সুনির্দিষ্ট তারিখ চায় ছাত্রসংগঠনগুলো

মানজুর হোছাঈন মাহি
মানজুর হোছাঈন মাহি
শেয়ার
সুনির্দিষ্ট তারিখ চায় ছাত্রসংগঠনগুলো

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনে টাইমলাইন ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘোষিত টাইমলাইনে নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ না থাকায় আপত্তি তুলেছে কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট তারিখসহ নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা।

স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহবায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে উপাচার্য আমাদের বলেছিলেন, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।

এরপর মার্চ পেরিয়ে এখন এপ্রিল। টাইমলাইন ঘোষণা করলেন, মে মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এটা স্পষ্টতই কালক্ষেপণের চেষ্টা। এমন অস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রত্যাখ্যান করছি।
প্রশসানকে বলব, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।

ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, টাইমলাইন ঘোষণা ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আশার সঞ্চার করলেও মূল বিষয় নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার সময় নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি এ ঘোষণায়। আমরা চাই, প্রশাসনিক সব জটিলতা থেকে বেরিয়ে এসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসন উদ্যোগ নেবে।

ঢাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব রাকিবুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা এমন অপরিকল্পিত রোডম্যাপ ও ডাকসু নির্বাচন না দেওয়ার সুপরিকল্পিত টালবাহানা প্রত্যাখ্যান করছি।

পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ সামনে রেখে বাকি কাজগুলো সম্পাদন করার আহবান জানাচ্ছি।

আগামী মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে প্রশাসনের কাছে আহবান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একাংশ নিয়ে গঠিত নতুন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার সদস্যসচিব মহির আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রশাসনের দেওয়া এই টাইমলাইনটি যথেষ্ট অস্পষ্ট; এবং নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশিত গতি ও কার্যকারিতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। যদি প্রশাসন আন্তরিক হয়, তাহলে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই নির্বাচনের দিন ও সময় ঘোষণা করা সম্ভব।

এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আমরা প্রশাসনকে আহবান জানাই দ্রুত এবং স্পষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিতে। দীর্ঘ সময়ের টাইমলাইন মূলত ডাকসু নির্বাচন বাস্তবায়নকে বিলম্বিত করার একটি ষড়যন্ত্র।

টাইমলাইন অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন, নির্বাচনের আচরণবিধি প্রস্তুত করেছে গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটি ও আচরণবিধি প্রণয়ন কমিটি। এই দুটি বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে টাইমলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণাকে ইতিবাচক বললেও ডাকসুর সংশোধিত গঠনতন্ত্রের আরো কার্যকর সংশোধনের কথা বলছে ছাত্রদল। পাশাপাশি সংশোধিত গঠনতন্ত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়নি বলছে ছাত্র ইউনিয়ন।

ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন কালের কণ্ঠকে বলেন, একটি কার্যকর ও শিক্ষার্থীবান্ধব ডাকসু নির্বাচনের জন্য সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধিত গঠনতন্ত্রের আরো কার্যকর সংশোধন প্রয়োজন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আশা করছি, এই ঘাটতি উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তারপর সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি অংশগ্রহণমূলক ও বিতর্কমুক্ত নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করবে।

ঢাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রশাসন অংশীজনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের কথা বলেছে, কিন্তু অংশীজনের মতামতকে কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হলো? ডাকসু প্রধান ভিসি থাকলেও নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় নীতিনির্ধারণী বিষয় পুরোপুরি প্রশাসনের হাতেই থেকে গেল। এতে ডাকসু আবার অনিয়মিত হয়ে উঠতে পারে, ক্ষমতাসীনদের খপ্পরে পড়তে পারে। অথচ এই মৌলিক পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে না।

ঘোষিত টাইমলাইনকে স্বাগত জানালেও সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কথা বলছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশন। ঢাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষার্থী, সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনসহ সব অংশীজনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হোক। আশু এই নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবেএটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ঢাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সদস্যসচিব সাকিবুর রনি বলেন, টাইমলাইনে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ নেই। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সময় আমরা গঠনতন্ত্রের সংস্কারসহ যেসব প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সেগুলো আমলে নিয়ে সব ছাত্রসংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

