবং মানুষকে ইসলামী বিশ্বাস ও সংস্কৃতি ত্যাগে বাধ্য করে। তার পরও বহু মানুষ সাংস্কৃতিক বিবেচনায় মুসলিম রয়ে গেছে। কমিউনিস্ট শাসন অবসানের পর অনেকেই প্রকাশ্যে ইসলামচর্চা শুরু করে।

আমি যে অঞ্চল ভ্রমণ করেছি তার বেশির ভাগ অধিবাসী মুসলিম। তবে ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। কমিউনিস্ট শাসকদের ইসলামবিরোধী কার্যক্রমের কারণে বুলগেরিয়ার মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি সেখানে বহু মসজিদ দেখেছি, যাতে কোনো মুসল্লি নেই। কিছু মসজিদে শুধু জুমার নামাজ হয়। শুধু একটি গ্রামে আমি আজান শুনতে পেয়েছি। যদিও বুলগেরিয়ার মুসলিমরা খুব বেশি ধর্মপরায়ণ নয়, তবু তারা রমজান ও ঈদসহ অন্যান্য ইসলামী দিবস উদযাপন করে।

কিসেলচোভের যে মসজিদের কথা আমি প্রথমে বলেছি সেটা সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক কোকারা আমাকে জানিয়েছেন, মসজিদটি ৩০০ বছরের পুরনো। তাঁর দাদা এই মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন ছিলেন। প্রাচীন এই মসজিদের সঙ্গে তাঁর ও স্থানীয় মুসলমানের আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে। কোকারার বয়স ৭৯ বছর। এই বয়সেও তিনি মসজিদটি সংস্কার করতে শত শত ঘণ্টা কাজ করেছেন এবং বহু অর্থ ব্যয় করেছেন। মসজিদের ছাদ ধসে পড়েছিল, তিনি তা ঠিক করেছেন। মসজিদটি এখন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। কোকারা মসজিদটি রক্ষা করতে চান বুলগেরীয় মুসলমানের সোনালি দিনের স্মারক হিসেবে এবং তাঁর দাদার স্মৃতি হিসেবে। তিনি আশা করেন, এর বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাতে তাঁকে ঘর দান করবেন।

 

সিক্রেড ফুটস্টেপস থেকে আবরার আবদুল্লাহর ছায়ানুবাদ

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৫৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত করে, যা তাদেরকে উপকার করতে পারে না এবং তাদের অপকারও করতে পারে না, কাফির তো স্বীয় প্রতিপালকের বিরোধী। আমি তোমাকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি। বলো, আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো প্রতিদান চাই না, তবে যে ইচ্ছা করে সে তার প্রতিপালকের দিকের পথ অবলম্বন করুক। তুমি নির্ভর করো তাঁর ওপর, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি মরবেন না এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো...।

’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৫৫-৫৮)

আয়াতগুলোতে দ্বিনি কাজের প্রতিদান ও তাওয়াক্কুলের আলোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১.  আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মুমিনের জন্য উপকার লাভের মতো ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষা করা আবশ্যক।

২.  মানুষের সুপথপ্রাপ্তিতে দ্বিনের পথে আহ্বানকারী এত খুশি হয়, যেন এটাই তার আত্মত্যাগের প্রতিদান।

৩.  তাওয়াক্কুল হলো দ্বিধাহীন আস্থার সঙ্গে নিজের সব বিষয় আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করা।

৪.  তাওয়াক্কুলের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামদ ও তাসবিহ পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়ছে। এতে ইঙ্গিত মেলে জিকির আল্লাহর প্রতি বান্দার আস্থা দৃঢ় করে।

৫.  আস্থা ও ভরসার প্রকৃত স্থল কেবল আল্লাহ তাআলা, কেননা তিনি ছাড়া অন্য সব কিছু ধ্বংসশীল ও দুর্বল এবং তাঁর করুণার মুখাপেক্ষী।

  (আত-তাহরির ওয়াত-তানভির : ১৯/৫৬)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

যে দোয়ায় অগণিত গুনাহ মাফ হয়

শেয়ার
যে দোয়ায় অগণিত গুনাহ মাফ হয়

উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ সুমহান, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ মুক্তির কোনো পথ নেই, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ইবাদতের কোনো শক্তি নেই।

সূত্র : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যে ব্যক্তি বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ তার অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির মতো (বেশি পরিমাণ) হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬০)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মনীষীর কথা

শেয়ার
মনীষীর কথা

এমন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কোরো, যে ক্ষুব্ধ হলেও তোমার দুর্নাম বলে না।

সুফিয়ান সাওরি (রহ.)

 

 

মন্তব্য

যে কারণে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ

সাআদ তাশফিন
সাআদ তাশফিন
শেয়ার
যে কারণে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ

সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধএটি উম্মতের দায়িত্ব। এই দায়িত্বের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে।

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

সাধ্যমতো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যেকোনো অন্যায়কারীকে দমনে সে যেন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে, যদি তা করতে না পারে তবে সে যেন মুখ দিয়ে প্রতিহত করে। যদি সে মুখ দিয়েও না পারে তাহলে যেন অন্তর দিয়ে ঘৃণা পোষণ করে; আর এটাই দুর্বল ঈমানের পরিচয়। (বুখারি)

সময়মতো যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে এর ফল গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়।

তাই সমাজে কোনো অন্যায়-অনাচার দেখা দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করা আবশ্যক।

কিন্তু আমাদের সমাজে এখন আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে অনেকে আগ্রহ দেখায় না। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হাজারো অন্যায়কে ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে চলে। অন্যায়ের প্রতিবাদকে তারা অযথা ঝামেলায় জড়ানোই মনে করে।

এতে মানুষ নিজেদের অজান্তেই গোটা জাতির ওপর আরো বড় বিপদ ডেকে আনে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষ যখন কোনো অত্যাচারীকে দেখেও অন্যায় থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শিগগিরই আল্লাহ তাদের সবার ওপর ব্যাপক আজাব নাজিল করবেন। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, যখন অপরাধী বারবার অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারে তোমরা অটল থেকো, আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীরূপে যদিও নিজেদের প্রতিকূলে যায় অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের, সে ধনী বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের জন্য উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে নিজ নিজ খেয়ালখুশির (পক্ষপাতিত্বের) বশীভূত হয়ো না। (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১৩৫)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আত্মীয়তা, ধন-সম্পদ কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এগুলোও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে প্রলুব্ধ করে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