সারা দেশে চলতি বছর প্রথম দুই মাসে ৫১১ জন খুন হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯ জন করে খুন হয়। গত বছর একই সময় খুন হয়েছিল ৪৭১ জন। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানা গেছে।
সারা দেশে চলতি বছর প্রথম দুই মাসে ৫১১ জন খুন হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯ জন করে খুন হয়। গত বছর একই সময় খুন হয়েছিল ৪৭১ জন। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানা গেছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা ও প্রতিহিংসা বেড়েছে। আইনের কঠোর প্রয়োগ না হওয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় মানুষ খুনের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাঁদের সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, নিহতদের মধ্যে শিশু, নারীসহ সব বয়সী মানুষ রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা ব্যবহার করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৫১১ জন খুন হয়েছে।
তবে পুলিশ সদর দপ্তরের মাসিক অপরাধ প্রতিবেদনে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘরে ৩০০ জন খুন হওয়ার তথ্য রয়েছে। জানুয়ারিতে খুন হয়েছে ২৯৪ জন। গত দুই মাসে ৫৯৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটে দেশে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের (এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, ৫৯৪টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মামলা সূত্রে আগের ৮৩টি হত্যাকাণ্ড যোগ হয়েছে। এই ৮৩টি হত্যাকাণ্ড বাদ দিলে দুই মাসে হত্যার মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১১।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি বছর প্রথম দুই মাসে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি, ১৪২ জন খুন হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৬ জন। এতে এই দুই মাসে প্রতিদিন গড়ে দুজনের বেশি খুন হয়েছে।
চট্টগ্রামে গত দুই মাসে খুন হয়েছে ১০১ জন; জানুয়ারিতে ৫১ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ৫০ জন। সিলেটে খুন হয় ৩৪ জন; জানুয়ারিতে ২১ জন এবং ফ্রেব্রুয়ারিতে ১৩ জন। খুলনায় খুন হয় ৫০ জন; জানুয়ারিতে ২৮ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন। রাজশাহীতে খুন হয় ৫২ জন; জানুয়ারিতে ৩০ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন। রংপুরে খুন হয় ৪২ জন; জানুয়ারিতে ১৯ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৩ জন। ময়মনসিংহে খুন হয়েছে ৩২ জন; জানুয়ারিতে ১৩ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৯ জন। বরিশালে খুন হয়েছে ২৮ জন; জানুয়ারিতে ১২ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৬ জন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দেশে ৭৪৩ জন খুন হয়। এর মধ্যে নভেম্বরে ২১১ জন, অক্টোবরে ২৪৯ জন এবং সেপ্টেম্বরে ২৮৩ জন।
হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের (এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নানা কারণে হত্যার ঘটনা বেড়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
সাম্প্রতিক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড : ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে গাড়িচালক রবিনের সঙ্গে পরিচয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর। দেড় মাসের পরিচয়ের সূত্রে সাক্ষাতের জন্য তাকে গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালী এলাকায় ডেকে নেন রবিন। সেখান থেকে হাজারীবাগে বন্ধুর ভাড়া করা বাসায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে পাঁচজন মিলে ধর্ষণের পর মেয়েটিকে হত্যা করা হয়। ১৭ দিন পর হাতিরঝিল থেকে মেয়েটির বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান দক্ষিণখান থানার ওসি মোহাম্মদ তায়েফুর রহমান।
গত ২৫ জানুয়ারি রাতে খুলনা নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে। অর্ণবের বাবা নীতীশ কুমার সরকার বলেন, ‘কারো সঙ্গে কোনো দিন দুর্ব্যবহার করেনি আমার বাবা। আমিও কোনো দিন কারো ক্ষতি করিনি। তাহলে আমার ছেলেকে ওরা কেন এভাবে হত্যা করল?’
