সারা দেশে চলতি বছর প্রথম দুই মাসে ৫১১ জন খুন হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯ জন করে খুন হয়। গত বছর একই সময় খুন হয়েছিল ৪৭১ জন। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশে ২ মাসে ৫১১ খুন
রেজোয়ান বিশ্বাস

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা ও প্রতিহিংসা বেড়েছে। আইনের কঠোর প্রয়োগ না হওয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় মানুষ খুনের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাঁদের সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, নিহতদের মধ্যে শিশু, নারীসহ সব বয়সী মানুষ রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা ব্যবহার করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৫১১ জন খুন হয়েছে।
তবে পুলিশ সদর দপ্তরের মাসিক অপরাধ প্রতিবেদনে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘরে ৩০০ জন খুন হওয়ার তথ্য রয়েছে। জানুয়ারিতে খুন হয়েছে ২৯৪ জন। গত দুই মাসে ৫৯৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটে দেশে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের (এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, ৫৯৪টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে মামলা সূত্রে আগের ৮৩টি হত্যাকাণ্ড যোগ হয়েছে। এই ৮৩টি হত্যাকাণ্ড বাদ দিলে দুই মাসে হত্যার মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১১।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি বছর প্রথম দুই মাসে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি, ১৪২ জন খুন হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৬ জন। এতে এই দুই মাসে প্রতিদিন গড়ে দুজনের বেশি খুন হয়েছে।
চট্টগ্রামে গত দুই মাসে খুন হয়েছে ১০১ জন; জানুয়ারিতে ৫১ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ৫০ জন। সিলেটে খুন হয় ৩৪ জন; জানুয়ারিতে ২১ জন এবং ফ্রেব্রুয়ারিতে ১৩ জন। খুলনায় খুন হয় ৫০ জন; জানুয়ারিতে ২৮ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন। রাজশাহীতে খুন হয় ৫২ জন; জানুয়ারিতে ৩০ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন। রংপুরে খুন হয় ৪২ জন; জানুয়ারিতে ১৯ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৩ জন। ময়মনসিংহে খুন হয়েছে ৩২ জন; জানুয়ারিতে ১৩ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৯ জন। বরিশালে খুন হয়েছে ২৮ জন; জানুয়ারিতে ১২ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৬ জন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দেশে ৭৪৩ জন খুন হয়। এর মধ্যে নভেম্বরে ২১১ জন, অক্টোবরে ২৪৯ জন এবং সেপ্টেম্বরে ২৮৩ জন।
হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের (এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নানা কারণে হত্যার ঘটনা বেড়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
সাম্প্রতিক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড : ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে গাড়িচালক রবিনের সঙ্গে পরিচয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর। দেড় মাসের পরিচয়ের সূত্রে সাক্ষাতের জন্য তাকে গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালী এলাকায় ডেকে নেন রবিন। সেখান থেকে হাজারীবাগে বন্ধুর ভাড়া করা বাসায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে পাঁচজন মিলে ধর্ষণের পর মেয়েটিকে হত্যা করা হয়। ১৭ দিন পর হাতিরঝিল থেকে মেয়েটির বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান দক্ষিণখান থানার ওসি মোহাম্মদ তায়েফুর রহমান।
গত ২৫ জানুয়ারি রাতে খুলনা নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে। অর্ণবের বাবা নীতীশ কুমার সরকার বলেন, ‘কারো সঙ্গে কোনো দিন দুর্ব্যবহার করেনি আমার বাবা। আমিও কোনো দিন কারো ক্ষতি করিনি। তাহলে আমার ছেলেকে ওরা কেন এভাবে হত্যা করল?’
গত ৩১ জানুয়ারি ফরিদপুরে ফরহাদ প্রামাণিক নামে এক রিকশাচালককে হত্যা করা হয়। তাঁর রিকশাটিও নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, রিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই ফরহাদকে হত্যা করা হয়।
গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকায় মিনহাজুর রহমান নামের এক তরুণ প্রকৌশলীকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। নিহতের ভগ্নিপতি খালিদ মাহফুজ বলেন, বেসরকারি একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পড়া শেষ করে সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করতেন মিনহাজ।
একই দিন নগরের কাশিপুর ইছাকাঠিসংলগ্ন একটি দীঘি ও আশপাশের এলাকা থেকে এক নারীর দেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়। গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গুলি করে রাজু নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মো. রিফাত নামের এক শিশুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি বরগুনার কচুপাতা পুরাতন বাজার এলাকার আমতলিতে আরাফাত খান নামের এক যুবককে টেঁটাবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
চলতি মাসেও বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডায় মো. তানভীর (২২) নামের এক যুবক খুন হন। পুলিশ ও নিহত তানভীরের পরিবারের সদস্যরা জানায়, রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসার কাছে স্থানীয় কিশোর সন্ত্রাসী গ্রুপের ছয়-সাতজন মিলে তানভীরকে কুপিয়ে হত্যা করে।
গত ৮ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর উপজেলায় মসজিদে ঢুকে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১২ মার্চ ঢাকার ধামরাইয়ে হাত-পা বাঁধা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, হত্যার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।
সম্পর্কিত খবর

যাত্রী পরিবহন


সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমলাদের উদ্যোগ
‘জনতার দল’ আত্মপ্রকাশ করছে আজ
সাইদ শাহীন

নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার নিয়ে আসছে আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দল। নাম ‘জনতার দল’। দলের স্লোগান হবে ‘ইনসাফ জিন্দাবাদ’। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে দলটি।
দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম কামাল।
জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে এই রাজনৈতিক দলের গঠনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক ও আলোচনাসভা করেছেন প্রস্তাবিত এই দলের চেয়ারম্যান মো. শামীম কামালসহ অন্যরা।
দল গঠন ও পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে থিংকট্যাংক ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি, সংসদ সদস্য বাছাই কমিটি ও সাংগঠনিক পরিচালনা কমিটি। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের কাছে আমন্ত্রণপত্র দিয়েছে দলটি।
এই দলে কারা যোগদান করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে জনতার দলের মুখপাত্র ডেল এইচ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে সবার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পাশাপাশি দেশের সব ধরনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, মাদরাসাছাত্রদের সংগঠন প্রতিনিধি, এনজিওদের জোট, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন প্রতিনিধি, দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই দলে যোগ দেবেন।
জানা গেছে, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা জনতার দলে যোগ দিতে পারেন। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক আমলা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী নতুন এই রাজনৈতিক দলে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া দেশের শীর্ষ ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উদ্যোক্তা এই দলে যোগ দিতে পারেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীর এই দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের গঠনপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার কারণে সবার নামের তালিকা প্রকাশ করছে না দলটি। আইনগতভাবে গঠনপ্রক্রিয়া শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
বড় সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করবে দলটি। দেশের ও প্রবাসের আপামর মানুষের জনতার দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত অনেক সদস্য এই রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে পারেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন থেকেও এই রাজনৈতিক দলে অনেকে যোগ দেবেন।
দল গঠনে সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করছেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব, মেজর জেনারেল (অব.) ইসমাইল ফারুক চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান, লে. জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) এফ এম জাহিদ হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবুল হাসেম।
দলের চেয়ারম্যান ব্র্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ন্যায্যতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে সত্, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ ভালো মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলটি পরিচালিত হবে। আমরা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সমন্বয়ে দলটি গঠন করতে চাই, যেখানে সত্ ও দক্ষ মানুষ নেতৃত্ব দেবেন। গত ৫৩ বছরের বিতর্কিত রাজনীতিকে পেছনে ফেলে স্বচ্ছ রাজনীতি করতে চাই আমরা।’
নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক কমিটির মাধ্যমে সত্ ও যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে চায় দলটি। তবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য নয়। প্রাথমিকভাবে সামরিক সদস্য সমর্থিত হলেও এখানে সব পেশাজীবীর সমন্বয় থাকবে। এই দলের বড় অংশজুড়ে নেতৃত্ব দেবেন সমাজের তরুণ ও ছাত্ররা।
কেন এই রাজনৈতিক দল—এমন প্রশ্নের জবাবে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইতিহাস বলছে, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা ভূমিছাড়া হয়ে যান। আমরা সেখান থেকে ব্যতিক্রম হয়ে দলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। মীমাংসিত ঐতিহাসিক কোনো বিষয়ে আমরা বিতর্ক করব না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কিংবা ভূ-রাজনৈতিক পক্ষভুক্ত হবে না দলটি।’

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের আহ্বানে তাদের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া (আইকেবি)। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা তিনি গুমসংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের প্রশ্নের জবাব দেন এবং নিজের স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলোও জানান।
গতকাল বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বিষয়টি জানান এবং গুম ও অপহরণ সংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা কমিশনকে জানাতে আহ্বান জানান।
এর আগে এই সাবেক সেনাপ্রধান তাঁর লেখায় চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন।
সাবেক এই সেনাপ্রধান তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার কর্ম অভিজ্ঞতায় সঞ্চিত কিছু লেখা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তা রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্থার বিভিন্ন অংশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেই পটভূমিতে অনেক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এর বিভিন্ন দিক ও বিষয়ে জানার আগ্রহ জন্মেছে।
তিনি আরো লেখেন, ‘বিগত বছরগুলোতে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তাঁদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থাকা তথ্য ও প্রমাণাদি সরবরাহ করে গুমসংক্রান্ত কমিশনের কার্যক্রমকে বেগবান করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর তা যথাযথভাবে পালন করা গেলেই কেবল ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’
তাঁর বক্তব্য, ‘একজন নাগরিক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করার জন্য এ কাজে জড়িত সব পক্ষ, ব্যক্তি ও চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসা উচিত। গুম ও অপহরণ সংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা এই কমিশনকে অবহিত করা দরকার।

সব মামলা থেকে খালাস বাবর
নিজস্ব প্রতিবেদক

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার, আটক এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পুরো বিষয়টি ছিল কারসাজি। আর এই কারসাজির প্রধান ভিকটিম (ভুক্তভোগী) হলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর।
বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবরের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই রায় দেন।
রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে লুত্ফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে আর কোনো সাজা থাকল না।
মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা করা হয়েছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছিল।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের ২৭ মে যৌথ বাহিনী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে বাসা থেকে আটক করে। পরদিন তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের সাত দিন পর অর্থাত্ ৩ জুন বাবরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ও ১৯(চ) ধারায় একটি মামলা করেন গুলশান থানার এসআই হেলাল উদ্দিন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের দিন রাত সাড়ে ৯টায় যৌথ বাহিনী ও গুলশান থানা পুলিশ বাবরের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই তল্লাশি অভিযানে রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল ও শটগান জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁর স্ত্রী তিনটি অস্ত্রের লাইসেন্স দেখালেও রিভলভারেরটি দেখাতে পারেননি। এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ২৩ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৯ বাবরকে অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছর সর্বমোট ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালেই হাইকোর্টে আপিল করেন বাবর, যার ওপর শুনানি শেষে খালাসের রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
গত বছর ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে বাবরকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা থেকেও তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এই মামলায়ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনের আরেক মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।