ফি আর কোটায় এখনো ফ্যাসিস্ট

শরীফুল আলম সুমন
শরীফুল আলম সুমন
শেয়ার
ফি আর কোটায় এখনো ফ্যাসিস্ট

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে (সম্মান) আবেদন ফি ও কোটার ক্ষেত্রে এখনো ফ্যাসিস্ট আচরণ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ফান্ডে হাজার কোটি টাকার বেশি থাকার পরও ভর্তি আবেদনে তারা উচ্চমূল্য নির্ধারণ করেছে। এমনকি আগামী শিক্ষাবর্ষের ভর্তিতেও আগের মতো মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটা বহাল রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে আবেদন শুরু হয়েছে, যা ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে এবং প্রাথমিক আবেদন ফি বাবদ ৭০০ টাকা জমা দিতে হবে। এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন) পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৩ মে অনুষ্ঠিত হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আবেদন ফি আগের বছর ৭০০ টাকা থাকলেও সরকারের পটপরিবর্তনের পর ৪৭তম বিসিএস থেকে তা কমিয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। এই আবেদন ফির মধ্যে এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, একাধিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু এমসিকিউ টাইপের ১০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য আবেদন ফি ৭০০ টাকা নির্ধারণ করেছে।

সূত্র জানায়, গত শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ (গ্রেড এভারেজ পয়েন্ট)-এর ভিত্তিতে ভর্তি করেছিল।

এ জন্য আবেদন ফি নিয়েছিল ২৫০ টাকা। এবার থেকে তারা ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে স্নাতকে (সম্মান) আড়াই লাখ আসনের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করেন। এবারও যদি একই সংখ্যক শিক্ষার্থী আবেদন করেন, তাহলে আবেদন ফি থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ কোটি টাকা আয় হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শিক্ষার্থী প্রতি ৭০০ টাকা করে আবেদন ফি নেওয়া হলেও এখান থেকে আবেদনকৃত কলেজকে দেওয়া হবে ১৫০ টাকা।

আর কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা বা পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রকে ১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। তার পরও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থাকবে শিক্ষার্থীপ্রতি ৪৫০ টাকা করে। সেই হিসাবেও প্রায় ২৯ কোটি টাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থাকবে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন প্রণয়ন ও মেশিনে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) শিট দেখাসহ অন্যান্য কাজে ব্যয়ের পরও কোনোভাবেই এক-তৃতীয়াংশের বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়। 

জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার কাজটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর আবেদনের পেছনে নানা ধরনের কাজ করতে হয়। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে ভর্তি ফি নির্ধারণ করেছি। এখান থেকে কলেজগুলোর জন্য একটা অংশ ও কেন্দ্রের জন্য আরেকটা অংশ রাখতে হয়। এর পরও যদি শিক্ষার্থীদের দাবি থাকে, তাহলে আমরা ভর্তি ফির ব্যাপারটি আবার ভেবে দেখব।

নাম প্রকাশ না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ভর্তিচ্ছু একজন শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তো ব্যবসা করা নয়। ভর্তির আবেদন থেকে কোটি কোটি টাকা তাদের ফান্ডে রাখতে হবে। আবার কলেজগুলোও যাতে কথা না বলে, এ জন্য তাদেরও ভাগ দেবে। কলেজগুলোর ভর্তি আবেদনে কোনো কাজ নেই। তারা তো ভর্তি ফি বাবদই টাকা নেয়। তাহলে তাদের কেন টাকা দিতে হবে? আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে কেন টাকা জমাতে হবে?

