<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত এই দুই জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হলেও আগামীকাল থেকে উন্নতি হতে পারে। তবে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপত্সীমা অতিক্রম করে উত্তরের দুই জেলা লালমনিরহাট ও নীলফামারীর নিম্নাঞ্চলে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা ও মনু-খোয়াই ছাড়া অন্য প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে পাউবো। ফলে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। তবে আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। ফলে এ সময়ের পর (বুধবার থেকে) চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাউবো জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা, সোমেশ্বরী ও পুরাতন সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমার সুনামগঞ্জ স্টেশনে পানি বিপত্সীমার ১৬ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরীর কলমাকান্দা স্টেশনে ৩৫ সেন্টিমিটার ও পুরাতন সুরমার দিরাই স্টেশনে পানি বিপত্সীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজানে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি দ্রুত বাড়তে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মঙ্গলবার (আজ) থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে আসবে। ফলে মঙ্গলবার বা বুধবার থেকে পানি কমতে শুরু করবে। পানি নামতে হয়তো আরো দু-এক দিন সময় লাগবে। এ ছাড়া তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে আজ (গতকাল) রাতে বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা থাকলেও পরিস্থিতি আবার দ্রুত উন্নতির দিকে যাবে বলে আমরা আশা করছি।’ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। আগামী দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে শুক্রবার থেকে পরের পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে, ২৪১ মিলিমিটার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যার শঙ্কা : চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। পার্থ প্রতীম বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর বা শেষ ভাগে এই বন্যা দেখা দিতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নেত্রকোনায় পানি বাড়ছে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনার নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, গতকাল সকালে কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি আরো বেড়ে বিপত্সীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট এবং বেশ কিছু বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কলমাকান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন জানান, উপজেলার ১৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বাহাদুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়খাপন, বাউসারী, পোগলা, ভাটিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৩৫টির মাঠে পানি ঢুকেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলার পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো মোজাম্মেল হক জানান, স্থানীয় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ইউনিয়নের কালাকোনা, জীবনপুর, গোয়াতলা, কৈলাটি, মঙ্গলসিধসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী বলেন, উপজেলার কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, মন্তলা-ইসবপুর সড়কসহ কাঁচা-পাকা ১০-১৫টি রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, কলমাকান্দার পোগলা ও বড়খাপন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকছে। কিছু গ্রামীণ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কোনো বাড়িঘরে পানি ঢোকেনি। বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, আশ্রয়কেন্দ্র খোলাসহ সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রাখা আছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিপত্সীমার কাছাকাছি তিস্তার পানি : নীলফামারীতে গতকাল তিস্তা নদীর পানি বিপত্সীমার কাছাকাছি ওঠানামা করছিল। পাউবো জানায়, গতকাল সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপত্সীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টায় পানি বেড়ে বিপত্সীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুপুর ১২টায় বিপত্সীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে এবং বিকেল ৩টায় আরো কমে বিপত্সীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি কখনো বাড়ছে কখনো কমছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবকটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রাখা হয়েছে।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘তিস্তার পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে পানি কিছুটা কমলেও এসব এলাকা থেকে পানি নামতে সময় লাগছে।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুনামগঞ্জে এখনো বিপত্সীমার ওপরে : সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত কমায় এবং উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। সোমবার বিকেলে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যায় বিপত্সীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাউবো জানিয়েছে, এক-দুই দিনের মধ্যে মেঘালয়ে ঢল ও বর্ষণের আশঙ্কা নেই। তাই পানি কমবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুনাগমঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শামসুদ্দোহা বলেন, ‘সুনামগঞ্জে পানি কিছু বাড়লেও এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক। (গতকাল) বিকেলে নদীর পানি কমেছে। বৃষ্টিপাতও কম ছিল। তা ছাড়া মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমাদের পানি বাড়ার শঙ্কা নেই।’ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে গত রবিবার সুনামগঞ্জ শহরসহ যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছিল সেসব এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। এই পানি নিম্নাঞ্চলে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ শহরের নদীর তীরে, সড়কের ধারে খালের তীরে, হাওরের তীরে নিচু জায়গায় ভাসমান বসবাসকারী অন্তত ৫০টি পরিবার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অব্যাহত বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের নলজুর নদীর বিকল্প সেতু পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকে সেতুটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে লাখো মানুষ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হবিগঞ্জে নদী, হাওরের পানি বাড়ছে : হবিগঞ্জের কুশিয়ারা ও কালনী-কুশিয়ারা নদীসহ হাওরে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দেশের ভেতরে বৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি বাড়ছে। তবে খোয়াই নদীর পানি কমেছে। হবিগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ এ তথ্য জানান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]</span></span></span></span></p>