এদিকে মে মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে গতকাল সকালে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। টাইমলাইন ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, টাইমলাইনে বলা হয়েছে, মে মাসের মাঝামাঝি ডাকসু নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মে মাসের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন চান। আমরা প্রশাসনকে আহবান জানাব, শিক্ষার্থীদের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, নির্বাচন কমিশন এপ্রিল মাসের মধ্যে গঠন করে শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে মে মাসের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করুন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হঠাৎ বৃষ্টি

শেয়ার
হঠাৎ  বৃষ্টি

হঠাৎ করেই গতকাল দুপুরে শুরু হয় বৃষ্টি। এর মধ্যেই ছাতা মাথায় গন্তব্যের উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছেন দুই তরুণী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

বৈঠকে সন্তুষ্ট নন আন্দোলন চলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৈঠকে সন্তুষ্ট নন আন্দোলন চলবে

দেশজুড়ে একযোগে মশাল মিছিলে নেমেছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়া এবং কুমিল্লায় কারিগরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ব্যানারে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস থেকে এই মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

আল ইমরান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

তাই দাবি আদায়ে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। আমরা চাই কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত যাঁরা আছেন, তাঁরা এই শিক্ষা খাতের নেতৃত্ব দেবেন। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কুমিল্লায় আমার ভাইদের ওপর গুলি চালিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগে সকাল ১১টায় দেশব্যাপী মিছিলের ঘোষণা দিয়েছিল কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।

তবে এদিন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের ঘোষণা পেয়ে তা স্থগিত করা হয়। তবে সেখানে ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা না হওয়ায় তারা পুনরায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সারা দেশে একযোগে মশাল মিছিলের ঘোষণা দেয়।

গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেল ৩টার দিকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাশফিক ইসলাম ও আল ইমরান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আজকে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের বৈঠক করার জন্য ডেকে আনা হয়েছিল। কিন্তু একজন অতিরিক্ত সচিব বৈঠক করেছেন। আমাদের দাবিদাওয়া লিখে নিয়ে সচিবের কাছে উপস্থাপন করবেন, তারপর উপদেষ্টার কাছে দেবেন। আমরা চেয়েছিলাম উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে।

আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। 

এরপর গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ নামের ফেসবুক পেজে বলা হয়, নাটকীয় বৈঠক এবং বুধবার কুমিল্লা বিভাগীয় পলিটেকনিকসমূহে আক্রমণের প্রতিবাদে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে একযোগে মশাল মিছিল কর্মসূচি পালন করার জন্য আহবান করা হলো।

ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে সচিবালয়ে বৈঠকের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল করেন। এরপর গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠকে বসে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ-এর ১৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলোজুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য নির্ধারিত ৩০ শতাংশ পদোন্নতির কোটা বাতিল, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক) পদের জন্য ডিপ্লোমা প্রকৌশল ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা, সব কারিগরি পদে শুধু কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা চালু ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের শিক্ষক পদে আবেদনের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বেসরকারি খাতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য ন্যূনতম বেতনকাঠামো নির্ধারণ।

গত বুধবার দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা দিনভর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন। ঢাকার বাইরেও শিক্ষার্থীরা যাঁর যাঁর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কও অবরোধ করেছিলেন।

মন্তব্য

রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শেয়ার
রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা খুন

রাজশাহীর তালাইমারীতে গত বুধবার রাতের অন্ধকারে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। নিজ মেয়ের সম্মান রক্ষায় দাঁড়ানো এক বাবা নির্মমভাবে প্রাণ হারালেন। তিনি মেয়েকে ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। এ কারণে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করা হয়।

নিহতের নাম আকরাম হোসেন (৪৫)। তিনি পেশায় একজন বাসচালক এবং রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। শহরের তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে চলছিল তাঁর ছোট্ট সংসার।

কিন্তু আকরামের পরিবারে এখন নেমে এসেছে দীর্ঘশ্বাস।

আকরামের মেয়ে আলফি খাতুন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। গত বুধবার সকালে প্রাইভেট পড়ে ফিরছিল সে। তালাইমারী শহীদ মিনার মোড়ে অটোরিকশা থেকে নামতেই তাকে উদ্দেশ করে অশালীন মন্তব্য ছুড়ে দেয় এলাকার বখাটে নান্টু (২৮)।

