চলতি বছর হজের জন্য সৌদি আরবের মক্কায় সাত হাজার ২৭৪ জন এবং মদিনায় তিন হাজার ২১৩ জন হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই ১০ হাজার ৪৮৭ জন হজযাত্রীর মধ্যে অন্তত দুই হাজার ১৯৩ জনের জন্য এ পর্যন্ত বাড়ি বা হোটেল ভাড়ার জন্য ‘নুসুক মাসার’ প্ল্যাটফর্মে আবেদনই করেনি সংশ্লিষ্ট ৯ এজেন্সি। বাড়ি ভাড়া চূড়ান্ত না হওয়ায় এসব ব্যক্তির হজযাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এসব কারণে কোনো ব্যক্তি হজে যেতে না পারলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে।
এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও এখন পর্যন্ত বাড়ি ও পরিবহন ভাড়ার জন্য আবেদন করেনি ৯ এজেন্সি। এগুলো হলো দ্য ইসলামিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (লাইসেন্স নম্বর ১৩৩৫), রিলেশনস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (১৩৮৩), ইউরো বাংলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম (১৬৮), চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড (৪৫), গালফ ট্রাভেলস (৭৯৭), ভেনিস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (১২৮২), বুশরা ওভারসিজ (৬৯৭), ক্যাপ্লান ওভারসিজ লিমিটেড (৩০২) ও দারুল ইমান ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (৭২৫)।
জরুরি ভিত্তিতে এসব বিষয় গণমাধ্যমকে জানাতে গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
সেখানে তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের প্রতি কিছু হজ এজেন্সির কমিটমেন্ট ও দায়বদ্ধতার অভাবে এখনো বেসরকারি মাধ্যমের ১০ হাজার ৪৮৭ জন হজযাত্রী নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোনো এজেন্সির অবহেলা বা গাফিলতির কারণে একজন হজযাত্রীও যদি হজ করতে না পারেন, সেই দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে। এ দায় কোনোভাবেই ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বহন করবে না। কোনো এজেন্সির অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা ধর্ম মন্ত্রণালয় বরদাশত করবে না।’
ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন বলেন, ‘সর্বশেষ আজ (গতকাল) মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে জুম প্ল্যাটফর্মে সভা করেছেন। এজেন্সিগুলোর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৮ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মক্কায় এক হাজার ১২৬ জন এবং মদিনায় এক হাজার ৬৭ জন হজযাত্রীর নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে হোটেল বা বাড়ি ভাড়ার রিকোয়েস্ট এখনো সাবমিট করা হয়নি। বেসরকারি মাধ্যমের ৮১ হাজার ৯০০ জন হজযাত্রীর মধ্যে আজ দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মক্কায় ৭৪ হাজার ৬২৬ জন ও মদিনায় ৭৮ হাজার ৬৮৭ জনের বাড়ি ভাড়া নিশ্চিত হয়েছে এবং মক্কায় সাত হাজার ২৭৪ জন ও মদিনায় তিন হাজার ২১৩ জন—মোট ১০ হাজার ৪৮৭ জন হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়ি ভাড়ার রিকোয়েস্ট সাবমিট করার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া চুক্তি সম্পাদন করেনি এমন এজেন্সিগুলোকে আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। গতকাল পর্যন্ত এমন এজেন্সির সংখ্যা ছিল ২১, কিন্তু এখন সেটা ৯টিতে নেমে এসেছে।
সৌদি সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যেই সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্যও আমরা হজ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়েছি। এ বছর সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত পাঁচ হাজার ২০০ জন হজযাত্রীর জন্য আমরা সব আনুষ্ঠানিকতা তথা মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ ও ক্যাটারিং সার্ভিস কম্পানির সঙ্গে চুক্তি, বাড়ি বা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি, পরিবহন কম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনেক আগেই সম্পন্ন করেছি। এখন তাঁদের ভিসার কার্যক্রম চলমান এবং আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হবে।’
হজ ফ্লাইট প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজের উদ্দেশে ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী সৌদি আরব যাবে। এ বছর আমাদের হজযাত্রীদের একটি বিরাট অংশ, অর্থাৎ ৮১ হাজার ৯০০ জন হজযাত্রী বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজব্রত পালনের জন্য নিবন্ধন করেছেন। সৌদি সরকারের এজেন্সিপ্রতি ন্যূনতম হজযাত্রীর বাধ্যবাধকতার কারণে মোট ৭৫৩টি এজেন্সির অধীনে নিবন্ধিত এসব হজযাত্রী ৭০টি লিড এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করবেন।’
এজেন্সি মালিকদের বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে খালিদ হোসেন বলেন, সতর্কবার্তায় সৌদি সরকার জানায় যে ২৫ মার্চের মধ্যে অনলাইনে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে বাড়ি ভাড়া ও পরিবহন চুক্তি করতে সক্ষম না হলে সংশ্লিষ্ট হাজযাত্রীরা ২০২৫ সালে হজ করতে পারবেন না। সৌদি সরকারের এই সতর্কবার্তার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ২৫ মার্চের মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়ি ভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করার জন্য হজ অফিস, জেদ্দার অনুমোদিত হজ এজেন্সিগুলোকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ২০ মার্চ দুটি পত্র এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৩ মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৪ মার্চ, ২৬ মার্চ—মোট আটটি পত্র, অসংখ্যবার খুদে বার্তা এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রায় প্রতিদিনই এসংক্রান্ত তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
এজেন্সির গাফিলতির কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব হজ এজেন্সির অব্যবস্থাপনার কারণে কোনো হজযাত্রী যেতে পারবেন না, আমরা তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেব।’