গত ৩১ জানুয়ারি ফরিদপুরে ফরহাদ প্রামাণিক নামে এক রিকশাচালককে হত্যা করা হয়। তাঁর রিকশাটিও নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, রিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই ফরহাদকে হত্যা করা হয়।
গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকায় মিনহাজুর রহমান নামের এক তরুণ প্রকৌশলীকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। নিহতের ভগ্নিপতি খালিদ মাহফুজ বলেন, বেসরকারি একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পড়া শেষ করে সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করতেন মিনহাজ।
একই দিন নগরের কাশিপুর ইছাকাঠিসংলগ্ন একটি দীঘি ও আশপাশের এলাকা থেকে এক নারীর দেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়। গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গুলি করে রাজু নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মো. রিফাত নামের এক শিশুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি বরগুনার কচুপাতা পুরাতন বাজার এলাকার আমতলিতে আরাফাত খান নামের এক যুবককে টেঁটাবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
চলতি মাসেও বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডায় মো. তানভীর (২২) নামের এক যুবক খুন হন। পুলিশ ও নিহত তানভীরের পরিবারের সদস্যরা জানায়, রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসার কাছে স্থানীয় কিশোর সন্ত্রাসী গ্রুপের ছয়-সাতজন মিলে তানভীরকে কুপিয়ে হত্যা করে।
গত ৮ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর উপজেলায় মসজিদে ঢুকে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১২ মার্চ ঢাকার ধামরাইয়ে হাত-পা বাঁধা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, হত্যার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।
সম্পর্কিত খবর
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদ সাঈদীর হাত ধরে পিরোজপুরে ১৬ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী জামায়াতে যোগ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার পিরোজপুর সদর উপজেলার হুলারহাট, পিটিআই, খালিশাখালী, রায়েরকাঠি ও মরিচাল এলাকায় জামায়াতের পক্ষে গণসংযোগকালে মাসুদ সাঈদীর আহ্বানে ১৬ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ অসংখ্য মানুষ তাঁর হাতে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করেন।
গণসংযোগকালে মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে আগে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে।
মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘বৈষম্য এখনো রয়েছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে। দুর্নীতি আমাদের সমাজজীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
গণসংযোগকালে পিরোজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জহিরুল হক, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, পৌর আমির মাওলানা ইসহাক আলী এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আবুল কাসেম মিয়া পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১ জন বিভাগীয় প্রধান। আজ রবিবার ডিনসহ আরো আটজন বিভাগীয় প্রধান পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ দপ্তর থেকে কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ভিসি এবং অন্য শিক্ষকরা। পদত্যাগপত্রে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই শিক্ষার্থীর বাবা মৃত্যুবরণ করায় তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মিডটার্ম পরীক্ষা দিতে পারেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীরা যা বলছেন তা পুরোপুরি সঠিক নয়। যেহেতু অন্যায় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভিসিকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, তাই এর প্রতিবাদ হিসেবে সব ডিন ও বিভাগীয় প্রধান তাঁদের নিজেদের পদ থেকে পদত্যাগ করছেন।
সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক পরস্থিতি দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলটির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গভীর হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজকের বৈঠক ছিল একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আরেকটি রাজনৈতিক দলের।
তিনি বলেন, ‘তারা জেনেছে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কী। আমরাও তাদের সেটা বলেছি। তারা সব সময় বাংলাদেশে একটা স্থিতিশীলতা চায়।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। অন্যরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার।
অন্যদিকে চীনের প্রতিনিধিদলের সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইডিসিপিসির দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক চেন জুয়ানবো, তৃতীয় সচিব চেন ইয়াংপেই, ব্যুরো ফর দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশীয় অ্যাফেয়ার্সের ঝাং গুইউ, ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক ঝাং জিং ও চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগে সংযুক্ত লিউ হংরু।
মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় এক মাসের মধ্যে ঘোষণার দাবি জানিয়েছে এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো দাবি করা হয়েছে, মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসির রায় যেন উচ্চ আদালতে বহাল থাকে এবং রায় ঘোষণার সাত কার্যদিবসের মধ্যেই তা কার্যকর করা হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের সদস্যসচিব লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ বলেন, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। তাতে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন এবং সাতজনকে খালাস দেওয়া হয়। বিচারিক কার্যক্রম মাত্র ৩০ কার্যদিবসে শেষ হয়।
সাইফুল্লাহ খান বলেন, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। পরে সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলা করেন এবং র্যাবের তদন্তে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘ভয়ভীতির রাজত্ব’ কায়েম, কথিত ক্রসফায়ারে অন্তত ১৪৫ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন সাইফুল্লাহ খান।
সংগঠনটি শিশু আছিয়া, পারভেজ, তোফাজ্জল এবং গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বৈষম্য বা প্রভাব মেনে নেওয়া হবে না। সিনহা হত্যা মামলার রায় যেন কেউ প্রভাবিত করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
সংগঠনের আহবায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই—রায় কার্যকরে কোনো হুমকি, প্রলোভন বা রাজনৈতিক চাপ যেন প্রভাব ফেলতে না পারে। সাত কার্যদিবসের মধ্যেই আমরা রায় কার্যকর দেখতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন, মেজর (অব.) রাজিবুল হাসান, ক্যাপ্টেন (অব.) শুভ আফ্রিদি, করপোরাল (অব.) তফসীর আহমেদ, নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য সাইদ এবং সাবেক সৈনিক মো. নাইমুল ইসলাম।