<p>চৈত্রের শেষ সপ্তাহ চলছে। দেশজুড়ে বইছে দাবদাহ। আবহাওয়া অফিস বলছে, এপ্রিল মাসে আরো কয়েকটি তাপপ্রবাহ হতে পারে। সূর্যের প্রখর তাপের জেরে দেশজুড়ে বায়ু ও পানি বাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে শিশু ও বয়স্কদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জরুরি।</p> <p><img alt="গরমে বাড়ছে বায়ু-পানিবাহিত রোগ" height="262" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/04.April/08-04-2024/567.jpg" style="float:left" width="342" />ঢাকার শিশু হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার সরেজমিনে গিয়ে রোগীর প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী বা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগই সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া, খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত।</p> <p>বহির্বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকরা বলছেন, তাপমাত্রা যে হারে বেড়েছে সে অনুপাতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। তবে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী কিছুটা বেড়েছে। বেশির ভাগ অসুস্থ মানুষ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিত্সকরা বলছেন, বয়স্ক মানুষ অথবা যারা দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগছে, তারাই কেবল হাসপাতালে আসছে চিকিত্সার জন্য।</p> <p>ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন) ডা. শাইখ আবদুল্লাহ গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, মেডিসিনের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জনে রোগী আসে। এখন সেটা ২০০ ছুঁই ছুঁই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে। কারণ তাপদাহ দীর্ঘ হলে বায়ু ও পানি বাহিত রোগবালাই স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।</p> <p>ডা. আবদুল্লাহ বলেন, দাবদাহের এই সময়ে মাথা চক্কর দেওয়া, বিবমিষা বা বমি বমি ভাব, নিস্তেজ হয়ে পড়া, মূর্ছা যাওয়া, বিভ্রান্ত হয়ে পড়া, পেশি সংকুচিত হওয়া, মাথা ব্যথা, প্রচণ্ড ঘাম হওয়া, ক্লান্তি—এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া তীব্র রোদে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই এখন তীব্র রোদের মধ্যে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা এ সমস্যায় বেশি ভুগে থাকে।</p> <p>ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে আসা পুরান ঢাকা নয়াবাজারের আনোয়ার হোসেন জানান, দুই দিন ধরে জ্বর ছিল। ওষুধ খেয়েও কমছে না। হাসপাতালে আসার পর ডেঙ্গু ও সিবিসি পরীক্ষা করতে দিয়েছে। সঙ্গে কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছে।</p> <p>আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাসায় আমার ছেলে ও স্ত্রী দুজনের ডায়রিয়া ও জ্বর। আমার পাশের বাসার পরিচিত একজনের একই অবস্থা।’</p> <p>বেশি গরমের সময় বাইরে গেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তার একটি হচ্ছে হিট স্ট্রোক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কিছু বেশি। এটি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এ সমস্যায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।</p> <p>মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের বিভিন্ন ধরনের অসুখ, সর্দি-কাশি, জ্বর হচ্ছে। এর সঙ্গে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও যুক্ত হয়েছে। যারা দীর্ঘ সময় রোদে থাকে তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া বয়স্ক এবং ডায়াবেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগে আক্রান্তদের ঝুঁকিও খুব কম নয়।</p> <p>অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, প্রচণ্ড গরমে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। শরীরে পানির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে লবণমিশ্রিত পানি, বিশেষ করে স্যালাইন খেলে ভালো হয়। বেশি গরমের সময় ব্যায়াম বা ভারী শারীরিক পরিশ্রম এড়ানো ভালো। আর যাঁদের কায়িক পরিশ্রম করতেই হয় তাঁরা যেন কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নেন। তবে বেশি গরমে বাইরে বের না হওয়াই ভালো। যদি কাজের প্রয়োজনে বাইরে বের হতেই হয়, তাহলে আরামদায়ক কাপড় পরে ও ছাতা নিয়ে বের হতে হবে। এ ছাড়া গরমে শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে।</p> <p>ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আগের মতোই আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, শীতকালের তুলনায় গরমকালে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। তবে এখনো সে অর্থে রোগীর সংখ্যা বাড়েনি।</p> <p>ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত কয়েক দিনের গরমে ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা-জ্বর, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে শিশু রোগীর চাপ বহির্বিভাগে বেড়েছে। তবে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। বহির্বিভাগে গড়ে এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসার জন্য আসে। গরমের সময় এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। যেহেতু গরম পড়তে শুরু করেছে, সেহেতু সামনে রোগীর চাপ অনেক বাড়বে।</p> <p>অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গরমের এ সময়ে শিশুদের স্বাস্থ্যের নানা জটিলতা দেখা দেয়। দেখা যায় গরমে ঘেমে নিউমোনিয়া হয়ে যাচ্ছে। অনেক শিশুর ডায়রিয়া হয়। পানিবাহিত আরো নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময়ে শিশুর যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। রোদে বের হতে দেওয়া যাবে না।</p> <p>ডা. জাহাঙ্গীর আলম শিশুদের বেশি করে ফলের শরবত, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, গ্লুকোজ এবং পুষ্টিকর রসালো ফল খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। এতে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বের হওয়া পানির চাহিদা পূরণ হবে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর বা পচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না|</p>