লজ্জা, অপমান আর ভয় নিয়ে দৌড়ে বাড়ি ফিরে যায় আলফি। কাঁদতে কাঁদতে জানায় মা-বাবা আর ভাইকে। আলফির কথায়, আমি শুধু বলেছিলাম, রাস্তা দিয়ে আসার সময় ওই লোকটা খারাপ কথা বলেছে। বাবা তখন নাট্টুর বাবাকে গিয়ে বলেছিলেন, আপনার ছেলে মেয়েদের বিরক্ত করে, ওকে বুঝিয়ে বলুন। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যায় তারা।

 

ওই রাতেই তালাইমারী শহীদ মিনার মোড়ের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন আকরামের ছেলে ইমাম হাসান অনন্ত। তাঁকে একা পেয়ে নাট্টু ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী বিশাল, খোকন, তাসিন, অমি, নাহিদ ও শিশির রড, লাঠি ও ইট দিয়ে মারতে শুরু করে। চিৎকার শুনে ছুটে যান বাবা আকরাম। ছেলেকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে দুর্বৃত্তরা থামেনি। উল্টো আকরামকে মেরেই ফেলে তারা। ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। 

স্থানীয় লোকজন আকরাম হোসেনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।

ইমাম হাসান বলেন, আমি বোনের অপমানের প্রতিবাদ করেছিলাম। আর বাবা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটাই ছিল আমাদের অপরাধ। তিনি আরো বলেন, আমি বাবাকে বাঁচাতে পারিনি। তারা তাঁকে এমনভাবে মেরেছে, আমি চোখের সামনে সব দেখেছি। এটা কোনো মানুষ করতে পারে?

আকরামের স্ত্রী নাজমা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। চোখ মেলে বললেন, সে তো কিছুই করেনি। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়েছিল। এত বড় শাস্তি পাবে? এখন আমি কী করে আমার মেয়েকে পরীক্ষা দিতে পাঠাব? 

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে তালাইমারী শহীদ মিনার মোড়ে নিহত আকরামের মরদেহ সামনে রেখে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। লাঠি-ইট হাতে যারা একজন বাবাকে হত্যা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিল শ্রমিক, শিক্ষার্থী, গৃহবধূ, স্থানীয় শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল একজন বাবার রক্তে রঞ্জিত রাজপথ, আমার বাবার খুনি কবে ধরা পড়বে?

একজন প্রবীণ শিক্ষক বলেন, এই সমাজে এখন একজন বাবাও যদি মেয়ের সম্মান রক্ষার জন্য প্রাণ হারান, তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?

এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ বলনে, ইমাম হাসান বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মন্তব্য
আইএসপিআর

দুই মাসে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দুই মাসে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী

দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গত দুই মাসে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। একই সময়ে ৫৬৪টি গোলাবারুদ্ধ উদ্ধার করে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ঢাকা সেনানিবাসে সেনা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সেনাবাহিনীর সমসাময়িক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সার্বক্ষণিক সক্রিয় দায়িত্ব পালন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত দুই মাসে সেনাবাহিনী ২৩২টি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ৩৭টি, সরকারি সংস্থা বা অফিসসংক্রান্ত ২৪টি, রানৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্যান্য ধরনের ঘটনা ছিল ৯৫টি। এই সময় যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুই হাজার ৪৫৭ জনকে বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক, দালালচক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত ও ছিনতাইকারী উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের মধ্যে চার হাজার ৩৪০ জনকে সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে ৪৩ জন চিকিৎসাধীন।

শফিকুল ইসলাম জানান, গত দুই মাসে দেশের যেসব স্থানে বৃহত্ভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, দ্রুততার সঙ্গে সেখানে আগুন নেভাতে কাজ করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বজায় রাখা, কক্সবাজারে নিরাপত্তা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে। পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর সুষ্ঠুভাবে উদযাপন, এ সময় যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখাতে বাসস্ট্যান্ড, রেল এবং লঞ্চ রুটে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় কাজ করেছে।

তিনি আরো জানান, সম্প্রতি মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের আঘাতের পর বাংলাদেশ সরকার জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে। এই কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