ওই শিক্ষার্থী বলেন, বিসিএসের আবেদন ফি যদি ২০০ টাকা হয়, তাহলে ভর্তির আবেদন ফি ১০০ টাকা হওয়া উচিত। আমাদের দাবি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন ফি কমিয়ে দ্রুত নতুন সার্কুলার জারি করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ফি কমানোর দাবি তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুুল্লাহ। গত ১৪ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, শিক্ষা সবার অধিকার, বাণিজ্যের পণ্য নয়! হাজার টাকার আবেদন ফি, যাতায়াত ও থাকার খরচ- বর্তমান ভর্তি প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এক ভয়ানক আর্থিক চাপ। প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ঝুলছে টাকার অঙ্কে।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বহাল থাকছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পোষ্য কোটা। ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে কোটা নিয়ে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা ভিন্নভাবে সক্ষম ও পোষ্য কোটায় ভর্তি হতে ইচ্ছুক আবেদনকারীকে তথ্য ছকের নির্দিষ্ট স্থানে তার জন্য প্রযোজ্য কোটা সিলেক্ট করতে হবে। পোষ্য কোটায় শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তান বা সন্তানাদি আবেদন করতে পারবে। কোটার জন্য সংরক্ষিত আসন বিষয়ভিত্তিক বরাদ্দকৃত আসনের অতিরিক্ত হিসাবে বিবেচিত হবে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পোষ্য কোটা রাখলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই সম্প্রতি তা বাদ দিয়েছে।

এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেছি। এখানে শুধু সন্তানরাই সুযোগ পাবে, নাতি-নাতনিরা পাবে না। আর পোষ্য কোটা যেটা রাখা হয়েছে, তা মূল আসনের বাইরে। অর্থাৎ নির্ধারিত আসন থেকে কোনো পোষ্য কোটা দেওয়া হবে না।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ

দুই দশকে অপসারিত হলেন দুই বিচারপতি

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
দুই দশকে অপসারিত হলেন দুই বিচারপতি

অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে বিচারক পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গত মঙ্গলবার তাঁকে অপসারণ করেন। পরে বুধবার আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ৬ দফা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি খিজির হায়াতকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের পদ থেকে অপসারণ করেছেন।

২০১৮ সালের ৩১ মে খিজির হায়াতকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০২০ সালের ৩০ মে তিনি স্থায়ী নিয়োগ পেয়েছিলেন। গত বছরের ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে হাইকোর্টের যে বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন, সেই বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক ছিলেন খিজির হায়াত। কোটা পুনর্বহালের পূর্ণাঙ্গ রায়টি তিনি লিখেছিলেন।

এই রায়ের পরই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নিলে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।

খিজির হায়াতের অপসারণের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুয়াজ্জেম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের ভিত্তিতেই অপসারণ করা হয়েছে। আরো ছয় বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে হাইকোর্টের সদ্য সাবেক বিচারপতি খিজির হায়াতকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

দুই দশকে দুই বিচারপতির অপসারণ : নিকট অতীতে দুজন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ৯ জন বিচারপতি পদত্যাগ করলেও গত দুই দশকে অপসারণের ঘটনা এটি দ্বিতীয়। ২০০৩ সালের অক্টোবরে আইনজীবীদের এক সমাবেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তত্কালীন সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন। শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে জামিন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসের অভিযোগ ছিল। পরে এই অভিযোগ তদন্ত করেন তত্কালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

তদন্ত শেষে কাউন্সিল শাহিদুর রহমানকে অপসারণের সুপারিশ করে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রতিবেদন দেয়।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্বাপর : সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত ও অপসারণসংক্রান্ত সাংবিধানিক ফোরাম হচ্ছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ষোড়শ সংশোধনী এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধান থেকে বাদ দেয়। ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদকে। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় সংশোধনীর গেজেট। পরে সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবীর রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৭ সালের ৮ মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়, চলে ১১ দিন। শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ৩ জুলাই রায় দেন আপিল বিভাগ। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট আপিল বিভাগের ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ পেলে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করে। এরপর বিভিন্ন সময় এই আবেদন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এলেও রাষ্ট্রপক্ষ ও রিটকারী পক্ষের আবেদনে শুনানি পিছিয়ে যায়।

 

