গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনে টাইমলাইন ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘোষিত টাইমলাইনে নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ না থাকায় আপত্তি তুলেছে কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট তারিখসহ নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহবায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে উপাচার্য আমাদের বলেছিলেন, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
এরপর মার্চ পেরিয়ে এখন এপ্রিল। টাইমলাইন ঘোষণা করলেন, মে মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এটা স্পষ্টতই কালক্ষেপণের চেষ্টা। এমন অস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রত্যাখ্যান করছি। প্রশসানকে বলব, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টাইমলাইন ঘোষণা ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আশার সঞ্চার করলেও মূল বিষয় নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার সময় নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি এ ঘোষণায়। আমরা চাই, প্রশাসনিক সব জটিলতা থেকে বেরিয়ে এসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসন উদ্যোগ নেবে।’
ঢাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব রাকিবুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এমন অপরিকল্পিত রোডম্যাপ ও ডাকসু নির্বাচন না দেওয়ার সুপরিকল্পিত টালবাহানা প্রত্যাখ্যান করছি।
পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ সামনে রেখে বাকি কাজগুলো সম্পাদন করার আহবান জানাচ্ছি।’
আগামী মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে প্রশাসনের কাছে আহবান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একাংশ নিয়ে গঠিত নতুন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার সদস্যসচিব মহির আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রশাসনের দেওয়া এই টাইমলাইনটি যথেষ্ট অস্পষ্ট; এবং নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশিত গতি ও কার্যকারিতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। যদি প্রশাসন আন্তরিক হয়, তাহলে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই নির্বাচনের দিন ও সময় ঘোষণা করা সম্ভব।
এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আমরা প্রশাসনকে আহবান জানাই দ্রুত এবং স্পষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিতে। দীর্ঘ সময়ের টাইমলাইন মূলত ডাকসু নির্বাচন বাস্তবায়নকে বিলম্বিত করার একটি ষড়যন্ত্র।’
টাইমলাইন অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন, নির্বাচনের আচরণবিধি প্রস্তুত করেছে গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটি ও আচরণবিধি প্রণয়ন কমিটি। এই দুটি বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে টাইমলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণাকে ইতিবাচক বললেও ডাকসুর সংশোধিত গঠনতন্ত্রের আরো কার্যকর সংশোধনের কথা বলছে ছাত্রদল। পাশাপাশি সংশোধিত গঠনতন্ত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়নি বলছে ছাত্র ইউনিয়ন।
ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি কার্যকর ও শিক্ষার্থীবান্ধব ডাকসু নির্বাচনের জন্য সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধিত গঠনতন্ত্রের আরো কার্যকর সংশোধন প্রয়োজন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আশা করছি, এই ঘাটতি উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তারপর সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি অংশগ্রহণমূলক ও বিতর্কমুক্ত নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করবে।’
ঢাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রশাসন অংশীজনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের কথা বলেছে, কিন্তু অংশীজনের মতামতকে কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হলো? ডাকসু প্রধান ভিসি থাকলেও নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় নীতিনির্ধারণী বিষয় পুরোপুরি প্রশাসনের হাতেই থেকে গেল। এতে ডাকসু আবার অনিয়মিত হয়ে উঠতে পারে, ক্ষমতাসীনদের খপ্পরে পড়তে পারে। অথচ এই মৌলিক পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে না।’
ঘোষিত টাইমলাইনকে স্বাগত জানালেও সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কথা বলছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশন। ঢাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী, সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনসহ সব অংশীজনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হোক। আশু এই নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
ঢাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সদস্যসচিব সাকিবুর রনি বলেন, ‘টাইমলাইনে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ নেই। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সময় আমরা গঠনতন্ত্রের সংস্কারসহ যেসব প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সেগুলো আমলে নিয়ে সব ছাত্রসংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে।’
এদিকে মে মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে গতকাল সকালে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। টাইমলাইন ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘টাইমলাইনে বলা হয়েছে, মে মাসের মাঝামাঝি ডাকসু নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মে মাসের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন চান। আমরা প্রশাসনকে আহবান জানাব, শিক্ষার্থীদের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, নির্বাচন কমিশন এপ্রিল মাসের মধ্যে গঠন করে শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে মে মাসের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করুন।’