মন্তব্য

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

শেয়ার
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
রাজধানীতে গতকাল সকাল থেকে ছিল মেঘলা আকাশ। দুপুরের দিকে কোথাও কোথাও ঝরেছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তোপখানা রোড থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য

গাজীপুরে চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ, বন্ধ তিনটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
শেয়ার
গাজীপুরে চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ, বন্ধ তিনটি
বেতন-বোনাসের দাবিতে গতকাল গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।

গাজীপুরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন চার কারখানার শ্রমিকরা। এর মধ্যে মহানগরীর কোনাবাড়ীর জরুন এলাকার তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ কারখানাগুলো হলো স্বাধীন গার্মেন্টস, স্বাধীন ডায়িং ও স্বাধীন প্রিন্টিং। সকালে শ্রমিকরা কারখানার গেটে এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে মূল ফটকের সামনেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

অন্যদিকে ঈদের ছুটি বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল হোতাপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সদর উপজেলার ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানার শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, কয়েক দিন ধরেই বার্ষিক ছুটির ভাতা, ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতনের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান না দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। তবে কারখানায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা কিছুদিন ধরে কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান না করে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুর সদরের হোতাপাড়া এলাকায় সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মনিপুর এলাকার ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানার শ্রমিকরা। দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটি ১০ দিন ঘোষণা করেছে ইউটা কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকরা ১০ দিনের পরিবর্তে ১২ দিন ছুটির দাবি জানান।

৫ কর্মকর্তাকে মারধর, আটক ৪ : বেতনবৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ঈদ বোনাস ও ঈদের ছুটি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর শহীদ রওশন সড়ক এলাকার শফি প্রসেসিং গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছেন। এ সময় তাঁরা কারখানার জিএমসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারধর করেন।

এ ঘটনায় এক নারীসহ চার শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।

 

মন্তব্য
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপে দেবপ্রিয়

সরকার যা বলে বাস্তবতার সঙ্গে তার ফারাক থাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকার যা বলে বাস্তবতার সঙ্গে তার ফারাক থাকে

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্দেশে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমরা সাম্প্রতিক দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকার যে কথা বলে, তার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য রয়ে যায়। এই পার্থক্যটার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, যে মানুষগুলো গণতন্ত্রের অভাবের সময় বিপন্ন ছিল, সেই বিপন্নতা এখনো দূর হলো না।

বৃহস্পতিবার নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দপ্তর, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫ : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি শীর্ষক একটি সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই সংলাপে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার বদল হওয়া আর শাসকের পরিবর্তন হওয়া এক বিষয় নয়। একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখন কেউ কেউ নৈতিক খবরদারির দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁরা সংখ্যায় বড় না, কিন্তু তাঁদের কণ্ঠস্বর অনেক বড়।

তাঁদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সংস্কারের বিষয়ে হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের বিষয়ে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পরিতাপের ব্যাপার হলো যতগুলো কমিশন গঠন হয়েছে সেখানে পার্বত্য, বা সমতলের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন? তার মধ্যে নারী প্রতিনিধি ঠিকমতো হয়েছেন। সবচেয়ে সুবোধ সরকারও তা করতে পারছে না।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বা একনায়কতন্ত্রের কারণে আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। অর্থের সমস্যা হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেককে হেনস্তার শিকার করা হয়েছে এবং কথা বলা যখন খুবই দুর্যোগ ছিল, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একা না পারি সবাই মিলে করব।

সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় অভ্যুত্থানে আমরা বৈষম্যবিরোধী কথা বলি।

কিন্তু আমরা কি আসলেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলি? কোনো বৈষম্যের কথা বলি, আবার কোনো বৈষম্যের কথা চেপে যাই।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি হুমা খান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে আরো কৌশলী হতে হবে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আসলে কারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, আজকের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব চ্যালেঞ্জ ও ঘাটতির কথা উঠে এসেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা সাজাবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি  স্টেফান লিলার বক্তব্য দেন।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